Wednesday, February 27, 2013

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে বিএনপির রাজনীতিতে জোবায়দার অভিষেক

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে বিএনপির রাজনীতিতে জোবায়দার অভিষেক
spacer image
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে বিএনপির রাজনীতিতে জোবায়দার অভিষেক
রুমানা জামান ও প্রীতম সাহা সুদীপ : আগামী ১৯ মার্চ বিএনপি’র জাতীয় কাউন্সিল। যেখানে দলের রাজনীতিতে অভিষেক হচ্ছে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের। শুধু তাই নয়, তাকে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দেওয়া হতে পারে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের একটি আসনে তাকে দলীয় প্রার্থী করার চিন্তাভাবনাও চলছে, বিএনপি’র একাধিক দায়িত্বশীল নেতা এবং ঘনিষ্ট কিছু সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব আভাস পাওয়া গেছে।

সূত্র মতে, গত ২৭ জানুয়ারি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় মার্চে জাতীয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর প্রয়োজন বিবেচনায় খালেদা জিয়াই পুত্রবধূ জোবায়দা রহমানকে রাজনীতিতে আনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশ্বস্ত কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শও করেছেন তিনি। পূত্রবধূকে রাজনীতিতে আনার বেগম জিয়ার এ প্রস্তুতি অবশ্য অনেক আগে থেকেই। গত ২০ নভেম্বর ছিল তারেক রহমানের ৪৮তম জন্মদিন। ওই দিনই পুত্র, পুত্রবধূ এবং নাতনি জায়মা রহমানের সাথে কুশলাদি বিনিময়ের এক পর্যায়ে তিনি নিজের আগ্রহের বিষয়টি প্রকাশ করেন এবং মায়ের আগ্রহে তারেক ইতিবাচক সম্মতি প্রকাশ করেন।

তারেক রহমানের সহধর্মীনীর রাজনীতিতে আসাকে ইতিবাচক ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। পাশা-পাশি বিএনপি’র প্রবীণ ও নবীন নেতারাও এ নতুন নেতৃত্বকে বেশ ইতিবাচক ভাবেই দেখছেন। তাদের মতামত জানার জন্যই টাইমসওয়ার্ল্ড২৪.কম একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছিল।
 



জাতিসংঘের দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত রাশেদ আহমেদ চৌধুরী জোবায়দার রাজনীতিতে আসা সম্পর্কে তার ব্যাক্তিগত অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে যেকোন ব্যাক্তিই রাজনীতিতে আসতে পারেন। পার্টি বা দেশের জনগণের কাছে যদি সে ব্যাক্তি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে অবশ্যই ইতিবাচক সাড়া পাবেন। তবে তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু সে সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে। কারণ যেকোন গণতান্ত্রিক দেশের ফাইনাল কোর্ট জনগণ। আর গণতন্ত্র অর্জনের থেকে তা রক্ষা করা কঠিন। তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রেখেই সকল সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


জাতিসংঘ মহাসচিবের কোটায় নিযুক্ত ঝানু এ কুটনীতিক বলেন, সেক্ষেত্রে জোবায়দা রহমান যোগ্য বলে আমি মনে করি কারণ তিনি যথেষ্ট সুশিক্ষিত, বুদ্ধিমতি এবং ভালো রাজনৈতিক বংশের মেয়ে। এমন একটি পরিবারের মেয়ে রাজনীতিতে আসলে দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ঘটবে। তাছাড়া গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য এই মূহুর্তে এমন একজনের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন ছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশেই এ ধরনের পরিবারভিত্তিক রাজনীতির নজির রয়েছে। প্বার্শবর্তী রাষ্ট্র ভারতেও নেহেরু থেকে ইন্দিরা। ধারবাহিকভাবে রাজীব। রাজীব থেকে সোনিয়া-রাহুল। পাকিস্থানে ভুট্টো থেকে বেনজির, বেনজির থেকে জারদারী-বিলাওয়াল এভাবেই কিন্তু রাজণেতিক পটপরিবর্তন চলে আসছে। সেক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নতুন নেতৃত্ব আসতেই পারে এটাই গণতন্ত্র। তবে তিনি যদি সত্যিই রাজনীতিতে আসেন তাহলে বিএনপির রাজনীতিতে রদবদল ঘটবে এবং নতুন ছোয়া লাগবে বলে আমি আশা করি।



রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান মিয়া বলেছেন, জোবায়দা রহমান যথেষ্ট বুদ্ধিমতি ও পরিশ্রমা। তিনি যদি আসলেই রাজনীতিতে আসেন তাহলে আমার বিশ্বাস অল্পদিনেই সব কিছু বুঝে নিতে পারবে। শ্বাশুরীর পাশে থেকে বিএনপির রাজনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন তিনি।


এ সময় মুনিরুজ্জামান তার ব্যাক্তিগত মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, তবে আমার মনে হয় দলের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় তারেক রহমান গুরুতর অসুস্থ্য থাকায়ই তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে বিএনপির রাজনীতিতে আসছেন।

বিএনপি’র কাউন্সিলে ডা. জোবায়দা রহমানের অভিষেক ঘটলে দলের সিনিয়র নেতারা বিষয়টি কিভাবে নিবেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটি’র সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দলের কাউন্সিলে সর্বসন্মতিক্রমে যে সিদ্ধান্ত হবে তা সবাই মেনে নিবে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সেখানে যোগ্য কোনো নেতৃত্ব আসলে অবশ্যই তাকে স্বাগত জানানো হবে।

বিএনপি’র সহ-সভাপতি শমসের মুবিন চৌধুরী বলেন, সকলের মতামতের ভিত্তিতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিএনপি’র কাউন্সিল সম্পন্ন হবে। সে কাউন্সিলে দলের বিভিন্ন পদে যারা মনোনীত হবেন তা দলের সবাই মেনে নিবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জেলার এক শীর্ষ নেতা বলেন, ডা. জোবায়দা রহমানের অভিষেকের বিষয়টি জানা নেই। তবে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে দলের যেকোন পদে যে কেউ অধিষ্ঠিত হতে পারেন। তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কাউন্সিলররা মনোনীত করলে তাকে অবশ্যই সন্মানের সাথে বরণ করে নেওয়া হবে।
 
        

জোবায়েদা রহমানের রাজনীতিতে আসা সম্পর্কে বিএনপি’র যুব বিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি টাইমস ওয়ার্ল্ডকে জানান, এ বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য আমার কাছে নেই। দলের নীতি নির্ধারকেরা যদি এ ধরণের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের তা জানার কথা। কিন্তু এ ধরণের কিছুই আমার জানা নেই। তবে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পেলে তখনই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি ও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেছেন, জোবায়দা রহমান রাজনীতিতে আসছেন এটা আমাদের দলীয় নেতৃবৃন্দের জন্য অত্যন্ত সুসংবাদ। তিনি শুধু বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিনীই নয় এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূই নন তিনি প্রয়াত নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মাহবুব আলী খানের মতো একজন দেশপ্রেমিক ও দায়িত্ববান অফিসারের কন্যা। তার পিতা মৃত্যুর আগ মুহূর্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্বও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। এমন একজন মহৎ ব্যক্তির কন্যা সত্যিই যদি রাজনীতিতে আসেন তাহলে জাতীয়তাবাদী শক্তি আরো শক্তিশালী হবে এবং বিএনপি’র রাজনীতিতে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। 

বিএনপির কাউন্সিলে জোবায়দা রহমানের অভিষেক
- See more at: http://www.timesworld24.com/cat-news-details.php?id=14466#.US4YU8FU9dg

Wednesday, February 20, 2013

রাজাকারের উকিল নোটিস

রাজাকারের উকিল নোটিস
গতকাল বাবা হজরত শাহজালালের (রহ.) পুণ্য মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে নিরন্তর গণসংযোগ শুরু করেছি। অনেক সময় তো স্বগৃহে কাটালাম। এবার রাস্তায় কিছু সময় কাটিয়ে দেখি মানুষের দয়া পাই কিনা। এতদিন আমায় ছোটরা কেউ কোনো টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করত না। কিন্তু এই মাসখানেক হলো কেন যেন অনেকেই সাহায্য করছে। এমনকি বাচ্চারাও অল্পবিস্তর টাকা-পয়সা দিচ্ছে। গতকাল ছিল জামায়াতের ডাকা হরতাল। বড় অস্থির অবস্থা। প্রায় এক সপ্তাহ আগে সিলেট সার্কিট হাউসে দুটি রুম বরাদ্দের চিঠি দিয়েছিলাম। ঢাকা থেকে রওনার সময় শুনলাম রুম বরাদ্দ হয়নি। এনডিসিকে ফোন করলে তিনি বললেন, আমি কিছু জানি না। এডিসি জেনারেল বলতে পারবেন। করলাম তাকে ফোন। ভদ্রলোক বললেন, মন্ত্রী আছেন, সচিবরা আছেন, তাই আপনাকে এলাও করতে পারছি না। ভাবলাম, হায়রে কপাল! দেশ স্বাধীন না হলে এসব লোক কোথায় থাকতেন? ওই এডিসি আজও কোনো কেরানি হতো কিনা বলতে পারি না। কিন্তু তার কথায় মনে হয়েছিল, সিলেট সার্কিট হাউস যেন তার বাবার। সে আমাদের মতোদের এলাও করে না। যেহেতু এলাও করেনি তাই হরতালের দিনে সার্কিট হাউসের বারান্দা এবং মাটিতে বসে কাজ সেরে রাস্তায় নেমে পড়েছি। পাঠক দোয়া করবেন, গণসংযোগে যেন জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারি।

মানবজীবন কত ক্ষণস্থায়ী। লিখতে বসে খবর পেলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শাজাহানের ছোট ছেলে প্রান্ত মোটরসাইকেল অ্যাঙ্েিডন্টে মারা গেছে। ও যখন ৪-৫ বছরের তখন গামছা মাথায় শ্যালো নৌকায় বসে থাকত। ছোট্ট পুতুলের মতো দেখতে। খুব কষ্টের দিনগুলোতে ও বাবার সঙ্গে এখানে সেখানে যেত। মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে ওর বাবা শেখ শাজাহানেরও এমন বয়স ছিল। যুদ্ধটা এত ব্যাপক ও বিশাল ছিল যে, কে শেখ শাজাহান জানার উপায় ছিল না। শাজাহানকে চিনেছি যুদ্ধের পর। কাউলজানির কলিবুর রহমান বাঙালি, ডা. নাজির আহমেদ রঞ্জু, ডা. শাহাজাদা চৌধুরী বরং আমার আগের চেনা। আওয়ামী লীগ ছেড়ে যখন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ করি সে সময় শাজাহান ছিল খুবই সক্রিয়। ২০০০ সালের পথযাত্রায় দারুণ প্রতিকূল অবস্থায়ও সে ছায়াসঙ্গী ছিল। অল্পদিনে বিত্তশালী হওয়ার চিন্তায় জমিজমা কেনাবেচা ও আরও অনেক কিছু করে কেমন যেন হয়ে গেছে। কিন্তু তবু কোনো এক সময় ভীষণ ভালো মানবিক গুণসম্পন্ন একজন রাজনৈতিক কর্মী ছিল সে। তার পুত্রের অকাল মৃত্যুতে বুক চৌচির হয়ে গেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন ছোট্ট এই ছেলেটিকে মাফ করেন, পরিবার নিয়ে শাজাহানকে এই শোক সইবার শক্তি দান করেন, আমিন।

গত পর্বে লিখেছিলাম 'যতকাল ইসলাম থাকবে ততকাল ইসলামী দল থাকবে'। কিছু কিছু লোক ধর্মীয় কথা বলে অথবা যথার্থই ধর্মের প্রতি অনুরক্ত। আমার যে পাঠক সম্পর্কে লিখেছিলাম তিনি ফোন করেছিলেন, 'বজ ভাই, আপনার কথা আমি বুঝেছি।' বুঝলেই ভালো। আমি চাই চেতনা জাগাতে। পাঠকের চেতনায় রাজনীতি করা, রাজনীতিতে সাহায্য করা ধর্মের অঙ্গ হলে হবে, না হলে হবে না। আমার কি আসে যায়। জীবনে কোনো দিন জেনেশুনে জ্ঞানত কোনো লোভ বা প্ররোচনায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে পা বাড়াইনি। সত্যকে মর্যাদা দিতে কত কষ্ট করেছি, এখনো কতজনের মতের বিরুদ্ধে চলছি, আর কতকাল চলতে হবে সে শুধু আল্লাহই জানেন। গত ১৪ তারিখ বৃহস্পতিবার ভালোবাসা দিবসে বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারতে গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে ঐশী আর ওশী নামের দুটি বাচ্চার সঙ্গে দেখা। তারা আমার গামছার দল ভালোবাসে। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে ওরা নাকি আমার দলকে সাহায্য করবে। ফেরি থেকে নামতেই কয়েকজন বৃদ্ধ হাত চেপে ধরে বলেছিল, 'বাবা, ইসলামী দল নাকি সব বন্ধ হয়ে যাবে। মসজিদে গেলে নাকি বাধা দেবে।' তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। শতকরা ৯০ জন মুসলমানের দেশ। আল্লাহর নাম নিতে, মসজিদে যেতেও বাধা হবে, এমন শঙ্কা মানুষের মনে, তাহলে আমরা আছি কোথায়? কিন্তু কেউ এই শঙ্কা দূর করতে চেষ্টা করছে না। অথচ এটা যে সত্য নয়, মানুষের মনের শঙ্কা দূর করা উচিত। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত আর ইসলাম এক নয়, অবহেলিত জনসাধারণকে কে বুঝাতে যাবে? রাজনৈতিক দল এবং সরকারের কাছে সাধারণ মানুষ যেন একেবারেই ফালতু। তবে সবাই মিলে শাহবাগে একত্র হয়ে আওয়াজ তুলতে পারলে সব শক্তি চামচিকার মতো একেবারে চুপসে যায়। আজ প্রায় ২০ বছর যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার নিয়ে কথা বলছি, দালালদের শাস্তি চাইছি, তাদের সঙ্গে নিতে না করছি, কেউ শুনছে না। মুক্তিযুদ্ধে আমরা যদি পরাজিত হতাম তাহলে পাকিস্তান আমাদের কী করত? আমাদের কি মাথায় তুলে নাচত, নাকি টুকরা টুকরা করত? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের হেফাজতে সন্তানসম্ভবা ছিলেন। তার না হয় কিছুই হতো না, স্বামী-সংসার নিয়ে হেসে-খেলে কাটাতেন। কিন্তু আমরা যারা যুদ্ধের ময়দানে পাকিস্তান হানাদারদের মোকাবিলা করছিলাম আমাদের কী হতো? জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত বাংলাদেশ বিপ্লবী সরকারের কী হতো? যেসব সিএসপিসহ অন্যরা বিপ্লবী সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল তাদের কী হতো? আজ যারা বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছে তাদের কী হতো? পাকিস্তান থাকলে আমরা যারা বাংলাদেশের পক্ষে ছিলাম তাদের দুরবস্থা হতো, শাস্তি হতো। যারা পাকিস্তান রাখতে চেয়েছিল, যারা পাকিস্তানের জন্য খুন-খারাবি করেছে বাংলাদেশ হওয়ায় তাদের শাস্তি না হয়ে পুরস্কার পাবে কেন? যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে মাত্র ৬-৭ জনের বিচার করলেই হবে? সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। তাহলে যুদ্ধাপরাধী তো নিরূপণ করতে হবে। এই ৬-৭ জন নিয়েই তো আর যুদ্ধাপরাধ হয়নি। অন্তত ৬ হাজার অথবা ৬ লাখ তো হবেই। ৬০ লাখ লোকও যদি পাকিস্তানের পক্ষে না থেকে থাকে, তাহলে পাকিস্তান থাকল কী করে? আমার জানা এক পরিবারে ইদানীং মারাত্দক বিরোধ চলছে। পূর্ণ বয়সী এক ছেলের বাবা ছিলেন প্রাইমারি শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭০-৮০ টাকা বেতন পেতেন। একদিনও স্কুল করেননি, মাসে মাসে বেতন তুলেছেন। এখন পিতা-পুত্রের বিরোধ। পুত্র বলছে, যেহেতু তুমি মাস্টার হিসেবে যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের বেতন নিয়েছ তাই তুমি রাজাকার। এখন আমি কী বলি? বাংলাদেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি জনাব সাহাবুদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক গুরুত্বপূর্ণ? যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আসামি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে বয়সের, বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য প্রধানমন্ত্রীর বিয়াই মোশারফ হোসেনও সেই বয়সের। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী চিটাগাংয়ে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ঠিক তেমনি বৃহত্তর ফরিদপুরের সম্ভ্রান্ত জমিদার নুর মিয়া ফরিদপুর জেলা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানের ছেলে হিসেবে বাবার প্রতি অনুগত মোশারফ হোসেন যতটা সম্ভব বাবাকে সমর্থন করেছেন, সাহায্য করেছেন। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও তার বাবাকে সাহায্য করেছেন। তাহলে শুধু একজনের বিরুদ্ধে মামলা হবে কেন? সবকিছু কেমন যেন সাজানো নাটকের মতো মনে হচ্ছে। দেশবাসীর কাছে আকুল মিনতি, সব আমি করব বা করতে পারব তা তো নয়। যতটুকু করার আমি ততটুকু করেছি। বাকিটুকু আপনারা করুন।

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের পক্ষ থেকে উকিল নোটিস পেয়েছি। যুদ্ধাপরাধী বলায় তিনি আমার নামে মামলা করবেন। সারা দেশ রাজাকারের ফাঁসি চায়। সারা দেশ যখন রাজাকার নামে মাতোয়ারা তখন একজন যুদ্ধাপরাধী রাজাকারকে রাজাকার বলায় উকিল নোটিস পেতে হয়। জনাব মহীউদ্দীন খান আলমগীর কতবড় পণ্ডিত, কি তার বংশ-পরিচয়, এসবে আমার দরকার নেই। আমার দরকার তিনি সিএসপি পরীক্ষা দিয়ে পাকিস্তান সুপিরিয়র সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন। সুনামের সঙ্গে পাকিস্তানে চাকরি করেছেন। অনেক তকমা বা প্রশংসা পেয়েছেন। ২৬ মার্চ আমরা যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করি তখনো তিনি পাকিস্তানি কর্মচারী ছিলেন। স্বাভাবিক কারণেই বাংলাদেশের শত্রু। তার সিনিয়র বা জুনিয়র অনেক সিএসপি জীবন বাজি রেখে মুজিবনগর সরকারের নির্দেশে রণাঙ্গনে ছিলেন। আর মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ যারা পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে হানাদার বাহিনী বা পাকিস্তানের আজ্ঞাবহ হিসেবে প্রশাসন চালিয়েছে, যেহেতু পাকিস্তান হেরেছে, সেহেতু পাকিস্তানি অনুগত অফিসারদের দশবার ফাঁসি হওয়া উচিত। সেদিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক প্রশ্ন করেছিলেন, আমরা তো জানতাম না মহীউদ্দীন খান আলমগীর পাকিস্তানে চাকরি করেছেন। শুধু চাকরি করেনি, মাস্টারি, ডাক্তারি নয় ডিসিগিরি করেছেন। এখনো যেমন ডিসি-ওসিরা লাঠিয়াল হয়ে সরকার টিকিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে, ভদ্রলোক তেমন করেছেন। তাই উকিল নোটিস পেয়ে জানিয়ে দিয়েছি। তিনি যে নিরন্তর পাকিস্তানের হয়ে চাকরি করেছেন, পাকিস্তানের প্রতি অনুগত ছিলেন তার গেজেট-ফেজেট আছে দেখে নিতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারের গেজেটেও তার নাম আছে, পূর্ব পাকিস্তান গেজেটেও আছে। কুকর্ম করলে নাম থাকবেই। হানাদারদের পক্ষে রাজাকার হলে যদি ফাঁসি হয়, ডিসি হলে দশবার ফাঁসি হলেও শাস্তি কম হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আলশামস ছিল সব থেকে ছোট দরের খুনি। ওসি, ডিসি, এসপিরা তো অনেক বড় দরের ঘাতক বা খুনি। আগে মনে হতো আমি যেভাবে যুদ্ধ দেখেছি, অন্যায়-অত্যাচার, খুন-খারাবি সবাই বোধহয় সেভাবেই দেখেছে, এটাই আমার ভুল। মাস্টার, ডাক্তার, কেরানি, ইঞ্জিনিয়ার তারা প্রশাসন চালায় না, তারা চলে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রশাসন চালান। ছোট ম্যাজিস্ট্রেটের ছোট কাজ, বড় ম্যাজিস্ট্রেটের বড় কাজ। এডিসি, ডিসি র্যাঙ্কের অফিসাররা জেলার পুরো প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করে। কাউকে গ্রেফতার করা, কাউকে মুক্তি দেওয়া তাদের কাজ। চার পয়সার দাম নেই, জেলা সদরে রাজসিংহাসনে বসে মানুষের নিবর্তনমূলক আটকাদেশে সই করে, 'আমি সন্তুষ্ট হইয়া আপনাকে এত দিনের আটক আদেশ দিলাম।' সেই ডিসি পদে মহীউদ্দীন খান আলমগীর ছিলেন। পাকিস্তান হানাদারদের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন, তো কে সম্পৃক্ত? টাঙ্গাইলে যেমন আশিকুর রহমান ডিসি ছিলেন, তাকে সে সময় গ্রেফতার করা হয়েছিল। পাকিস্তান প্রশাসনের ডিসি যুদ্ধাপরাধীদের ওই সময়ই ফাঁসিতে ঝুলানো উচিত ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দয়ায় ওরা বেঁচে গেছে কিন্তু বেশি বাড়লে আল্লাহই তাকে শায়েস্তা করেন। তা না হলে শাহবাগ জাগবে কেন? আমরা পাকিস্তানের দোসর সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই। আইনে ফাঁসি হলে হবে আর কোনো খায়খাতির নেই। যারা রাজাকারকে রক্ষা করতে চাইবে তাদেরও বিচার চাই।

ব্লগার রাজীব হায়দার নিহত হয়েছে। তাতে শাহবাগ উত্তাল। এমন হওয়াই স্বাভাবিক। কোনো সতীর্থ জীবন দিলে সহযোদ্ধাদের এমন করেই বুক ফাটে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীবের বাড়ি গিয়ে বলেছেন, 'এ দেশে জামায়াতের রাজনীতি করার অধিকার নেই।' বিশ্বজিতের বাড়িতে গিয়ে বলতে পারতেন, 'ছাত্রলীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই।' আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে কথাটি মানালেও, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মানায় না। মানুষ শঙ্কায় আছে, এসব করে গণতন্ত্রকে কেউ হত্যা করতে চায় কিনা? বয়স তো আর কম হলো না, এখন যাওয়ার সময়। যে সময় মানুষ লোভে ডুবে থাকে, চোখে রঙিন চশমা পরে তখনই মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করেছি। এখন আবার মরণের ভয় কি? তাই আত্দার তাগিদেই বলছি। শুধু পশুর মতো বেঁচে থাকার জন্য ইমান-আমান সবকিছু কেন বিসর্জন দেব। আওয়াজ উঠেছে, ইসলামী দল বাতিল করতে হবে। কিন্তু হিন্দুর দল থাকবে, খ্রিস্টানদের দল থাকবে, শুধু শতকরা ৯০ জন মুসলমানের দেশে মুসলমানের দল থাকবে না_ কেমন সব আজব কথা! ব্লগার রাজীব মারা গেছে, তার জানাজার যদি দরকার হয় তাহলে কেন জাতীয় ঈদগাহের মতো পবিত্র স্থানে করা হলো না, শাহবাগ চত্বরে কেন? একনাগাড়ে ১২ দিন জনসমাগম হলে পায়খানা, পেশাব, থু থু ফেলে জায়গাটি কি নোংরা হয়নি? নোংরা জায়গায় নামাজ চলে না। জানাজা কোনো মশকারি নয়, জানাজা ফরজে কেফায়া, চার তাকবিরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। কোন সে টেডি ইমাম তিন তাকবিরে নামাজ শেষ করলেন? নামাজ পড়বেন অজু করবেন না, কয়জন সেখানে অজু করতে পেরেছিল? নারী-পুরুষ, হিন্দু, মুসলমান একসঙ্গে জানাজা হয়? কেন এমন করা হলো? জায়গাটা একটু ঝাড়পোছ করে সবাই অজু করে নিলে কী এমন ক্ষতি হতো? হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের জানাজা থেকে আলাদা করা দরকার ছিল। যত আধুনিকই হন পবিত্র ইসলাম পরপুরুষের পাশে কোনো নারীর অবস্থান অনুমোদন করে না। কোনো মুর্দার চারদিকে জানাজা হয় না। এটা কোনো কাবাঘর নয়। কেন এমন হলো? অনেকেরই এখন কেবলা ঠিক নেই, ইমান দুর্বল হয়ে গেছে। আমার রাজনৈতিক পিতা বঙ্গবন্ধুর বাড়ির মসজিদের কেবলাও উত্তর-পশ্চিমে। যতক্ষণ বেঁচে আছি কেবলা নিয়ে বাঁচব, একচুল নড়চড় করতে পারব না। মুক্তিযুদ্ধের সময় শিয়ালের মতো পালাইনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ইঁদুরের গর্তে লুকাইনি। চার তাকবিরের জানাজা মশকারি করে তিন তাকবিরে পড়াতে গেলেন? এ জন্য আর কেউ প্রতিবাদ না করলেও আমি করব।

আলোচিত শাহবাগ ও বর্তমান তরুণ প্রযন্ম

আলোচিত শাহবাগ ও বর্তমান তরুণ প্রযন্ম
 
 
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে সত্য কথা, ইতিহাসের কথা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরার ব্যাপারে বিএনপির ব্যর্থতা শত ভাগ। এতে কোন সন্দেহ নেই।বিএনপিতে রয়েছেন সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা ও খেতাবপ্রাপ্ত কমান্ডাররা। বিএনপি এ কথাটা ক্ষমতায় থাকাকালীন  জোরগলায় বলতে পারেনি।  কেন যেন মনে হয়, হয়তো বিএনপি এ সত্য কথাটা বলতে লজ্জা পায়। মুক্তিযুদ্ধকে দলের একমাত্র আদর্শ হিসেবে প্রচার করতে চরম ব্যর্থ হয়েছে। মেজর জিয়া সাহেব মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছেন এবং এই মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন। এ কথাটা আজ দেশের মানুষ ভুলতে বসেছে। দিন দিন ইতিহাস পাল্টাচ্ছে। এছাড়াও  বিএনপি মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের এবং দলের প্রতিষ্ঠাতার গৌরব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির মহান সম্পদ হলো মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। তিনি জিয়াউর রহমানকে বিপদের দিনে সমর্থন করেছেন এবং দোয়া করেছেন। নতুন প্রজন্মকে জিয়ার নাম ভুলিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস রচনার জন্যই আজ কথিত শাহবাগ রচিত হয়েছে। শুধুমাত্র বিএনপি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিবৃতি দিয়েছে। মেজর জিয়া সাহেব আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য জাতীয় ঐক্য ও সমন্বয়ের রাজনীতি শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের মাফ করেছিলেন আর জিয়া সাহেব সব মত ও পথের লোকজন নিয়ে দল গঠন করেছিলেন বিভেদ দূর করে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু আদর্শ ছিল মুক্তিযুদ্ধ।  জননেতা মওলানা ভাসানী তার দলের প্রতীক ধানের শীষ জিয়াউর রহমানকে দিয়ে গেছেন। বিএনপির দলটিকে মনে হচ্ছে এই দলের অতীতও নেই,ভবিষ্যৎও নেই। আরো মনে হয় সামনে তিমির অন্ধকার।

বর্তমানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক শত শত  বই রচিত হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ওই সব রচিত হয়েছে ভাড়াটিয়া লেখক বা বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে। যারা যুদ্ধ করেনি,যদিও তারা এখন বিশাল তবিয়তে বহাল আছেন। তরুণদের বুঝাতে হবে আমরা আধুনিক বাংলাদেশের প্রতিনিধি। এখন তথাকথিত আবেগের সময় নয়, এখন দেশগড়ার সময়। দেশকে নিয়ে যেতে হবে হতে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশ। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গরিব দেশ ছিল।
ব্লগিং করে দেশ গড়া যাবে না। কথা বলা যাবে, স্লোগান দেয়া যাবে। ব্লগে হযরত রাসূল সা. ও তার স্ত্রী তথা আমাদের মা এবং মহান আল্লাহপাকের বিরুদ্ধে যেসব অশ্লীল প্রচারণা করেছে তা বাংলাদেশের সব মানুষের মনে আঘাত হেনেছে। মানুষ কত জঘণ্য হতে পারে! হয়তো ব্লগারদের বাবা-মা,ও মুরব্বিরা নিশ্চয়ই ব্লগের এসব বিষয় জানেন না বা বুঝেন ও না। কে বা কারা তাদের সন্তানদের নবী, রাসূল ও আল্লাহর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে তা পিতা-মাতাকে অবশ্যই জানতে হবে। কারা শিক্ষা দিল ধর্মহীনতা ? কোথায় পেল এ আচরণ ? না বুঝেই যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবি তুলেছে তরুণেরা অত্যন্ত সরলভাবে।  সারা দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। কিন্তু বিচার আন্দোলনের গভীরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করছে তা জাতিকে এবং জাতির তরুণসমাজকে অবশ্যই বুঝতে হবে। তারা বাংলাদেশেরই সন্তান। তারা আগামীর কর্নধার। তাদেরকেই নতুন করে গড়তে হবে সোনার বাংলাদেশকে।
         ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনী কারা করেছিলেন, সে সম্বন্ধে আমাদের ধারণা স্বচ্ছ নয়।আমরা তরুন আমরা তখন ছিলাম না,আমাদের বাবা-মা র ও বিয়ে হয়নি। তবে রাজাকারের সঠিক নির্ভুল বাংলা অর্থ কি ? তা আমি জানিনা।তবে জানি,  রাজাকাররা চেয়েছিলেন পাক বাহিনীর সহযোগিতা করে ভারতীয় বাহিনী প্রতিরোধ করতে। রক্ষা করতে চেয়েছিলেন সাবেক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখন্ডতাকে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এদের সংখ্যা নাকি ছিল ৯৩ হাজার। এদের নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। পরে ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি। এই চুক্তি অনুসারে পাক বাহিনীর সবাইকে মুক্তি দেয়া হয়। কাউকেই বিচার করা হয় না যুদ্ধাপরাধী হিসেবে। বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিকে সিমলা সম্মেলনে ডাকা হয়নি। কারণ, পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল কেবল ভারতীয় বাহিনীর কাছে। পৃথকভাবে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কাছে নয়। এতে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অবদান স্বীকৃতি পেতে পারেনি। সত্যি কি যুদ্ধ আমাদের সাথে হয়নি ?

মূলত ‘প্রজন্ম’ শব্দটা হয়ে উঠছে যথেষ্ট গোলমেলে। কারণ, গড়পড়তা ৩০ বছর সময়কে ধরা হয় একটি প্রজন্ম। আজকে যারা তরুণ, অতীতে তারা ছিল শিশু। আর ভবিষ্যতে হয়ে পড়বে অতরুণ। একটা দেশের জনসংখ্যায় তরুণরাই সব নয়। এর মধ্যে থাকে নানা বয়সের মানুষ। কোনো দেশেই কেবল তরুণ প্রজন্মকে নির্ভর করে দেশ চলে না। নানা প্রজন্মের ওপর নির্ভর করেই চলতে হয় একটি দেশকে। কিন্তু শাহবাগ চত্বরে জমেছে নাবালকদের ভিড়। যাদের নেই কোনো ভোটাধিকার। তাদেরকে চিৎকার করতে শোনা যাচ্ছে রাজাকারদের ফাঁসি চাই বলে। আরো আছে “তুই রাজাকার” । এখানে আর যা-ই বলা যাক, জনমতের অভিব্যাপ্তি বলে ধরা যেতে পারে না। তরুণ দেশের প্রতিটি দলেই আছে। আর তরুনরাই দলের মহামন্ত্র। যারা শিবির করছে, রাস্তায় ঢলে পড়ছে পুলিশের গুলি খেয়ে, তারাও কম তরুণ নয়। সব তরুণ একভাবে চিন্তা করছে না। কোন তরুণ বুঝের আবার কোনটা নাবুঝের।  ইসলামী ছাত্র শিবিরের ছেলেরাও তরুণ প্রজন্মেরই অংশ। তাদেরও আছে বিশেষ স্বপ্ন; বিশেষ আদর্শবাদ। ইসলামী ভাবার্থে তারা পরিচালিত। এটা অস্বীকার করা যাবেনা। আদর্শ মজবুত তাদের। যার জন্য তারাও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে করছে আন্দোলন। তাদের চেতনা শাহাদাত,যা অন্য কোন দলের মোটেও নেই। আমরা সবাই তাদের সাথে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তাদের আদর্শনিষ্ঠাকে অশ্রদ্ধা করতে পারি না। যারা শিবির করে প্রাণ হারাচ্ছে, তাদের মায়েরাও যে অশ্রুপাত করছেন না তা নয়।অতীতের  প্রজন্মের সাথে বর্তমান প্রজন্মের ফারাক অনেক। অতীতেও ছাত্ররাজনীতি ছিল। কিন্তু তখন ছাত্ররা ছিল অনেক গণতন্ত্রমনা।
শাহবাগের ব্লগার রাজীব হায়দারের ইসলামবিরোধী ধৃষ্টতাপূর্ণ লেখা পড়ে দেশের ধর্মপ্রাণ ও বিবেকবান মানুষ বিক্ষুব্ধ হলেও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় নেতা-মন্ত্রীরা তার জন্য আহাজারি করছেন। চরম ধর্মদ্রোহী রাজীব আল্লাহ, রাসুল সা. ও তার সম্মানীত স্ত্রী তথা আমাদের মা , সাহাবায়ে কেরাম, কোরআন, নামাজ, রোজা ও হজসহ ইসলামী বিধি-বিধান ও অনুশাসনের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও বিষোদগারপূর্ণ কল্পকাহিনী লিখে দেশের সর্বস্তরের মুসলমানদের ঘৃণা কুড়ালেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের কাছে ‘শহীদী’ মর্যাদা পাচ্ছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে রাজীব হত্যাকে। তাহলে নাস্তিকরা বুদ্ধিজীবী ?
ঢাকাসহ সারা দেশে তরুণদের সমাবেশ এখন ক্ষমতাসীনরা কূটকৌশলের মাধ্যমে কঠোরভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত করছে। জনবহুল রাস্তাগুলো বন্ধ করে নিরপত্তা প্রদানসহ প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। গত ১৪-০২-১৩-এর জন্য মোমবাতি কেনা হয় ১৫ লাখ টাকার। সাধারণ ব্লগারদের উচ্ছ্বাসকে তারা ছিনতাই করে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে জনসাধারণকে আবারও বিভ্রান্ত করছে বলেই সচেতন মহল মনে করছেন। প্রাথমিক পর্যায়ের কয়েকজন ব্লগারকে এরই মধ্যে এখানে আর দেখা যাচ্ছে না। জনৈক ব্লগার একজন প্রকৌশলী পল্লবীতে খুন হয়েছেন। এখন এই তরুণদেরই ঠিক করতে হবে যেন কোনো ধরনের অস্তিত্ব সঙ্কটে না পড়ে তাদের ভাবমর্যাদা। তরুণদের ইতিহাস-সচেতন হতে এবং বিবেকের দাসত্ব করতে হবে দেশপ্রেমের তাগিদেই। ইতিহাসে বিজয়ী বীর হতে হলে কোনো সংকীর্ণ দলীয় ইচ্ছার দাসত্ব না করে নৈতিকতার বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই বিপ্লব এবং বিপ্লবীরা চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে।


hy×vciva wePv‡ii bv‡g Zi“Y‡`i †avuKv †`qv n‡”Q: kwdK †ingvb



†W¯‹ wi‡cvU© : GKvˇi gvbeZv we‡ivax Aciv‡ai wePv‡ii Rb¨ MwVZ ÔAvš—R©vwZK hy×vciva U«vBeybvj-1Õ-Gi mv‡eK †Pqvig¨vb wePvicwZ wbRvgyj nK bvwm‡gi ¯‹vBc msjvc dvum, miKv‡ii f~wgKv wb‡q NvZK `vjvj wbg©~j KwgwUi c«wZwµqv Ges U«vBe¨ybv‡ji Kvh©µg †`L‡Z ZywK© c«wZwbwa `‡ji XvKv mdi wb‡q evsjv‡`‡k Av‡jvPbv-mgv‡jvPbv Ae¨vnZ i‡q‡Q| †iwWI †Zniv‡bi m‡½ GK mv¶vZKv‡i Gme wb‡q K_v e‡j‡Qb evsjv‡`‡ki wewkó mvsevw`K, ivR‰bwZK we‡kølK I Rbwc«q wUwf Dc¯’vcK kwdK †ingvb| Zvi c~Y© mv¶vZKviwU Avgv‡`i mg‡qi  cvVK‡`i Rb¨ GLv‡b c«‡kœvËivKv‡i Dc¯’vcb Kiv n‡jv :

c«kœ : U«vBe¨ybvj-1-Gi mv‡eK †Pqvig¨vb wePvicwZ wbRvgyj nK bvwmg Ges †ejwRqv‡g emevmKvix AvBbRxex W. Avng` wRqvDwÏb A‡kvfb I bxwZweewR©Z KvR K‡i‡Qb e‡j Awf‡hvM K‡i‡Q NvZK `vjvj wbg©~j KwgwU (Nv`vwbK)| †mBm‡½ Zviv G e¨vcv‡i miKv‡ii Ae¯’vb ¯úó Kivi `vwe Rvwb‡q‡Q| Nv`vwb‡Ki GB `vwei g~j KviY wK?

kwdK †ingvb : †`Lyb! miKv‡ii c«wZ Nv`vwb‡Ki GB `vwei g~j KviYUv Kx †mUv ZvivB fv‡jv ej‡Z cvi‡e| G welqwU evB‡i †_‡K Abygvb KivUv wVK n‡e bv| Z‡e Nv`vwbK‡K Avgiv c«kœ Ki‡Z cvwi, MZevi hLb AvIqvgx jxM miKvi ¶gZvq wQj ZLb †Kb GB gvgjvwU Kiv nqwb? c«_g †_‡KB Avgiv †`L‡Z cvw”Qjvg GB gvgjvi bv‡gi g‡a¨B GKUv fÊvwg ev wg_¨v RWoZ Av‡Q| †hgb International Crimes Tribunal. wKš‘ GUv †h wKfv‡e  ÔInternationalÕn‡jv Zv Avwg A‡bK‡KB eySv‡Z cvwi wb| Avwg Rvwb hy×vciv‡ai wePv‡i Awfhy³‡`i c‡¶ we«‡Ub †_‡K GKRb AvBbRxex Avm‡Z †P‡qwQ‡jb, wKš‘ Zv‡K Avm‡Z †`qv nqwb| hw` Zv‡K Avm‡Z †`qv n‡Zv †m‡¶‡ÎI nqZ ej‡Z cviZvg GUv GKUv International Tribunal.

Avcbv‡`i nq‡Zv g‡b _vK‡e hLb AvMiZjv lOhš¿ gvgjvi wePvi nw”Qj ZLb cvwK¯—vb miKvi Ugvm DBwjqvgmb‡K jÛb †_‡K Avm‡Z w`‡qwQj| †m iKg †Kv‡bv wPÎ wKš‘ Gevi Avgiv †`L‡Z †cjvg bv|  d‡j  Kx K‡i hy×vciv‡ai wePv‡i MwVZ U«vBe¨ybvj ÔAvš—R©vwZKÕ n‡jv GUv †Zv Avgiv eywS bv!  myZivs Nv`vwb‡Ki GB wee…wZi KviY n‡”Q, AvIqvgx jxM miKvi hy×vciv‡ai wePv‡ii e¨vcv‡i wb‡RivB Awfhy³ n‡Z hv‡”Q KviY AvIqvgx jxM miKvi `yBevi ¶gZvq †_‡KI hy×vciv‡ai wePvi K‡iwb| †mRb¨ Zviv Aek¨B Awfhy³ n‡e| †`‡ki gvbyl Zv‡`i‡K Awfhy³ Ki‡e| mevB hy×vciv‡ai wePvi Pvq wKš‘ identify Ki‡Z n‡e Kviv mwZ¨Kvi Acivax wQj Ges Zv `ª“Z wb®úwË Ki‡Z n‡e|

GLv‡b Avwg g‡b Kwi‡q w`‡Z PvB, wKDevq wd‡`j K¨v‡÷«v hLb wecøe K‡ib Zvi `yÕgv‡mi g‡a¨ wePv‡ii ivq Ges Zv Kvh©Ki Kiv n‡qwQj| Z‡e Avgvi g‡b nq AvR‡K Nv`vwb‡Ki †hUv mgm¨v n‡q `vuWo‡q‡Q †mwU n‡”Q-Zviv eyS‡Z cvi‡Q †h, GB wePvi c«wµqv †kl ch©š— †av‡c wUK‡e bv| Avi †mR‡b¨B Zviv GLb †_‡KB miKvi‡K `vqx Ki‡Q Ges miKv‡ii Ae¯’vb ¯úó Kivi K_v ej‡Q| Avwg G e¨vcv‡i Nv`vwbK‡KI `vqx KiwQ|


c«kœ : hy×vciv‡ai wePv‡ii eZ©gvb †c«¶vc‡U miKvi G wePv‡ii cwimgvwß Uvb‡Z cvi‡e wKbv Zv wb‡q wewfbœ gnj †_‡K mskq c«Kvk Kiv n‡”Q| G mskq c«Kvk KivUv wK †hŠw³K bvwK miKv‡ii Ici evOwZ Pvc m…wó Kiv n‡”Q? KviY wePvi c«wµqv †Zv miKv‡ii B”Qv Abyhvqx Pj‡e bv; GUv Pj‡e AvB‡bi wbR¯^ MwZ‡Z|

kwdK †ingvb :  AvB‡bi wb‡`©kbvq Pj‡Z n‡e Ges GUv ¯^”Qfv‡e n‡Z n‡e, Revew`wnZv _vK‡Z n‡e| †`‡ki gvby‡li Kv‡Q hv‡Z GUv M«nY‡hvM¨ nq †mw`‡K †Lqvj ivL‡Z n‡e| wKš‘ GLb †h cwiw¯’wZ m…wó n‡q‡Q Zv‡Z gvbyl  g‡b Ki‡Q m¤ú~Y© ivR‰bwZK Kvi‡Y wePvi Kiv n‡”Q, †`‡ki Kvi‡Y bq| ivR‰bwZK Kvi‡Y wePvi n‡”Q e‡jB gvbyl g‡b K‡i| AvIqvgx jxM miKvi Zv‡`i `jxq dvq`v †jvUvi Rb¨ GB wePv‡ii Av‡qvRb K‡i‡Q|

Avcwb GKwU welq ïb‡j nvm‡eb| welqwU G iKg- wKQy w`b Av‡M evsjv‡`‡k GKUv f~wgK¤ú n‡q †Mj| ZLb †`‡ki gvbyl ej‡jv- wbðqB GLb AvIqvgx jxM ej‡e †h, Ôhy×vcivax‡`i wePvi evbPv‡j GB f~wgK¤ú n‡q‡Q|Õ AvR‡KB Avwg Av‡iKwU †ek nvm¨Ki K_v ïb‡Z †cjvg| K_vwU G iKg-Avcwb Rv‡bb †h XvKvq A‡bK U«vwdK R¨vg nq| c«avbgš¿xi mwPevjq †_‡K cy‡iv Gqvi‡cvU© †ivW ch©š— fxlY R¨vg wQj| IB mgq ev‡mi g‡a¨ GK f`«‡jvK wPZKvi I wPjøv-cvjøv ïi“ K‡i ej‡jb, GBme R¨v‡gi KviY wK Rv‡bb? GB †h evm, U«vK, †eweU¨vw•, wmbGbwR ev U¨vw•i hZ W«vBfvi Av‡Q Zv‡`i Kvi‡Y GB R¨vg n‡”Q| G me W«vBfv‡ii †KD hy×vcivax‡`i wePvi Pvq bv e‡jB R¨vg n‡”Q| †`Lyb!  †`‡k GLb hy×vcivax‡`i wePvi c«m½wU wb‡q G iKg †RvKm ‰Zwi n‡q‡Q| AvR‡K hy×vcivax‡`i wePvi‡K GKwU nvm¨Kvi RvqMvq wb‡q hvIqvi Rb¨, †RvK‡m cwiYZ Kivi Rb¨ m¤ú~Y©fv‡e AvIqvgx jxM miKvi `vqx Ges Zviv Rv‡b gyw³hy‡×i bv‡g e¨emv K‡i Zv‡`i‡K Gfv‡e ¶gZvq _vK‡Z n‡e| Zviv gyw³hy× wb‡q e¨emv Ki‡Q|

c«avbgš¿x †kL nvwmbv wb‡R gyw³hy‡× hvbwb| Avgvi c«kœ- wZwb gyw³hy‡×i mgq †Kv_vq wQ‡jb? Zvi evevi K_v bvBev wRÁvmv Kijvg| Zvi ¯^vgxI gyw³hy‡× hvbwb| me‡P‡q nvm¨Ki K_v n‡”Q- Zv‡`i wei“‡× AvIqvgx jxM  Awf‡hvM Ki‡Q hviv gyw³hy‡× wM‡qwQj| AvIqvgx jxM miKv‡ii c¶ †_‡K hviv gyw³hy× K‡iwQj Zv‡`i‡K ÔcvwK¯—v‡bi PiÕ ejv n‡”Q| †Zv GB †h `jxqKiY, wg_¨vPvi I Amf¨ fvlvq K_vevZ©v Zviv ej‡Qb- Avwg †iwWI †Zniv‡bi gva¨‡g Gm‡ei Zxe« c«wZev` Rvbvw”Q|

c«kœ : Av”Qv, m¤cÖwZ Zyi‡¯‹i GKwU c«wZwbwa`j evsjv‡`k mdi K‡i‡Q Ges Gi m`m¨iv Avš—R©vwZK Aciva U«vBe¨ybv‡j wM‡q wePvic«wµqv ch©‡e¶Y K‡i‡Qb| G QvOv, †`‡ki wewfbœ ¸i“Z¡c~Y© e¨w³i m‡½ ‰eVK K‡i‡Qb Ges gvbeZvwe‡ivax Aciva wePv‡ii wel‡q bvbv †LvuRLei wb‡q‡Qb| Zv‡`i G ZZciZv‡K Avcwb wKfv‡e †`L‡Qb? ZywK© c«wZwbwa`‡ji md‡ii g~j KviY Kx e‡j Avcwb g‡b K‡ib?

kwdK †ingvb : †`Lyb, GLv‡b B‡Kvbwg÷ e‡j‡Q †h, †Kb Zviv ¯‹vB‡ci K‡_vcK_b c«Kvk K‡i‡Q| B‡Kvbwg÷ e‡j‡Q, GB wePv‡i Rywiiv †bB-GUv GKwU welq| Avi wØZxq welqwU n‡”Q, GB wePv‡ii Ici wKQy †jv‡Ki Rxeb-g…Z¨y wbfi« Ki‡Q| A_©vZ wKQy †jv‡Ki c«vY`Ê n‡Z cv‡i Ges Zv Kvh©KiI n‡Z cv‡i| myZivs GLv‡b gvbeZvi c«kœwU Lye eO GKwU welq| Avi  †m R‡b¨B B‡Kvbwg÷ g‡b Ki‡Q, gvbeZvi ¯^v‡_©B GB wi‡cvU© c«Kvk Kiv DwPZ| Avi †mBfv‡eB Avcbvi c«‡kœi Dˇi Avwg ej‡Z Pvw”Q- Zyi¯‹ †_‡K †h c«wZwbwa `j evsjv‡`‡k G‡m‡Q- Zv‡`i D‡Ïk¨ n‡”Q gvbeZvi wei“‡× Aciv‡ai wePvi Ki‡Z wM‡q gvbeZvi welqwU wVKg‡Zv iw¶Z n‡”Q wKbv Zv †`Lv| Avi G wePv‡ii welqwU †Zv Aek¨B ¯^”Q nIqv DwPZ|

Zyi‡¯‹i c«wZwbwa `j evsjv‡`‡k wKfv‡e G‡m‡Q †mUv eo K_v bq, Zviv †Kb G‡m‡Qb †mUv eO K_v| Zyi‡¯‹i c«wZwbwa `j wegvbe›`i †_‡K On-arrival Visa wb‡q G‡m‡Qb †mUv †Zv Zv‡`i †Kvb µwU bq; Zviv wbqg †g‡bB  G‡m‡Qb| Zviv †hUv ch©‡e¶Y K‡i‡Qb ev hv †`‡L‡Qb Zvi wfwˇZ hw` Zviv e‡jb, Ôn¨vu mewKQy wVKfv‡e n‡”QÕ Zvn‡j †mUv †Zv fv‡jv K_v| G‡Z fq cvIqvi †Zv wKQy †bB| Z‡e Zviv fq cv‡”Q GB R‡b¨ †h, U«vBeybvj-1 Gi mv‡eK †Pqvig¨vb wePvicwZ wbRvgyj nK Ges e«v‡mj‡mi AvBbÁ Avn‡g`  wRqvDÏxb ¯‹vB‡c †h K_v¸‡jv e‡j‡Qb Zv‡Z mewKQy dvum  n‡q †M‡Q|

G c«m‡½ Avwg Av‡iv ej‡Z PvB, U«vBeybv‡ji mv‡eK †Pqvig¨vb wbRvgyj nK bvwmg ¯‹vB‡c †h K_v¸‡jv ej‡jb †m fvlv¸‡jv Avcbviv GKUy †Lqvj K‡i †`Lyb-Zviv †Zv Avm‡j K_vB ej‡Z cv‡ib bv, ï× K‡i evsjv ej‡Z cv‡ib bv, ewikv‡ji †`nvwZ evsjvq Zviv nv-nv, wn-wn K‡i nvm‡Qb| GB †Zv Zv‡`i †hvM¨Zv| G‡`i j¾v Kiv DwPZ| Zyi‡¯‹i c«wZwbwa`j hw` welqwU †`‡L _v‡K Zvn‡j Zviv  ey‡S hv‡eb, Avm‡j GLv‡b wK n‡”Q! AvR‡K Avwg †iwWI †Zniv‡bi gva¨‡g †`‡ki Zi“Y mgvR‡K ej‡Z PvB-  hy×vciv‡ai wePv‡ii bv‡g †Zvgv‡`i‡K †avuKv †`qv n‡”Q| c«K…Z hy×vciv‡ai wePvi fwel¨‡Z  wbðqB weGbwc Ki‡e e‡j Avwg Avkv Kwi| †Kbbv weGbwc n‡”Q gyw³hy‡×i `j| Avi Zvi †bZv wQ‡jb gyw³hy‡×i Ab¨Zg †bZv| wZwb bq gvm hy× K‡i‡Qb| Avwg Zi“Y mgvR‡K Aby‡iva Kie Zviv †hb G e¨vcv‡i ‰ah©aviY K‡i|

c«kœ : G wePvi c«wµqv e‡Üi wel‡q Avš—R©vwZK Pvc Av‡Q e‡j †Kv‡bv †Kv‡bv gnj †_‡K ejv nq| Aek¨, c«Kvk¨ †Kv‡bv e³e¨ †bB| GLb ZywK© c«wZwbwa`‡ji mdi‡K wK G Pv‡ci Ask g‡b Kiv hvq?

kwdK †ingvb : †`Lyb, hLb 1/11 n‡qwQj ZLb AvIqvgx jxM Avš—R©vwZK Pvc cQ›` K‡iwQj| hLb 1971 mv‡j gyw³hy× n‡qwQj ZLb we«‡Ubmn eû †`‡ki GgbwK Av‡gwiKviI mvnvh¨ QvOv Avgiv nq‡Zv ¯^vaxbZv jvf Ki‡Z cviZvg bv| †Kbbv Zviv Avgv‡`i ¯^vaxbZvi e¨vcv‡i Avš—R©vwZK c«fve m…wó K‡iwQj| wew”QbœZvev`x Av‡›`vjb mvaviYZ mn‡hvwMZv QvOv mdj nq bv| Avqvij¨v‡ÛI G ai‡bi Av‡›`vjb mdj nqwb| myZivs Avš—R©vwZK GKUv c«fve _vK‡eB KviY wek¦ GLb Lye †QvU n‡q †M‡Q| me Lei mevB cO‡Q, Rvb‡Q| †m‡¶‡Î we‡k¦i Ab¨vb¨ †`kI Rvb‡Q Avgv‡`i †`‡k wK n‡”Q|  Gi g‡a¨ †Zv †`v‡li wKQy †bB eis GUv fv‡jv GKUv w`K| Avi Gme wel‡q Avš—R©vwZKfv‡e Bivb †nvK, we«‡Ub †nvK, Av‡gwiKv †nvK ev BD‡iv‡ci Ab¨ †Kvb †`k †nvK Zviv †Zv KvR Ki‡Z Pvq| c«vq GK †KvwU evsjv‡`wk GLb Avš—R©vwZKfv‡e KvR Ki‡Q| hw` IBme †`k †_‡K †Kv‡bv c«wZwbwa`j G‡m evsjv‡`‡k wK n‡”Q Rvb‡Z Pvq †mUv‡K †Zv Avgv‡`i Avb‡›`i m‡½ eiY †bq DwPZ| Zv‡`i‡K ej‡Z n‡e, †`‡Lv Avgiv wK KiwQ Ges †Zvgiv †`‡Lv Gi g‡a¨ †Kv‡bv fyj-µwU cvI wKbv| hw` fyj-µwU †_‡K _v‡K Ges †Zvgiv †`‡L _vK Zvn‡j †mUv ej Avgiv ms‡kvab Kie| GB g‡bvfve Avgv‡`i _vK‡Z n‡e| wKš‘ †mUv AvIqvgx jxM miKvi ej‡Z cvi‡e bv| Avwg Av‡MB e‡jwQ †h, GKUv `jxq c«wµqvq G&eB Pvi Pj‡Q|

c«kœ : wePvicwZ wbRvgyj n‡Ki ¯‹vBc msjvc c«Kvk nIqvi ci wZwb c`Z¨vM K‡i‡Qb…..

kwdK †ingvb :  bv, wZwb wePvi‡Ki c` †_‡K c`Z¨vM K‡ibwb| wZwb U«vBeybvj †_‡K c`Z¨vM K‡i‡Qb wKš‘ wZwb nvB‡Kv‡U©j PvKwi wVKB eRvq †i‡L‡Qb| GB †`‡k Lye Kg †jvKB c`Z¨vM K‡i| Zviv evWo, MvWo, Gqvi KwÛkb G¸‡jv Pvq| Zv‡`i wb‡R‡`i  †Kv‡bv †hvM¨Zv †bB|

c«kœ : wR, Avwg †m K_vB ejwQjvg †h, wePvicwZ wbRvgyj n‡Ki ¯‹vBc msjvc c«Kvk nIqvi ci wZwb U«vBeybv‡ji wePvi‡Ki c` †_‡K c`Z¨vM K‡i‡Qb| cieZ©x‡Z Avš—R©vwZK gvbevwaKvi ms¯’v¸‡jvi c¶ †_‡K wePvi c«wµqv wb‡q c«kœ †Zvjv n‡q‡Q| welqwU‡K Avcwb wKfve †`‡Lb?

kwdK †ingvb : †`Lyb, jÛ‡bi B‡Kvbwg÷ Ges Av‡gwiKvi d‡ib A¨v‡dqvm© G c«kœ Zy‡j‡Q †h,  GB wePvi c«wµqv c«_g †_‡K Avevi ïi“ nIqv DwPZ KviY GUv ¯^”Q nqwb| c«_g †_‡KB wePvi c«wµqv †Mvj‡g‡j Ges `jxq ¯^v_©c«‡Yvw`Z wQj Ges †`‡k I we‡`‡k wKQy AÁ‡jvK Øviv GB wePvi KvR m¤úbœ Kiv nw”Qj| myZivs hw` Avš—R©vwZKfv‡e GLb `vwe I‡V Avwg †mUv‡K ïf `vwe eje|

Avgvi K_v n‡”Q, †`k‡K Avi KZKvj wef³ K‡i ivLv n‡e? Avwg PvB hZ ZvOvZvWo m¤¢e GB wePvi c«wµqvUv m¤úbœ †nvK hv‡Z mevB GKvZ¥ n‡q †`‡ki Rb¨ KvR Ki‡Z cv‡i| Avwg GLv‡b GKwU K_v g‡b Kwi‡q w`‡Z PvB, 1945 mv‡j wØZxq wek¦hy‡×i mgq we«‡Ub Ges Rvg©vwb ci¯ú‡ii wei“‡× jOvB K‡iwQj| Avi 1966 †Z jÛ‡b hLb wek¦Kvc dyUe‡ji dvBbvj †Ljv nw”Qj Avwg ZLb †mLv‡b wQjvg| Avwg †`Ljvg we«wUk I Rvg©vb `k©K GKvZ¥ n‡q wek¦Kv‡ci dvBbvj †Ljv Dc‡fvM Ki‡Q| †mLv‡b †Kv‡bv †f`v‡f` ev MvwjMvjvR wQj bv| †Zv hy×vciv‡ai Bm¨y wb‡q Avgv‡`i †`‡k GB †h wefvRb c«wµqv Pj‡Q †mUvB wKš‘ AvIqvgx jx‡Mi GKgvÎ m¤^j| KviY Zv‡`i‡Zv †Kv‡bv Ae`vb †bB, GBme wb‡qB †Zv Zv‡`i †eu‡P _vK‡Z n‡e| Zviv wØZxq Av‡iKwU gyw³hy× †NvlYv K‡i‡Q| Kvi wei“‡× Zviv wØZxq gyw³hy× †NvlYv K‡i‡Q! Avgvi g‡b n‡”Q Zviv wb‡R‡`i wei“‡× G iKg GKwU †NvlYv w`‡q‡Q|

c«kœ: MZ wbe©vP‡b AvIqvgx jx‡Mi †bZ…Z¡vaxb 14 `jxq gnv‡RvU Zv‡`i wbe©vPbx †gwb‡d‡÷v‡Z A½xKvi K‡iwQj- hy×vcivax‡`i wePvi Kiv n‡e| A_©vZ GUv wQj GKwU ivR‰bwZK G‡RÛv Ges †m Abyhvqx wePvi Pj‡Q e‡j A‡b‡KB Awf‡hvM Ki‡Qb| G Awf‡hvM‡K Avcwb wKfv‡e †`L‡eb? G QvOv, Ggb GKwU AvBwb c«wµqv‡K ivR‰bwZK G‡RÛvq cwiYZ Kiv KZUv †hŠw³K?

kwdK †ingvb : bv,  GUv‡K ivR‰bwZK ejvUv wVK n‡e bv|  †`Lyb, †mB mgq hvi gv-evev, AvZ¥xq-¯^Rb gviv wM‡qwQj Zv‡`i g‡b wKš‘ GKUv †¶vf _vK‡eB| KviY Zv‡`i g‡b n‡e Avgvi gv gviv †M‡jb, evev gviv †M‡jb wKš‘ Zvi †Kvb wePvi n‡jv bv| myZivs GUv‡K †`‡ki `vwe e‡j g‡b Ki‡Z n‡e| Z‡e †`‡ki `vwe †gUv‡bvi Rb¨ `jxqKiY KivUv DwPZ nqwb e‡j Avwg g‡b Kwi| myZivs AvIqvgx jx‡Mi †gwb‡d‡÷v‡Z hvB _vKyK bv †Kb, GUv †`‡ki GKUv `vwe wQj Ges GLbI Av‡Q| Avgiv Avkv Kwi weGbwc fwel¨‡Z ¶gZvq G‡j `ª“Z G wel‡qi wePvi Ki‡e Ges wb®úwË n‡e| Zv bv n‡j †`k wPiKvj wef³ †_‡KB hv‡e| wbDRwgwWqvwewW

¯’vbxq mgq : 1302 NÈv , 20 †deªæqvwi  2013

Tribunal verdict: A political vendetta

Tribunal verdict: A political vendetta

Last Updated : Wednesday, February 20, 2013 12:23 AM

Dr. Ali Al-Ghamdi


In a previous article, I drew attention to a verdict issued by Bangladesh’s war crimes tribunal. The International Crimes Tribunal sentenced Abul Kalam Azad to death in absentia in its first verdict on those accused of committing crimes against humanity during the 1971 Liberation War. Azad’s whereabouts are unknown.

In that article I criticized Mahfuz Anam, editor and publisher of the Bangladeshi newspaper The Daily Star, for his celebration and delight over the verdict. In an article written in his newspaper, Anam said that there are millions of reasons to celebrate the verdict. But I pointed out that there were no grounds for a celebration as the verdict was the culmination of a political vendetta against opponents. I also noted that the verdict was against the true spirit of the general amnesty declared by Sheikh Mujibur Rahman, the founder of Bangladesh.

Today, I am writing about another verdict issued by the tribunal; this time against Abdul Kader Mullah, the assistant secretary general of the Jamaat-e-Islami of Bangladesh. He was sentenced to life imprisonment. Following the verdict, a large number of people turned out in Shahbag Square in downtown Dhaka in protest rallies seeking the death penalty for him.

Once again, it is with astonishment and surprise that I ponder the real motive of those who organized these protest rallies and strikes. I also denounce the intense desire for seeking a vendetta against political opponents. I am not the only one who opposes this. Veteran Bangladeshi political leader and lawyer Moudud Ahmad has also taken this position. Ahmad earlier worked as secretary of Sheikh Mujibur Rahman. Later, he held higher positions in successive governments. He was a minister in the government of Gen. Ziaur Rahman and then became prime minister under President Gen. H.M. Ershad. He also served as justice minister in the government of Begum Khaleda Zia and was a member of the executive committee of her Bangladesh Nationalist Party. Being an eminent lawyer, he was one of the architects of the country’s constitution during the period of Sheikh Mujibur Rahman.

Recently, Ahmad criticized the Hasina government for its position that the verdict against Mullah was not sufficient. He also slammed those who instigated youths to take to the streets to seek the death penalty for Mullah. Ahmad demanded the judges at the tribunal tender their resignation in protest against the position of the government and its allies with regard to the verdict.

Apart from this, human rights organizations as well as lawyers who appeared for Mullah have stated clearly that the accused did not receive a fair trial. They are of the view that the trial proceedings did not meet even the most basic criteria of justice because it was the government which appointed the judges, prosecutors and investigators who are all loyal to it.

Even so, the government is not satisfied with the verdict and some government officials and parties in the ruling coalition have stated that they would only be satisfied with a death sentence for Mullah and others who are accused of war crimes. They made such statements even before the trial began.

This was evident from the Skype scandal exposed by the British magazine The Economist a few months ago. The magazine disclosed Skype conversations between ICT’s presiding judge Mohammed Nizamul Huq and Ahmed Ziauddin, a war crimes expert of Bangladeshi origin living in Brussels, Belgium. This eventually led to the resignation of the presiding judge.

This is a clear manifestation of the government’s desire to kill justice before killing its political opponents, including Abdul Kader Mullah, who said that he was not in Dhaka during the Liberation War, which resulted in the creation of Bangladesh. During that time, Mullah was in a remote rural region of the country. His lawyers also argued in court that he arrived in the capital city and joined Dhaka University only after the creation of Bangladesh. Mullah lived in the house of a fellow university student until his graduation. He then served as a teacher in a school under the Bangladesh Border Guards. Eventually, he turned to journalism and served for two years as deputy chairman of the Journalists’ Federation in Dhaka. Not a single case was registered against him during the period of his unblemished public life spanning over 40 years.

But now he has been given a life sentence in prison as the result of a flawed trial that met no known international criteria. There were no international judges serving at the tribunal and international lawyers were not allowed to witness the court proceedings.

During a meeting with Shafique Ahmed, Bangladesh’s minister of law, justice and parliamentary affairs, Lord Carlile, a member of the British House of Lords, demanded that the Bangladesh government issue a formal invitation to a delegation of lawyers from the House to view the trial proceedings of those accused of war crimes at the tribunal. This request was made following an oral assurance given by Shafique Ahmed when the two met in London. But no written confirmation was ever issued.

World renowned lawyer and expert on war crimes Toby Cadman was also denied permission to witness the trial proceedings. He was denied an entry visa and was forced to return home after landing at Dhaka airport. A delegation of Turkish lawyers visited Bangladesh and held talks with the concerned parties. They made some statements in support of the defendants but this did not result in changes in the position of the government.

It is obvious that the Bangladeshi authorities are determined to get rid of their political opponents. They take no notice of the criticism of international human rights and Islamic organizations nor of local organizations even though this may result once again in internal conflict.

— Dr. Ali Al-Ghamdi is a former Saudi diplomat who specializes in Southeast Asian affairs. He can be reached at algham@hotmail.com

Sunday, February 17, 2013

‘ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও সম্পর্ক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই’

‘ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও সম্পর্ক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই’
সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
কূটনৈতিক রিপোর্টার: দু’দিনের সফর শেষে ঢাকা ছাড়ার আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বললেন, বাংলাদেশ কিংবা ভারত যেখানেই ক্ষমতার পালাবদল ঘটুক না কেন তাতে দু’দেশের সম্পর্কে কোন পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই। তিনি নিজেকে আশাবাদী মানুষ দাবি করে বলেন, দু’দেশের সম্পর্ক এখন আর কোন বিশেষ দল বা জোটের গণ্ডির মধ্যে নেই। তা জনগণের পর্যায়ে। এ সম্পর্কের ভিত্তি এখন অনেক মজবুত। গতকাল সন্ধ্যায় হোটেল রূপসী বাংলায় জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে অপর এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আ বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোই আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবে। দিল্লি আশাবাদী সবার অংশগ্রহণে এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, নির্বাচনের ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্টের রেটিফিকেশন আর তিস্তা চুক্তি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় বিরোধী জোট বা বিএনপি চেয়ারপারসনের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছেন কিনা? জবাবে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে সলমন খুরশিদ বলেন, বিষয় দু’টি নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ জন আকাঙক্ষা রয়েছে। তিস্তা আর ল্যান্ড বাউন্ডারির রেটিফিকেশন হলে বিএনপি নেত্রী খুশি হবেন বলেই মনে হয়েছে তার। শাহবাগ আন্দোলন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর গতি প্রকৃতি কোনদিকে যাবে তা কেউই আঁচ করতে পারছেন না। তবে আমি তরুণদের যে স্লোগান আর উচ্ছ্বাস দেখেছি তাতে মনে হয়েছে তারা একটি আদর্শের পেছনে রয়েছে। সীমান্ত হত্যা বিশেষ করে নিরীহ কিশোরী ফেলানী হত্যার তদন্তের অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সলমন খুরশীদ বলেন, সীমান্তে যে কোন হত্যায় তিনি বরাবরই উদ্বিগ্ন। এটা যে কোনভাবে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার আশ্বাস দেন তিনি। ফেলানীর বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, হত্যাকারীর অবশ্যই শাস্তি হবে। টিপাইমুখ বাঁধসহ ভারতের সঙ্গে সব অমীমাংসিত ইস্যু বিসয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উজানে কোন বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণ করে ভারত এ দেশের কোন ক্ষতি করবে না। এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
সীমান্ত হত্যা ও চোরাচালান বন্ধের খালেদার আহ্বান: সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমন খুরশিদকে সীমান্ত হত্যা ও চোরাচালান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল বিকালে তার গুলশানের বাসভবনে এক বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি। প্রায় সোয়া ঘণ্টার বৈঠক শেষে এ কথা বলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বৈঠকে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের সীমান্তে হত্যা অব্যাহত থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করলে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় না আসায় ভারত সরকারও অসন্তুষ্ট। এ সমস্যা সমাধানে ভারত সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া তিস্তা চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি শমসের মবিন বলেন, খালেদা জিয়া মাদকসহ চোরাচালান বন্ধের আহ্বান জানালে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঐকমত হন। এছাড়া বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া বিএনপির আগামী ১৯শে মার্চের কাউন্সিলে ভারতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অংশগ্রহণের জন্য ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। আমি সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ধারাবাহিক সফর করবো। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফরে এসেছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশে এটা আমার প্রথম সফর।  বৈঠকে সীমান্ত সমস্যা, তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। ভারত সরকার এই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখার জন্য বিরোধী দলের ভূমিকা রয়েছে। এই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকার দলের সঙ্গে বিরোধী দলের আলাপ-আলোচনা করে সমাধান বের করতে হবে। বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠকে কোন এজেন্ডা ছিল কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন এজেন্ডা ছিল না। বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেই এসেছিলাম।

শাহবাগ স্কয়ার পাকিস্তান কেন জানতে আগ্রহী নয়?

 
 
 পারভেজ হুদভয় | তারিখ: ১৮-০২-২০১৩
 
শাহবাগ স্কয়ার। এটা আবার কোথায়? আবদুল কাদের মোল্লা। এটা আবার কে?
গতকাল (১৪ ফেব্রুয়ারি) ইসলামাবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে গল্প করছিলাম। ওরা কেউই শাহবাগ স্কয়ার বা কাদের মোল্লার নাম শোনেনি। অবশ্য ওরা তাহরির স্কয়ারের কথা জানে; জানে সম্প্রতি আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকর হওয়ার খবরও। কিন্তু ওরা যখন জানতে পেল, শাহবাগ স্কয়ার জায়গাটি বাংলাদেশের ঢাকায়, তখন ওদের মধ্যে আরও জানার আগ্রহ দেখতে পেলাম না। কিন্তু যে মুহূর্তে আমরা গল্প করছিলাম, তখন ঢাকা মহানগর প্রতিবাদ-বিক্ষোভে টগবগ করে ফুটছিল। ৫০ হাজার থেকে এক লাখের মতো মানুষ সমবেত হয়েছেন শাহবাগে। তাঁরা দেশাত্মবোধক গান গাইছেন, কবিতা আবৃত্তি করছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসের কথা বলছেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি-দাওয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আবদুল কাদের মোল্লার পরিণতি।
ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের পাঁচটিতে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দেন। ঢাকার মিরপুর এলাকায় সাধারণ নাগরিকদের ওপর বর্বরতা চালানোর জন্য তিনি মিরপুরের কসাই (বুচার অব মিরপুর) নামে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে একজন কবিকে (মেহেরুননেসা) গলা কেটে হত্যা করা, ১১ বছর বয়সী এক বালিকাকে ধর্ষণ করা এবং ৩৪৪ জন মানুষকে হত্যা করা। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল এই কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। কিন্তু শাহবাগ স্কয়ারের বিক্ষোভকারীদের কাছে তাঁর এই শাস্তি যথেষ্ট নয়, তাঁরা কাদের মোল্লার ফাঁসি চান। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী সহিংস প্রতিবাদ জানায় এই রায়ের বিরুদ্ধে; তারা প্রতিবাদ-বিক্ষোভ জানাতে মিছিল করে। কিন্তু প্রচুর অর্থকড়ি খরচ করা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক জনমতকে প্রভাবিত করার জামায়াতি প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে।
কৌতূহলের বিষয়, কাদের মোল্লার মামলাটির দিকে দৃষ্টি পড়েছে তুরস্কের সরকারের। তুর্কি প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল গত মাসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বরাবর একটি চিঠি লিখে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সৌভাগ্যের বিষয়, তুর্কি প্রেসিডেন্টকে এ ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে একা, পৃথিবীর আর কোনো দেশ গণহত্যাকারীদের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা দেখায়নি।
কাদের মোল্লার নিয়তি নিয়ে পাকিস্তান কোনো আগ্রহ দেখায়নি। এ দেশের সংবাদমাধ্যম এ ব্যাপারে নীরব; পাকিস্তানের পররাষ্ট্র বিভাগ এ নিয়ে কোনো বিবৃতিও প্রকাশ করেনি। এটি বেশ পরিহাসের বিষয় যে পূর্ব পাকিস্তানের বিহারিদের পাকিস্তান যেভাবে ভুলে গেছে, তেমনিভাবে ত্যাগ করেছে কাদের মোল্লাকেও। অথচ কাদের মোল্লা ছিলেন দ্বিজাতিতত্ত্বের সমর্থক, অখণ্ড পাকিস্তানকে রক্ষা করার জন্য তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করেছেন। ১৯৭১ সালে বাঙালিদের গণহারে হত্যা করা, বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করার কাজে পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগিতা করেছে স্থানীয় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মিলিশিয়া গ্রুপগুলো—রাজাকার, আলবদর, আলশামস। এসব মিলিশিয়া বাহিনীর অনেক সদস্য জামায়াতে ইসলামীরও সদস্য ছিলেন।
শাহবাগ স্কয়ারের আন্দোলন নিয়ে পাকিস্তানিদের আগ্রহের অভাব যেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার দূরত্বের মতোই প্রকট। পাকিস্তানের ৫৪ শতাংশ মানুষ অন্য ৪৬ শতাংশ মানুষের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেছে—আমাদের জাতীয় ইতিহাসের সেই পর্বটি পাকিস্তানিদের কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন রয়ে গেছে। তাদের কাছে বাংলাদেশ দিব্যি হতে পারে চাঁদের উল্টো পিঠের কোনো দেশ।
প্রশ্ন হলো: কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম কিছু পাঠ্যবই, যেগুলো পড়ানো হয় পাকিস্তানের স্কুলগুলোতে। ১২ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য পঞ্চম শ্রেণীর সমাজবিদ্যার পাঠ্যবইয়ের (ইংরেজি ভাষায়) শুরুতেই রয়েছে হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যকার পার্থক্যের বিবরণ (যেমন: একজন হিন্দু লোক যখন মারা যায়, তখন তার লাশের সঙ্গে তার বউকেও জ্যান্ত পোড়ানো হয়, কিন্তু মুসলমানরা এটা করে না)। পাকিস্তানের লুকোনো শত্রুদের থেকে হুঁশিয়ার থাকার প্রয়োজনীয়তা আর অবিরাম জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার গুরুত্বের কথা। অবিভক্ত, ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান সম্পর্কে পুরো বইটিতে রয়েছে মোট তিনটি মাত্র বাক্য। শেষ বাক্যটি হলো: ‘ভারতের সহযোগিতায় পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে গেছে।’
অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যবই পাকিস্তান স্টাডিজে (ইংরেজি ভাষায়) বিষয়টি আছে আরও সংক্ষেপে; লেখা রয়েছে: ‘সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের কিছু নেতা ভারতের সক্রিয় সহযোগিতায় পাকিস্তান ভাঙতে এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।’ নবম-দশম শ্রেণীর (উর্দু ভাষায়) পাঠ্যবইতে আছে সবচেয়ে বিস্তারিত; পাকিস্তান ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হয়েছে প্রায় তিন পৃষ্ঠাজুড়ে। এই অংশের উপশিরোনামগুলো এ রকম: ক. ইয়াহিয়া খান সরকারের অযোগ্যতা-অদক্ষতা; খ. ব্যবসা-বাণিজ্যে হিন্দুদের আধিপত্য; গ. হিন্দু শিক্ষকদের অত্যন্ত খারাপ, দুরভিসন্ধিমূলক ভূমিকা; ঘ. ভাষাগত সমস্যা; ঙ. ভারতীয় হস্তক্ষেপ; চ. ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন।
পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্ম ইতিহাসের শুধু কিম্ভূত কেরিক্যাচারই দেখে এসেছে, তাই তাদের পক্ষে ১৯৭১ সালকে বোঝা অসম্ভব। কিন্তু আমি কী করে তাদের দোষ দেব? আমরা যারা গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বড় হয়েছি, আমরা মনেপ্রাণে জানতাম যে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে একটা দেশ হয়েছিল বটে, কিন্তু সেটা কোনো জাতি হয়ে ওঠেনি। পাকিস্তানে আজকের তরুণ প্রজন্ম কল্পনাও করতে পারবে না, সেই সময় পশ্চিম পাকিস্তানিদের মধ্যে বাঙালি-বিদ্বেষ ছিল কত ব্যাপক। গভীর লজ্জার সঙ্গে আমি নিজেও আজ স্বীকার করি, ছোট্ট অবুঝ বালক বয়সে আমিও অস্বস্তি বোধ করতাম বাঙালিদের দেখে; ভাবতাম, এই ছোট ছোট, কালো মানুষগুলো আমার দেশের লোক হয় কী করে! আমরা এমনই এক বিভ্রমের শিকার ছিলাম যে মনে করতাম, ভালো মুসলমান আর পাকিস্তানিরা সবাই হবে লম্বা-চওড়া, সুন্দর, তারা কথা বলবে চোস্ত উর্দুতে। রেডিও পাকিস্তানে যখন বাংলা সংবাদ পড়া হতো, অদ্ভুত উচ্চারণের ভাষাটি শুনে আমার স্কুলমেটদের কেউ কেউ হাসাহাসি করত।
অনেক পাকিস্তানি পূর্ব পাকিস্তানকে হারানোর জন্য দুঃখ করে। কিন্তু তাদের অনেকেই আজও মনে করে, ১৯৭১ সালে যা ঘটেছে, তা আমাদের একটা সামরিক পরাজয়, রাজনৈতিক পরাজয় নয়। আবদুল কাদির খান, যিনি এ সপ্তাহে বৈঠক করেছেন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রধান নেতা সৈয়দ মুনাওয়ার হাসানের সঙ্গে, তিনি লিখেছেন যে পারমাণবিক বোমা পাকিস্তানকে রক্ষা করতে পারত: ‘১৯৭১ সালের আগে যদি
আমাদের পারমাণবিক শক্তি-সামর্থ্য থাকত, তাহলে অপমানজনক পরাজয়ের পর আমাদের দেশের অর্ধেকটা হারাতে হতো না, যেটা
এখন বাংলাদেশ।’
কিন্তু আসলেই কি তাই? পারমাণবিক বোমায়ও কি কাজ হতো? পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তো পারমাণবিক বোমাসহই ঘেরাও হয়ে থাকত এক বিরূপ, শত্রুমনোভাবাপন্ন জনগোষ্ঠীর দ্বারা, আর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের ঝড়ও চলতেই থাকত। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যতই ট্যাংক আর যুদ্ধবিমান থাক, পশ্চিম পাকিস্তান যে অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল, তা থেকে আর ফেরার উপায় ছিল না। মাঝখানে শত্রুমনোভাবাপন্ন ভারত, তার ওপর দিয়ে হাজার মাইল পথ পেরিয়ে ৯০ হাজার সৈন্যের জন্য রসদ সরবরাহ অব্যাহত রাখা ছিল ভীষণ ঝক্কির ব্যাপার। তা ছাড়া, ভারত তার আকাশসীমার ওপর দিকে পাকিস্তানের বিমান চলাচলের অনুমতি বন্ধ করে দিয়েছিল, ফলে সমুদ্রপথ ছাড়া আর কোনো পথ ছিল না। যুদ্ধ আরও বেশি দিন চললে পাকিস্তান সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ত। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দখলদার বাহিনীগুলো সবখানেই—সেটা কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনী হোক বা আফগানিস্তানে আমেরিকান বাহিনী হোক—আক্রান্ত হলে পাল্টা আক্রমণ চালাতে গিয়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে, ভীষণ বাড়াবাড়ি করে। আগ্রাসী বাহিনীর বাড়াবাড়ি রকমের নৃশংসতার কারণে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও ঘৃণা সৃষ্টি হয়, আর তার ফলে বিদ্রোহের শক্তি ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
আমি তবু আমাদের ডক্টর সাহেবের কথাটা বোঝার চেষ্টা করছি: আসলেই কি পারমাণবিক বোমা দিয়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ভাঙন ঠেকানো যেত? ঢাকায় স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল জনসমুদ্রের ওপর কি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা সম্ভব ছিল? অথবা কলকাতা ও দিল্লি নগর পুড়িয়ে ছাই করে দিতে ব্যবহার করা যেত পারমাণবিক বোমা? এবং তার যথা-প্রতিদানে ভস্ম হয়ে যেত আমাদের লাহোর-করাচি? পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়ে ভারতকে হয়তো যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত রাখা যেত, কিন্তু তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ আরও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের শিকার হতো।
ইতিহাস ওল্টানো যায় না, কিন্তু এখন সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। বাংলাদেশের এই দাবি সঠিক যে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত। কিন্তু আমরা এ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছি। আসুন, এখন আমরা বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাই; আমাদের দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনা করি। আমরা যদি সৎ হই, আমাদের যদি এই পদক্ষেপ গ্রহণের সাহস থেকে থাকে, তাহলে বাড়তি পাওনা হিসেবে বেলুচিস্তানের সমস্যাটি বোঝা ও উপলব্ধি করা আমাদের পক্ষে অনেক সহজ হবে; এমনকি সমস্যাটার সমাধানও হয়ে যেতে পারে।
পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
পারভেজ হুদভয়: ইসলামাবাদের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও কলাম লেখক।

Friday, February 15, 2013

ও আলোর পথযাত্রী, ...এখানে থেমো না

ও আলোর পথযাত্রী, ...এখানে থেমো না

এবিএম মুসা

গত বুধবার ভোরবেলা প্রথম যেসব পত্রিকা পেলাম, সেগুলোর সব কটির লিড নিউজ তথা প্রধান শিরোনাম ছিল: ‘কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন’। অতিসাধারণ চার কলামের শিরোনাম, যেকোনো হত্যা মামলার রায়ের খবরের সঙ্গে কোনো ফারাক খুঁজে পেলাম না। খুনি-ধর্ষকের যাবজ্জীবন একটু লঘু শাস্তি মনে হলো, এটুকুই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। পরদিনের প্রতিটি পত্রিকায় কাদের মোল্লার গুরুপাপে লঘুদণ্ডের প্রতিক্রিয়া পেলাম। তারুণ্যের প্রতিবাদের আকাশবিদারী প্রতিধ্বনি আমাকে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে। তাৎক্ষণিকভাবে হূদয় উদ্বেলিত হলো একটি মহাজাগরণের আগমনের প্রত্যাশায়। শাহবাগ চত্বরে সেই জাগরণের সূর্যোদয় দেখে মৃদুস্বরে আবৃত্তি করলাম রবিঠাকুরের অনবদ্য একটি চরণ: ‘আজি প্রাতে সূর্য্য ওঠা সফল হলো কার’।

অতঃপর পরবর্তী দিনগুলোতে দেশবাসী শুনতে থাকল শাহবাগ চত্বর থেকে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত ধ্বনি-প্রতিধ্বনি, লাখো তরুণের নবপ্রজন্মের জাগরণী গগনবিদারী আওয়াজ: ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই’। আমাকে চমকিত করল একটি নব-অভ্যুত্থানের লাখো পদধ্বনি। এর কিছুদিন আগে বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন ‘বিশেষ আদালত’। আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল, যাক, আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুত বিচারকার্য শুধু নিছক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল না। কিন্তু কাদের মোল্লাকে যখন ঝুলিয়ে দেওয়ার আদেশ হলো না, তখনই মনে খটকা লাগল। প্রথম আলোয় পরদিন লিখলাম: ‘ফাঁসি কেন হলো না, জানতে চাই’।

প্রশ্নটির উত্তর পেলাম সাধারণ মানুষের মাঝে। সবাই জানতে চাইল, ‘ফাঁসির আদেশ হয়নি, নাকি দেওয়া হলো না,’ নানা মতের সব চমৎকার উত্তর পেলাম। ফাঁসি না হওয়ার কারণের সাফাই গেয়ে মুখচেনা একটি মহল নানা আইনি ব্যাখ্যা দিল। এই ছিল জনগণের আবেগ আর ক্ষোভকে তাত্ত্বিক যুক্তির নিচে চাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা। আমি সেদিন সাধারণ মানুষের মনের কথাটি ব্যক্ত করে বলেছিলাম—আইনের ব্যাখ্যা বোঝার মতো জ্ঞানবুদ্ধি মূর্খ আমজনতার নেই। তাদের স্বতঃসিদ্ধ ধারণা ছিল, এত সব জঘন্য অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও ফাঁসির আদেশ না দেওয়ার জন্যই যেন সংশ্লিষ্ট আইনে ফাঁকফোকর রাখা হয়েছিল।

বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এতৎসম্পর্কীয় টক শো আলোচনা আর সংবাদপত্রের বিজ্ঞজনের নিবন্ধাদি পড়ে বুঝলাম, বিচারকেরা নানা আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে জটিল সব ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, ‘ফাঁসি দেওয়া গেল না’। আলোচনায় সামনে এল, ১৯৭৩ সালে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের একটি ধারা বাদ সেধেছে। তখন প্রবাদবাক্যটি স্মরণে এল, ‘জাস্টিস শুড নট অনলি বি ডান, ইট শুড বি টু হ্যাভ বিন ডান’। বিচারটি সঠিক হয়েছে বললে হবে না। সাধারণ্যে ন্যায়বিচার নয়, সুবিচারের বিশ্বাস জন্মাতে হবে। কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে সেই বিশ্বাস জন্মায়নি।

বিশ্বাসের ঘাটতি থেকেই শাহবাগ তথা প্রজন্ম স্কয়ারে একটি মহাজাগরণের মহা-অভ্যুত্থান ঘটেছে। কয়েক দিন আগে আরটিভির একটি টক শো-নামীয় হইচইয়ের ফাঁকে এ প্রশ্নটি করেছিলাম অংশগ্রহণকারী একজন আইনজ্ঞকে। আমি প্রশ্ন করেছিলাম, আমাদের দেশের বাঘা বাঘা আইনজীবী, আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া, তথাকথিত আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারপদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কেন নেওয়া হলো না? পরে শুনেছি, এতে আমাদের পণ্ডিতম্মন্য কয়েকজন আইন পেশাজীবী ক্ষুব্ধ হয়ে আমার প্রতি শ্লেষাত্মক মন্তব্য ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘কেন, আমরা কি কম বুঝি?’ আমার উত্তর হচ্ছে, বেশি বোঝেন বলেই তো কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো গেল না। আইনের তৈরি ফাঁকটি বুঝতে পারেননি কিংবা বুঝতে চাননি কারও ইঙ্গিতে অথবা হুমকিতে।

ইতিমধ্যে যেসব আলোচনা করলাম, তার কিছু অংশ আমার গত শুক্রবার প্রকাশিত নিবন্ধের খণ্ডিত পুনরাবৃত্তি। এখন সর্বশেষ পরিস্থিতি কী, তা নিয়ে মজাদার আর গুরুত্বপূর্ণ সব ধরনের আলোচনা করা যেতে পারে। প্রথমেই গত কয়েক দিনের সংবাদপত্রের সাড়া জাগানো শব্দ-বৈচিত্র্যের সব শিরোনামের কথা বলছি। এসব শিরোনামের মূল খবরাদি পড়ে ভাবছি, এই যে নবজাগরণ, এর শেষ কোথায়? ৬২ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় এর উত্তর পেলাম না। কারণ, এ যে অনন্য, অতীত কোনো উদাহরণ নেই। সত্যি কথা বলতে, আমার সাংবাদিকজীবনে বিচিত্র ধরনের অনেক মহাসমাবেশ দেখেছি। জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর ক্ষমতা দখলের পর ঢাকা স্টেডিয়ামে ‘লক্ষাধিক লোকের সমাবেশ’ করলেন, অবশ্য বিভিন্ন জেলা থেকে সরকারি প্রশাসকেরা ঝেঁটিয়ে লোক নিয়ে এসেছিলেন। দেখেছি, পল্টনের অনেক মহাসমাবেশ। শেরেবাংলা, সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, শেখ মুজিবের দুটি কথা শোনার জন্য, বস্তুত অনেকে তাঁদের চোখের দেখাটুকুর জন্য হাজারে হাজারে জড়ো হয়েছেন। সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে সাতই মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক শোনার জন্য পাঁচ লক্ষাধিক নারী-পুরুষের সমাবেশ।

শাহবাগের জনতার, আবালবৃদ্ধবনিতার, নাতির হাত ধরে দাদার, মায়ের কোলে শিশু, পক্ষাঘাতগ্রস্ত মাকে পিঠে নিয়ে তরুণ ছেলেদের আগমনে সৃষ্ট মহাগর্জন: ‘ফাঁসি চাই’। অতীতে কখনো এসব সমাবেশে এমন দৃশ্য দেখিনি। ‘জয় বাংলা’ শুনেছি পাঁচ দশক কোটি কোটি কণ্ঠে। কিন্তু এমন গগনবিদারী ধ্বনি-প্রতিধ্বনি শুনিনি, এমনিভাবে আকাশে-বাতাসে রণিত হয়নি তিন বছরের শিশু থেকে নব্বই বছরের বৃদ্ধের কণ্ঠে।
অবাক বিস্ময়ে ভাবছি, ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছি না—কেন, কীভাবে, কোন মাধ্যমে এই মহাসমাবেশ, মহাসমুদ্রের গর্জন বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে একূল-ওকূল ছাপিয়ে গেল? সেই যে রবির রচনাটি দিয়ে শুরু করেছিলাম, ‘আজি প্রভাতে সূর্য্য ওঠা সফল হলো কার’, তারই ধারাবাহিকতায় আবার রবিঠাকুরের আশ্রয় নিতে হচ্ছে। মনের মাঝে গুনগুনিয়ে উঠেছে—
‘আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের পর।

কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাত পাখির গান?
না জানি আমি কেন রে এত দিন পরে
জাগিয়া উঠিল প্রাণ
উথলে উঠিছে বারি।’
প্রাণের আবেগ, প্রাণের বাসনা
রুধিয়া রাখিতে নারি।

পুরো কবিতার উদ্ধৃতি দেওয়া গেল না। এখন প্রশ্ন উঠছে, উথলে ওঠা বারির স্রোত কোন দিকে প্রবাহিত হবে? নানা দিক থেকে বিভিন্ন পথে-বিপথে এই স্রোত প্রবাহিত করার নানা কূটকৌশল অবলম্বন করার একটি আভাস পাচ্ছি। এর একটি হলো, আইন সংশোধনের দোহাই দিয়ে মহাগর্জন স্তিমিত করার প্রচেষ্টা। তবু আমাদের বিজ্ঞ আইনজ্ঞদের ধন্যবাদ! শাহবাগের মহাসমাবেশ তাঁদের এটুকু জ্ঞান আহরণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করাতে পেরেছে। অথচ প্রায় দুই বছর ট্রাইব্যুনালে কথার ফুলঝুরি ছড়ানোর সময় তাঁদের এই বোধোদয় ঘটেনি কেন? নাকি বোধশক্তিটি চাপা দিয়ে রেখেছিলেন অথবা চাপা দেওয়া হয়েছিল?
শাহবাগের গগনবিদারী ধ্বনি তো আইন সংশোধনের দাবি নয়, তারা চায় ‘ফাঁসি’। তারা আপাতত শাহবাগ চত্বরে শুধু একটি আইনের ধারা পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করছে না। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হবে, সংসদে আইন পাস হবে, পুনর্বিচার বা আপিল হবে। সেই আপিলের রায় কী হবে, তা কি নিশ্চিতভাবে বলা যায়? তাই শাহবাগের দৃপ্ত জনতা ওসব আইনি প্রক্রিয়ার ফাঁদে পড়তে চায় না। রায় তারা দিয়ে দিয়েছে: ফাঁসি চাই।

তবু একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন, ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় যদি উচ্চ আদালতে বহাল থাকে, তবে কী হবে? এ প্রশ্নের উত্তর বোধহয় আগাম চাওয়া হলো। তবে ‘আইন সংশোধন করছি, তোমরা যা চাও, তাই হবে’—এমন একটি স্তোকবাক্য দেওয়া যেতে পারে। মন্ত্রিসভা থেকে, সংসদ, তারপর উচ্চ আদালত, তারপর অনিশ্চিত রায়—শাহবাগের উত্তাল তরঙ্গ হয়তো স্তিমিত করার এই কৌশলটি কি কার্যকর হবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, ‘সবাই সাবধান! শাহবাগের জনস্রোতকে কে কোন দিকে নিয়ে যাবে, এ নিয়ে সজাগ থাকুন।’ এই সাবধানবাণী কি শুধু অপরের প্রতি নিক্ষেপ করলেন?

সরকারের আপিলের অধিকারটি আইনি স্বীকৃতি পাওয়ার পর নানা আইনি কূটচালের পর মোল্লা ঝুলতেও পারেন, অথবা কাশিমপুরে বাকি জীবন ঘাস কাটবেন। কিন্তু আসন্ন দুটি রায়—সাঈদী ও কামারুজ্জামানের মামলার রায়ের কী হবে? বেকায়দায় পড়া ট্রাইব্যুনাল রায়ের দিন শুধু পিছিয়ে দিয়ে আপাতত স্বস্তি পেতে পারেন। কিন্তু কত দিন রায় ঝুলিয়ে রাখতে পারবেন? আর বিজ্ঞ মহল বলবে, ‘বিচার আপন গতিতে চলবে’। যাঁরা বেকায়দায় পড়েছেন, তাঁরা ভাবছেন, চলতেই থাকবে, চলতে চলতে সংশ্লিষ্ট মহলের নির্দিষ্ট মহলের ইঙ্গিতে এক জায়গায় থেমে যাবে। তত দিনে শাহবাগ চত্বর ফাঁকা হয়ে যাবে—এমনটি কি কেউ ভাবছেন? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যৎ দেবে।

বঙ্গবন্ধু বলতেন, বাংলাদেশ একটি আগ্নেয়গিরির ওপর অবস্থিত। বিসুভিয়াসের হাজার বছর লেগেছিল অগ্ন্যুৎপাত ঘটাতে। আমাদের লেগেছে কখনো পাঁচ, কখনো দশ, কখনো তারও বেশি। সাতচল্লিশ, চুয়ান্নতে এসে অগ্ন্যুৎপাতের লাভার স্রোতে ভেসে গেছে। একাত্তরে ব্যাপক অগ্ন্যুৎপাত ঘটতে লেগেছে ১০ বছর। সেই জ্বলন্ত লাভায় ভস্মীভূত হয়েছে পাকিস্তানি শাসকেরা। আইয়ুব, এরশাদকে জ্বলন্ত লাভায় ভাসিয়ে নিতে লেগেছে দুই দশক। এবারের অগ্ন্যুৎপাতে পঁচাত্তর থেকে ৩৮ বছর চাপা পড়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে কারা জ্বলে-পুড়ে খাক হবে, তাই দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

তাই তো অপেক্ষার প্রহর গণনায় শাহবাগের জাগ্রত বালক, তরুণ-তরুণী, প্রৌঢ়া, বৃদ্ধা-বৃদ্ধদের সলিল চৌধুরীর কবিতা উদ্ধৃত করে বলছি, ‘ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি। এখানে থেমো না।’
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

(প্রথম আলো, ১৩/০২/২০১৩)

শাহবাগের মোমবাতিতে একাত্তরের চেতনার অগি্নস্ফুলিঙ্গ

শাহবাগের মোমবাতিতে একাত্তরের চেতনার অগি্নস্ফুলিঙ্গ

আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী


নিন্দা এবং গালি শুনেও যে এতটা আনন্দ পাওয়া যায়, তা জীবনে আগে কখনও এমন করে উপলব্ধি করিনি। ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়ে রাজাকার কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া সম্পর্কে ঢাকার একটি দৈনিকে আমি লিখেছি, ট্রাইব্যুনাল জনমতের চাপে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দিতে পারেন না। আবার এই দণ্ড না দেওয়ার জন্য কোনো অপশক্তির হুমকির কাছেও মাথানত করতে পারেন না। তারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারেও ন্যায়বিচারে অটল থাকবেন এবং বিচারের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন_ এটাই আমাদের কাম্য। এই বক্তব্য আমার সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঠকের পছন্দ হয়নি। তারা মৃত্যুদণ্ড চান।

লেখাটি ছাপা হয়েছে গত বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি)। সেদিন থেকে অদ্যাবধি অনূ্যন দশটি টেলিফোন কল পেয়েছি। নিজের দেশ এবং বিদেশ থেকেও। এই দশটি টেলিফোন কলের নয়টিই হচ্ছে আমার লেখার নিন্দা ও সমালোচনা। আমি কেন কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দাবি করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের সমালোচনা করিনি_ তা নিয়ে প্রশ্ন। কেউ নরম ভাষায় সমালোচনা করেছেন। কেউ গরম ভাষায়।

কেবল একটি টেলিফোন-আলাপ হচ্ছে ব্যতিক্রম। সেই টেলিফোনটি আমিই করেছিলাম যে দৈনিকে গত বুধবার আমার কলামটি প্রকাশিত হয়েছে, তার সম্পাদককে। তিনি দেশের একজন বয়োজ্যেষ্ঠ সম্পাদক। তার মতামতকে আমি সম্মান করি। তিনি বললেন, 'আপনি যা লিখেছেন তা যুক্তিযুক্ত। সাহসের সঙ্গে বিপরীত স্রোতে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন। তবে আপনার লেখাটি পাবলিক সেন্টিমেন্টের পক্ষে যায়নি। ফলে আপনি আপনার পাঠকদের কাছেও সমালোচিত হচ্ছেন।'

আমি এই প্রবীণ সম্পাদক বন্ধুকে যা বলিনি তা হচ্ছে, এই সমালোচনা বা গালিনিন্দা শুনে কোনো রাগ হচ্ছে না। বিস্ময়করভাবে আমি আনন্দ লাভ করছি। কারণ, কাদের মোল্লার মতো মানবতার জঘন্য শত্রুর মৃত্যুদণ্ডাদেশ হোক, তা আমিও চাইনি_ তা নয়। তবে সেই সঙ্গে এ-ও চেয়েছি, ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা যেন বজায় থাকে, যা বিশ্বের অনেক দেশের দাবি। তারা যেন জনমতের চাপে বা যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের হুমকির কাছে নতজানু হয়ে রায় না দেন।

ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়টি বিতর্কিত এবং দেশের বিপুল বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে সমর্থন না পেলেও এই রায়ের দুটি বড় প্লাস পয়েন্ট রয়েছে। প্রথম, এই রায় প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের ইচ্ছা বা অনিচ্ছা দ্বারা ট্রাইব্যুনাল পরিচালিত নয়। দ্বিতীয়, এই রায় দেশের নিদ্রিত জনমতকে এমনভাবে জাগ্রত করেছে যে, তা রাজপথে জামায়াতের জনসমর্থনহীন ক্যাডারভিত্তিক তাণ্ডব সৃষ্টির চেষ্টা প্রায় ব্যর্থ করে দিতে যাচ্ছে এবং সারাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এমন উত্তাল গণতরঙ্গ সৃষ্টি করেছে যে, যা একাত্তরের ইস্পাতকঠিন জাতীয় ঐক্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ঢাকার শাহবাগে মোমবাতি জ্বালিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে যে জনসমুদ্র তৈরি হয়েছে, তাকে অনেকে কায়রোর তাহরির স্কয়ারের জনতার ঢলের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

আমি একজন নগণ্য ব্যক্তি হয়েও এই গণজোয়ারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। এই গণজোয়ার তো শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়দান শুরু। অর্থাৎ বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষিত হতেই সারাদেশ উল্লাসমুখর হয়েছে এবং তার পাশাপাশি জামায়াতিরা রাস্তায় নেমে অতর্কিতে হামলা ও মানুষসহ বাস, গাড়ি পোড়াতে শুরু করে। তাদের এই রণকৌশলের সামনে পুলিশকেও অনেক সময় অসহায় মনে হয়েছে। তারা মার খেয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আমার একাধিক কলামে লিখেছি, কেবল পুলিশ বা র‌্যাব দিয়ে এই ট্রেনিংপ্রাপ্ত, সশস্ত্র গুণ্ডামি বন্ধ করা যাবে না। সরকারকে কঠোর হতে হবে, শক্তি বাড়াতে হবে এবং সারাদেশে জামায়াতের ফ্যাসিবাদী তাণ্ডবের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই গুণ্ডামির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠলেই সরকারের কার্যক্রমও সফল হবে। কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষিত হওয়ার পর তার প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে যে গণপ্রতিবাদ জাগ্রত হয়েছে, তাতে স্বাধীনতা এবং মানবতার শত্রুশিবির এখন কম্পিত। দলমত নির্বিশেষে সারাদেশের মানুষ এই গণপ্রতিরোধে শামিল হয়েছে। দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী দল ঢাকার শাহবাগের অথবা ঢাকার তাহরির স্কয়ারের গণসমাবেশে সমর্থন জানিয়েছে; একমাত্র বিএনপি এবং ছাত্রদলসহ তার তথাকথিত জাতীয়তাবাদী অন্য অঙ্গ সংগঠনগুলো ছাড়া।

সরকার জামায়াতিদের এবং '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের দুর্বৃত্তপনা ও গুণ্ডামি প্রতিরোধে আরও কঠোর হয়েছে এবং দেশে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। ফলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জামায়াতিদের বর্তমান মূষিকনীতি যে ব্যর্থ হবে এবং '৭১-এর পরাজিত শত্রুরা তাদের নতুন দোসরসহ আবারও পরাজিত হবে, এমনকি শাহবাগের গণজোয়ার অব্যাহত থাকলে এই দুর্বৃত্তরা দেশের মাটি থেকে স্থায়ীভাবে নির্মূল হবে_ এই আশা পোষণ করা চলে।

দেশে গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। সরকারকেও মানবতার শত্রু এবং গণশত্রুদের শাস্তিদানে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং আরও কঠোর হতে হবে। দেশের মানুষের কাছে সরকারকে এই বিশ্বাস সন্দেহাতীত করে তুলতে হবে যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও প্রাপ্য শাস্তিদানে তারা কোনো প্রকার দুর্বলতা বা আপসের মনোভাব দেখাবে না। ঢাকায় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ায় দেশের মানুষ যে ক্ষুব্ধ হয়েছে, তার প্রধান কারণ দুটি। তারা মনে করে, গুরু পাপে লঘু দণ্ড দেওয়া হয়েছে। যদিও দণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তথাপি এর পেছনে সরকারের হয়তো দুর্বলতা ও আপসমুখী ভাব রয়েছে।
এই সন্দেহটি জনমনে আরও ছড়িয়েছে জামায়াত ও বিএনপির প্রচারবিদরা। তারা ভেবেছিল, কাদের মোল্লার মামলার রায়কে সরকারের ও ট্রাইব্যুনালের দুর্বলতা, সরকারের আপস করার গোপন চেষ্টা, এমনকি বিচারে জামায়াতকে বড় কনসেশন দিয়ে গোপনে তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের আঁতাত করার প্রয়াস ইত্যাদি কথা বাজারে ছড়িয়ে দিয়ে সরকার, ট্রাইব্যুনাল ও বিচারের প্রতি জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করবে এবং তাদের মনোবল ধ্বংস করবে। সেই সুযোগে জামায়াতি মূষিকেরা সর্বত্র অরাজকতা সৃষ্টি করে প্রশাসন অচল করবে এবং বিচার ভণ্ডুল করে দেবে।

জামায়াত-বিএনপির এই চালাকি ও অপপ্রচার তাদের জন্যই বুমেরাং হয়েছে। বিচারে কাদের মোল্লার লঘু দণ্ড হয়েছে এবং সরকার ও ট্রাইব্যুনালের দুর্বলতায় সাঈদী, গোলাম আযম, নিজামী প্রমুখ পালের গোদার শাস্তি আরও লঘু হতে পারে_ এই সন্দেহ জনমনে দেখা দিতেই তারা আকস্মিকভাবে সামুদ্রিক ঝড়ের মতো জেগে উঠেছে। যুদ্ধাপরাধীদের গুরু পাপে লঘু দণ্ড দানের অভিযোগে একাত্তরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। জামায়াত এখনও এখানে-ওখানে মাথা তোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের অবস্থা ভীত পার্বত্য মূষিকের মতো। বিএনপির অবস্থা মহারাজ ত্রিশঙ্কুর মতো। খালেদা জিয়া তো 'ওয়াশিংটন টাইমস' পত্রিকায় তার ঘোস্ট রাইটারের লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশের হঠকারিতার বিপাক থেকেই এখনও মুক্ত হতে পারেননি; তিনি দোসর জামায়াতিদের সাহায্যদানে এগুবেন কী করে? ত্রুক্রদ্ধ জনমতের ভয়ে তারা ট্রাইব্যুনালের বিরোধিতা করতে পারছেন না। তবে নানা ফোকর খুঁজছেন_ কীভাবে কৌশলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো যায়।

তবে এসব কৌশল বর্তমান জনজোয়ারের মুখে কোনো কাজ দেবে মনে হয় না। বিচারের দ্বিতীয় রায়টি সম্পর্কে জামায়াত ও বিএনপি জনমনে যে সন্দেহটি জাগাতে চেয়েছে; তা কিছুটা জেগেছে বৈকি, কিন্তু তা বুমেরাং হয়েছে জামায়াত-বিএনপির জুটির বিরুদ্ধেই। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মৃত্যুদণ্ডের চেয়ে কম শাস্তি নয়। কিন্তু জনগণের সন্দেহ, '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীরা যদি সরকার বা ট্রাইব্যুনালের কোনো প্রকার দুর্বলতার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পায়, তাহলে পরবর্তী নির্বাচনে বা অন্য কোনোভাবে যদি জামায়াত ও বিএনপি ক্ষমতায় যায়, তাহলে এই মানবতার জঘন্য শত্রুদের শাস্তি তারা মওকুফ করে দেবে এবং আগের মতো স্বাধীনতার শত্রুদের কারও কারও গাড়িতে বাংলাদেশের মন্ত্রিত্বের পতাকা উড়বে। বর্তমান হাসিনা সরকারের যত ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকুক, এই সরকার ক্ষমতা হারালে এবং জামায়াত-বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে দেশে ২০০১ সালের চেয়েও কী ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে, তা কল্পনা করে আওয়ামী লীগের অনেক বড় সমালোচকও এখন শিউরে ওঠেন।

এই সন্দেহ ও এই ভীতিই দেশের মানুষকে জামায়াত ও বিএনপির প্রত্যাশা অনুযায়ী মনোবলহারা, নিষ্ক্রিয় ও হতাশ জনগোষ্ঠীতে পরিণত না করে দীর্ঘকাল পর একাত্তরের চেতনায় জাগ্রত ও ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছে। শুধু ঢাকার শাহবাগে নয়, সারাদেশে জনসমুদ্র গর্জে উঠেছে। লাখ লাখ মোমবাতি একাত্তরের চেতনায় আভা ছড়াচ্ছে লাখো মনে। এই জনক্রোধ ও জনপ্রতিরোধ বর্তমান সরকার বা যুদ্ধাপরাধ বিচারের ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে নয়। এই জনক্রোধ জেগেছে মানবতার শত্রুরা গুরু পাপে লঘু দণ্ড পাবে, এমনকি এখন কারাদণ্ড পেলেও জামায়াত ও বিএনপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে অপরাধীদের জামাই আদরে ছেড়ে দেবে_ এই আশঙ্কায়।
আওয়ামী লীগ সরকার ও ট্রাইব্যুনালের জন্য এই জনক্রোধ ও জনপ্রতিরোধ এক বিশাল সহায়ক শক্তি। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের যাতে দণ্ড দেওয়া না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগ সরকার ও ট্রাইব্যুনালের ওপর বিদেশের কিছু শক্তিশালী মহল ও সরকারের বিরাট চাপ আছে। এই চাপ মোকাবেলা করার জন্য সরকার ও ট্রাইব্যুনাল_ দুইয়ের দরকার দেশের মানুষের অখণ্ড ও ঐক্যবদ্ধ সমর্থন। শাহবাগের উৎসমুখ থেকে সারাদেশে প্রসারিত জনজোয়ার সরকার ও ট্রাইব্যুনালকে স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচার অনুষ্ঠানে অটল থাকার ব্যাপারে সাহস ও শক্তি জোগাবে।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার শত্রুদের বিচার ও শাস্তিদানের ব্যাপারে এবং দেশবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে হাসিনা সরকারের মধ্যে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব বা আন্তরিকতার অভাব আছে বা ট্রাইব্যুনালের মধ্যে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার কোনো অভাব আছে_ আমি তা মনে করি না। যেটা থাকতে পারে সেটা হচ্ছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের শক্তিশালী চাপ ও চক্রান্তের মুখে কিছু দুর্বলতা। পেছনে দেশের মানুষের সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সমর্থন থাকলে সরকার অবশ্যই এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে। '৭১ সালেও সারা বাংলাদেশের গণরায় যদি বঙ্গবন্ধু না পেতেন এবং গোটা বাঙালি জাতি তার পেছনে ঐক্যবদ্ধ না হতো, তাহলে তিনিও আমেরিকার মতো একটি সুপার পাওয়ারের বিরোধিতার মুখে একটি শক্তিশালী সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে নিরস্ত্র যুদ্ধে নামতে সাহস করতেন কি?

শাহবাগের উৎসমুখ থেকে প্রসারিত সারাদেশের জনজোয়ার হাসিনা সরকারের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে কোনো দুর্বলতা বা দোদুল্যমানতার সৃষ্টি হয়ে থাকলে তা দূর করবে এবং ট্রাইব্যুনালকেও নৈতিক সাহস ও ন্যায়বিচারে অটল থাকার মনোবল জোগাবে। সুতরাং একাত্তরের চেতনায় উদ্দীপ্ত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির এই গণউপপ্লবকে আমাদের অভিনন্দন জানাতে হয়।
আবারও লিখছি, ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ না দিয়ে কোনো অন্যায় করেছেন বা দুর্বলতা দেখিয়েছেন বলে আমি মনে করি না। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কোনো লঘু দণ্ড নয়। আর জনমতের চাপে সব অভিযুক্তকেই চরম দণ্ড দিতে হবে_ এটাও কোনো কাজের কথা নয়। তাহলে আর বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করা কেন?

যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধগুলো যখন সারাদেশের মানুষ জানে এবং তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড চায়, তখন সরকার সেই দণ্ড দিয়ে দিলেই তো পারে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। ন্যায়বিচার এবং আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা বলে একটা কথা আছে। বাংলাদেশকে তা মেনে চলতে হবে।

তবে '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে একটি পরিপ্রেক্ষিত মনে রাখা উচিত। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ের নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের মতোই বাংলাদেশের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতার শত্রুদের অপরাধ সর্বজনবিদিত। ন্যুরেমবার্গ আদালতের বিচারে নাৎসি যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা সবাইকেই ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশেও শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে পরিচালিত '৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে যুদ্ধাপরাধীদের মক্ ট্রায়ালের জন্য যে গণআদালত গঠিত হয়েছিল, তার বিচারের রায়ে গোলাম আযমসহ অধিকাংশ অভিযুক্তের প্রাণদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। তখনকার এই আদালতের রায়ের কোনো আইনগত ভিত্তি না থাকুক, একটা শক্ত নৈতিক ভিত্তি ছিল। বর্তমান ট্রাইব্যুনালের উচিত, সেই আদালতের রায়ের নৈতিক ভিত্তিটা উপেক্ষা না করা।

ঢাকার শাহবাগ আন্দোলনে আরেকটা সত্য আবিষ্কৃত হয়েছে। সেটি হলো, দেশের তরুণ প্রজন্ম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের কথা ভোলেনি। বিএনপির ইতিহাস-বিকৃতি তাদের পথভ্রষ্ট করেনি। তারা একাত্তরের স্বদেশদ্রোহী ঘাতকদের ক্ষমা করেনি। কাদের মোল্লার মামলার রায় ঘোষিত হতেই দেশব্যাপী যে উত্তাল জলতরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছে, তার মূল উদ্যোক্তা তরুণ সমাজ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে এই তরুণ সমাজ এতই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে, আওয়ামী লীগ সরকারও এই বিচারে দোদুল্যমানতা দেখালে রেহাই পাবে না।

আরও একটা ব্যাপারে আমি আনন্দিত হয়েছি। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে দেশে যে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, এই জোয়ার সৃষ্টিতে বাংলাদেশের মূলধারায় ছাত্রলীগের একটা বড় ভূমিকা দেখা যাচ্ছে। আসলে এটাই ছাত্রলীগের ভূমিকা এবং তাদের ঐতিহ্য। মাঝখানে টেন্ডারবাজি, লাইসেন্সবাজি, দলীয় কোন্দল, সংঘাত, হত্যা, রক্তপাত ছাত্রলীগের ইতিহাস-ঐতিহ্যে কালিমা লেপে দিয়েছে। আবার আন্দোলনের মাঠে ফিরে আসাই এই কালিমা ও কলঙ্ক মোচনের একমাত্র পথ। শাহবাগের জনজোয়ারে সুস্থ ও সঠিক ভূমিকা রাখার পথে ছাত্রলীগ আর বিপথগামী হবে না এবং বিপথগামীদের দল থেকে নির্মূল করবে_ এটাই আমার কামনা।

(সুত্র, সমকাল, ০৯/০২/২০১৩)
http://www.sonarbangladesh.com/writer/AbdulGaffarChowdhury

তাহরির স্কয়ার যা ভেঙেছে শাহবাগ স্কয়ার তা-ই জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছে

তাহরির স্কয়ার যা ভেঙেছে শাহবাগ স্কয়ার তা-ই জোড়া লাগানোর চেষ্টা করছে

মিনার রশীদ

তাহরির স্কয়ার থেকে শাহবাগ স্কয়ার। এই দুই স্কয়ারের মিলগুলো হলো, ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার প্রভৃতি এই উভয় স্কয়ার সৃষ্টি করেছে। নেতৃত্বে এসেছে অপরিচিত তরুণ ব্লগাররা। দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে দিবারাত্রি অবস্থান একটা ভিন্ন আমেজ যোগ করেছে।

তবে বড় অমিলটি হলো, তাহরির স্কয়ারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রশক্তি ছিল খড়্গহস্ত। আর শাহবাগ স্কয়ারে রাষ্ট্রশক্তি মূল পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়োজিত। এখানে পুলিশের মরিচের গুঁড়ার স্প্রে নেই। ভীতিকর ঘোড় সওয়ারীরা নেই। বন্দুকের গুলি বা বোমার আঘাতে ঝাঝরা হওয়ার ভয়টি নেই। বরং তৃষ্ণা নিবারণের জন্য আছে সুশীতল মিনারেল ওয়াটার। আছে খাবারের আরামদায়ক সরবরাহ। আছে মৌসুম ও প্রকৃতির দান নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ। আছে মিডিয়ার পুষ্প অর্পণ। আছে সুশীল সমাজের আশীর্বাদ। আছে সিনেমা, নাটক ও গান শোনার সু-বন্দোবস্ত।
আছে টিভিতে চেহারা দেখানোর ও বক্তব্য রাখার অপূর্ব সুযোগ। গতকাল যে লাকিকে কেউ চিনত না, সেই লাকির লাক বা ভাগ্য আজ খুলে গেছে। মতিয়া চৌধুরী ছিলেন এনালগ অগ্নিকন্যা। তার জন্য অনেক সাধনার দরকার হয়েছিল। এই লাকিদের ডিজিটাল ‘অগ্নিকন্যা’ বানানো হয়েছে চোখের নিমিষে। বোধগম্য কারণেই ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়নের এই অগ্নিকন্যার মাথা ফাটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

উত্সাহী মিডিয়া ও উত্ফুল্ল সুশীল সমাজ এটাকে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও তুলনা করে বসেছেন। ২০১৩ সালে নতুন প্রজন্ম নাকি এর মাধ্যমে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের স্বাদটি আস্বাদন করছে! অনেকটা পিকনিকের আমেজ দিয়ে কঠিন সেই মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা মহান মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করার শামিল।

তবে একটা গ্রুপ কোলকাতার হোটেলে বা শরণার্থী শিবিরে অনেকটা এ ধরনের পিকনিকের আমেজ আস্বাদন করেছেন। মেজর জলিল তার বইয়ে সুন্দরভাবে সেই বিষয়টি তুলে ধরেছেন। এই অপরাধে একজন সেক্টর কমান্ডার হয়েও তিনি বীর উত্তম খেতাব না পেয়ে রাজাকার-উত্তম খেতাব পেয়েছেন।

জহির রায়হান এ সংক্রান্ত কিছু ডকুমেন্টস সংগ্রহ করেছিলেন। একটি প্রামাণ্য চিত্রের মাধ্যমে তা তুলে ধরার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ হওয়ায় তিনি আর সেই সুযোগটি পাননি। স্বাধীনতার প্রায় ৪৪ দিন পরে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে এক বর্গমাইল অঞ্চলও তখন পাক সেনা বা তার দোসরদের অধীনে ছিল না। তার এই নিখোঁজ হওয়াটি এখনও রহস্য হয়েই আছে।

পিকনিক আমেজের বাইরে অন্য একটি বিশাল দল ছিল উত্তপ্ত যুদ্ধের ময়দানে। সেটা ছিল তাহরির স্কয়ারের চেয়েও হাজার লক্ষ গুণ উত্তপ্ত। তদানীন্তন মেজর জিয়া, মেজর জলিল, বাঘা সিদ্দিকী সবাই ছিলেন এই তপ্ত মাঠে। ঘটনাক্রমে এরা সবাই একের পর এক রাজাকার খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় আক্রমণ করা হয়েছে স্বাধীনতার ঘোষক, জেড ফোর্সের অধিনায়ক ও অন্যতম সেক্টর কমান্ডার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে। যুদ্ধের সময় তাকে লেখা জনৈক পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তার চিঠিও আবিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানি ওই সেনা কর্মকর্তা ওই চিঠিতে জিয়ার কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে যদি পাক বাহিনী হাত করে ফেলতে পারত তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে এই নির্মম পরাজয়টি কখনই বরণ করতে হতো না। স্বাধীনতা যুদ্ধে মাত্র নয় মাসে আমাদের এই বিজয়, কমান্ড লেভেলে ইস্পাত কঠিন ঐক্য ও শৃঙ্খলাটি তুলে ধরে। কাজেই এই প্রচেষ্টাটি শুধু ঐতিহাসিক সত্যের বিরুদ্ধেই যাচ্ছে না—এটা কমন সেন্সের সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।

ভয়ঙ্কর দিকটি হলো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রোথিত করার নামে একটা গ্রুপের মাঝে এই ধরনের মাইন্ড সেট তৈরি করা হয়েছে। এই মাইন্ড সেটটি বিপরীত ধারার কোনো কথা শুনতে চায় না। কল্পনার জগতটিও এদের বড়ই রহস্যময়। দেলোয়ার জাহান ঝন্টুদের সিনেমার কাহিনীর মতো এরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বানায়। এদের বাঘা বাঘা গবেষকদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা দেখলে সত্যি করুণা হয়। তাদের লেখা ইতিহাস পড়ে আমরা ভয়ে যে প্রশ্ন করি না সেসব প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ভাইয়ের নাত্নী শর্মিলা বসু। সেসব প্রশ্ন অনেক বিব্রতকর। পাকিস্তানের টাকা খেয়ে এসব লেখেছেন বলে আমরা সেসব প্রশ্ন ধামাচাপা দিয়ে রেখেছি।

শাহবাগ স্কয়ারে একটা তাহরির স্কয়ার হয়েছে জেনে অতি খুশি হয়েছিলাম। তারুণ্যের ধর্মই হলো ভয় ও শঙ্কাহীন থাকা। তারুণ্যের ধর্মই হলো সব অত্যাচার, উত্পীড়ন, অনাচার, কুপমণ্ডুকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। কিন্তু হতাশ হয়েছি এই তারুণ্যের সেই খণ্ডিত দৃষ্টিভঙ্গি দেখে। চল্লিশ বছরের আগের মানবতাবিরোধী অপরাধ এই তারুণ্যকে স্পর্শ করেছে এটা অবশ্যই আনন্দের। তবে বর্তমানের দিকে শাহবাগের এই তারুণ্য বড্ড বেশি উদাসীন।

এ দেশের কোনো সরকারের আমলনামাটিই পরিষ্কার নয়। তারপরেও বর্তমান সরকারের আমলনামা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বাজিকর, টেন্ডারবাজ, দখলবাজ, চাপাতি লীগ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। আর এরা পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে।

শেয়ারবাজারের ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর হাহাকার এই তারুণ্যের কানে পৌঁছায়নি। হলমার্ক এই দেশটির ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে তছনছ করে ছেড়েছে, সেই ক্রোধ শাহবাগ স্কয়ারের এই তারুণ্যকে স্পর্শ করেনি। পদ্মা সেতুতে আবুল নামক ইঁদুরেরা পুরো জাতির ভাগ্যের শিকাটি ছিঁড়ে ফেলেছে, সেই হতাশা এই তারুণ্যকে ছুঁতে পারেনি। কুইক রেন্টাল এ জাতির গলায় যে ফাঁস লাগিয়েছে, সেই কষ্ট এই তারুণ্যকে নাড়া দিতে পারেনি। সাগর-রুনীর ট্র্যাজেডি এই তারুণ্যের দ্রোহে একটুও দোলা লাগাতে পারেনি। গুম ও খুনের কারণে শত শত নারী ও শিশুর কান্না বাতাসে ভাসছে, তারুণ্যের কানে সেই আহাজারিগুলো পৌঁছতে পারেনি।

কাজেই প্রশ্ন, এরা কি সেই তারুণ্য নাকি তারুণ্যের বেশে সেই জরা বার্ধক্য? যারা ভিন্ন মতাবলম্বীর উদ্দেশ্যে বলে, ‘বিচার টিচার আবার কী, এদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিলেই হয়।’ বার্ধক্যপীড়িত মন্ত্রীদের উচ্চারণের সঙ্গে এই তারুণ্যের উচ্চারণ দাড়ি-কমাসহ মিলে গেছে। সেই জরা-বার্ধক্যের প্রভাব কাটিয়ে এই তারুণ্য মূল যুদ্ধাপরাধী ইয়াহিয়া, ভুট্টো, নিয়াজী, টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলীদের নামগুলো উচ্চারণ করতে পারছে না। পারছে না পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিষয়টি সামনে আনতে। টক-দইওয়ালা গল্পের মতো হানিফ ও সাজেদা চৌধুরীকে সামান্য বিব্রত করা ছাড়া এই তারুণ্য সরকারকে বিব্রত করার জন্য একটা কাজও করছে না। বরং এসব ঢেকে ফেলার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচারের আবেগটি ব্যবহার করছে।

‘তোমার সঙ্গে আমি ভিন্নমত পোষণ করতে পারি। কিন্তু তোমার এই মত প্রকাশের জন্য জীবন দিতে রাজি আছি।’ এই কথাটি কোনো জরা-বার্ধক্য উচ্চারণ করতে পারে না। এই কথাটি উচ্চারণ করতে পারে একমাত্র তারুণ্য। কিন্তু শাহবাগ স্কয়ার থেকে আমরা এ কী শুনছি? সেখান থেকে ভিন্ন মতাবলম্বী পত্রিকা ও টিভি বন্ধ করার হুমকি দেয়া হয়েছে। হুমকি দেয়া হয়েছে বিরোধী দলের ব্যবসা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের। এই বুড়োরা এতদিন যা বলে এসেছে শাহবাগ স্কয়ারের এই তারুণ্য দেখা যাচ্ছে হুবহু সেই একই কথা বলছে।
মানুষের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা হরণ করেছিল হোসনি মোবারকের বাকশাল। সেই বাকশাল ভাঙার জন্যই সৃষ্টি হয়েছিল তাহরির স্কয়ার। প্রকারান্তরে সেই বাকশালকে নতুনভাবে জোড়া লাগানোর নিমিত্তেই সৃষ্টি হয়েছে এই শাহবাগ স্কয়ার। প্রজন্ম চত্বর।
১৯৭৫ সালের বাকশাল যে ভুল করেছিল বর্তমানের বাকশাল সেই ভুলটি করতে চাচ্ছে না। ১৯৭৫ সালের বাকশাল জাতিকে গেলানোর চেষ্টা হয়েছিল কোনো রকম তরল ছাড়াই। ধারণা ছিল নেতা হুমকি দিলেই জাতি তা গিলবে। জাতি তা উগলে দিয়েছে। কাজেই এবার এমনভাবে গেলানো হবে জাতি যাতে টের না পায় যে তারা বাকশাল গিলে ফেলেছে। এর জন্য সহযোগী হয়েছে বুঝে বা না বুঝে শাহবাগ স্কয়ারের এই তারুণ্য।

এজন্য যুদ্ধাপরাধী মামলার স্পর্শকাতরতা দিয়ে প্রথমেই জাতির মুখটি বন্ধ করে ফেলার চেষ্টা চলছে। সব মানব প্রজ্ঞাকে বিদায় দিয়ে আবেগের বুলডোজার আমদানি করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমান সময়ের প্রধান দাবি তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটি সম্পূর্ণ চাপা পড়ে গেছে। পদ্মা সেতু বা সাঁকোর উপর দিয়ে পার হওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে জনগণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কাদের মোল্লাকে জীবন সাঁকোর অপর পারে পাঠানোর উদ্দেশে। দরবেশ বাবাজি, হলমার্ক ও আবুলদের সঙ্গে পাঠানোর শ্লোগান থাকলে না হয় একটা কথা ছিল।

অভিযোগ উঠেছে, গলাকাটা পাসপোর্টের মতো একজনের নাম অন্য জনের শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। এই অভিযোগগুলো বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রমাণ করতে পারেনি প্রসিকিউশন। হামান দিস্তা বা বুলডোজার দিয়ে অনেক কিছুই গুঁড়িয়ে দেয়া যায়, কিন্তু মানুষের বিশ্বাসকে টলানো যায় না। আওয়ামী লীগের এমপি রনি প্রসিকিউশনের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এগুলো নিয়ে উচ্চতর আদালতে আরও বিব্রত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই তরুণ সংসদ সদস্য। মনে হচ্ছে, প্রসিকিউশনের দুর্বলতাকে সরকার ‘শাহবাগ স্কয়ার’ দিয়ে পূরণ করতে চাচ্ছে।

শাহবাগ স্কয়ার সবচেয়ে মুশকিলে ফেলেছে সম্ভবত বিএনপিকে। সরকারের এই রাজনৈতিক কৌশল বা তীরটির মূল টার্গেট বিএনপি। তবে যে শক্তি দিয়ে বিএনপিকে আঘাত করতে চাচ্ছে সেই শক্তি দিয়েই সরকারকে কাবু করা সম্ভব। কাজেই চুপ না থেকে বিএনপির নৈতিক অবস্থানটি পরিষ্কার করতে হবে। এ কারণে আঠারো দল কিংবা জনগণ কারও সামনেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে না। কারণ বিএনপির নৈতিক অবস্থানের পক্ষেই আছে আন্তর্জাতিক মহল ও মানব প্রজ্ঞার অবস্থান।

১৯৭৩ সালের কোলাবেরটর বা দালাল আইনে যে ২৮০০০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, আজকের অভিযুক্তদের একজনও সেই তালিকায় ছিলেন না বলে জানিয়েছেন তখনকার চিফ প্রসিকিউটর খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার এই দাবিকে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। ডিজিটাল এই যুগে বিশ্ববাসীকে অন্ধকারে রাখার সুযোগ নেই। সরকার যাকে বহির্বিশ্বের চাপ বলছে তা মূলত আন্তর্জাতিক মহলের যথাযথ উদ্বেগ।

মাইকেল ক্রস নামক এক ব্রিটিশ নিউজ এডিটর লিখেছেন, Beyond the obvious point that any miscarriage of justice involving the death penalty should be a matter of concern , the Dhaka tribunal raises two issues. One is the abuse of the term ‘ international’ which should be reserved for war crimes proceedings under genuinely international jurisdiction. The other is the potential for political over-spill. Jamaat-e-Islami is a political force in some parts of UK , and while I have little sympathy with its members I would not like them to be handed a victim card to play.

অর্থাত্—স্পষ্টতই ন্যায়বিচারের কোনো রূপ স্খলন হেতু যদি কোনো মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তবে তা আন্তর্জাতিক মহলের জন্য দারুণ উদ্বেগের কারণ হবে। ঢাকার ট্রাইব্যুনালটি দুটি প্রশ্নের উদ্রেক করে। প্রথমটি হলো আন্তর্জাতিক শব্দটির অপব্যবহার। কারণ এই পরিভাষাটি শুধু আন্তর্জাতিক জুরিসডিকশনের তদারকিতে অনুষ্ঠিত অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জন্যই সংরক্ষিত থাকা উচিত। অন্যটি হলো সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। জামায়াতে ইসলামী যুক্তরাজ্যের কোনো কোনো অংশে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এদের সদস্যদের প্রতি আমার খুব সামান্যই সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু এরা কারও হাতে অবিচারের শিকার হোক তা আমি চাই না।

মাইকেল ক্রস তার সেই নিবন্ধে নুরেমবার্গ বিচারের প্রধান প্রসিকিউটর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচারপতি রবার্ট জ্যাকসনের একটি উদ্ধৃতি টেনেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের আগে আগে রবার্ট জ্যাকসন বলেছিলেন, It would be better to shoot Nazi leaders out of hand than pervert the process of law by setting up a sham court. তিনি আরও বলেছেন, You must put no man on trial under the forms of judicial proceedings if you are not willing to see him freed if not proven guilty.

অর্থাত্—‘প্রহসনের আদালতে বিচারের পুরো প্রক্রিয়াটিকে বিকৃত বা কলঙ্কিত করার চেয়ে অভিযুক্তদের কোনো বিচার ছাড়া গুলি করে মেরে ফেলাই উত্তম।’ আর ‘যদি অপরাধ প্রমাণিত না হলে অভিযুক্তকে ছেড়ে দেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুুত না থাক, তবে কাউকে বিচারের আওতায় এনো না।’

সরকার প্রযোজিত ও সুশীল লীগ পরিচালিত শাহবাগ স্কয়ারের এই নাটক দেখে মনে হচ্ছে, রবার্ট জ্যাকসনের এই পরামর্শটি মানলে সরকার অনেক ভালো করত। কাজেই আন্তর্জাতিক শব্দটির অপব্যবহার করলে আন্তর্জাতিক মহল চুপ করে থাকবে না। তখন শাহবাগ স্কয়ার থেকে নেয়া এই ‘মনোবল’ খুব বেশি কাজে দেবে না।

কাজেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের উচিত হবে সুশীল লীগের প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হয়ে নিজস্ব এজেন্ডা নিয়ে জোর কদমে অগ্রসর হওয়া। শাহবাগ স্কয়ারের নামে শাহবাগ নাটকের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যগুলো জনগণের বোধগম্য ভাষায় বুঝিয়ে বলতে হবে। এদেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ প্রায় পুরোটাই আওয়ামী কব্জায়। কাজেই সারা দেশের দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজকে দ্রুত কার্যকর করতে হবে। চেতনাপন্থী সুশীল লীগের মতলবি প্রচারণা থেকে সব কর্মী ও নেতাদের মুক্ত রাখতে হবে। যে চেতনাপন্থীরা স্বাধীনতার ঘোষকের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাদের কাছ থেকে দেশপ্রেমিক শক্তি কখনই প্রশংসা পাবে না। ওদের প্রশংসায় যেমন পুলকিত হওয়া ঠিক হবে না, তেমনি ওদের গালিতে মন খারাপ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

দেশের অভ্যন্তরে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যে দেশপ্রেমিক শক্তি রয়েছে তাদের ভোকাল বা সরব হতে হবে। সবার মুখটি খুলতে হবে। ইন্টারনেটে নিজের মতটি বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে হবে। শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ও প্রশাসকসহ সমাজের সর্বস্তরের নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আবেগ নয়, যুক্তির ভাষায় নিজেদের অবস্থানটি তুলে ধরতে হবে।
এই দেশটি আওয়ামী লীগের নয়। এই দেশটি বিএনপির নয়। এই দেশটি জামায়াতের নয়। এই দেশটি আমাদের সবার।

আমাদের অবস্থান আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান জামায়াতের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান বাকশালের বিরুদ্ধে। আমাদের অবস্থান এক দলীয় শাসনের বিরুদ্ধে। আমাদের অবস্থান স্বৈরতান্ত্রিক সব নিপীড়নের বিরুদ্ধে।

মুক্ত চিন্তা, গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে যারা থাকে তাদের জয় অনিবার্য। খুশির কথা, ওরা তাহরির স্কয়ারকে এ দেশের মানুষের অনুভবে এনে দিয়েছে। কাজেই নকল তাহরির স্কয়ার ভেঙে আসল তাহরির স্কয়ারের আবির্ভাব সময়ের অনিবার্য দাবি। সাইনবোর্ড দেখে নয়। জনগণ চেনে নেবে কণ্ঠের আওয়াজ শুনে।

minarrashid@yahoo.com
আমার দেশ
http://www.sonarbangladesh.com/writer/MinarRashid

সকলেই আছি, একসাথে শাহবাগে।



প্রজন্মের এই বন্ধুরা আজ জেগে আছে আগেভাগে
ভয় নেই কোনো, সকলেই আছি, একসাথে শাহবাগে।
অশুভের প্রতি সকলের ঘৃণা হয়েছে তীব্র তীর
এই জমায়েতে হাজির সকলে জাতির তরুণ বীর
এরাই দেশের যোগ্য মানুষ, আর কোন্ নেতা লাগে?

জান্নাতবাসীর মায়েদের কথা

একজন সন্তানহারা মায়ের অনুভূতিটা আরেকজন সন্তানহারা মা ছাড়া মনেহয় আর কেউ বুঝবেনা!

আমি এক সন্তানহারা মা।আমার প্রথম বাচ্চাটা চারমাস পাঁচদিনের দিন মিসক্যারিজ হয়ে গেছে।যে বাচ্চাটাকে আমি দেখিনি,যার মা ডাক শুনিনি সে আমাকে তুমুল বদলে দিয়ে গেছে! জানতাম আল্লাহর কাছে খুব কাঁদতে হয়,কোন কিছু চাইতে হলে বা না চাইতে হলেও একজন মুসলিমের অনেক বড় স্বার্থকতা প্রভুর দরবারে কাঁদার মধ্যে।কিন্তু আগে কখনোই আমি কাঁদতে পারতাম না!আশ্চর্য!শুধু শুধু এমনি এমনি কাঁদে কিভাবে?ইচ্ছে হলেই কি কাঁদা যায়?কতোদিন এমন গেছে আমি খুব চেষ্টা করেছি আল্লাহর কাছে কাঁদার জন্য কিন্তু আধাঘন্টা চেষ্টার পরও একফোঁটা চোখের পানি ফেলতে না পেরে অবশেষে বিরক্ত হয়ে ক্ষ্যান্ত দিয়েছি!কিন্তু এখন... কাঁদা যে কতো সহজ!আমি শুধু একবার চিন্তা করি 'হে আল্লাহ!কি মহান তুমি!না চাইতেই কি বিরাট প্রাপ্তি যোগ করেছ আমার অতিশয় ক্ষুদ্র থলিতে!আমি এক জান্নাতবাসীর মা!' অমনি আমার দু'চোখ দিয়ে দরদর করে কোথা থেকে যে এতো নোনাপানি পড়ে আমি বুঝিনা!এখনও পড়ছে!

গতপরশু দিন যে ছেলেটা চলে গেছে তাঁর মায়েরও কি একই অনুভূতি?আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে!সেদিন ফকিরাপুলমোড়ে শিবিরের একটি মিসিলে পুলিশ গুলি করে আহত করে প্রায় পঞ্চাশজনের মতো নিরীহ ছেলেকে,তার মধ্যে মারাত্নক আহত পনেরোজনের মতো সবাইকেই ঘাসের আঁটির মতো করে পুলিশভ্যানে তুলে নিয়ে যায়!গুলি একটি ছেলের ঘাড়ের একপাশ থেকে আরেকপাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে!ধারনা করি ছেলেটি বেঁচে নেই যদিও কোন মিডিয়ায় বা কোথ্থাও কিছু পাইনি।এবং পুরো ব্যাপারটিই ঘটেছে আমার জান্নাতবাসী সন্তানের বাবা সূর্যের চোখের সামনে।সে তখন ওইপথে একটা কাজে যাচ্ছিল।

শাহাদাতের সুরাপানকারী এইসব ছেলেদের মায়েরা কি একজন জান্নাতবাসীর মা হতে পেরে আমার মতই গর্ববোধ করে?আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে!!

ফ্লাট কেনায় এক ডজন পরামর্শ

ফ্লাট কেনায় এক ডজন পরামর্শ

নজরুল ইসলাম টিপু

যারা ফ্লাট কিনতে চায় তাদের অনেকে জানেন না যে ফ্লাট সম্পর্কিত কি কি জিনিষ গুলো জানা দরকার। ডেভলোপারের কাছে কোন জিনিষগুলো চাইতে হবে এবং কি কি প্রশ্ন করতে হবে। অনেক ক্রেতা এসব না জেনে ফ্লাট কিনেন, পরে পদে পদে পস্তাতে থাকে এবং নিজের কপালকে দোষ দেয়। ডেভলোপারদের ফ্লাট বিক্রি করতে হবে আর ক্রেতাদের তা কিনতে হবে। সুতরাং সকলের জানা উচিত আধুনিক জীবনে কি কি সুবিধা পেলে একটি নিরাপদ স্বাস্থ্য সম্মত ফ্লাটের মালিক হওয়া যাবে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বিস্তারিত আলোচনা করা হল।

১. প্রতিটি ফ্লাট গ্রহীতাকে তাদের জায়গার প্রকৃত ইতিহাস জানাটা অপরিহার্য। ডেভলোপার থেকে খতিয়ান, মৌজা ও দাগ নম্বর নিয়ে স্থানীয় রেজিস্টার অফিসে গেলে এসব তথ্য পাওয়া যাবে, রেজিস্ট্রি অফিসে জমিটির সকল কাহিনী জানা যাবে। কোন জরিপে কে মালিক ছিল তা দেখে নিতে হবে। জমিটি ডেভলোপার কোম্পানি নেবার সময় বহুল প্রচারিত জাতীয় পত্রিকা কিংবা স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল কিনা জানতে হবে। অনেকে মফস্বলের অখ্যাত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়, এমন হলে কোন সুবিধার জন্য করা হয়েছে তা জানা দরকার। বিজ্ঞাপনের ব্যাপারটি মূলত জমি কেনার সময় প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে জমির মালিক যদি রেজিস্টার্ড ডেভলোপার হয়, তাহলে প্রশ্ন করার দরকার হয়না। তবে বাংলাদেশের কয়েকটি ডেভলোপার কোম্পানির কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হবার পর, বুঝা গেল বাংলাদেশে সবই সম্ভব! খাস জমি এবং অতীতে হিন্দুদের নামের জমিতে বাড়ী ঘর তৈরিতে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। তাই অযাচিত হলেও নিজের প্রয়োজনের তাগিদে অনেক কিছুই জানতে হয়।

২. নির্ধারিত জমির মাটি পরীক্ষা কোন কোম্পানি করেছিল? তারা একাজে দক্ষ কিনা? বাজারে তাদের পূর্ব পরিচিতি ও সুনাম আছে কিনা জানতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোন কোম্পানি একই এলাকাতে অন্যত্র মাটি পরীক্ষা করেছিল। যার ফলে তাদের কাছে সেখানার মাটি সম্পর্কে ধারনা থাকে। এই সুযোগে তারা লোক দেখানো একটি কাজ করে। পূর্বে করা অন্যের জরিপের ডাটা গুলো কিছুটা এদিক সেদিক করে একটি রিপোর্ট দিয়ে দেয়! বস্তুত তাদের সেই রিপোর্ট ৮০% কাছাকাছি হয় কিন্তু ১০০ ভাগ নিশ্চিত তো আর হয়না। একজন ফ্লাট মালিক এসব তথ্যের ভুল ধরতে পারবে না বটে, তবে নিজেদের কাছে রিপোর্টের একটি কপি থাকা উচিত, ভবিষ্যতে কোন দিন কাজ দিবে।

৩. ফ্লাট মালিকেরা অবশ্যই পুরো ভবনের এক সেট পরিপূর্ণ As Built Drawings নিজ দায়িত্বে ডেভলোপার কোম্পানি থেকে চেয়ে নিবেন। পরিপূর্ণ ভাবে ভবনের কাজ শেষ হলে, ভবন যেভাবে বানানো হয়েছে, যেখান দিয়ে পাইপ চালানো হয়েছে, ইত্যাদি অঙ্কন করে হুবহু অবিকল একটি Drawing বানানো হয় সেটাকে As Built Drawing বলে। সেই ধরনের একটি সেট সংগ্রহ করে পুরো সেটের মাঝে Structural, Architectural, Electrical, Drainage, Water Supply Drawings ভুলক্রমে বাদ পড়েছে কিনা, নিজ দায়িত্বে পরখ করে নিতে হবে। এছাড়াও একটি ভবন তৈরিতে আরো বিভিন্ন নকশা বা Drawing থাকে যেমন Elevation, Section, Details ইত্যাদি। সুনাম পূর্ণ ডেভলোপার কোম্পানি এসব নকশা চাহিবা মাত্র সিডি অথবা প্রিন্ট হস্তান্তর করবেন। মূলত: ফ্লাটের কিংবা ভবনের চিরদিনের ইতিহাস এই ড্রয়িং গুলোতেই লিপিবদ্ধ থাকবে। নির্মাণ ত্রুটির কারণে ভবনে সমস্যা দেখা দিলে, ভূমিকম্পে ফাটল হলে এসব সমস্যা সমাধানে As Built নকশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে সুবিধা হবে। কিংবা অন্ধের মত ভবনের অপ্রয়োজনীয় অংশে কাটা ছেড়া করতে হবে। এতে সমস্যার সমাধান না হয়ে জটিলতা বৃদ্ধি পাবে।

৪. যারা ফ্লাট ক্রয় করতে চান, তারা ফ্লাট এবং ভবনের বাহারি দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে যান। তারা ভুলেও জানতে পারেন না যে, ভবন তৈরিতে মালমসলা ও উপাদান গুলোর যথাযথ প্রয়োগ ও যথোপযুক্ত মান ছিল কিনা! সে জন্য যতটুকু পারা যায়, সে সব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যেমন, বালি কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল? ইটের প্রকার কেমন ছিল? সিমেন্ট কোন কোম্পানির এবং কারা সরবরাহ করেছিল? রডের প্রকৃতি কেমন ও কোন কোম্পানির? কারা সরবরাহ কারী? দলীলের জন্য পারত পক্ষে তাদের কোম্পানির বিলের কপি ও ঠিকানা সংগ্রহ করে রাখা। ভবন তৈরির আধুনিক নীতিমালা অনুযায়ী যে সকল মালামাল ভবনের কাজের স্থলে আসবে তাদের ছবি তুলে রাখতে হয়। শুধু মালামালের ছবি দিলে হবেনা, সাথে কাজ চলমান অবস্থায় ভবনের ছবিও তুলতে হয়। যাতে সন্দেহ মুক্ত হওয়া যায় যে, ছবিটা ভবনের কাজ চলাকালীন সময়ে সরবরাহ কৃত মাল সামানের ডিজিটাল ছবি। লোহার কিয়দংশ নাম দেখা যায় এমন কনক্রিটের দেওয়ালের ক্লোজআপ ছবি, ইটের লোগো ও গাঁথুনির ছবি, সিমেন্টের প্রলেপের ছবি। যিনি ছবি তুলেছেন তাঁর এবং উপস্থিত ইঞ্জিনিয়ারের দস্তখত নিতে হয়। সেই ছবি গুলো ডেভলোপার কোম্পানি দ্বারা সত্যায়িত হতে হয়। ক্যামেরাতে ছবি তোলার সময় ও তারিখ এডজাষ্ট থাকতে হয়। তাহলে অনেক ছবি তুলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ছবিতে সাইন সিল দলীলের জন্য রাখতে হয়। দরজা-জানালার গ্রিল ও কাঠের কাজের নির্মাণকারী কারা। একবছর পরে দরজার কাঠে ‘ঘুণ’ ধরলে কাকে ধরা হবে? এসব খুঁটিনাটি সতর্কতা হয়ত আমাদের দেশে এখনও চালু হয়নি। তবুও প্রশ্ন করলে ডেভলোপার কোম্পানিগুলো বুঝতে পারবে, ক্রেতা সতর্ক হচ্ছে তাদের খুশী করতে হলে, আরো বেশী তত্ত্ব ও তথ্য রাখতে হবে। এতে তাদের দায়বদ্ধতা বাড়বে এবং স্বচ্ছতা নিরূপণের জন্য তারা আগে থেকেই প্রস্তুত থাকবে। যারা ফ্লাটের কন্ট্রাক করে ফেলেছেন তাদের দুঃচিন্তা করার কোন কারণ নাই, যারা ভবিষ্যতে কন্ট্রাক করবে তারা এসব চাইলে কর্তৃপক্ষের পূর্ব হতে সতর্ক হবার সুযোগ মিলবে। কেননা ডেভলোপার কোম্পানি গুলো চায় ক্রেতারা ভাল জিনিষটি আমাদের নিকট থেকে পেয়ে যাক।

৫. Structural Drawing সংগ্রহ করে ভবনের উচ্চতা বর্ণনা করে বিম, কলাম, মাটি খননের গভীরতা, ফাইলিং, রডের সাইজ, ধরন ইত্যাদি পুনঃ বিশ্লেষণের জন্য কোন একজন দক্ষ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে দেখান। তিনি বলে দিতে পারবেন নির্মাণকাজে কোন চাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে কিনা। স্টিল ড্রয়িং, বিম ও কলামের আকৃতি দেখে তিনি বলে দিতে পারবেন প্রয়োজনের তুলনায় এসবের গঠন ও প্রকৃতি দুর্বল কিনা? বাংলাদেশ যেহেতু একটি ভিন্ন চরিত্রের দেশ! তাই সাহায্য নেওয়া সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে নকশা দেবার সময়; নকশা থেকে ডেভলোপার কোম্পানি, কনসালটেন্ট, স্থান, টেলিফোন সহ সমুদয় তথ্য গোপন করা বাঞ্ছনীয়। কেননা তিনিও ডেভলোপারের দুর্বলতা প্রকাশ করে দিয়ে তাদের নিকট থেকে অন্যায় সুবিধা নিতে পারে কিংবা তিনিও তাদের লোক হয়ে যেতে পারেন! এসব তথ্য গোপন না করে বিস্তারিত প্রকাশ করার মাধ্যমে ক্রেতার ক্ষতি ছাড়া লাভ নাই। হয়ত বলবেন! বুদ্ধি ধরতে গিয়ে ৫ থেকে ১০ টাকার খরচ বাড়ানো হল? এর সোজা উত্তর হল, ৪০ লক্ষ টাকার বাড়িতে উঠার জন্য ৫ হাজার টাকার ঝুঁকিটা তেমন কিছু না, কেননা এই ভবনে আপনি, আপনার সন্তান, তাদের সন্তান বেড়ে উঠবে ও বেঁচে থাকবে।

৬. আপনি যে এলাকায় ফ্লাট কিনতে চাচ্ছেন, সে এলাকার সরকারি বিধিবিধান কি তা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে জেনে নিন। সে এলাকায় সর্বোচ্চ কত তলা পর্যন্ত ভবন করার অনুমোদন আছে। এলাকায় বসবাসের জন্য আদৌ কোন অনুমোদন আছে কিনা? কিংবা তলে তলে এলাকাটি সরকারী খাতায় শিল্প জোন হিসেবে বিবেচিত কিনা? আপনার অনুমোদিত ভবন থেকে সীমানা পর্যন্ত কতটুকু ছাড় দিতে হবে? অতীতে সবচেয়ে বড় বন্যার সময় এই এলাকায় পানির উচ্চতা কত ছিল এবং জলাবদ্ধতা হয় কিনা? হলে কতদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল? আরো জানতে হবে আপনার ভবনের মাটির উচ্চতা কত হওয়াটা বিধিসম্মত? এখানে উচ্চতা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা সরকারী হিসেবে উচ্চতা কত হতে হবে তার বিধি আছে। আমাদের দেশে এসব বিষয় গুলোকে ফাঁকির মাধ্যমে এড়িয়ে গিয়ে ভবন অনুমোদনের বহু নজির আছে।

উপরের ছয়টি পর্যায়ে বাহিরের তথ্য নিয়ে লিখা হয়েছে, নিচের সমস্যা গুলো আভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করা হল;

৭. আপনি যে ফ্লোরে থাকতে চান, তার উপরের ফ্লাট ও নীচের ফ্লাট গুলো একই কিনা দেখুন। যদি একই হয় তাহলে সবার সমস্যা ও সম্ভাবনা একই হবে। এই ক্ষেত্রে প্রথমে নিজেদের গোসল খানা এবং টয়লেট টি দেখুন এবং অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই ঘটবে এমন একটি তিক্ত সমস্যা আজই সমাধান করুন। দেখুন, আপনার টয়লেটের পাইপ যদি ভেঙ্গে যায়, কিংবা ফ্লোরে পানি একাকার হয়। তাহলে নীচের তলার মানুষদের সমস্যা না করে নিজের টয়লেটের সমস্যা নিজের কক্ষে সমাধান হচ্ছে কিনা? যদি সমাধান হয় তাহলে উত্তম। যদি না হয়, তাহলে মনে রাখবেন যেদিন এই সমস্যা দেখা দিবে, সেদিন থেকে নিচের তলার বাসিন্দাদের সাথে স্থায়ী শত্রুতার সূত্রপাত হবে। কেননা এই সমস্যা একবার দেখা দিলে স্থায়ী সমাধান হয়না। মোদ্দা কথা হল ফ্লাটের সমস্যাটি নিচের কারো সমস্যা না করে নিজের ফ্লাটে বসে সমাধান হয় কিনা? হলে এটাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাল দিক বিবেচনা করুন। আর যদি উপরের ফ্লোর আর নিচের ফ্লোর ভিন্ন হয়! ধরুন আপনার কক্ষটি তিন বেড রুম, ঠিক উপরের কক্ষ গুলো দুই বেড রুম বিশিষ্ট। তাহলে দেখে নিন, আপনার উপরের ফ্লোরের গোসল খানা, রান্না ঘর সহ পানির সম্পর্ক আছে এমন কক্ষগুলো আপনার বেড রুমের ঠিক কোন স্থানে? যদি উপরে হয় কিংবা পানির লাইন ক্রস হয়, তাহলে জীবনে কোন একদিন তাদের কক্ষের নিঃসরিত পানি আপনার বেডরুমে আসতে পারে। আর আপনি যদি সেই উপরের ফ্লোরের মালিক হন, তাহলে নীচের ফ্লোরের বাসিন্দাদের অনুরোধের বেড়াজালে আবদ্ধ হতে হবে। কেননা সমস্যা নীচের ফ্লোরের আর গোসল খানা ভাঙ্গতে হবে আপনার টি! মূলত এসব ব্যপার গুলো ইঞ্জিনিয়ার মাথায় রেখেই ভবন তৈরি করে। তবে কারো কপাল খারাপ হলে উল্টো পাল্টা কিছু একটা হয়ে যেতে পারে, তাই সতর্ক হলেই কল্যাণ।

৮. ভবনে আগুন লাগলে পালানোর রাস্তা আছে কিনা? ভবনের মাঝখানে যে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হয়, বিপদের সময় সেটা দিয়ে পালানো যাবে! একটি কথা মনে রাখবেন, আগুন ব্যাপক ভাবে জ্বলে উঠার বহু আগেই মানুষ মৃত্যু বরণ করে শুধুমাত্র ধুয়ার কারণে! তাই সিঁড়ির সামনে কিংবা লাগোয়া কক্ষে যদি আগুন লাগে তখন অনেকেই পালাতে পারবে না এবং ধুয়োর কুন্ডুলীকে আটকা পড়ে মারা যাবে। সেই অবস্থায় বিকল্প সিঁড়ি আছে কিনা দেখতে হবে। বাংলাদেশ বৃষ্টি বাদলের দেশ, ব্যালকনিতে বৃষ্টির পানি জমবে, সেই পানি নিষ্কাসনের জন্য ট্র্যাপ রাখা হয়েছে কিনা? ফ্লাট বুঝে নেবার আগে টয়লেট, রান্নাঘর, ব্যালকনিতে এক বালতি করে পানি ঢেলে দেখতে হবে, সকল পানি ফ্লোরের ঢালু বেয়ে ফ্লোর ট্র্যাপে পড়ছে কিনা? সুবিধা অসুবিধা ঘটনাস্থলেই বুঝতে পারবেন। আপনি যে তলায় বসবাস করবেন ইলেকট্রিক্যাল কক্ষটি সেই তলায় থাকাটা আবশ্যক। মেইন ইলেকট্রিক্যাল রুমে গিয়ে আপনার ভবনের কানেকশনটি কোথায় লাগানো আছে, দেখে নেওয়া উচিত। ভূমিকম্প কিংবা অন্য কারণে ফ্লাটের মূল ইলেকট্রিক্যালের তার ছিঁড়ে গেলে, সেটার রাস্তা উদ্ধার করা মুশকিল হবে। সে সময় এস বিল্ড নকশার সাহায্য নিতে হবে। নিজের ইচ্ছামত করিডোর দিয়ে তার টানতে গেলে, অ-সৌন্দর্য ও অনিরাপদের জন্য অন্যরা বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ভবনে ময়লা ফেলার জন্য Garbage Hole আছে কিনা। সকল ভবনে এটা থাকেনা, থাকলে বাড়তি সুবিধা। কেননা যে কোন তলা থেকে অপ্রয়োজনীয় ময়লা এই গর্ত দিয়ে নীচে ফেলা যায়।

৯. ভবনে টেলিফোন সংযোগের ব্যবস্থা নিচের তলা থেকে হলে নিরাপদ ও সুন্দর হয়। ফলে বাহিরের টানা তারের কারণে ভবনের সৌন্দর্য বিনষ্ট ও পাখি বসার সুযোগ থাকবে না। ভবনের ছাদে অবশ্যই সেন্ট্রাল ডিস এন্টেনার সুযোগ এবং প্রতি তলায় স্প্লিটার কানেকশন থাকা উচিত। এতে অন্যরা নিজেদের ইচ্ছামত ডিস বসানো কিংবা তার টানার সুযোগ কমে যায়। বজ্রপাত আঘাত হানলে সেটি মাটিতে চলে যেতে হবে, সেজন্য প্রয়োজনীয় পিতলের থাম বসানোর মাধ্যমে পুরো ভবনটির Earth Protected করা হয়েছে কিনা? নতুবা জীবনের ঝুঁকি ছাড়াও ভবনের লাইট, টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল সহ সমুদয় ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি মুহূর্তে নষ্ট হয়ে অর্থনৈতিক ঝুঁকি বাড়াবে। ভবন যদি বড় হয়, তাহলে কক্ষের ভিতরে প্রয়োজন মত মোবাইল সিগন্যাল পাওয়া যায় কিনা। নতুবা মজবুত সিগন্যালের জন্য প্রয়োজনীয় Wireless Access সরঞ্জাম বসাতে হবে, কেননা এই সমস্যাটি সবার জন্য সমান। ভবনের নিচে কোন মেহমান আসলে তার সাথে কথা বলার জন্য ভিডিও কিংবা অডিও যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে কিনা। না থাকলেও ভবিষ্যতে করতে পারার জন্য সুযোগ রেখেছে কিনা? ভবনে আগুন লাগলে মুহূর্তে সবাইকে সতর্ক করার জন্য Fire Alarm ব্যবস্থা আছে কিনা? থাকলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া। এ সকল ইলেকট্রনিক্স জিনিষ কারা সরবরাহ করেছে এবং কত বছরের গ্যারান্টি কিংবা ওয়ারেন্টটি দিয়েছে, এসকল তথ্য জানতে হবে। তাদের সাথে কোন মজবুত চুক্তি থাকলে, চুক্তির বিষয়টি কারা দেখাশোনা করবে। কেননা বিপদের দিনে তারা যদি সার্ভিস না দেয় তাহলে সবার ভোগান্তি হবে।

১০. বাসায় উঠার পরে প্রতি মাসে একবার হলেও একটি পরিকল্পিত পারিবারিক ইমার্জেন্সী সার্ভিস রপ্ত করতে হবে। মনে করুন ভবনে আগুন লেগেছে, সেটা মনে করে পরিবারের সাইকে নিয়ে পালালেন। সেজন্য কম সময়ে আহত না হয়ে সবাইকে নিরাপদে নামতে হবে। তাই সবাইকে নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে পড়ুন এবং দেখুন কত সময় লেগেছে। একবার এক সিঁড়ি দিয়ে নামুন অতঃপর ঘরে বসে দেখুন কি কি ভুল করা হয়েছে। যাবার সময় দরজা জানালা বন্ধ করতে পেরেছিলেন কিনা। কেননা আগুনের ভয়ে পালানোর সময় আতঙ্কে দরজা জানালা খোলা রেখেই সবাই পালায়, এতে ঘরে অক্সিজেন ঢুকে পড়ে, ফলে আগুন তাড়াতাড়ি বিস্তারের সুযোগ পায়। এই ধরনের বিপদে ৪০ কেজি ওজনের জিনিষ নিয়ে পালানো সম্ভব নয়। তারপরও হালকা অথচ অতি জরুরী জিনিষ বাঁচানো প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যেমন, পাসপোর্ট, চেক বই, বিভিন্ন দলিল, অলঙ্কারের ছোট্ট প্যাকেট ইত্যাদি। নিজে এবং গিন্নী পরিকল্পনা করে এসব জিনিষ এমন জায়গায় নিরাপদে রাখুন যাতে ত্রিশ সেকেন্ড সময় ব্যবহার করে পরিবারের প্রাণ নিয়ে ভাগতে পারেন। সেজন্য রিহার্সাল প্রয়োজন। জীবনে প্রতি বছর ঘরে আগুন লাগে না, তবে যেদিন লাগবে সেদিন বুদ্ধি কাজ করবে না। তাই এসব মাথায় রাখতে হবে। মূলত এই রিহার্সাল এককভাবে না করে পুরো ভবনের সবাই করলে সুফল পাওয়া যাবে। তখন বুঝা যাবে একসাথে এত মানুষ নামতে গেলে সিঁড়িতে কেমন জট তৈরি হয়। ওহ হো, মূল কথাই বলা হয়নি! কোন অবস্থাতেই সিঁড়িতে মালামাল রাখা যাবেনা, এমনকি এটাকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রামের স্থান বানানো ঠিক নয়। মালামালের লোভ করে পালাতে দেরী করলে আহত হয়ে কিংবা জীবন দিয়ে চরম খেসারত গুনতে হবে।

১১. ভাড়া বাসায় থাকা আর নিজের টাকায় কেনা ফ্লাটে থাকার মাঝে বিস্তর ব্যবধান আছে। ভাড়া বাসায় মালিক থাকে একজন, তাই একজনের সিদ্ধান্তে সকল সমস্যা তাড়াতাড়ি মিটানো সম্ভব। আর ফ্লাট ভবনে মালিক থাকে অনেক জন। এখানে সমস্যার আশু সমাধান তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। মানুষ আয় রোজগারের সুখের দিনে ফ্লাট কিনে, আর যখন ফ্লাটে থাকতে যায় তখন তার আয়-রোজগার আগের মত থাকেনা। সে জন্য যে জিনিষটি মাথায় রাখতে হবে সেটা হল বিভিন্ন জিনিষের সার্ভিস খরচ। প্রথম দশ বছর ভবনের চামড়া উঠবে না, প্রথম পাঁচ বছর লিপ্টের কোন সমস্যা থাকবে না, প্রথম তিন বছর ভবনের রঙ্গের কোন সমস্যা থাকবে না, প্রথম দুই বছর জেনারেটরের কোন সমস্যা থাকবে না, প্রথম এক বছর পানির পাম্প মেশিনের কোন সমস্যা থাকবে না। প্রথম ছয় মাস ঘরের লাইট, পানি নিষ্কাশনে কোন সমস্যা থাকবে না। শুরুর প্রথম মাস দারোয়ান, সুইপার, পানির বিল, বিদ্যুৎ বিলের ঝামেলা থাকবেনা। তবে এসব খরচ দিনে দিনে আসবে এবং তা বাড়তে থাকবে। সে সব খরচের কিছু ব্যক্তিগত কিছু সমষ্টিগত। তবে ফ্লাট ভবনের বেশীর ভাগ খরচ সমষ্টিগত। দারোয়ান, সুইপার, রং করা, পাম্প মেশিন ঠিক করা, ভবনে প্রয়োজনীয় সার্ভিস করা, লিপ্টের ম্যানট্যানেন্স, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতির সংরক্ষণ বাবদ প্রতি মাসে একটি খরচ আসবেই। সেই খরচের কথা খেয়াল রাখতে হবে। ভবন যত আধুনিক হবে, খরচও তত বেশী হবে। ২০ জন ফ্লাটের মালিক থেকে ১৮ জন টাকা দিল দুই জন দিতে পারল না। সে জন্য কাজ আটকে থাকবে। তখন তাকে সেই ১৮ জনের প্রশ্নের দৌড়ের উপর থাকতে হবে। সুতরাং ফ্লাট নেবার সময় এই কথাটি মাথায় রাখলে পরে বিপদে পড়তে হবেনা। নিজে নিজে হিসেব করে দেখতে হবে, ৪০ লাখ টাকার ভবনে যদি মাসিক সার্ভিস চার্জ ১০ হাজার টাকা আসে। তাহলে সে ধরনের একটি ফ্লাটে ভাড়া থাকলে কত দিতে হবে। আর ৪০ লাখ টাকা ব্যাংকে ফেলে রাখলে জাকাত দেবার পরে কত আসে?

১২. অনেকগুলো পয়েন্ট থেকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির আলোকে এক ডজন পরামর্শ উপস্থাপন করেছি। জানি আমার পয়েন্টের সাথে হুবহু মিলিয়ে শতভাগ পরিপূর্ণ ফ্লাট জোগাড় করা কঠিন। এমনকি আমি নিজেও কিনতে গিয়ে ঠকে যেতে পারি। তারপরও অনেক সচেতন মানুষের জন্য লিখাটি হয়ত উপকারে আসবে, আমিও কিছুটা কল্যাণের ভাগীদার হতে পারব। একটি কথা মনে রাখতে হবে, নিজের মনের মত করে আরেকজন মানুষ কোনদিন পাওয়া যায়না। সে ক্ষেত্রে নিজেকে ত্যাগ করে অন্য জন যাতে ভালবাসে, সে ভাবে নিজেকে গড়তে পারলে দুনিয়াতে তার কোন সমস্যা হয় না। ফ্লাট বাড়িতে সবাই ধনী, কেউ কারো কথার তলে থাকার মানুষ নন। কারো মর্যাদাহানি, অসম্মান, পরিবারের নিরাপত্তা হীনতার ব্যাঘাত হলে সমস্যা জটিল হতে বাধ্য। কেননা এটা ভাড়া বাসা নয় যে, পরের মাসে অন্যত্র আরেকটি বাসা ভাড়া নিয়ে চলে গেলেন। তাই একগুঁয়েমি স্বভাব, গর্ব-ভাবাপন্ন ব্যক্তিত্ব, অন্যকে তাচ্ছিল্য করার প্রবণতা থাকলে ফ্লাট বাড়িতে সুখের বদলে দুঃখের বন্যাই বেশী বইবে। সে ধরনের ব্যক্তির জন্য ভাড়া বাসাই উত্তম। বাংলাদেশে প্রচুর মান সম্মত ডেভলোপার কোম্পানি আছে, তাদের অনেকেই উত্তম নাগরিক সুবিধা দিয়ে ক্রেতা ধরতে প্রতিযোগিতা করে। তাদের নিকট থেকে যাচাই করে একটি ফ্লাটের গর্বিত মালিক হোন। সাইন বোর্ড আর চটকদার টিভি বিজ্ঞাপন দেখে প্রতারিত হবেনা না। ডেভলোপার কোম্পানির যোগ্যতা দক্ষতার সাথে যে জিনিষটাকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে তা হল সততা আর ইমানদারীতার সুনামকে। একজন অবিশ্বস্ত ডাক্তার হয়ত একজন রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে, তবে একজন অবিশ্বস্ত প্রকৌশলী একসাথে হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে।

লেখক আমিরাত প্রবাসী। tipu1900@yahoo.com
(লেখক দীর্ঘ ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে আধুনিক প্রযুক্তির ভবনের ইলেক্ট্রো ম্যাকানিক্যাল কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত)