অবিলম্বে ১৩ দফা মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘১৩ দফা মেনে নিন। না হলে ৫ তারিখে এ দেশ কোন দিকে যাবে, তা আমি জানি না।’
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বগুড়ার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত হেফাজতে ইসলামের ‘শানে রিসালাত’ মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আল্লামা শফী এই আহ্বান জানান।
আহমদ শফী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘নাস্তিকবাদীদের সঙ্গ ছেড়ে তওবা করে আস্তিক’ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ওনাকে বলতাছি, তওবা কইরা ১৩ দফা মেনে নিন। ১৩ দফা কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না। এই ১৩ দফা দাবির একমাত্র দাবি, নাস্তিকদের এ দেশ থেকে তাড়াতে হবে। নাস্তিকবাদীরা এ দেশে থাকতে পারবে না।’
৫ মে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে চান উল্লেখ করে আল্লামা আহমদ শফী হেফাজতের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সবার কাছে অনুরোধ, আমরা অবরোধ করব, ভাঙচুর করব না, বিশৃঙ্খলা করব না। অতীতে আমরা যেমন শান্তির সঙ্গে কর্মসূচি পালন করেছি; সেভাবেই অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে চাই।’ নারীদের রাস্তায় প্রকাশ্যে চলাফেরা ও পোশাক পরার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যেভাবে চলেন, দেশের নারীদেরও সেভাবে চলতে হবে।’
হেফাজতের আমির বলেন, ‘সরকার আমার কাছে বারবার লোক পাঠাইছে। আমি বলেছি, আমি একা কোনো ফয়সালা দিতে পারব না। তারা বলে, তোমাদের দাবি মানব। আমি বলেছি, দাবি মাইনা ঘোষণা দিতে হবে। তোমাদের পলিসি আমরা বুঝি। আমরা বেকুব না। আমাদের ধোঁকা দিতে চাইছে সরকার। আমরা আর ধোঁকা খাব না। হয় আমাদের দাবি মানবেন, নাহয় শাহাদত বরণ করব।’
হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তরবঙ্গ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় এ মহাসমাবেশ হয়। বোর্ডের চেয়ারম্যান মুফতি আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা নূর হোসাইন কাশেমী, মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি ওয়াক্কাস, মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল লতিফ নেজামী, মুফতি ফয়জুল্লাহ, আবদুর রব ইউসুফী, বগুড়া জেলা কমিটির সদস্যসচিব মাওলানা শামছুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মহাসমাবেশে যোগ দিতে সকাল থেকেই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকেরা বগুড়ায় আসেন। বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরু হয়। আল্লামা আহমদ শফী বেলা তিনটায় চট্টগ্রাম থেকে ভাড়া করা হেলিকপ্টারে করে বগুড়ায় পৌঁছান। শহরের সুলতানগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নেমে সেখান থেকে বগুড়ার জামিল মাদ্রাসায় যান। বিকেল চারটায় তিনি মঞ্চে আসেন। পরে তিনি একই হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফিরে যান। তিনি ৫ মে পর্যন্ত ঢাকায় থাকবেন বলে জানা গেছে।
অবরুদ্ধ শহর: মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গতকাল বগুড়া শহর ছিল কার্যত অবরুদ্ধ। শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথার অদূরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এ সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকেই সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবী কর্মীরা অবস্থান নেন। শহরে প্রবেশের বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দিয়ে বাইরের জেলা থেকে আসা কর্মী-সমর্থকদের বহনকারী যানবাহন প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়। ফলে এসব এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে।
মুন্সিগঞ্জে সমাবেশ: প্রথম আলোর মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ৫ মের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে গতকাল মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তারপুরে ফেরিঘাট-সংলগ্ন স্থানে সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলামের মুন্সিগঞ্জ জেলা শাখা। সমাবেশে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। তাঁরা পানীয় ও খাবার বিতরণ করেন। সকাল সাড়ে ১০টায় সমাবেশ শুরু হয়ে বিকেল পাঁচটায় শেষ হয়।
হেফাজতের মুন্সিগঞ্জ জেলার সভাপতি আবদুল হামিদ পীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন মাওলানা খলিলুর রহমান, মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, মাওলানা আবুল কালাম প্রমুখ।
No comments:
Post a Comment