Wednesday, May 29, 2013

স্মরণে জিয়া স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র সুরক্ষায় তাঁর অবদান

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান
ভাবতে অবাক লাগে বৈকি, তিরোধানের তিন দশকের অধিক কাল পরেও শহীদ জিয়া ও তাঁর আদর্শ দেশপ্রেম এবং গণতন্ত্র সুরক্ষার ক্ষেত্রে কী আশ্চর্য বলশালী ও উদ্দীপক ভূমিকা পালন করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের যে গৌরবোজ্জ্বল চেতনা নিয়ে বাংলাদেশের জন্ম, তাকে সংরক্ষণ ও শক্তিমান করে তোলার জন্য সর্বাধিক প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের শক্ত ভিত্তি রচনা—প্রয়োজন ছিল দেশ গঠনের কাজে জনগণের সার্বিক সম্পৃক্ততাবোধের সঞ্চার—প্রয়োজন ছিল নতজানু না হয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও সীমান্তে সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখে বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে সৌভ্রাতৃত্বের হস্ত প্রসারণ। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তা শুধু যে অনুধাবন ও সংজ্ঞায়িত করেছিলেন তা নয়, সে লক্ষ্যগুলো প্রতিষ্ঠা ও অর্জনের মানসে তাঁর ছিল আমৃত্যু প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। তাই তো তিনি আজও সকৃতজ্ঞ দেশবাসীর সশ্রদ্ধ স্মরণে।
ব্রিটেনের বিশ্বখ্যাত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘আয়রন লেডি’ নামে খ্যাত ব্যারোনেস মার্গারেট থ্যাচার তাঁর মৃত্যুর আগে অনুরোধ রেখে গিয়েছিলেন যেন তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় স্কটল্যান্ডের দেশপ্রেমিক কবি রবার্ট বার্নসের একটি গান গীত হয়। সেটি ছিল, ‘আই প্লেজ টু দ্য, মাই কান্ট্রি’। অর্থাৎ ‘হে আমার দেশ, আমি তোমার কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ হলাম’। থ্যাচার বিতর্কিত, কিন্তু তাঁর নিখাদ দেশপ্রেম সম্পর্কে দ্বিমতের অবকাশ নেই। বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির কাছে সেভাবেই অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলেন, তাঁর প্রিয় গান ছিল, ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ/জীবন বাংলাদেশ, আমার মরণ বাংলাদেশ’। এ গানটি তাঁকে উদ্বুদ্ধ করত। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যেন সমগ্র জাতিও এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের সেবায় এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর পছন্দের এই গভীর দেশপ্রেমের গানটি মনে পড়ে। ইচ্ছা করে জাতির বর্তমান পরম অস্বস্তিকর মুহূর্তে সবাই এককণ্ঠ হয়ে এ গানটিই গাই।
বিশ্বের সফল ও বরেণ্য রাষ্ট্রনায়ক অনেকেই রয়েছেন। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দরিদ্র ও অনগ্রসর দেশ; যা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় দোদুল্যমান, তাতে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোতে তাকে স্থাপন করে, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের ভিত্তি সুদৃঢ় করে, উন্নয়নের রাজপথে তাকে চলমান করিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া ছাড়া বিশ্বের ইতিহাসে খুব বেশি কারও আছে বলে আমার জানা নেই।
বিস্ময়ের কথা, রাজনীতিতে সে সময় অনভিজ্ঞ এক তরুণ সামরিক কর্মকর্তা কী অদম্য সাহস, অপরাজেয় মনোবল ও অসীম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দেন দিকনির্দেশনামূলক স্বাধীনতার ঘোষণা। আবার সফল মুক্তিসংগ্রাম উত্তরকালে মধ্য-সত্তরের চরম বিয়োগান্ত পটভূমে এক অস্থির সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কান্ডারি হয়ে জাতিকে এক বিপর্যয়ের মুখ থেকে রক্ষা করে তাকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করেন। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বের প্রথম দিকে ১৯৭৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি সঞ্জীব রেড্ডি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় রাষ্ট্রপতি জিয়ার কৃতিত্ব ও সম্ভাবনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসাবাণী উচ্চারণ করতে গিয়ে একটি ঐতিহাসিক সত্য তুলে ধরেন। জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘Your position is already assured in the annals of the history of your country as a brave freedom fighter who was the first to declare the independence of Bangladesh.’ অর্থাৎ ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রথম দিয়ে তিনি যেভাবে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন, তাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর নাম চির সংরক্ষিত থাকবে।’ রাষ্ট্রপতি জিয়ার শাহাদাতের পর ১৯৮১ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট আয়োজিত এক সভায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কমনওয়েলথের তদানীন্তন মহাসচিব স্যার সিদ্ধার্থ রামফাল বলেছিলেন, ‘রাষ্ট্রপতি জিয়া বাংলাদেশে শুধু একদলীয় রাজনীতির পরিবর্তে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই প্রতিষ্ঠা করেননি; এ উন্নয়নকর্মী দেশকে সার্বিক উন্নয়নের রাজপথে পরিচালিত করেছিলেন।’ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ‘সার্ক’-এর মাধ্যমে ঐক্যের বন্ধনে গ্রথিত করা ছিল তাঁর এক স্বপ্ন। রাষ্ট্রপতি জিয়ার অকালমৃত্যুতে তাঁর দেশ একজন দক্ষ, সৎ সংগঠক ও সফল রাষ্ট্রনায়ককেই শুধু হারাল না, দক্ষিণ এশিয়া হারাল এক দূরদর্শী স্বাপ্নিক অগ্রপথিককে, উন্নয়নশীল দেশ-গোষ্ঠী হারাল এক সৃষ্টিধর্মী নেতা, কমনওয়েলথ হারাল সৌভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী এক মহান ব্যক্তিত্বকে। মার্লবরো হাউসে অনুষ্ঠিত এ সভায় সেক্রেটারি জেনারেল সিদ্ধার্থ রামফালের জলদগম্ভীর কণ্ঠে প্রদত্ত শোকবাণী কী শ্রদ্ধা, কী সম্ভ্রম, কী দুঃখবোধ নিয়ে সমবেত কমনওয়েলথ প্রতিনিধিরা শুনেছিলেন। শোকাহত সে মুহূর্তে উপস্থিত আমারও মহা গর্ববোধ হয়েছিল, আমার দেশের প্রয়াত নেতার প্রতি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধাঞ্জলি দেখে।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি ঘটনা মনে পড়ে। জেদ্দায় ৫৫ সদস্য রাষ্ট্র সমন্বিত ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে কর্তব্য ব্যপদেশে গিয়েছিলাম সদস্যরাষ্ট্র মালির রাজধানী বামাকোতে। দেশটির তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট কোনারে কথায় কথায় বলেন, ‘আপনি তো বাংলাদেশি। বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। উন্নয়নকামী দেশগুলোর অগ্রগতির জন্য তাঁর ছিল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। আল-কুদসের আহ্বায়ক হিসেবে তিনি ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে করেছিলেন আন্তরিক প্রচেষ্টা। তাঁর তিরোধানে ওআইসি ও এলডিসি দেশগুলোর অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তারা হারিয়েছে এক অন্যতম যোগ্য নেতা।’ অবাক বিস্ময়ে শুনছিলাম এক প্রয়াত রাষ্ট্রপতির প্রতি আরেক দেশের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের শোকাপ্লুত শ্রদ্ধা নিবেদন, বহু বছরের ব্যবধানে বহুদূরের এক দেশে। প্রেসিডেন্ট কোনারে আরও বললেন, ‘জিয়াউর রহমান স্মরণে আমরা রাজধানীর একটি প্রধান সড়কের নাম করেছি। গিয়ে দেখে আসুন।’ দেখলাম, শহরের প্রশস্ততম রাজপথ কিং ফাহাদ সরণির অব্যবহিত পরেই অ্যাভিনিউ জিয়াউর রহমান। দুই দিকে বৃক্ষসারির মধ্যে প্রসারিত দীর্ঘ রাজপথ। মনে পড়ল, তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায়ও দেখেছিলাম জিয়ার নামে আরেকটি সরণি। ওই সুদূরে এক ভ্রমণকারী বাংলাদেশির অন্তর গর্বে ভরে দিলেন জান্নাতবাসী জিয়া। গিনির সিকু তুরে, ফিলিস্তিনের ইয়াসির আরাফাত, ভুটানের রাজা ওয়াং চু, আরও বহু নেতার কাছে শহীদ জিয়াউর রহমান সম্পর্কে উষ্ণ প্রশস্তি শুনেছি। এসব উক্তি রাষ্ট্রাচারের প্রয়োজন-তাড়িত ছিল না, ছিল অন্তর থেকে উৎসারিত আবেগঘন অভিব্যক্তি। এটা অনস্বীকার্য, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিগৃহীত ও দুর্বল দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যবন্ধন সৃষ্টি করে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়, দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকল্পে ঐকমত্যের সন্ধান, দুরাচারমুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, সৎ ও সাধু জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন এবং সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা নিয়ে জাতিকে উজ্জীবিত করা—এসব ছিল জিয়ার লক্ষণীয় প্রচেষ্টা ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। অতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই একটি বিভ্রান্ত জাতিকে যেন তিনি এক জিয়নকাঠির মায়াবি ছোঁয়ায় আত্মবিশ্বাসী, প্রাণবন্ত ও সক্রিয় করে তুলেছিলেন।
আজ যখন দেশে সত্য ও ন্যায় সর্বক্ষণ পরাভূত হচ্ছে প্রলোভন ও পরাক্রমের প্রতিকারহীন অপরাধে, আজ যখন আইনের শাসন হয়ে পড়েছে এক বিস্মৃত প্রায় জীবনধারা, আজ যখন সরকারি কর্মকাণ্ড দুর্নীতির গভীরতম কন্দরে নিমজ্জিত, আজ যখন স্বৈরাচারী কায়দায় গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার সভা-সমাবেশ হচ্ছে নিষিদ্ধ, আজ যখন বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভাবে থমকে আছে—তখন শহীদ জিয়াউর রহমানের সময়কে খুব মনে পড়ে। মনে পড়ে তাঁর উদ্দীপনাময় নেতৃত্ব ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, তাঁর সফল ও সবল রাষ্ট্র পরিচালনা, জনগণকে সম্পৃক্ত করে দেশ গড়ার তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা। তাঁর পররাষ্ট্রনীতি ছিল না নতজানু ও দেশের স্বার্থের পরিপন্থী। বিশ্বমঞ্চে তখন আমরা দাঁড়িয়েছিলাম মাথা উঁচু করে। সার্বভৌমত্ব ছিল সুরক্ষিত।
আজ যখন আমরা জাতীয় জীবনে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থার মুখোমুখি, যখন অর্থনীতি, শিক্ষাঙ্গন ও আইনশৃঙ্খলা বিপর্যস্ত, যখন সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা নির্বাসিত, তখন অবশ্যই জিয়াউর রহমান ও তাঁর নেতৃত্বের কথা মনে পড়ে। বর্তমান অচলাবস্থা নিরসনে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচনের জন্য সমঝোতামূলক পরিবেশে গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া নির্ধারিত হোক, এটা আমাদের আশা। রাষ্ট্রপতি জিয়ার সার্থক উত্তরসূরি বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া এবং আগামীর নেতা তরুণ তারেক রহমান প্রয়াত নেতা
জিয়াউর রহমানের মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সংকটাবস্থায় বিরোধী দল ও জাতিকে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে উত্তরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, এটাই আজ আমাদের ঐকান্তিক কামনা ও বিশ্বাস।
ইনাম আহমদ চৌধুরী: অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।

Friday, May 24, 2013

প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে আমার দেশ-এর বক্তব্য

আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নির্ভীক সাংবাদিক কারান্তরীণ মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে 'হেফাজতের সঙ্গে মাহমুদুর রহমানের সম্পর্কের তদন্ত' শিরোনামে ২৪ মে বাংলাদেশ প্রতিবেদনের প্রথম পৃষ্ঠায় ছবিসহ যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন আমার দেশ-এর বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়েছিলেন। তবে তা আপনার পত্রিকার ভাষ্যমত এ বছরের মার্চে নয়, গত বছরের (২০১২) ২৯ জুন। তা কোনো গোপন সফরও ছিল না। সেই সফরের ছবি ও বিস্তারিত খবর পর দিন ফলাও করে আমার দেশ, নয়া দিগন্তসহ বিভিন্ন জাতীয় ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, গত মার্চ মাসে মাহমুদুর রহমান আমার দেশ কার্যালয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থায় সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে ছিলেন। স্কাইপ সংলাপ ছাপার পর গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্ট ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হলে তিনি নিরাপত্তার কারণে আমার দেশ কার্যালয়ে অবস্থান করেন। গ্রেফতার হওয়ার দিন (১১ এপ্রিল, ২০১৩) পর্যন্ত টানা চার মাস তিনি আমার দেশ কার্যালয়ে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করেন। এর মধ্যে মাত্র এক দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য মামলায় জামিন নিতে হাইকোর্টে গিয়েছিলেন। তার বাইরে তিনি চার মাসে আর দ্বিতীয়বার অফিস থেকে বের হননি। তাই মার্চে চট্টগ্রাম তথা হাটহাজারী যাওয়ার গল্প অবান্তর। তৃতীয়ত, আপনার পত্রিকায় 'গ্রেফতারের আগে হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বের হচ্ছেন মাহমুদুর রহমান' বলে যেভাবে ছবির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, তাতে যে কোনো পাঠকেরই মনে হতে পারে তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন। গ্রেফতারের পরে যে কোনো ব্যক্তির পক্ষে হাটহাজারী যাওয়া সম্ভব নয়। মাহমুদুর রহমান হাটহাজারীতে অন্য একটি আলোচনা সভায় যোগদান শেষে আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে শুভেচ্ছা সাক্ষাৎ করতেই তার পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসায় অত্যন্ত স্বল্পসময়ের জন্য গিয়েছিলেন। চতুর্থত, সম্পাদক মাহমুদুর রহমান যখন হাটহাজারী গিয়েছিলেন, তখন শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ বা শাহবাগিদের আত্দপ্রকাশ ঘটেনি। মহান আল্লাহ, মহানবী (সা.) ও ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগি ব্লগারদের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের ব্যাপারে বিস্তারিত জানাও যায়নি। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির মধ্যে একটি ছিল ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারচক্রের বিচার। গত ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে শাহবাগে ব্লগারচক্রের সমাবেশ শুরু হয়। এই ব্লগারচক্রের একজন রাজীব মারা যাওয়ার পর তার লাশ নিয়ে শাহবাগে জানাজা ও তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন টকশোসহ সভা-সেমিনারে নানা আলোচনার প্রেক্ষাপটে রাজীবসহ ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারচক্রের ব্যাপারে প্রথমে দৈনিক ইনকিলাবে খবর ছাপা হয়। পরে অনুসন্ধান চালিয়ে আমার দেশ তাদের তৎপরতা নিয়ে খবর ছাপে। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে আগেই হাইকোর্টের রায়ে ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারচক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। সুতরাং গত বছরের জুনে হাটহাজারী মাদ্রাসায় সেমিনারে যোগ দিতে মাহমুদুর রহমানের সফরের সঙ্গে পরবর্তীতে সৃষ্ট ঘটনার মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক সংযোগ ঘটানো অবান্তর। পঞ্চমত, গত ৬ এপ্রিল মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান তার নিজ নামে আমার দেশ-এ লেখা মন্তব্য প্রতিবেদনে (প্রকৃত গণজাগরণ এ রকমই) হেফাজতের কর্মসূচির প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট ও সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন। ধর্মপরায়ণ যে কোনো মানুষ তার ধর্মের প্রতি বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাবেন, এটাই স্বাভাবিক। ষষ্ঠত, ১১ মার্চ সন্ধ্যায় আমার দেশ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হেফাজতের সঙ্গে একটি বৈঠক নিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা একটি ব্লগে দেওয়া অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়েছে। মাহমুদুর রহমান মুক্ত থাকাবস্থায় 'আমাদের অর্থনীতি' পত্রিকায় ব্লগের বরাতে এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর তার ওপর ভিত্তি করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বক্তব্য দিয়েছিলেন। হানিফের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমান উকিল নোটিস পাঠালেও তিনি তার কোনো জবাব দেননি। বক্তৃতায় বলেছেন, ব্লগের খবরের ওপর ভিত্তি করে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের সূত্রে তিনি এটা বলেছিলেন। পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠালেও তারও প্রতিবাদ ছাপিয়ে বলেছিল, ব্লগের খবরের ওপর ভিত্তি করে তা তারা ছাপিয়েছিল। তারা নিজেরাও এর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

প্রতিবেদকের বক্তব্য : আদালতে দেওয়া হেফাজত নেতা বাবুনগরীর জবানবন্দি ও পুলিশের বরাত দিয়ে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে।

Source:
http://www.bd-pratidin.com/index.php?view=details&type=gold&pub_no=1101&cat_id=1&menu_id=1&news_type_id=1&index=11

Wednesday, May 22, 2013

মওদুদ আহমদ বলেছেন, আমার বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়।



স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল এমএ তাহেরের মৃত্যুদ-ের অনেক আগেই জিয়াউর রহমান তাঁকে মৃত্যুদ- প্রদানে মনস্থির করেছেন বলে মওদুদ আহমদের বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। মওদুদ আহমদ বলেছেন, আমার বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। আমার বইয়ে এ জাতীয় কোন বক্তব্য নেই। বুধবার দুপুরে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে ল’রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান এই বিএনপি নেতা।
এ সময় সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, এ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, গত ২০ মে ২০১৩ হাইকোর্ট বিভাগ কর্ণেল তাহেরের বিচারের ওপর যে রায় দিয়েছে সেখানে আমার গবেষণামূলক তথ্যভিত্তিক লেখা ‘ডেমোক্রেসি এ্যান্ড দ্যা চ্যালেঞ্জ অব ডেভেলপমেন্ট : এ স্টাডি অব পলিটিক্স এ্যান্ড মিলিটারি ইন্টারভেনশন্স ইন বাংলাদেশ’ বইটি থেকে যে উদ্ধৃতি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। তিনি বলেন, আমার বইয়ের কোথাও বলা হয়নি, যে এ বিচারের ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান পাকিস্তান ফেরৎ সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করতে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেয়ার জন্য মনস্থির করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, কর্নেল তাহেরের বিচারের বিষয়ে আমার বইয়ে লেখা প্রাসঙ্গিক অংশ ছিল ‘কর্নেল তাহেরকে সাজা দেয়ার প্রশ্নে পাকিস্তান প্রত্যাগত অফিসাররা সব সময় তাঁর মৃত্যুদ- চেয়েছে। এ ব্যাপারে জিয়া ৪৬ জন সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করেন। সকলে একবাক্যে তাহেরের জন্য চূড়ান্ত শাস্তির পক্ষে মতামত দেন।’
তিনি বলেন, আমার বইয়ে যা লিখেছি, তা ঠিকই লিখেছি। ‘যেহেতু বইটি ইংরেজীতে লেখা হয়েছিল তাই ইংরেজী প্রাসঙ্গিক অংশ ছিল-’When it came to the sentencing of Taher, the repatriated officers wanted him hanged- out of 46 senior army officers summoned by Zia to discuss the issue, all were in favour of this ultimate and final form of punishment.Õঢ়ঁহরংযসবহঃ.’ মওদুদ আহমদ আরও বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কর্নেল আবু তাহেরের আত্মত্যাগ ও সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি সকল প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু তার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে আজ থেকে ৪০ বছর আগে। তখনকার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সামরিক প্রেক্ষাপট আজকের চাইতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। এ বিচারকার্যকে তখনকার সময়ের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করা দরকার।
উল্লেখ্য, গত ২০ মে প্রকাশিত ১৯৮ পৃষ্ঠার রায়ের অভিমতে (১৮৮ নম্বর পৃষ্ঠা) বলা হয়, ‘১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই তথাকথিত ট্রাইব্যুনালের রায়ের আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদ- দিতে মনস্থির করেন। পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের তুষ্ট করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।’ ওই রায়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বই এবং আদালতে দেয়া তাঁর বক্তব্য, মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফসুল্্জ-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়। রায়ের অভিমতে বলা হয়, ‘জেনারেল জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি জেনারেল জিয়াউর রহমানের মুখ থেকে কথাগুলো শুনেছেন বলে তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন। তাই তাঁকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ থাকতে পারে না।’

Source: www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2013-05-23&ni=136350