Friday, March 1, 2013

বায়ান্নর ফেব্রুয়ারিতে নিহত হয়েছিল ৫ জন : এই ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের গুলিতে নিহত ৭৭


স্টাফ রিপোর্টার:



ভাষার মাস এ ফেব্রুয়ারিতে রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে ৭৭ নাগরিক। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গুলি করে পুলিশ গণহত্যায় মেতে উঠেছে। মাতৃভাষা বাংলার দাবির আন্দোলনে ১৯৫২ সালের এ ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল পাঁচজন। পুরো ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসনামলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহতের সংখ্যা ছিল দু’ডজনেরও কম। একাত্তরে যে গণহত্যা
চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী, এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে এক মাসে এত সংখ্যক নাগরিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে রাজপথে নিহত হয়নি। কেবল স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের এক সমাবেশে পুলিশ গুলি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করেছিল। এছাড়া বাংলাদেশে পুলিশের গুলিতে এতসংখ্যক লোকের মৃত্যু হয়নি।
এ ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের গুলিতে নিহতের অর্ধেকের মতো ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসল্লি। অন্যরা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী। মহান আল্লাহ, রাসুল (সা.) এবং পবিত্র কোরআন-হাদিস অবমাননার প্রতিবাদ জানাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমান রাজপথে নামলে পুলিশ গুলি করে এ হত্যাকাণ্ড চালায়। গত ১৬ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি ১১ দিনে ১৮ জন মুসল্লি পুলিশের গুলিতে নিহত হন। আর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে গতকাল সারাদেশে পুলিশের গুলি ও আওয়ামী ক্যাডারদের হামলায় নিহত হন কমপক্ষে ৫৬ জন। এছাড়া এ মাসে গুলিতে আহত হয়ে চার শতাধিক মানুষ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। অর্ধশতাধিক নাগরিকের কোনো খবরও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিরোধীরা রাজপথে নামলেই মুহুর্মুহু গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গ্রেনেড হামলা ও বেধড়ক লাঠিচার্জ করছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। আটকের পর খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।
গতকাল মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় জামায়াত-শিবিরসহ সাধারণ মানুষ। রাজপথে নেমে এসে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও ভাংচুর চালায়। আর তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি। সশস্ত্র হামলা করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা। এতে ৩২ জন নিহত হন। আর বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় নিহত হন ৫ পুলিশ সদস্য।
সারাদেশে পুলিশের গুলিতে নিহত সাঈদীভক্তরা হলেন ঢাকায় ৪ জন, সিরাজগঞ্জে ও দিনাজপুরে ২ জন করে, রংপুরে ৭, ঠাকুরগাঁওয়ে ৫, গাইবান্ধায় ৬, কক্সবাজারে ২, চট্টগ্রামে ৩, সাতক্ষীরায় ৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১, নাটোরে ১ ও নোয়াখালীতে একজন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন অর্ধশতাধিক নাগরিক।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে সিরাজগঞ্জের রুহুল আমীন, মোক্তার হোসেন, দিনাজপুরের হাসিনুর, রংপুরের মশিউর রহমান, মাহমুদ হাসান, আনোয়ারুল, শাকিল, সাদেক আলী, সাহেব আলী ও চট্টগ্রামের মেজবাহ উদ্দিন ও বাহার উদ্দিনের নাম পাওয়া গেছে।
নাস্তিক কিছু ব্লগার আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও কোরআন-হাদিস সম্পর্কে কটূক্তি করায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজপথে প্রতিবাদে নামে ওলামা-মাশায়েখ ও মুসল্লিরা। ইসলামের অবমাননাকারী এসব ব্লগারকে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে সারাদেশে মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। ১১ দিনে নিহত হন ১৮ জন। পুলিশের গুলিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জে ৫ জন, ২৩ ফেব্রুয়ারি পাবনায় ২ জন, ২২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় ৩ জন, ১৮ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় একজন এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি সিলেটে ৩ ও কক্সবাজারে ৪ জন মুসল্লি নিহত হন।

No comments:

Post a Comment