Saturday, January 26, 2013

কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাক পরার পক্ষে রায়


সমাজ জীবন

কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাক পরার পক্ষে রায়

অফিস আদালতে ধর্মীয় পোশাক কোনো সমস্যা হতে পারে না – এমন মতের পক্ষে রায় দিয়েছে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত৷ তবে সঙ্গে এ-ও জানিয়েছে, স্বাধীনতা ততক্ষণ পর্যন্তই সমর্থনযোগ্য, যতক্ষণ না সেটা অন্য কারো অধিকার খর্ব করছে৷
ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের একটি রায় নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে৷ বিশেষ করে ইউরোপে অবস্থানরত অভিবাসী, যাঁরা ধর্মচর্চার অংশ হিসেবে স্কার্ফে মাথা ঢেকে বা মাথায় পাগড়ি পরে অফিসে যেতে চান তাঁরা বুঝতে চাইছেন এ রায়ের বিশেষত্ব৷ রায়ে আসলে একদিকে যেমন সব ধর্মাবলম্বীকে ধর্মবিশ্বাস থেকে পোশাক নির্বাচনের অধিকার দেয়া হয়েছে, তেমনি আবার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যের প্রতি অবিচার না করার বিষয়টিকে সব সময় গুরুত্ব দেয়ার কথাও বলা হয়েছে খুব জোর দিয়ে৷
© Darrin Henry - Fotolia.comজার্মানির বর্তমান আইন অনুযায়ী অন্য কারো অনুভূতিতে কোনো আঘাত না করলে, কারো জন্য কোনো শঙ্কার জন্ম না দিলে কর্মক্ষেত্রে পোশাক নির্বাচনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই
রায়ের শেষ কথা – ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো নিজ নিজ পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে, সংশ্লিষ্ট অভিযোগে বাদি-বিবাদির ভালো-মন্দ বিচার করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে৷ এ সময় ব্রিটেনের খ্রীষ্টানদের করা চারটি মামলার একটির পক্ষে এবং বাকি তিনটির বিরুদ্ধে রায় দেয় ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত৷ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের এক খ্রীষ্টান কর্মী কাজের সময় ‘ক্রস' পরতে চাইলে তাঁকে কাজ করার সুযোগ না দিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল ওই বিমান সংস্থার নিয়োগকর্তারা৷ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, যেহেতু কর্মীটির ওই ‘ক্রস' পরা অন্য কাউকে কোনোভাবে আঘাত করছে না সে কারণে তাঁকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে৷
ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের রায়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন খুশি৷ এক টুইটার বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, ‘‘কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় পোশাক পরার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়ায় আমি আনন্দিত, ধর্মবিশ্বাসের কারণে কোনো মানুষের বৈষম্যের স্বীকার হওয়া উচিত নয়৷''
জার্মানিতে সেই আশঙ্কা এমনিতেও নেই৷ জার্মানির বর্তমান আইন অনুযায়ী অন্য কারো অনুভূতিতে কোনো আঘাত না করলে, কারো জন্য কোনো শঙ্কার জন্ম না দিলে কর্মক্ষেত্রে পোশাক নির্বাচনে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ ফ্রাঙ্কফুর্টের গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম বিষয়ের বিশেষজ্ঞ টমাস এম স্মিট তাই মনে করছেন ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতের রায় জার্মানিতে বর্তমানে কার্যকর আইনে ব্যাপক কোনো পরিবর্তনে বাধ্য করবে না৷ ইউরোপের একেক দেশের একেক রকমের বাস্তবতার প্রেক্ষিতে দেশভেদে আইন প্রয়োগে কিছুটা স্বাধীনতা রাখার বিষয়টিরও প্রশংসাই করেছেন তিনি৷

Wednesday, January 23, 2013

‘প্রভাবশালী ব্রিটিশ বাংলাদেশির’ তালিকায় ৩৫ নতুন মুখ

যুক্তরাজ্য প্রবাসী ‘একশ প্রভাবশালী বাংলাদেশির’ দ্বিতীয় তালিকায় উঠে এসেছে নতুন ৩৫ জনের নাম।  


যুক্তরাজ্য প্রবাসী ‘একশ প্রভাবশালী বাংলাদেশির’ দ্বিতীয় তালিকায় উঠে এসেছে নতুন ৩৫ জনের নাম।  মঙ্গলবার লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টারে হাউস অব কমন্সের কমনওয়েলথ কক্ষে ‘ব্রিটিশ বাংলাদেশি পাওয়ার ১০০’ নামের এই তালিকা প্রকাশ করে ‘বিবিপাওয়ার ১০০’ উপদেষ্টা কমিটি।
২০টি ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী’দের এই তালিকায় টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাচিত মেয়র লুৎফুর রহমান, পার্লামেন্ট মেম্বার রুশনারা আলী ও আইরিন জুবায়দা খানের পাশাপাশি প্রতিশ্রুতিশীল প্রবাসী তরুণরাও রয়েছেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘বিশেষ অবদানের জন্য’ সীমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ, মেকআপ শিল্পী রুবি মিলি, ব্যারিস্টার আজমালুল হুসেইন কিউসি, জন র‌্যাডক্লিফ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক টিপু জাহেদ আজিজ, ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্ট স্কটল্যান্ডের অধ্যাপক অ্যান্ডি মিয়া, দ্য রয়েল ব্যাংক অফ স্কটল্যান্ডের কর্পোরেট ব্যাংকিং বিভাগের ট্রেজারার ড. মুরাদ চৌধুরী, সংবাদ উপস্থাপক নিনা হোসেন, ব্রিটিশ কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়ন রুকসানা বেগম, তরুণ উদ্যোক্তা সাবিরুল ইসলাম, মানবাধিকার সংস্থা রেস্টলেস বিংসের প্রতিষ্ঠাতা রহিমা বেগম, মোবো বিজয়ী জো রহমান ও লেখক তাহমিমা আনামও রয়েছেন।
লন্ডন অলিম্পিক ও প্যারা অলিম্পিকে অবদান রাখা বাংলাদেশিদের নামও রয়েছে এ তালিকায়।
এদের মধ্যে কোরিওগ্রাফার ও লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধীন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া নৃত্যশিল্পী আকরাম খান, অলিম্পিকের বোর্ড মেম্বার ড. আব্দুলি বারি, অলিম্পিকের ৫ পাউন্ডের স্মারক মুদ্রার নকশাকার সাইমন মিয়া, বিড মেম্বার আয়েশা কোরেশি ও কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীও রয়েছেন।
এছাড়া ডা. আনিসুর রহমান, ডা. তাহসেন চৌ্ধুরী ও রুবাইয়াৎ হক, পুলিশ কর্মকর্তা পিসি সাকিরা সুজিয়া, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. নবাব উদ্দীন, জো রহেমান ও তরুণ উদ্যোক্তা সাবিরুল ইসলামের মতো নতুন মুখ স্থান পেয়েছে এবার তালিকায়।
এ তালিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ মন্ত্রী টেরেসা মে বলেন, যুক্তরাজ্যের সামাজিক অগ্রগতি ও নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বাংলাদেশিরা অবদান রেখে চলেছেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই তালিকা প্রকাশের জন্য উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করেন তিনি।
‘বিবিপাওয়ার ১০০’ জুরি বোর্ডের সদস্য সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, যুক্তরাজ্যে সবার মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, বাংলাদেশিরা এখানে শুধু রেস্তোরাঁ (ক্যাটারিং) খাতে ভূমিকা রাখছে।
অ্যাকাডেমিক, চিকিৎসা, আইন ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা বাংলাদেশিদের এ তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে সেই ধারণার পরিবর্তন আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে বিদেশ যাওয়ার আগে করণীয়

উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে বিদেশ যাওয়ার আগে করণীয়

উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যেতে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও পূর্বপ্রস্তুতি। দরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ভবিষ্যতে কোথায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রূপে দেখতে চাই, কোন ক্ষেত্রে নিজের পেশাজীবন গড়তে চাই এবং কীভাবে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাই—সেগুলো স্থির করতে হবে।
পাশাপাশি ঠিক করতে হবে কোন দেশে পড়লে লক্ষ্যপূরণ সহজ হবে। তারপর চলতে থাকবে পছন্দের বিষয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খোঁজ। কোথায়, কোন বিষয়ে এবং কেন পড়তে চাই, সেগুলোর উত্তর মিলে গেলে আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করলে খুলতে হবে অ্যাকাউন্ট। দেখতে হবে কী কী শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার সুযোগ আছে সেখানে। এই পুরো ব্যাপারটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও জটিল। এর জন্য প্রয়োজন বাড়তি মনোযোগ ও সতর্কতা। এই দীর্ঘ সময়ে আবেদনকারীদের শেষ করে ফেলা দরকার প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো: টোয়েফল, আইইএলটিএস, জিআরই, জিম্যাটসহ অন্যান্য।

আইইএলটিএস:
অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অধিকাংশ দেশে ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম) গ্রহণ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টোয়েফলের সঙ্গে সঙ্গে আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণ করে। আইইএলটিএসে মোট স্কোর ৯। দুই দিনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। প্রথম দিন চারটি মডিউলের মধ্যে রিডিং, লিসেনিং ও রাইটিং পরীক্ষা নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দিন ইংরেজি ভাষায় বিশেষজ্ঞ পরীক্ষকেরা গ্রহণ করেন স্পোকেন টেস্ট। পুরো পরীক্ষাটি ‘পেপার-বেসড’।

‘ব্রিটিশ কাউন্সিল আইইএলটিএস পরীক্ষা’ কমিটির প্রধান হারুন উর রশীদ জানান, আইইএলটিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার সুবিধার্থে অনেক ব্যবস্থা রয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিলে। প্রস্তুতিমূলক বই পাওয়া যাবে লাইব্রেরিতে। রয়েছে এক দিনের ওয়ার্কশপ এবং আড়াই মাসের প্রস্তুতি কোর্স। এমনকি নির্দিষ্ট মূল্যে প্রতিটি মডিউলের মডেল টেস্টও দেওয়া যাবে। এতে আপনি আপনার অবস্থান এবং আপনার সম্ভাব্য স্কোর আন্দাজ করতে পারবেন। ‘রোড টু আইইএলটিএস’ সেকশনে যে কেউ বিনা মূল্যে ১০ ঘণ্টার অনলাইন কোর্স এবং নিবন্ধন করা পরীক্ষার্থীরা ১২০ ঘণ্টার অনলাইন কোর্স করতে পারবেন। নিবন্ধন ফি ১১ হাজার ৯০০ টাকা।

টোয়েফল:
ইংরেজি ভাষায় পেশাদারি দক্ষতা যাচাইয়ে প্রয়োজন হয় টোয়েফল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ আ ফরেন ল্যাংগুয়েজ)। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্য উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আবেদনে প্রথম শর্ত টোয়েফলে নির্দিষ্ট স্কোর পেতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পছন্দের বিষয়ভেদে স্কোর করতে হয় সর্বমোট ১২০ নম্বরের মধ্যে। টোয়েফলে চারটি ভাগ থাকে: রিডিং, লিসেনিং, স্পিকিং ও রাইটিং। টোয়েফলে ১২০ স্কোরের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড মান ১০০-এর মধ্যে। অর্থাৎ ১০০ পেলে ভালো। এই নম্বরটি পেতে প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের কঠোর প্রস্তুতি। বাজারে অনেক বই আছে টোয়েফল প্রস্তুতির জন্য। সময় একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, যার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। তৈরি করতে হবে নিজের নির্মিত কৌশল। মডেল টেস্টগুলো যত দেওয়া যায় ততই ভালো। টোয়েফল নিবন্ধন ফি ১৬০ মার্কিন ডলার। নিবন্ধনের সময়ই পরীক্ষা কোথায় হবে তা জেনে নেওয়া ভালো। প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট- www.ets.org/toefl

জিআরই:
বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করতে উত্তর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবশ্যক শর্ত জিআরই (গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন)। ২০১১ সালের আগস্ট মাস থেকে বদলে গেছে জিআরই। নতুন পদ্ধতিতে জিআরইর স্কোর ৩৪০। ভার্বাল ও কোয়ান্টিটেটিভ সেকশনের স্কোরের ব্যাপ্তি ১৩০-১৭০।

‘অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং সেকশনে’ দুটি রচনা ‘ইস্যু ট্রাস্ক’ এবং ‘আর্গুমেন্ট টাস্ক’-এর জন্য স্কোর ০-৬।
ভার্বাল সেকশন দুটি, কোয়ান্টিটেটিভ দুটি সেকশন এবং একটি পরীক্ষামূলক সেকশন উত্তর দিতে হয়। পরীক্ষামূলক সেকশনটি ভার্বালও হতে পারে অথবা কোয়ান্টিটেটিভও হতে পারে। সেকশনগুলোতে প্রতিটি প্রশ্নের স্কোর সমান। প্রথম সেকশনগুলোতে সর্বোচ্চ সঠিক উত্তর দিলে ‘ডিফিকাল্টি লেভেল’ ভিত্তিতে পরবর্তী সেকশনগুলোতে উচ্চমাননির্ভর প্রশ্ন দেওয়া হয়। জিআরইর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি। প্রচুর বিদেশি পত্রিকা ও প্রবন্ধ পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে। নতুন জিআরই ‘ভোকাবুলারি’ নির্ভর না হলেও যত শব্দ জানা থাকে তত ভালো। সময় সম্পর্কে রাখতে হবে অতিরিক্ত খেয়াল। প্রচুর মডেল টেস্ট দিতে হবে এবং জিআরইভিত্তিক ব্লগ ও ওয়েবসাইটগুলোতে নিয়মিত হতে হবে। আমেরিকান সেন্টারে জিআরই ও জিম্যাটের নিত্যনতুন প্রস্তুতির বই ও মডেল টেস্ট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

জিম্যাট:
ব্যবসায় প্রশাসনভিত্তিক অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং বিষয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে স্নাতকোত্তর অথবা এমবিএ করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালগুলোতে প্রয়োজন হয় জিম্যাট (গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট)। জিম্যাট পরীক্ষায় চারটি সেকশনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাই করা হয়। এগুলো হলো: ‘ভার্বাল’, ‘কোয়ান্টিটেটিভ’, সম্প্রতি চালু হওয়া ‘ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং ও ‘অ্যানলিটিক্যাল রাইটিং অ্যাসেসমেন্ট’। জিম্যাট স্কোরের ব্যাপ্তি ২০০ থেকে ৮০০। এখানে শেষের দুটি সেকশনের স্কোর অন্তর্ভুক্ত নয়। ‘ভার্বাল’ ও ‘কোয়ান্টিটেটিভ’ সেকশনের স্কোর শূন্য থেকে ৬০ পর্যন্ত। ধাপে ধাপে একেকটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানের মাধ্যমে স্কোর বাড়তে থাকে। পরীক্ষার্থীর প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক সমাধানের মধ্য দিয়ে ‘ডিফিকাল্টি লেভেল’ বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে স্কোর। ‘ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং’-এর স্কোর ১-৮ এবং ‘অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং অ্যাসেসমেন্ট’ ০-৬। এ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রচুর মডেল টেস্ট দেওয়া। বাজারে জিম্যাট প্রস্তুতির জন্য অনেক বই পাওয়া যায়। তবে জিআরই আর জিম্যাট দুটিই কম্পিউটার-নির্ভর। তাই ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগ নিয়মিত দেখে প্রস্তুত করে তুলতে হবে নিজেকে। নিবন্ধন ফি ২৫০ মার্কিন ডলার।
উপরের যে কোনো বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার আগে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্রহের প্রোগ্রামে পড়তে আবশ্যক স্কোর দেখে নিতে হবে। তারপর সেই স্কোরের লক্ষ্য নিয়ে কৌশল তৈরি করতে হবে। পরীক্ষার ‘ফরম্যাট’, প্রতি সেকশনে প্রশ্নের সংখ্যা, গঠন এবং সময় বুঝে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতির জন্য নিজের দক্ষতা অনুযায়ী সময় বেঁধে নিন। অধিকাংশ আবেদনকারী মনে করেন, আগেই নিবন্ধন করা ভালো। তাতে পড়ার জোর বাড়ে। নিয়মিত বিভিন্ন ব্লগ পড়ুন। যাতায়াত করুন আমেরিকান ইনফরমেশন সেন্টারসহ সহায়ক কেন্দ্রগুলোতে। ব্যবহার করুন তাদের পাঠাগার। এতে যাঁরা পরীক্ষা এরই মধ্যে দিয়ে ফেলেছেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভাববিনিময়ের সুযোগ ঘটবে। নতুন কী কী বই আসছে, তার খবরও পাওয়া যাবে সেখানে। দলীয়ভাবে পড়লে ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সুতরাং আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই এই পরীক্ষাগুলো দিয়ে দিন। কারণ এগুলোর স্কোরের ওপর নির্ভর করে আপনার পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সফল হওয়ার সম্ভাবনা।

বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ:
আমেরিকান সেন্টার, টেলিফোন: ৮৮৩৭১৫০-৪, ওয়েবসাইট: www.educationusa.state.gov
ব্রিটিশ কাউন্সিল, টেলিফোন: ৮৬১৮৯০৫, ওয়েবসাইট: www.britishcouncil.org/ bangladesh

জিয়া ছিলেন সরাসরি ভোটে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জাতির ক্রান্তিলগ্নে সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে ক্ষমতায় বসানো হয়। তাই তিনি বলেছিলেন, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স’ অর্থাত্ গণতন্ত্র একমাত্র পথ। তার ক্ষমতার প্রতি লোভ ছিল না। জিয়া প্রেসিডেন্ট হয়ে বলেছিলেন, ‘পরিস্থিতি আমাকে টেনে আনে।’ বাংলাদেশের মানুষ দেখল, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শেষ প্রহরে (ভোর) তিনটায় তার কণ্ঠে যে রকম ধ্বনি বেজে উঠেছিল ‘আমি মেজর জিয়া’, ঠিক তেমনই ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর শুক্রবার ভোরে আবার ইথারে বেজে উঠল, ‘আমি জেনারেল জিয়া বলছি...।’ তিনি জাতির উদ্দেশে তার প্রথম সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিডিআর, পুলিশ, আনসার এবং অন্যদের অনুরোধে আমাকে সাময়িকভাবে দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে। এ দায়িত্ব ইনশাআল্লাহ আমি সুষ্ঠভাবে পালন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আপনারা সকলে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। দেশের সব স্থানে অফিস-আদালত, যানবাহন, বিমানবন্দর, নৌবন্দর ও কলকারখানাগুলো পূর্ণভাবে চালু থাকবে। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হন।’
জেনারেল জিয়াউর রহমান অস্থায়ী ভাবে সবার অনুরোধে ক্ষমতায় এসেছিলেন, কিন্তু দেশের পরবর্তী পরিস্থিতিতে তিনি স্বপদে ফিরে যেতে পারেননি; পারেননি দেশের অবস্থার কথা বিবেচনা করে। স্বাধীনতা-উত্তর মানুষের চাওয়া-পাওয়া ছিল অনেক। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় এসে মানুষকে নিরাশ করেন। তার শাসনামলে (১৯৭২-৭৫) সাধারণ মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট, গুম, হত্যা, ব্যাংক ডাকাতি, রাহাজানি, দুর্ভিক্ষ, দুর্নীতি, দুঃশাসনের স্টিমরোলার চলতে থাকে। দেশে সেসময় পাঁচ হাজার বিরোধী নেতাকর্মী গুম, সিরাজ শিকদারসহ হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষীবাহিনী কর্তৃক হত্যা করা হয়। গণতন্ত্রের পথ হয় রুদ্ধ, সৃষ্টি হয় বাকশাল, সব পত্রপত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। মাত্র চারটি পত্রিকা রাখা হয়। ওই সময় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে তার এক সাক্ষাত্কারে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। প্রয়াত স্বনামধন্য সাংবাদিক নির্মল সেন লিখলেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’। সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, ছড়াকার আবু সালেহ স্বাধীনতার এক বছর পর লিখলেন, ‘ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা। রক্ত দিয়ে পেলাম শালার আজব স্বাধীনতা।’ ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে বিদেশ থেকে পর্যাপ্ত সাহায্য আসার পরও লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা গেল। তার পরিপ্রেক্ষিতে কবি রফিক আজাদ লিখলেন, ‘ভাত দে হারামজাদা, নইলে মানচিত্র খাবো’। শেখ মুজিবের একদলীয় দুঃশাসনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায় ‘মার্কিন মাসিক রিডার্স ডাইজেস্ট’-এ। ১৯৭৫ সালের মে মাসের সংখ্যায় লেখা হয়—শেখ মুজিব দুটি বেসামরিক সংগঠনের ওপর নির্ভরশীল—একটি হচ্ছে তার ভাগ্নে শেখ মনি’র ১ লাখ সশস্ত্র একগুঁয়ে যুবকের সংগঠন যুবলীগ, আরেকটি হলো নিষ্ঠুর রক্ষীবাহিনী। তাদের কাজ হলো যখন-তখন কলকারাখানায় ঢুকে পড়ে শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, হত্যা করে আকস্মিক গ্রামঞ্চলে সান্ধ্য আইন জারি করে সন্ত্রাসের রাজত্ব চালানো। ওই সময় স্বাধীনতা-উত্তর রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুদায়িত্বে নিয়োজিত শেখ মুজিবের মন্ত্রিসভা এবং দল লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। স্বীয় প্রতিশ্রুতি ও নীতি লঙ্ঘন করেন তিনি। এজন্যই দেশজুড়ে ছিল হতাশা আর ক্ষোভ।
দেশ পরিচালনায় দেশের জনগণের সমর্থন প্রয়োজন। তাই জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ উত্তরণে ১৯৭৭ সালে গণভোট করলেন। তিনি ১৯৭৮ সালে ৩ জুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১ কোটি ১০ লাখ ভোটের বিপুল ব্যবধানে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী মোর্চার প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীকে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনগণের সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ভোটে পরাজিত ওসমানী পরাজয় মেনে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে অভিনন্দন জানান। তিনি ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন দেন। তার দল বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থাত্ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করে।
রাজনীতিতে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নতুন। একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার জন্য এ সাধারণ নির্বাচন ছিল প্রথম এক কঠিন পরীক্ষা। তিনি সে কঠিন পরীক্ষায় মহাগৌরবে উত্তীর্ণ হন। রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দেশের প্রবীণতম রাজনীতিবিদরাও তার কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।
তার সময় চারটি খবরের কাগজের পরিবর্তে ৪৪৪টি কাগজ চালু হলো। একটি দলের পরিবর্তে শুরু হলো বহুদলীয় গণতন্ত্র। ৬২টি দল তাদের তত্পরতা শুরু করল। প্রেসিডেন্ট জিয়া দেশের জন্য, দেশবাসীর জন্য দিলেন ১৯ দফা কর্মসূচি। তিনি লক্ষ্য এবং কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন। তার অসামান্য মেধা ও শ্রম দিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তলাবিহীন ঝুড়িকে পরিণত করলেন ফলপূর্ণ ঝুড়িতে। দেশজুড়ে ১৯ দফার সাড়া পড়ে গেল।
তিনি মনোনিবেশ করলেন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মানুষকে স্বাবলম্বী করে শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে তিনি ডাক দিয়েছেন স্বনির্ভরতার। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য সর্বপ্রথম জোর দিলেন খাদ্য উত্পাদনে। বছরে তিনটি ফসল উত্পাদনের জন্য তিনি সারাদেশে উল্কার মতো ছুটে চলতে লাগলেন। তিনি কৃষি উন্নয়নে বিদ্যুত্চালিত সেচ ব্যবস্থা, ট্রাক্টর ও কৃষকের জন্যে কৃষি লোনের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি ১২ হাজার খাল পুনর্খনন করেছেন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। তিনি নিজ হাতে কোদাল ধরেছেন। ১৯৭৯ সালে শুরু হয়ে দু’বছরের মধ্যে ১০১০টি খাল খননের কাজ সমাপ্ত হয়। তিনি সবুজ বিপ্লবের সূচনা করেন। ১৯৮০-৮১ সালে তিনি প্রায় দুই হাজার আটশ’ মাইল দীর্ঘ খাল খননের কাজ হাতে নেয়া হয়েছিল। তিনি কৃষি ও খাদ্যকে দলীয় ও গোষ্ঠীগত রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখুন বলে সবার কাছে অনুরোধ করেন। তার শাসনের আগে এবং প্রথম দিকে ১০-১৫ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। উত্পাদন বাড়িয়ে ২ বছরের মধ্যে ঘানায় চাল ও চিনি রফতানি করেন। দেশ ও জাতির উন্নয়নে এ মহান প্রেসিডেন্ট কাজ করেছেন নিরলসভাবে।
প্রেসিডেন্ট জিয়াই প্রথম উপলব্ধি করলেন, নিরক্ষরতার অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষ নিয়ে কোনো উন্নয়ন তত্পরতা সম্ভব নয়। তাই চালু করলেন গণশিক্ষা। নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাপালেন এক কোটি বই। দেড় বছরে ৪০ লাখ বয়স্ক লোক নতুন করে লেখাপড়া শিখলেন। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনলেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তিনি গ্রাম এলাকায় ৩৮ হাজার পরিবার পরিকল্পনা কর্মী নিয়োজিত করেন। সৃষ্টি করা হয় এক বছরের প্রশিক্ষণ দিয়ে ২৭ হাজার পল্লী চিকিত্সক। শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য গ্রাম সরকার সৃষ্টি করা হলো ৬৫ হাজার গ্রামে। সৃষ্টি করলেন ৮০ লাখ গ্রাম প্রতিরক্ষা কর্মী। প্রেসিডেন্ট জিয়া প্রশাসন ঢেলে সাজান।
শিল্পক্ষেত্রে উত্পাদন বাড়ানোর জন্য সরকারি কলকারকানায় তিন শিফটে কাজ শুরু হয় তার আমলে। শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো এবং বছরে দুটি বোনাসের ব্যবস্থা করা হলো। তার সময় মোট জাতীয় উত্পাদন ১৯৮১ সালে শতকরা ৭.৫ ভাগ বাড়ে। অভ্যন্তরীণ উত্পাদনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়।
অর্ধশিক্ষিত যুবসমাজকে কর্মীর হাতিয়ারে পরিণত করার জন্য যুব মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন জিয়া। জেলায় জেলায় স্থাপিত হয় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ভোকেশনাল ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন), যার মাধ্যমেই ট্রেনিং নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারাবিশ্বে বাংলাদেশের শ্রমিকরা চাকরি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে চলছে। সর্বপ্রথম মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে শ্রমবাজার প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান। শহীদ জিয়া মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, জাতীয় কবির অমর বাণীতে ‘এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। নারীদের উন্নয়নে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মহিলা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মহিলা সংস্থা। শিশুদের মেধা বিকাশে ১৯৭৭ সালে ১৫ জুলাই প্রতিষ্ঠা করেন শিশু একাডেমী। আমাদের স্বকীয় গ্রামীন সংস্কৃতি উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে মাতিয়ে তোলেন গ্রামবাংলা। শিল্পকলা একাডেমীর মতো জেলায় জেলায় শিশু একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জনগণের হৃদয়ের মাঝে সুর তুলে দেন, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার, শেষ বাংলাদেশ। জীবন বাংলাদেশ আমার, মরণ বাংলাদেশ।’
পররাষ্ট্র নীতিতে তিনি ছিলেন সফল। শেখ মুজিব বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব অর্জনে ব্যর্থ হন। জিয়াউর রহমান মধ্যপ্রাচ্য ও চীনসহ বহির্বিশ্বে বন্ধুর সংখ্যা বাড়ান। এছাড়া তার গতিশীল নেতৃত্বের কারণেই প্রাচ্যের সবচেয়ে শিল্পোন্নত ও শক্তিশালী দেশ জাপানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়। দেশবাসীর জন্য এটা ছিল এক বিরল সম্মান। প্রেসিডেন্ট জিয়া ইসলামী সম্মেলনে তিন সদস্যবিশিষ্ট ‘আল কুদস’ কমিটির একজন সদস্য হওয়ার দুর্লভ সম্মান লাভ করেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধাবসানের প্রচেষ্টায় ইসলামী সম্মেলনে গঠিত নয় সদস্যের শান্তি মিশনে শীর্ষ নেতার ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। তার আমলেই সৌদি আরব, চীন, কোরিয়া, পাকিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তার আমলে দেশে দেশে মৈত্রীর বিস্তার শুরু হয়। সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন জিয়া।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার দার্শনিক চিন্তায় বৈপ্লবিক কর্মসূচির মাধ্যমে তিনি গ্রামীণ মহিলাদের মাধ্যমে পরিবারের ও দেশের উন্নয়নে ছোট ছোট কুটিরশিল্প, হাঁস, মুরগি, মাছ চাষসহ আঙিনায় আঙিনায় ভরে তুলতে চেয়েছেন বৃক্ষ রোপণ আর মাচাভরা লাউ, কুমড়া, শিম, কাঁকরোল দিয়ে; পুকুর আর খালপাড় গাছে গাছে ভরে তুলতে চেয়েছেন আম, জাম, কাঁঠাল, ডাব, লেবু আর পেঁপে দিয়ে। মাঠের পর মাঠ পেরি ক্ষেতখামার মাড়িয়ে তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। মাসের ২০ দিনেই রাজধানীর বাহিরে গ্রামে ছুটে বেড়িয়েছেন; দৈনিক ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করেছেন; জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীরা যখন মধ্যে রাতে ঘুমে মগ্ন, তখন ডিসি-এসপিদের মাধ্যমে সরাসরি ফোনে জেলা ও থানা আইনশৃঙ্খলার খোঁজখবর নিতেন। তার ফোনের ভয়ে মন্ত্রী ও ডিসি-এসপিরা তটস্ত থাকতেন। তিনি দেখতে চেয়েছেন স্বনির্ভর বাংলাদেশের মানুষের মুখের হাসি।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন সত্, আদর্শ, মহত্ ও ধার্মিক মানুষ। তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী ও নিরহঙ্কার। একজন প্রেসিডেন্ট হয়েও তিনি সাদাসিধে জীবনযাপন করতে ভালোবাসতেন। আনুষ্ঠানিকতা এবং প্রেসিডেন্ট পদের দাবিতে জিয়া সবসময়ই ভালো কাপড় পরতেন। কিন্তু ঘরের ভেতরে তিনি ছেঁড়া কাপড় তালি দিয়ে রিপু করে ব্যবহার করতেন।
তার শাহাদাতবরণের পর জাতীয় দৈনিকের বিবরণে জানা যায়, ‘জিয়ার ব্যক্তিগত মালামালের মধ্যে নিম্নলিখিত জিনিসগুলো পাওয়া যায় একটা পুরাতন চামড়ার সুটকেসে। তাহা পুরাতন যে, উহার তালাও সঠিক কাজ করে না। একটি পুরাতন অতি সাধারণ টু-ইন-ওয়ান, তালাবদ্ধ একটি পুরাতন ইকোলাক জাতীয় ব্রিফকেস, গায়ের আধা ছেঁড়া গেঞ্জি, ২-৩টি সাফারি শার্ট, একটি প্যান্ট, একটি ফাউন্টেন পেন, একটি সানগ্লাস। মৃতের মাথার কাছে পড়ে ছিল কয়েকটি ক্যাসেট, তাহার বিছানার পার্শ্বেই পড়েছিল জায়নামাজ ও সাদা গোল টুপি।’ (ইত্তেফাক, ৪ জুন ১৯৮১)
বঙ্গবভনে প্রেসিডেন্ট জিয়ার খাবারের মেন্যু ছিল—দুপুরে ভাত, রাতে রুটি। ডাল-ভাজি থাকবে। জিয়ার খাবারের আমন্ত্রণকে অনেকে পানিশমেন্ট ফুড হিসেবে বিবেচনা করত। প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি পেয়েছেন অমূল্য উপহার। এসব উপহার এমনকি ব্যক্তিগতভাবে দেয়া উপহারও তিনি নিজে নেননি। এসব জমা দিয়েছেন বঙ্গভবন কোষাগারে। আমরা আমাদের দেশে ডান-বাম রাজনীতিবিদদের দেখেছি বাড়ির ভেতরে রাজকীয় জৌলুসে আর বাইরে মিটিংয়ের মঞ্চে ছেঁড়া পাঞ্জাবির হাত দুলিয়ে বড় বড় স্লোগান। প্রেসিডেন্ট জিয়া জাতির সঙ্গে হিপোক্র্যাসি করেননি। এ হিপোক্র্যাসি করেননি বলেই জাতির কাছে আজ জিয়া সততার প্রতীক।
দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আইনশৃঙ্খলা ও সার্বিক উন্নয়নে স্বজনপ্রীতির কারণে শেখ মুজিব ব্যর্থ। সেখানে জিয়াউর রহমান মাত্র ৫ বছরের অধিক সময় শাসনামলে শতভাগ সফল—তাই ৩০ মে ১৯৮১ সালে তার মৃত্যুর পর মানিক মিয়া এভিনিউতে ৩০ লাখ মানুষের ঐতিহাসিক জানাজা। জনৈক বিদেশি সাংবাদিক তার সততা সম্পর্কে এক মন্তব্যে বলেছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার সততা শুধু বাংলাদেশের রাজনীতিকদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাজনীতিকদের জন্যও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত (বাংলাদেশ টাইমস, ৯ নভেম্বর, ১৯৮১)। শহীদ জিয়ার সততার খ্যাতি বিশ্বজোড়া।
ফুটনোট : জিয়াউর রহমানের অমর সৃষ্টি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে জনগণের হৃদয়ের মাঝে ততদিন তার নীতি ও আদর্শ জাগরূক থাকবে । ইতিহাস বিকৃত করে অথবা কোর্টের রায় দিয়ে জনগণের হৃদয়ের মাঝ থেকে প্রকৃত ইতিহাস মুছে ফেলা যাবে না।

Friday, January 18, 2013

The Guns of December

The Guns of December
Pakistani troops organize a frantic defense in the last month of 1971 as they desperately seek to hold onto East Pakistan, a territory on the other side of India that would eventually become Bangladesh.

Behind Enemy Lines

Behind Enemy Lines
Pakistani soldiers haul away the corpse of an Indian counterpart.

The Cavalry Arrives

The Cavalry Arrives
The Indian army entered the fray only eight months after Pakistan began a brutal crackdown on East Pakistani activists and separatists in March 1971.

The People's Army-Bengali "freedom fighters"

The People's Army
A column of Mukti Bahini — native Bengali "freedom fighters", many trained and armed in India — walk through East Pakistan's paddy fields.

End of Arms

End of Arms
Pakistan's Gen. A.A.K. Niazi, right, signs terms of surrender with Indian Gen. Jagjit Singh Aurora on December 16, 1971, which paves the way for the founding of the independent nation of Bangladesh.

Dhaka residents cheer a convoy of Indian troops.

Liberators
Dhaka residents cheer a convoy of Indian troops.


Retribution

Retribution
Men who were suspected of having collaborated with Pakistan's reign of terror in the East are executed in front of the public.

Bangladesh's founding father, Sheikh Mujibur Rahman (holding kerchief), weeps upon his entrance into a liberated Dhaka.

The Messiah
Bangladesh's founding father, Sheikh Mujibur Rahman (holding kerchief), weeps upon his entrance into a liberated Dhaka. He would be installed as president, but assassinated by elements within the military four years later, plunging Bangladesh into a legacy of turbulent politics it has yet to move beyond.

Thursday, January 17, 2013

পাপাচারে ছেয়ে গেছে দেশ

পাপাচারে ছেয়ে গেছে দেশ

মাওলানা মুহাম্মাদ আবু বকর সিদ্দিক
তারিখ: ১১ জানুয়ারি, ২০১৩
নার্টকালা মসজিদ, রাশিয়া
শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে দেশ ও জাতির উন্নতি-অবনতি। পৃথিবীতে সেই জাতি তত উন্নত যে জাতির শিক্ষা ও সংস্কৃতি যত উন্নত। সংস্কৃতি উন্নত না হলে কোনো জাতি উন্নতির শিখরে আরোহণ করতে পারে না। পৃথিবীতে যারাই উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছেন সংস্কৃতির বদৌলতেই করেছে। এখন কথা হলো সংস্কৃতি বলতে আমরা কী বুঝি। সংস্কৃতি হলো কোনো জাতির চালচলন,  কথাবার্তা, আচার-ব্যবহার, ওঠাবসা, শিক্ষা-দীক্ষা, নীতি-নৈতিকতা। এক কথায় বাহ্যিক ও আত্মিক ধর্মীয় মূল্যবোধের বহিঃপ্রকাশ। যার প্রকাশ না ঘটলে কোনো জাতি এক দিকে যেমন উন্নতির শিখরে যেতে পারে না, তেমনি টিকেও থাকতে পারবে না। বরং পৃথিবীতে তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। সম্প্রতি উলঙ্গ সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা দেশের সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। যে ঘটনাগুলো আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও বর্বর ঘটনাগুলোর তালিকা তৈরি করলে এক নম্বরে যে অপরাধটি উঠে আসবে তা হলো কন্যাসন্তানকে জীবিত করব দেয়া এবং সেটা ছিল পিতা কর্তৃক। সে সময় কন্যাসন্তান জন্ম নিলে পিতা লজ্জা এবং অপমানবোধ করত। পিতার সামাজিক মর্যাদা কমে যেত ভেবে তারা কন্যাসন্তানকে জীবিত মেরে ফেলত। তা ছাড়া মেয়েদের তো সে সমাজে মানুষ হিসেবে গণ্য করত না বরং ভোগাসামগ্রী মনে করত। ফলে তাদের জন্ম নেয়া ছিল মহাঅপরাধ। সে জন্য পিতা তাদের মেরে ফেলত। সে সমাজে মা সন্তানকে মেরে ফেলেছে এমন তথ্য ইতিহাসে পাওয়া খুবই কঠিন।
কিন্তু আজ। মানুষের মনুষ্যত্ববোধ এবং নৈতিকতা কোথায় পৌঁছলে আপন মা তার গর্ভজাত সন্তানকে মেরে ফেলতে পারে। কয়েক দিন আগে মা তার দু’টি শিশু সন্তানকে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে মেরে ফেলে। যে সংবাদটি জাতীয় দৈনিক পত্রপত্রিকায় ব্যাপক প্রচার হয় এবং লেখালেখি হয়। গত ১ ডিসেম্বর ২০১০ বিভিন্ন পত্রিকায় ব্যাপক প্রকাশিত আরেকটি ঘটনা। ঢাকার কদমতলীর রায়েরবাগ মেরাজনগরে তানভির হাসান শোভনের (২৪) হাতে মা নূরজাহান (৪৫) খুন হন। আবার গত ১৮ এপ্রিল দৈনিক আমাদের সময়সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় দাফনের কয়েক ঘণ্টা এবং করব খুঁড়ে লাশে আগুন। অভিযুক্ত মাদকাসক্ত ছেলে শফিক শাহ গ্রেফতার। ২৬ অক্টোবর বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ভাতিজার হাতে চাচা খুন। মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় গত ২৫ মার্চ খুন হন সাদিকুর রহমান ও রোমানা নার্গিস নামের স্বামী-স্ত্রী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এবং খুনখারাবি “াধকল্পে যে পুলিশ সেই পুলিশের ৫১৫ জন নিহত দেড় যুগে। এমন কোনো দিন, সময়-মুহূর্ত পাওয়া খুবই কঠিন যখন খুন না হয়।
রাজনৈতিক কারণে খুনখারাবি তো অহরহ ঘটছে। এইতো বিশ্বজিতের হত্যাকান্ড কথায় ধরি না কেন, কী বীভৎস ও নারকীয়ভাবে প্রকাশ্যে তাকে হত্যা করা হলো। ২০১২ সাল তো ছিল খুনের বছর। ৬ জানুয়ারী ২০১৩ তারিখের নয়া দিগন্তে ‘প্রতি ঘণ্টায় একটি খুন’ শিরোনামের খবরে সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ  অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (এমআরটি) এক জরিপের উল্লেখ করে লিখেছে, ‘গত চার বছরে গড়ে প্রতি দুই ঘণ্টায় একজন খুন হয়েছেন। মহজোট সরকারের চার বছরে মোট খুনের সংখ্যা ১৬ হাজার ৫৮৯ জন। এর মধ্যে ২০১২ সালে খুনের ঘটনা ছিল আগের তিন বছরের চেয়ে বেশি। ২০১২ সালে চার হাজার ৪১২ জন খুন হয়েছেন। এ ছাড়া চার বছরে রাজনৈতিক কারণে খুন হয়েছন ৭৯০ জন।’
কুরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে, ‘পিতা-মাতার সাথে এমন ব্যবহার কোরো না যে ব্যবহারে উহ্ শব্দ উচ্চারণ করে।’ (সূরা বনি ইসরাইল)। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ যেই পিতা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে সন্তানের লালন-পালন করে, সেই পিতা-মাতা যখন সন্তান দ্বারা খুন হন, এই পিতা-মাতা যখন নিজ সন্তানকে, বাবা মাকে, মা বাবাকে, ভাই ভাইকে, বোন ভাইকে, ভাই বোনকে, স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, ভাগিনা মামাকে, মামা ভাগিনাকে, ভাতিজা চাচাকে, চাচা ভাতিজাকে, বন্ধু আরেক বন্ধুকে হত্যা করে তখন কেয়ামত সন্নিকটে ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে একজন মানুষকে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকে হত্যা করল। (সূরা মায়েদা-৩২)।
সূরা নিসার ৯৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যে লোক সঙ্কল্প গ্রহণ করে কারণ মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করবে, তার প্রতিফলন হচ্ছে জাহান্নাম, তথায় সে চিরদিন থাকবে।’
এত হুমকি, সতর্ক ও হুঁশিয়ারির পরও সমাজে হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। বরং হত্যার উপসর্গ আরো বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক আরেক সামাজিক সমস্যা ভয়াবহতা পেয়েছে। মেয়েদের উত্ত্যক্তকরণ। যার বৈজ্ঞানিক ও ডিজিটাল পরিভাষা হলো ইভটিজিং। বৈজ্ঞানিক ও ডিজিটাল বললাম এ জন্য যে, সময়টা বিজ্ঞান ও ডিজিটালের। সমাজে বিপথগামী বখাটে ছেলেদের দ্বারা বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন পেশার মেয়েরা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে এবং এর ফলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যক্তি ও সংস্কৃতির স্বাধীনতার নামে সর্বত্র চলছে নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মিয় রীতিনীতির বিরোধী অপসংস্কৃতির ব্যাপক চর্চা। যার ফলে যুবক-যুবতীরা বেপয়োরা হয়ে উঠছে। ইভটিজিং আজ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর প্রতিবাদটুকুও করা যাচ্ছে না। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ইভটিজিংয়ের ব্যাপারে আমরা দেখতে পেলাম মেয়েকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হলেন বাবা-মা, বোনকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হলেন ভাই, ছাত্রীকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারা গেলেন শিক্ষক, নাতনীকে এর শিকার থেকে বাঁচাতে গিয়ে মারা পড়লেন নানা, ভাতিজাকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করায় খুন হলেন চাচা, এক কথায় এ রকম ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করা যাবে না। প্রতিবাদ করলেই খুন বা আহত হচ্ছেন প্রতিবাদকারী।
তা ছাড়া মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা যে মহাপাপ তা ছেলেরা ভুলে যাচ্ছে। এর কারণ হলো শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আমরা ইসলামি শিক্ষা নির্বাসিত করছি। ধর্মীয় মূল্যবোধ না থাকলে এর পরিণতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। সমাজে মহাবিপর্যয় দেখা দেবে। অন্য দিকে মেয়েরা পর্দাপ্রথা থকে বেরিয়ে শর্ট জামাকাপড় পরে ছেলেদের এ কাজে উৎসাহ দিচ্ছে। দেশে ফ্যাশন শোর নামে দেদার চলছে সুন্দরী প্রতিযোগিতা। ব্যক্তি ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে দেহ প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। উঠতি বয়সের ছেলেদের বেপরোয়া হওয়ার এবং যৌবনের চাহিদা পূরণের সব দরজা খোলা। আজ জাতীয়ভাবে বিদেশী সংস্কৃতির চর্চার মহাপ্রতিযোগিতা ও মহড়া চলছে।
কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে গত ১০ ডিসেম্বর ২০১০ রাতে শাহরুখ খান, রানী মুখার্জিদের এনে যে নোংরামি ও নির্লজ্জ এবং উলঙ্গপনার সংস্কৃতি দেখানো হলো তা কোনো সভ্যসমাজে মেনে নিতে পারে না। এই আয়োজন এবং প্রদর্শনী ছিল আমাদের ঈমান-আকিদাবিরোধী এবং ইভটিজিংয়ের মতো জঘন্য অপরাধকে উসকে দেয়ার। অনুষ্ঠানে স্বামীকে দিয়ে স্ত্রীকে সিজদা করানোর মাধ্যমে আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে চরম আঘাত করা হয়েছে। এ ধরনের আয়োজনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব।
পবিত্র কুরআনের সূরা নূরের ১৯ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘যেসব লোক ঈমানদার লোকদের সমাজে নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা, ব্যভিচার প্রকাশিত হোক তা পছন্দ করে, ভালোবাসে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় স্থানেই পীড়াদায়ক আজাব নির্দিষ্ট রয়েছে। তা আল্লাহই ভালো জানেন, তোমরা জানো না।’
পবিত্র কুরআনে এত কঠিন হুঁশিয়ারি থাকার পরও মুসলমানের সন্তান হয়ে কেন আয়োজকরা এ ধরনের নির্লজ্জ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যা সত্যিই দুঃখজনক। কেন এই জঘন্যতম আয়োজন। বিদেশী সংস্কৃতি আমদানির কেন এই অপতৎপরতা। অথচ ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতসহ উন্নত বিশ্বের দাবিদার রাষ্ট্রগুলোতে আজ আমরা কি দেখতে পাচ্ছি। সেখানে বয়ফ্রেন্ড ও গার্লফ্রেন্ড গ্রহণ এবং বর্জনই যেন জীবনে পরিণত হয়েছে এবং এটা মহামারীর আকার ধারণ করেছে।
আজ যেসব মেয়ে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে তারা যদি ইসলামের পর্দার পোশাক পরত তাহলে কতই না সুন্দর হতো; ভালো হতো। অনুসন্ধান করলে এবং গবেষণায় পাওয়া যাবে ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়া শতকরা একজনও পর্দানশীল মহিলা নয়। গত ৪ ডিসেম্বর ২০১০ দৈনিক আমাদের সময়ে নারীবাদী লেখক মিলন আহমদ লিখেছেন, ‘বোরকা এবং শর্ট পোশাক একই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি।’ অসম্ভব; দু’টির উদ্দেশ্য এক নয়। শর্ট পোশাক পরা হয় নিজেকে স্মার্ট হিসেবে প্রকাশ করার জন্য, নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য, ছেলেদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য, বিদেশী সংস্কৃতি গ্রহণের জন্য ইত্যাদি। আর পর্দা যারা করেন তারা আল্লাহর হুকুম মানেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ। নামাজ-রোজা যেমন ফরজ মেয়েদের পর্দা বা হিজাব পরাও তেমনি ফরজ।
হিজাব বা পর্দা মেয়েদের ভূষণ। এটা পরলে শালীন দেখায় এবং সমাজে নারীসংশ্লিষ্ট অপরাধ হয় না। যার জ্বলন্ত প্রমাণ সে সময়ের মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র এবং বর্তমান সময়ে ইরান। অথচ এই হিজাবের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের আদালতে আইন পাস করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাকর এবং আমাদের ঈমান-আকিদা, কুরআন-সুন্নাহবিরোধী। এটা কোনো মুসলমান মানতে পারে না। দেশটা আজ অন্যায়-অনাচার, পাপাচার এবং অশ্লীলতায় ভরে গেছে। মদ্যপায়ী ও নেশাখোরদের তৎপরতা বেড়ে চলছে। বিভিন্ন চ্যানেলের বিজ্ঞাপনে উলঙ্গ নারী দেহ প্রদর্শন, অশালীন পোশাক পরে অর্ধনগ্ন হয়ে চলাফেরা, ডিশ, ভিডিও, সিনেমা ও ইন্টারনেটে অশ্লীল ভিডিও দেখিয়ে যুবসমাজকে বিপথগামী করা হচ্ছে, যা জাতীয় অগ্রগতির পথে বিরাট বাধা।
আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন, ‘বলো হে নবী! আমার রব হারাম করেছেন সমস্ত নির্লজ্জতা-নগ্নতা-অশ্লীলতা, তা প্রকাশমান হোক কি গোপন।’ (সূরা আরাফ-৩৩)
পবিত্র কুরআনের সূরা আনআমের ১২০ নম্বর আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘যারা পাপের কাজ করে তাদের প্রতিফল দেয়া হবে তারই তা তারা করেছিল।’
সূরা নাহলের ৯০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘আল্লাহ নিষেধ করেন সর্বপ্রকারের নির্লজ্জতার কাজ, ঘৃণ্য-অপছন্দনীয় এবং সত্যবিরোধী বাড়াবাড়ি কাজকে।’
উপরিউক্ত বিবিধ আলোচনার মাধ্যমে আমরা এটাই বুঝতে পারি যে, জাতি হিসেবে মুসলিম হলেও আমরা আজ সাংস্কৃতিকভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। নিজস্ব সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার বাদ দিয়ে বিধর্মীদের উলঙ্গপনার সংস্কৃতিকে গ্রহণ করছি। আজ অপসংস্কৃতির মহাবিস্ফোরণের কিনারায় বাংলাদেশ। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অপসংস্কৃতি নামক ঘুণ ধরেছে। হত্যা-খুন, রাহাজানি, বেপর্দা-বেহায়াপনা, ইভটিজিংসহ হাজারো সমস্যা হাজারো মহামারী যা মানুষেরই সৃষ্টি। এসব বন্ধ করতে পারে এবং মুক্তির একমাত্র পথ ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা। যে রাষ্ট্র পারিবারিক কাঠামোকে ইসলামী অনুশাসনের আদলে গড়ে তুলবে। আর কাক্সিত সেই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আপসহীনভাবে করতে হবে। কুরআন-সুন্নাহ যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে তা যদি আমরা অনুসরণ করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহান লক্ষ্যে এগোতে পারি তাহলে অবশ্যই জাতি আমাদের আহ্বানে সাড়া দেবে। আর সেই দিন আমরা সক্ষম হবো সমাজ ও রাষ্ট্রের হাজারো মহামারী দাফন করতে।

ধর্ষণের পরিণাম

ধর্ষণের পরিণাম

খান মহিউদ্দীন হারুণী
তারিখ: ১৮ জানুয়ারি, ২০১৩
ধর্ষণ নি:সন্দেহে এক জঘন্যতম ভয়াবহ অপরাধমূলক পাপকাজ। যে কাজ করে ধর্ষণকারী নিজেকে, সমাজকে, রাষ্ট্রকে এমনকি গোটা বিশ্বকেও কলুষিত করে। এটা এমন এক পাপ কাজ যার কোনো ক্ষমা প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ নেই। কেউ যদি আল্লাহর সাথে শরিক করে কিংবা মারাত্মক কবিরা বা ছগিরা গুনাহ করে এবং পরে তা বুঝতে পেরে খালেছ নিয়তে তওবা করে তবে আল্লাহ চাহেত বান্দার আর্তনাদের কারণে সেই গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু ধর্ষণ এতই মারাত্মক অপরাধ যে এর চিন্তা করাও মারাত্মক গুনাহের কাজ। রাসূলে পাক সা: এ প্রসঙ্গে বলেন,  ‘যে কেউ কুদৃষ্টিতে তাকাল তা সে চোখের যেনা করল আর যে কেউ অন্তরে কল্পনা করল তা সে অন্তরের যেনা করল’। কাজেই কাউকে ধর্ষণ করা দূরে থাক শুধু চোখে বা অন্তরে এর কল্পনা করাও মহা পাপ। আল্লাহ তায়ালা সূরা বনী ইসরাইলের মধ্যে ঘোষণা করেছেনÑ ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। ওটা একটা অশ্লীল কাজ এবং খারাপ পন্থা। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ঘোষণা করেনÑ‘ব্যভিচারের সাজা আখিরাতে দ্বিগুণ হবে।’ (সূরা ফুরকান ৬৮)। আখিরাতে এর শাস্তি দ্বিগুণ হলে ইহকালে যেনাকারীর শাস্তি কিরূপ হতে পারে? তাদের শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ২ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেনÑ ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী প্রত্যেককে ১০০ চাবুক মারবে। আল্লাহর বিধান পালনে তাদের প্রতি যেন দয়াপরবশ না হও। এ হচ্ছে শুধু অবিবাহিতদের জন্য। বিবাহিতদের জন্য অথবা জীবনে একবার হলেও বিয়েবন্ধনে আবন্ধ হয়েছিল তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে স্কন্ধ পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা। এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে তাদের শাস্তি প্রদানে কোনোরূপ কার্পণ্য, শিথিলতা বা দয়া দেখানো যাবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা তাদের শাস্তি দিয়েই দুনিয়ায় শান্তি কায়েম করতে চান। আর এটা বাস্তব যে এরূপ শাস্তি কল্যাণেরই পরিচায়ক। স্বয়ং রাসূলে পাক সা:-এর কাছে এসে এক নারী জেনা করার কথা জানাল। রাসূলে পাক সা: তাকে বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত সময় দিলেন। বাচ্চা প্রসব হলে দুধ পান করা পর্যন্ত তাকে আবার সময় দিলেন। এরপর নারীটি এলে রাসূলে পাক সা: তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ দিলেন অথচ ওই নারীটিকে আল্লাহ তায়ালা এমনভাবে ক্ষমা করেছিলেন যে স্বয়ং হুজুরে পাক সা: বলেন, যদি তার তওবাকে আমার সব উম্মতের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয় তবে তা তার ৭০ ভাগের এক ভাগেরও সমান হবে না। আল্লাহ তায়ালা তাকে এরূপ ক্ষমা করার পরেও দুনিয়ার বিচার থেকে তাকে রেহাই দেয়া হয়নি। এই একটি ঘটনা থেকেই বুঝা যায় তওবা করে কান্নাকাটি করলেও দুনিয়ায় এর শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পাক কুরআনে এই ধর্ষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেন যে, ‘মুমিনদের জন্য এটা সম্পূর্ণ হারাম।’ (সূরা নূর-৩) একই সূরার ২৫-২৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আবার বলেনÑ ‘নোংরা নারী নোংরা নরের জন্য এবং নোংরা নর নোংরা নারীর জন্য’। উপরিউক্ত আয়াতগুলো দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, কোনো ঈমানদার মুমিন ও মুত্তাকি বান্দার জন্য তাদের সংস্পর্শ বা বিবাহ সম্পূর্ণই হারাম। এটা এ কারণে যে স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামিন যেখানে জেনাকারীদের নোংরা বলেছেন সেখানে এই নোংরা জিনিস থেকে দুর্গন্ধ ছাড়া আর কিই বা ছাড়াবে। আর এটা স্পষ্ট যে নোংরা যেকোনো জিনিস হারাম। শুধু এ নয় রাসূলে পাক সা: তাদের শাস্তির ব্যাপারে বিশদভাবে বলেছেন যে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ব্যভিচার বর্জন কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি ইহকালে ও তিনটি পরকালে। যে তিনটি শাস্তি ইহকালে তা হলো, তার চেহারার ঔজ্জল্য নষ্ট হয়ে যায়। তার আয়ুষ্কাল সঙ্কীর্ণ হয়ে যায় এবং তার দারিদ্র্য চিরস্থায়ী হয়। আর যে তিনটি আখিরাতে তা হলো, সে আল্লাহর অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও দোযখের আজাব ভোগ করবে। জেনাকারী ব্যক্তি ঈমানদার হলেও আসলে তাকে ঈমানদার বলা চলে না। একারণে যে পাক-পবিত্রতা লজ্জাশীলতা ইতাদি ঈমানের ৭০টি শাখার অন্যতম। আর জেনাকারী ব্যক্তি পাকপবিত্রতা দূরে থাক নিজের লজ্জাশীলতা বা সম্ভ্রমকেও সে রক্ষা করতে পারে না। আর লজ্জা না থাকা মানে হলো শয়তানের আলামত, কুরআন ও হাদিসে আরো অসংখ্য জায়গায় ধর্ষণকারীদের ব্যাপারে প্রচণ্ড হুঁশিয়ারি ও শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এটা হত্যা অপেক্ষাও জঘন্য। কেউ কাউকে হত্যা করলে রক্তপণ দিয়ে হলেও মুক্তি পেতে পারে কিন্তু ধর্ষণকারী নিজেকে কোনো প্রকারেই মুক্ত করতে পারে না। সে নিজের বিবেকের কাছেও বারবার দংশিত হয়। সমাজ, রাষ্ট্র বা পরিবার কেউ তাকে ক্ষমা করে না। অতএব প্রত্যেকের উচিত এ মারাত্মক কবিরা গুনাহ থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকা।

বাংলার ক্রিকেটের পুরোধা


সারদারঞ্জন রায়চৌধুরী  প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল সারদারঞ্জন রায়চৌধুরী প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল
  • সারদারঞ্জন রায়চৌধুরী  প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল সারদারঞ্জন রায়চৌধুরী প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল
  • ১৯০৭ সালের নাটোর টিমের খেলোয়াড়েরা বাঁ থেকে: (সামনে) রাজু, হিমু, পুরুষোত্তম, জাইলুনাবাদ, শিবরাম, (� ১৯০৭ সালের নাটোর টিমের খেলোয়াড়েরা বাঁ থেকে: (সামনে) রাজু, হিমু, পুরুষোত্তম, জাইলুনাবাদ, শিবরাম, (মাঝে) বাকু, মহারাজ, রেজাক এবং (পেছনে) মাসি, রঙ্গলাল, মিস্ত্রি ও কুলদারঞ্জন

সারদারঞ্জন রায়চৌধুরী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ। সেই সারদা করে বসলেন এক কাণ্ড। কিশোরগঞ্জের মশুয়া গ্রামে খেললেন ক্রিকেট। আর সেটিই হয়ে গেল ইতিহাস। এখন জানা যাচ্ছে, তিনিই বাংলায় ক্রিকেট খেলার জনক, উপমহাদেশেও অগ্রদূত

জন্ম তাঁর কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর মশুয়া গ্রামে, বিখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারে। এক হাতে বই, আরেকটায় ব্যাট। সারদারঞ্জন রায়চৌধুরীর পরিচিত ব্যক্তিরা এভাবেই তাঁর পরিচয় দিতেন। কবে যে কার কাছে ক্রিকেট শিখেছিলেন, তা এখন অজানা। তবে বাংলায় ক্রিকেট খেলার প্রচলন তিনিই করেছিলেন।
সাদা দাড়ি ও মারকুটে ব্যাটিংয়ের কারণে তাঁকে বলা হতো বাঙালি ডব্লিউজি গ্রেস (কিংবদন্তি ব্রিটিশ ক্রিকেটার)।
চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর তিনি সবচেয়ে বড় ভাই। ১৮৭০ সালে পূর্ববঙ্গে তিনি চার ভাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন। তাঁর বয়স তখন আট, পড়েন কিশোরগঞ্জ মাইনর স্কুলে।
সেসময় ক্রিকেট খেলত ইংরেজরাই। ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী দল। রায়চৌধুরীরা পাঁচ ভাই, সারদারঞ্জন, উপেন্দ্রকিশোর, মুক্তিদারঞ্জন, কুলদারঞ্জন ও প্রমদারঞ্জন মিলে গড়ে তুলেছিলেন ঢাকা কলেজ ক্রিকেট ক্লাব। পরে টাউন ক্লাবও গড়ে তোলেন কলকাতায়। দুই দলেরই ক্যাপ্টেন সারদারঞ্জন। দুটি দলই নিয়মিত সাহেবদের দলের বিরুদ্ধে খেলত। বাংলায় জেলাভিত্তিক ক্রিকেট দল গড়ে তুলে তাঁরা আন্তজেলা টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে থাকেন।
ক্রিকেটের নিয়মকানুন নিয়ে প্রথম বাংলা লেখা বই ক্রিকেট খেলা লিখেছিলেন সারদারঞ্জনই।

ঢাকা কলেজে প্রথম ক্রিকেট
সারদারঞ্জনের লেখা থেকে জানা যায়, কলকাতায় ব্রিটিশরা সর্বপ্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু করেন অষ্টাদশ শতকে। তাতে স্থানীয় ব্যক্তিদের স্থান ছিল না। সারদারঞ্জন লিখেছেন, ‘ঢাকার কলেজের সাহেব প্রফেসরগণ এ বিষয়ে (ক্রিকেট) খুব উৎসাহী হইয়া ছেলেদের শিক্ষা দিতেন। এখনো বাঙ্গালী ছেলেদের মধ্যে যাঁহারা এ খেলার প্রশংসা লাভ করিয়াছেন, তাহাদের অধিকাংশ ঢাকার। ১১ বছর হইল পূর্ববঙ্গের ছেলেরাই প্রথম কলিকাতা শহরে প্রেসিডেন্সি কলেজে ক্লাব খুলিয়া খেলা আরম্ভ করেন।’
ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের মতে, ঢাকায় ক্রিকেট জোরদার হয় ‘ঢাকা কলেজ ক্লাব’ গড়ে ওঠার পর। ছাত্র-শিক্ষকেরা মিলে এটি গঠন করেন আনুমানিক ১৮৮০-এর দশকে। অখণ্ড বঙ্গের প্রথম ক্রিকেট ক্লাব হিসেবে সেটি খ্যাতি অর্জন করে। ১৮৮৪ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ক্যালকাটা প্রেসিডেন্সি ক্লাবের সঙ্গে এক খেলায় ঢাকা কলেজ জয়লাভ করে। নেতৃত্বে ছিলেন সারদারঞ্জন রায়চৌধুরী।

পড়া পড়া, খেলা খেলা
কিশোরগঞ্জের মাইনর স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে সারদা ভর্তি হন ময়মনসিংহ জেলা স্কুলে। ঢাকার এক স্কুল থেকে প্রবেশিকা পেরিয়ে ঢাকা কলেজ। এখানেই শুরু ক্রিকেট ও ব্যায়ামের নিয়মিত চর্চা। ছাত্র হিসেবেও সারদা ছিলেন তুখোড়। বিএ পরীক্ষায় তিনি ঢাকা অঞ্চলে প্রথম হন।
কলকাতায় প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি নিয়ে সংস্কৃতে পড়তে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তা অসমাপ্ত রেখে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। আলীগড়ের ছাত্রদেরও তিনি ক্রিকেটে হাতেখড়ি দেন। আরও পরে ফের বদলি হয়ে অধ্যাপক হিসেবে ফিরে আসেন নিজের জায়গা ঢাকা কলেজে। ঢাকা কলেজে গণিত নিয়ে তিনি মৌলিক গবেষণা শুরু করেন। স্কুলছাত্রদের জন্য গণিত নিয়ে বেরোয় তাঁর দুটো মৌলিক গ্রন্থ। কিন্তু অধ্যাপনার পাশাপাশি চলতে থাকে ক্রিকেট-উদ্যোগ।
এ সময় প্রেসিডেন্সি কলেজের সঙ্গে খেলতে ঢাকা কলেজের একটি দল কলকাতা যায়। ছাত্র-শিক্ষক মেশানো সেই দলে ছিলেন তিন ভাই সারদা, কুলদা ও প্রমদা। প্রথম খেলায় প্রেসিডেন্সি হেরে গেলে এর ছাত্ররা দল থেকে শিক্ষকদের বাদ দেওয়ার দাবি তোলেন। সারদা এতে জোরালো আপত্তি করেন। কিন্তু কলেজের ব্রিটিশ অধ্যক্ষ বুথ ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাবের ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধে রাজি হয়ে যান। এ নিয়ে সারদারঞ্জনের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য হয়। ঢাকা কলেজ থেকে পদত্যাগ করে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অনুরোধে তিনি মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউটে যোগ দেন।

সংকট থেকে সম্ভাবনা
মেট্রোপলিটন কলেজে অর্থসংকট থাকায় শুরু থেকেই সারদার বেতন অনিয়মিত হয়ে যায়। তখন সারদা এস রায় অ্যান্ড কোম্পানি নামে তিনি বই ও ক্রিকেট পণ্য বিক্রি করতে শুরু করেন। কলকাতায় ১৮৯৫ সালে শুরু করেন বাংলার প্রথম ক্রিকেটসামগ্রীর দোকান। সে সময় বিলেতি ব্যাট ও বল পাওয়া যেত কেবল তাঁর দোকানেই। শিয়ালকোট থেকে আনা উইলো কাঠে শিক্ষার্থীদের জন্য সস্তায় ব্যাট বানানো শুরু হয় তাঁর যশোর রোডের কারখানায়। ১৯০৬ সালে কালকাতার শিল্পপণ্য মেলায় তাঁদের ‘ব্যালান্সড ব্যাট’ বিশেষ পুরস্কার পায়।
ক্রিকেট কোচ হিসেবেও সারদা ছিলেন অনন্য।

সত্যজিৎ ও সন্দ্বীপ রায়ের জবানিতে
সত্যজিৎ রায়ের নামে কলকাতায় একটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করতে গিয়ে ছেলে সন্দ্বীপ প্রপিতামহ সারদারঞ্জন রায়চৌধুরীর কথা উল্লেখ করেছিলেন। ফোনে সে প্রসঙ্গ তুললে সন্দ্বীপ রায় বলেন, ‘বাবার লেখালেখিতে সারদারঞ্জনের কথা এসেছে। বাকি যা জেনেছি, তা বইপত্র থেকে। আমাদের পারিবারিক আবহে গণ্ডিবাঁধা কিছু নেই। যার যাতে আগ্রহ, সেটা নিয়েই তিনি মেতেছেন। পিতৃপুরুষদের কাছ থেকেই হয়তো এটি এসেছে।’
যখন ছোট ছিলাম, বইয়ে সত্যজিৎ রায় লিখেছিলেন, ‘ঠাকুরদার পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই ছাড়া সবাই ব্রাহ্ম হয়েছিলেন। সারদা ও মুক্তিদা হিন্দুধর্মে থেকে গেলেন। এই দুই ভাই খেলাধুলা করতেন। ক্রিকেট শুরু করেন সারদা, তারপর সেটা রায় পরিবারে হিন্দু-ব্রাহ্ম সব দিক ছড়িয়ে পড়ে।’ তাঁর কথাটি যেন অক্ষরে অক্ষরে সত্য। নিজেদের নেশা পরিবারে আটকে না থেকে ছড়িয়ে গেছে সারা দেশে, কখনো বা বিশ্বে। সত্যজিৎ রায় বাংলা চলচ্চিত্রকে একা তুলে দিয়েছেন বিশ্বস্তরে। আর সাহেবদের হাত থেকে বাংলায় ক্রিকেটযাত্রা শুরু করেছিলেন সারদারঞ্জন রায়। আজকের সাকিব আল হাসান বা মাশরাফি বিন মুর্তজারা সেই যাত্রার গর্বিত শরিক।

Wednesday, January 16, 2013

বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ অর্থায়ন পিপিপিতে করার প্রস্তাব

বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ অর্থায়ন পিপিপিতে করার প্রস্তাব

দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণে সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নের সুপারিশ করে প্রস্তাব তৈরি করেছে বিটিআরসি।
বৃহস্পতিবার তা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস জানিয়েছেন।
তিনি বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মন্ত্রণালয় ডিপিপি (ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রফর্মা বা উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব) চূড়ান্ত করার পর শিগগিরই তা একনেকে উঠবে।
উৎক্ষেপণের জন্য উপগ্রহের মূল অংশ তৈরির (ম্যানুফ্যাচারিং) জন্য আন্তজার্তিক দরপত্র প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে প্রয়োজনীয় দলিলও (ডকুমেন্ট) তৈরি করেছে বিটিআরসি।
সুনীল বোস বলেন, একনেকে প্রকল্প চূড়ান্ত হওয়ার পরপরই দরপত্র আহ্বান করা হবে।
অর্থায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “উপগ্রহ উৎক্ষেপণে ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে, যা সরকারের জন্য একটি বড় মাপের টাকা, তাই সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) সুপারিশ করা হয়েছে।” 
উপগ্রহ উৎক্ষেপণে আলাদা চারটি আন্তজার্তিক দরপত্র আহ্বানের পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে বিটিআরসি।
স্যাটেলাইটের মূল অংশ তৈরি (ম্যানুফ্যাচারিং), স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ (লঞ্চ ভেহিকল), গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন এবং বীমা (ইন্সুরেন্সে) এই চারটি বিষয়ে পৃথক দরপত্র আহ্বান করা হবে।
বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।    
বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) সঙ্গে বিটিআরসি কাজ করছে। গত ২৯ মার্চ বিটিআরসি-এসপিআই চুক্তি সই হয়।
চুক্তি সইয়ের সময় তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু জানিয়েছিলেন, তিন বছরের মধ্যে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ উৎক্ষেপণ হবে। 
বাজার মূল্যায়ন, বাজারজাতকরণ, বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ, গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করবে। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসপিআইকে প্রায় ৮৭ কোটি টাকা দিতে হচ্ছে।

‘৩ বছরের মধ্যে আকাশে যাবে বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ’
‘৩ বছরের মধ্যে আকাশে যাবে বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ’
উপগ্রহ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অংশ হিসেবে পরামর্শক বিষয়ক প্রজেক্ট অফিসের কাজ শুরু হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসে। বিটিআরসি ভবনের পঞ্চম তলায় অফিসের কাজ শুরু হয়েছে এবং এই কার্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিটিআরসি উপ-পরিচালক মো. গোলাম রাজ্জাককে।
বর্তমানে দেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলগুলো, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট এবং রেডিওগুলো বিদেশি উপগ্রহের মাধ্যমে কাজ চালাচ্ছে।
বিটিআরসির হিসাবে, প্রতিটি টিভি চ্যানেল স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ ডলার দিয়ে থাকে। বর্তমানে ১৯টি টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪০ লাখ ডলার ভাড়া দিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ নিজস্ব উপগ্রহ চালু করতে পারলে ভাড়া বাবদ অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করতে পারবে বলে মনে করছে বিটিআরসি।

বামদের খপ্পরে আওয়ামী লীগ

 স্টালিন সরকার : নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ের নতুন সংস্করণে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা ‘ন্যাপের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত’ হিসেবে। ’৯০ এর দশকের প্রথমার্ধে গণতন্ত্রী পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও দীর্ঘ ২০ বছরেও প্রবীণ এই নেতা নিজের নাম আওয়ামী লীগে ‘বিলীন’ করতে পারেন নি। এখনো তিনি দলের ভিতরে ন্যাপের সুরঞ্জিত নামে পরিচিত। প্রবাদে আছে ‘তেল কখনো পানির সঙ্গে মেশে না’। আওয়ামী লীগে যোগদান করা প্রায় সব বাম নেতার একই অবস্থা। বামপন্থীদের ভাষায় ‘কক্ষচ্যূত’ সাবেক বামনেতারা দীর্ঘদিনেরও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও শরীর থেকে ‘বামপন্থী’ খোলস খসাতে পারেন নি। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকজন সাবেক বামপন্থীকে সরকারের মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। এ সব নেতা এখনো আওয়ামী লীগের মূলস্রোতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাকার হতে পারেননি। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের মধ্যে নিজেদের রাখলেও সরকার এবং দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় নীতি নির্ধারণীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এই বাম নেতারা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের দলে গুরুত্বহীন করে রাখায় বামপন্থীদের খপ্পরে পড়ে গেছে আওয়ামী লীগ। এক সময় বঙ্গবন্ধুকে অবজ্ঞা-অশ্রদ্ধা করে তার নামে অশ্লীল শব্দের ব্যবহার করলেও তারই গড়া আওয়ামী লীগকে ক্রমান্বয়ে গ্রাস করছেন এই বামপন্থীরা। যার কারণে বিভিন্ন সময় বামপন্থী ধারার মন্ত্রীরা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেললেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বরং বামপন্থীদের  প্রভাব ও প্রতিপত্তির ভয়ে গা বাঁচিয়ে চলছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। 
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার মন্ত্রী সভায় বামপন্থী নেতার মধ্যে ব্যারিষ্টার শফিক আহমদ আইন মন্ত্রণালয়, আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রণালয়, হাসানুল হক ইন তথ্য মন্ত্রণালয়, দিলীপ বড়–য়া শিল্পমন্ত্রণালয়, দপ্তরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আ ফ ম রুহুল হক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, নূরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বেগম মতিয়া চৌধুরী খাদ্য মন্ত্রণালয়, শাহজাহান খান নৌ মন্ত্রণালয়, এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। বাম নেতা নূহ উল আলম লেলিনকে প্রেসিডিয়ামের সদস্য করা হয়। এ ছাড়াও আরো অনেক সাবেক বামনেতাদের প্রশাসন ও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। বাম নেতারা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় সাবেক ছাত্রলীগ ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এসব মন্ত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিতর্কিত কথাবার্তা ও সিদ্ধান্তের কারণে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। মুল শ্রোতের সঙ্গে মিশতে না পারায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের নেতারা এসব সাবেক বাম নেতাদের কঠোর সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ এ সব নেতার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের ‘উপেক্ষা’ করে বামদের গুরুত্ব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ যাই হোক  সরকার ও দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেখলে মনে হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে বামপন্থীদের  খপ্পরে পড়ে গেছে তা পরিষ্কার।
এক সময়ের বামপন্থী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মহাজোট সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী। বাম রাজনীতি এবং বিদেশে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করলেও জাতীয় পার্টির শামনামলে পুনরায় রাজনীতিতে ফিরে আসেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। এরশাদের মন্ত্রী সভা থেকে বিদায়ের পর আবার বিদেশ চলে যান। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর আওয়ামী লীগে যোগদান করে নবম জাতীয় সংসদে সিলেট-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। বয়সের ভারে ন্যূব্জ আবুল মাল আবদুল মুহিত মহাজোট সরকারের অর্থমন্ত্রী হন। ব্যক্তিগত ভাবে ‘সৎ ব্যক্তি’ হিসেবে পরিচিত হলেও অপ্রীতিকর কথাবার্তা বলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা এবং বিতর্কের জন্ম দেন। তার অতি কথনের কারণে বেশ কয়েকবার সরকারকেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীর পর তিনি শেয়ার বাজাকে ফটকাবাজার এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ‘ফড়িয়া’ হিসেবে অভিহিত করে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে একজন এমপির বক্তব্যকে ‘রাবিশ’ মন্তব্য করে দলের ভিতরে সমালোচিত হন। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস সম্পর্কে অপ্রীতিকর মন্তব্য (বাংলাদেশের উন্নয়নের একমাত্র সমস্যা ইউনূস) করে সমালোচিত হন। জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করলে তিনি বিএনপিকে ‘উন্মাদ’ হিসেবে অভিহিত করে সমালোচিত হন। একই দাবিতে বামদলগুলোর হরতাল নিয়ে বামদলগুলোর সমালোচনা করে তাদের তত্ত্ববাগিশ হিসেবে অভিহিত করেন। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারী নিয়ে সরকার যখন প্রচ- চাপের মুখে তখন অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি ‘চার হাজার কোটি টাকা’ কোনো টাকাই নয়।  পদ্মা সেতু নিয়ে এক এক সময় এক এক কথা বললেও ঢাকা অবস্থানরত বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধির একটি মন্তব্যকে ‘ফোকার দালালী’ হিসেবে অভিহিত করে সমালোচনার ঝড় তোলেন। অর্থমন্ত্রী হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের থেকে অনেক দূরে অবস্থানরত অর্থমন্ত্রী মহাজোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় সরকারের ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছেন।
ন্যাপের সুরঞ্জিত হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী। ’৯০ দশকের প্রথমার্ধে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ’৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনে বিজয়ী হন। অতঃপর তাকে প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা করা হয়। বর্তমানে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে সংসদীয় বিশেষ কমিটির প্রো-চেয়ারম্যান ছিলেন। তার আগে আইন মন্ত্রণালয় সম্পকির্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের শেষের দিকে মন্ত্রী হয়ে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘোষণা দেন তিনি রেলের কালো বিড়াল ধরবেন। কালো বিড়াল রেলে বাসা বেঁধে থাকায় দুর্নীতি হচ্ছে এবং রেল ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে। ঘোষণার ৫ মাস পর ৯ এপ্রিল পিলখানায় মধ্যরাতে ৭০ লাখ টাকাসহ সুরঞ্জিতের পিএস ফারুক ধরা পড়ে বিজিবির হাতে। ঘটনার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বলেন ওই টাকার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ১৬ এপ্রিল তিনি ঘটনায় দায় স্বীকার করে রেলমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে বলেন ঘটনার সুস্থ তদন্তের স্বার্থে পদত্যাগ করলাম্ এবং নির্দোষ প্রমাণের পর আবার ফিরে আসবো। কিন্তু দুদিন পর তিনি আবার ঘোষণা দেন তিনি দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে থাকবেন। এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আগ বাড়িয়ে জানান, রেলের ৭০ লাখ টাকার কেলেঙ্কারীর সঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জড়িত নন। দুদক অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কিন্তু গাড়ীর আজম খান ৬ অক্টোবর মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে জানান ওই ৭০ লাখ টাকা সুরঞ্জিতের বাসায যাচ্ছিল। ড্রাইভারের এ তথ্য ফাসের পর দেশবাসী জানতে পারে কালো বিড়াল তাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেলে গেলেও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজেই কালো বিড়ালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অথচ প্রভাবের কারণে তিনি এখনো মন্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। চীনপন্ত্রী হিসেবে পরিচিত মহাজোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে নির্বাচন করতেন। কোনো নির্বাচনে জামানত রক্ষা করতে পারেননি। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ১৪ দলীয় জোটের শরীক হিসেবে অন্যেরা যখন মনোনয়ন নিয়ে ব্যস্ত তখন দিলীপ বড়–য়া নীরব ছিলেন। নির্বাচনে মহাজোটের বিজয়ের পর তাকে মন্ত্রী সভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় বিএনপির  চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় তাকে চীন সফরে সঙ্গী করেছিলেন। সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে মন্ত্রী করেছেন। এরই মধ্যে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা ৩/৪টি প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন। সাম্যবাদী দলের নেতারা কয়েকদিন আগে দিলীপ বড়–য়াকে দল থেকে বহিষ্কার করলেও তিনি নির্বিকার। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাচ্ছেন। ’৯০ দশকের প্রথমার্ধে ইলিয়েৎ সিনের গ্লাসন্যাস্তÍ প্রেরেস্ত্রোইকা থিউরি কার্যকরের সময় বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট পতনের ঢেউ ওঠে। সে ঢেউ এ জনপদে এসে পৌঁছলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও বিভক্ত হয়ে পড়ে। সে সংকটের মুখে সিপিবি কয়েকভাবে বিভক্ত হয়ে যায়। এক এক জন এক এক দলে গেলেও সিপিবির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নাহিদ আওয়ামী লীগে ঠাঁই নেন। আওয়ামী লীগের শিক্ষা সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ ’৯৬ সালের নির্বাচনে এমপি হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও নবম জাতীয় সংসদে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মহাজোট সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে সরকারি পিএস-এপিএসও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী বলে জানা যায়। ছাত্রলীগ করা কেউ তার পছন্দ নয়, তাই সবকিছুতেই খোঁজেন ছাত্র ইউনিয়ন। মহাজোট সরকারের ‘সফল’ মন্ত্রীদের তালিকায় সবার আগে তার নাম রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিকন্যা খ্যাত মতিয়া চৌধুরী ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ন্যাপের অঙ্গ সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাশেদ খান মেনন ও বেগম মতিয়া চৌধুরী ছিলেন। ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন তারা। ৬২ সালে মস্কো ও পিংকিপন্থার স্রোতে ন্যাপ দুই ভাগ হলে ছাত্র ইউনিয়নও বিভক্ত হয়। ওই সময় ছাত্র ইউনিয়ন রাশেদ খান মেনন ও বেগম মতিয়া চৌধুরীর নামে ব্রাকেটবন্দী হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বাম রাজনীতি করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে খিস্তিখেউর করেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আবদুর রাজ্জাকের হাত ধরে আওয়ামী লীগে প্রবেশের পর রাতারাতি শেখ হাসিনা বন্দনায় নিজেকে উজাড় করে দেওয়া বেগম মতিয়া চৌধুরী। দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগের কৃষি সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেও ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পান। বিভিন্ন সময় তিনি রাজপথে আলোচনায় চলে আসেন। কখনো রাস্তায় বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে, কখনো লাইনে দাঁড়িয়ে ন্যায্য মূলেল চাল ক্রয় এবং কাওরান বাজারে ‘ভাগা দেয়া পচাঁ বেগুন’ ক্রয় করে আলোচনায় চলে আসেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ দলের শীর্ষ নেতাদের (সাবেক ছাত্রলীগ) খেদিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতা-কর্মীদের ওপরে ওঠার সিঁড়িটা সরিয়ে ফেলেন। পাশাপাশি বামধারা থেকে কক্ষচ্যুত নেতাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনার চেষ্টা করেন। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা স্বাস্থ্য মন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক সরকারি চাকরি করতেন। চাকরি চলে যাওয়ার পর নিজেই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও ১/১১ পর তার ভাগ্য খুলে যায়। আওয়ামী লীগের নমিনেশন পেয়ে সাতক্ষিরা থেকে এমপি নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রী সভায় যোগ দেন। জাতীয় সংসদে তার বিরুদ্ধে তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন করেন সরকার দলীয় এক এমপি। জবাবে এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানান, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তার পেনশনের অর্থ আটকে দেয়া হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার সফিক আহমেদ দীর্ঘদিন আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত। ১/১১ পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর মামলাগুলো আইনজীবী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর মামলার পরিচালনার পুরস্কার হিসেবে তাকে টেকনোক্রাট কোটায় মন্ত্রী করা হয় এবং আইন মন্ত্রণালযের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারই কারণে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি’ ইস্যুর সৃষ্টি হয়। আদালতের রায়ের পর সরকার সংবিধান সংশোধনের জন্য যে কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, আইন বিশেষজ্ঞ এবং প্রবীণ আইনজীবীদের সঙ্গে সংলাপ করেন। সকলেই আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আরো দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার ব্যাপারে অভিমত দেন। সে ভাবেই ওই কমিটি একটি প্রস্তাবনা রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার জন্য সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। আওয়ামী লীগের অনেকেই অভিযোগ করেন সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ দিয়ে বর্তমান বিতর্কের পিছনে অ্াইনমন্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও বঙ্গবন্ধু সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে জাসদ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি জাসদে যোগদেন। দীর্ঘদিন জাসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পর বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় চড়ে এমপি হন। প্রায় সাড়ে দিন বছর সরকারের বাইরে থাকলেও তিনি মন্ত্রী সভায় স্থান পান। বর্তমানে তিনি মহাজোট সরকারের প্রভাবশালী সদস্য। এক সময়ের ছাত্র লীগ করলেও শ্রমিক নেতা হিসেবে বেশ পরিচিত শাহজাহান খান। বঙ্গবন্ধু সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার মাধ্যমে জাসদ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি জাসদে যোদদেন। রাজনীতির কারণে নিজের পিতার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া শাজাহান খান দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় দলীয় নমিনেশন পেতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপিতে যোগদানের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে পথ থেকেই আওয়ামী লীগের এক নেতা তাকে ফিরিয়ে এনে দলীয় নমিনেশন দেন। অতপর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে এমপি হওয়ার পর মহাজোট সরকারের শাসনামলের প্রথম দুই বছর সরকারের বাইরে ছিলেন। অতপর মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তোলেন। মন্ত্রী হয়েও শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের মতো আচরণ করেন। তিনি দুর্ঘটনা ঠেকাতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বাসের ড্রাইভারদের পক্ষ্যে অবস্থান নিয়ে সমালোচিত হন। গত দুই বছরে তিনি অপ্রীতিকর কথাবার্তার কারণে সমালোচিত হন। সম্প্রতি টেলিভিশনের লাইভ শোতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলেন্ বর্তমানে মহাজোট সরকারের তিনি প্রভাবশালী মন্ত্রী। ছড়াকার ইয়াফেস ওসমান মরহুম সাহিত্যিক শওকত ওসমানের পুত্র। পেশায় স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাম রাজনীতি করতেন। ছড়াকার হিসেবে পরিচিত ইয়াফেস ওসমানকে মহাজোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। তিনি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে স্বলিখিত ছড়া পাঠ করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার উপর ক্ষুব্ধ। এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। বামনেতা হিসেবে পরিচিত আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগে যোগদান করে দীর্ঘদিন দলের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ’৯০ এর পর প্রতিটি নির্বাচনে পরাজিত হলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেএমপি নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা সরকার গঠনের কয়েক মাস পর তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগদেন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী হন। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগদানের পর ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলেও বর্তমানে তিনি নীরব। কদিন আগেও রাজউকের চেয়ারম্যাপের পদত্যাগ নাটক নিয়ে তার কাহিনী পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। সিবিপির ভাগ হওয়ার পর বাম দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন নূহ উল আলম লেলিন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক ছিলেন। দলীয় নমিনেশন না পেলেও মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার জমিদার যদুনাথ রায়ের ভাগ্যকূল, রাঢ়িখাল ও শ্যামসিদ্ধ ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ জমি দখল করেন বলে তার বিরুদ্ধে মিটিং মিছিল হয়। এ নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। ব্যাপক ভাবে আলোচিত-সমালোচিত হলেও আওয়ামী লীগের এবারের জাতীয় কাউন্সিলে তিনি প্রেসিডিয়ামের সদস্য নির্বাচিত হন। এ পদে তার নাম ঘোষণা পর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সরকারের কোনো পদে না থাকলেও এক সময়ের বামপন্থী নূহ উল আলম লেলিন এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। এসব নেতা ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন সাবেক বাম নেতা সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে পরিচিতরা কোণঠাসাই রয়ে যাচ্ছেন।

Tuesday, January 15, 2013

The Bengal Tigers in the R&AW cage

R&AW trained Crusader 100 in action in Bangladesh

| by Jessica Fox

( April 23, 2012, Dhaka, Sri Lanka Guardian) Strictly scrutinized 100 armed cadres of the ruling Awami League in Bangladesh, who received 6-month long extensive commando training at Dehradun in India under the direct supervision of Indian espionage agency the Research and Analysis Wing are continuing various types of activities, including secret killing, abduction etcetera since June of 2010 with the mission of “clearing” a large number of politicians, media personnel and members of the civil society in Bangladesh. The team codenamed “Crusader-100” went to India during end September 2009 and stayed there till mid June 2010, where brilliant commando trainers of Indian Army gave extensive training to these people under the disguise of “training few young commandos of Bangladesh Army”. The entire project of “Crusader-100” was originally conceived by Indian Research and Analysis Wing (RAW) and the project was coordinated directly by the Bangladeshi Prime Minister and her defense advisor Maj. Gen. (Rtd) Tarique Ahmed Siddiqui.

Maj. Gen. (Rtd) Tarique Ahmed Siddiqui maintains special connection with Indian RAW and British MI6 for decades, since he was in army service. Such relations of RAW and MI6 with him was because of his family relations with Sheikh Hasina. When Bangladesh Awami League formed government in January 2009, Maj. Gen. (Rtd) Tarique Ahmed Siddiqui became extremely important in the government due to his official position as the defense advisor to the Bangladeshi Prime Minister as well as his personal identity of being the brother-in-law of Prime Minister’s younger sister Sheikh Rehana. The selection of the entire batch of ruling party cadres, who were sent to India for commando training were directly done by Maj. Gen. (Rtd) Tarique Ahmed Siddiqui and a few of his loyal colleagues and retired army officers, while on return of the members of the “Crusader-100” team from India, they were provided a hit list comprising names of opposition politicians, members of Bangladeshi media and some members of the civil society. According to information, the list contains names of more than 83 people, who are planned to be “cleared” by the members of the “Crusader-100” gang. The members of these specially trained hitters are housed inside several buildings at Dhaka’s Gulshan and Baridhara areas. The Baridhara “bases” of the hitters is maintained directly by Maj. Gen. (Rtd) Tarique Ahmed Siddiqui and each of such places are equipped with sophisticated surveillance equipments as well as entry of civilians are restricted within these premises. Leader of Bangladesh Nationalist Party, M Ilias Ali, who became victim of enforced disappearance recently, was also named in the list of Crusader-100 force. My New Delhi contacts disclosed few of the names of the hit list, which include, political leaders Amanullah Aman, Mirza Abbas, Sadeque Hossain Khoka, Goyeshwar Chandra Roy, M Ilias Ali, Habibun Nabi Sohel, Abdullah Al Noman, Barrister Abdur Razzaque, Shafiul Alam Pradhan, ASM Abdur Rob, Mufti Fazlul Haque Amini and Moulana Fazlul Karim. Awami League and RAW have decided “clearing” the listed names latest by December 2013, which they consider to be “vital” for the ruling party in Bangladesh in returning into power.

The gang of Crusader-100 is equipped with sophisticated small and medium range weapons, mostly with silencers as well as bullet-proof jackets, gas bombs and vehicles for their operations. Some of the members of this gang use satellite phones to skip interception of any of the Bangladeshi intelligence agencies. Each of the members of this gang received healthy financial package alongside various types of extra benefits, including apartments in Dhaka city for the members of their families and small businesses. They are not allowed to show faces during the day-time and mostly required to stay inside their bases in Dhaka city. In case of emergency, when the members of the team are required to go on street during the day time, they are compulsorily required to wear black-tinted helmets, to hide their faces from the public. By rotation, members of the team are secretly taken to India for a break of 7-10 days for “amusement” purposes. In such cases, they are allowed to cross Bangladesh-India borders without any travel documents.
 
Source: http://www.srilankaguardian.org/2012_04_23_archive.html

কানাডায় বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্টদের ১৭% বেকার, পছন্দনীয় পেশায় মাত্র ১১%

কানাডায় বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্টদের ১৭% বেকার, পছন্দনীয় পেশায় মাত্র ১১%

বাংলাদেশী নতুন ইমিগ্র্যান্টদের ১৭% বেকার। ৩০% শুধু টিকে থাকার জন্য ভিন্ন পেশার চাকুরীর সাথে সংশ্লিষ্ট। ৩২% পড়াশোনা করছেন। ব্যবসা, পারিবার প্রতিপালনসহ অন্যান্য কাজের সাথে আছেন ২১%। সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় এমপি ও এমপিপি। বেসরকারি সংস্থা বেঙ্গলি ইনফরমেশন এন্ড এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস (বায়েস) টরন্টো পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ পায়। গত ১২ জানুয়ারি শনিবার বাঙালি অধ্যুষিত ড্যানফোর্থ এলাকার একসেস পয়েন্টে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বায়েসের সভাপতি মো. ইমাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় বিচেস ইস্ট ইয়র্কের এমপি মেথিউ ক্যালওয়ে, এমপিপি মাইকেল প্রু, বিসিএস এর প্রতিষ্ঠাতা মুশতাক আহমেদ, সাপ্তাহিক বাংলা মেইলের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি আবদুল হালিম মিয়া, নির্বাহী পরিচালক নাসিমা আখতার, টিভি ব্যক্তিত্ব ফুয়াদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি কাজী জহির উদ্দিন, চাকসুর সাবেক জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদসহ কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বায়েসের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম মোস্তফা। বৃহত্তর টরন্টো ও এর পাশের শহরে বসবাসরত ইমিগ্র্যান্টদের ওপর পরিচালিত এ গবেষণার উদ্দেশ্যে ছিল তাদের কর্ম, অতীত ও বর্তমান পেশা, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির মাত্রা, সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা এবং উত্তরণের উপায় সম্পর্কে জানা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপি মেথিউ ক্যালওয়ে বলেন, বাঙালীদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আমারই। আমি এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ। এমপিপি মাইকেল প্রু গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যগুলো প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টে উত্থাপন ও সমাধানে সচেষ্ট হবেন বলে জানান।
বায়েস পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা যায়, ৭৯% উত্তরদাতা দেশে তাদের পেশাগত কর্মের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৬% ছিলেন গৃহিনী। আর মাত্র ৫% ছিলেন শিক্ষার্থী। কিন্তু কানাডায় এসে অনেককেই তাদের পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন। ৩২% ইমিগ্র্যান্টই এখন শিক্ষার্থী, যাদের অনেকেই পছন্দনীয় চাকুরী না পেয়ে ঋণ নিয়ে আবার পড়াশোনায় জড়িত হয়েছেন। শিক্ষার্থী, গৃহিনী এবং বেকারদের একসাথে বিবেচনা করা হলে প্রকৃত বেকারত্বের হার দাঁড়ায় ৫৩%। কানাডায় মাত্র ১১% তাদের পছন্দনীয় পেশায় (শিক্ষক, ব্যাংকার, আইটি, প্রকৌশলী, এনজিও) কাজ করছেন। যদিও নতুন ইমিগ্র্যান্টদের ৯৬% এরই শিক্ষাগত যোগ্যতা গ্রাজুয়েট বা তদুর্ধে।
বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্টদের ৪১% এর আয় চাকুরী, ২৭% এর শিক্ষা ঋণ, ৭% আছেন সোস্যাল এসিসট্যান্সে, ১১% এর আয় ব্যবসা অথবা সঞ্চয় এবং ৪% চাকুরী বীমার ওপর নির্ভরশীল। কানাডায় কেমন লাগছে এর উত্তরে ৩৩% বলেছেন তারা খুব একটা সন্তুষ্টও না আবার অসস্তুষ্টও না। ৩০ শতাংশ বলেছেন তারা অসন্তুষ্ট। ২৩% বলেছেন তারা সন্তুষ্ট, ৮% বলেছেন তারা খুবই সন্তুষ্ট, অন্যদিকে ৬% এর মতে তারা খুবই অসস্তুষ্ট।
এই জরিপের মূল গবেষক ছিলেন গোলাম মোস্তফা। গবেষণা সমম্বয়কারী ছিলেন মো. ইমাম উদ্দিন। কে এম মবিদুর রহমান, দিলরুবা খানম ও ইসমত আরা মোস্তফা গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। নমুনায়নের ভিত্তিতে যারা কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা এরূপ ১০০ জন বাংলাদেশী নতুন ইমিগ্র্যান্টের ওপর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে গবেষণা জরিপটি পরিচালিত হয়। এর মধ্যে পুরুষ ৫৫ ও নারী ৪৫ জন । উত্তরদাতাদের বয়স ২৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। সরাসরি ও টেলিফোনে উত্তরগুলো জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া ৬ জন মূখ্য তথ্যদাতার কাছ থেকে নতুন ইমিগ্র্যান্টদের চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণের উপায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
ইমিগ্র্যান্টরা এসে যে সব সমস্যার সম্মুক্ষীন হন এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সময়মত সঠিক তথ্য না পাওয়া, ইংরেজী ভাষাগত সমস্যা, কানাডিয়ান অভিজ্ঞতার অভাব, টিকে থাকার জন্য যে কোনো চাকুরীতে প্রবেশ, শিক্ষাগত যোগ্যতার যথাযথ মুল্যায়নের অভাব প্রভৃতি।
গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আসার আগে যথাযথ গবেষণা করে আসা, ইংরেজী ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন, নেটওয়ার্ক বাড়ানো, স্ব স্ব পেশায় বিভিন্ন ব্রিজিং প্রোগাম গুলোর সুবিধা গ্রহণ এবং স্বেচ্ছাসেবার সাথে জড়িত হয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন, যে কোনো বিষয়ে পড়ার আগে চাকুরীর বাজার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া ও যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া, সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ইমিগ্র্যান্টদের সহায়তায় এগিয়ে আসা। সর্বোপরি বালাদেশ হাইকমিশনের টরন্টোতে সেটেলাইট অফিসের মাধ্যমে ইমিগ্র্যান্টদের তথ্য ও চাকুরী পেতে সহায়তা করা প্রভৃতি। গবেষণার বিস্তারিত প্রতিবেদনটি বায়েসের নিজস্ব www.bies-canada.org এ পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, বায়েস অন্টারিও মিনিস্ট্রি অব গর্ভনমেন্ট সার্ভিসেস এর অধীনে নিবন্ধনকৃত একটি স্বেচ্ছাসেবী অলাভজনক সংগঠন। কানাডায় বসবাসরত বাঙালী কমিউনিটির উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান এর অন্যতম লক্ষ্য।

Monday, January 14, 2013

কোরিয়ায় গৌরবের গবেষণা


কোরিয়ায় গৌরবের গবেষণা
আরিফুল ইসলাম
দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ বাংলাদেশের মানুষ বলতেই বুঝত শ্রমজীবী মানুষ। সেই ধারণা পাল্টে দিচ্ছেন মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ব্রেইন কোরিয়া ২১’ নামের শ্রেষ্ঠ গবেষণা পদকটি পান আরিফুল। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে এ পদক দেওয়া হয়। এর আগে বাংলাদেশের আর কেউ এই গৌরব অর্জন করেননি। গত বছর কোরিয়ার বিভিন্ন বিজ্ঞান সাময়িকীতে যেসব গবেষণা নিবন্ধ ছাপা হয়, তার ওপর ভিত্তি করেই দেওয়া হয় এই পদক। আরিফুল তাঁর অক্লান্ত গবেষণাকাজের স্বীকৃতি হিসেবেই পেয়ে যান এই গৌরবময় পদকটি।
আরিফুল তাঁর গবেষণায় মানবদেহে ক্যানসার, ভাইরাসজনিত সংক্রমণসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে জিন থেরাপি প্রয়োগের কার্যকারিতার কথা তুলে ধরেন। দক্ষিণ কোরিয়ার উল্লেখযোগ্য সব গবেষণা সংগঠনের সক্রিয় সদস্য তিনি। যেমন: কোরিয়া ন্যানোটেকনোলজি রিসার্চ সোসাইটি (ন্যানো কোরিয়া), দি পলিমার সোসাইটি অব কোরিয়া (কেপিএস), কোরিয়ান সোসাইটি ফর বায়োম্যাটেরিয়ালস (কেএসবি), সোসাইটি ফর কোরিয়ান টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিজেনারেটিভ মেডিসিন (কেটিইআরএমআইএস)। গবেষণায় নতুনত্ব ও অভিনবত্বের জন্য তিনি কোরিয়ান মেধাস্বত্ব অধিকার (পেটেন্ট) লাভ করেছেন দুটি ক্ষেত্রে। এর একটি হচ্ছে জিন থেরাপি চিকিৎসাপদ্ধতিতে ব্যবহূত পলিসরবেট বাহক এবং অপরটি মুখে খাওয়ানোর মাইক্রো ক্যাপসুল।
ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) থেকে ‘বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর আরিফুল দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়াশোনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ২০০৮ সালের মার্চে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি দেন। সেখানে সিউল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮-১০ শিক্ষাবর্ষের ‘এগ্রিকালচারাল বায়োটেকনোলজি’র ওপর স্নাতকোত্তর করেন। মাস্টার্স শেষে ২০১০-১৩ শিক্ষাবর্ষের পিএইচডি কোর্সে অংশ নেন। ‘এগ্রিকালচারাল বায়োটেকনোলজি’ বিষয়ে পিএইচডি করেছেন তিনি। এখন পোস্ট-ডক্টরেটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগামী মার্চ থেকে তাঁর সেশন শুরু হবে।
ঢাকার মুন্সিগঞ্জের ছেলে আরিফুল। মা ও পাঁচ ভাই নিয়ে তাঁদের পরিবার থাকে জুরাইনে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার এক মাস আগে তাঁর বাবা মারা যান। ২০১০ সালে সহপাঠী জান্নাতুল ফেরদৌসকে বিয়ে করেন আরিফুল। দুজনেই একই বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন স্নাতক শ্রেণীতে। জান্নাতুলও এখন সিউল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন।
আরিফুলের ভবিষ্যৎ ভাবনাও খুব স্বচ্ছ। ‘বায়োটেকনোলজি নিয়ে আরও অভিজ্ঞতা নিতে চাই। তারপর একে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর কথা ভাবব। আর যাঁরা এ বিষয়ে আগ্রহী, তাঁদের জন্য কিছু করার ইচ্ছে তো আছেই।’ বললেন তিনি।
আশাবাদী আরিফুলের মতে, ‘আমাদের দেশে অনেক সমস্যা আছে। কিন্তু সম্ভাবনার ক্ষেত্রও রয়েছে প্রচুর।’ এ সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে তিনি দেশের মাটিতে একটি বিশ্বমানের বায়ো-মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। যাতে করে বায়ো-মেডিকেল বিজ্ঞানী, বায়োটেকনোলজিস্ট, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার, ধাতব প্রকৌশলী, আণবিক জীববিজ্ঞানী, রোগ প্রতিরোধ গবেষক ও অণুজীববিজ্ঞানী বেরিয়ে আসবেন। যাঁরা নিয়োজিত থাকবেন গবেষণাকর্মে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে বিশ্বমানের গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছরই এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শিক্ষাবৃত্তি আহ্বান করা হয়। এখানে গবেষণাগারে যেসব বিষয় নিয়ে গবেষণা হয়, তা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়নের সুযোগ থাকে। ফলে কোনো গবেষণা বিফলে যায় না।
দক্ষিণ কোরিয়ায় পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে কম। আরিফুল এখন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী স্নাতকদের দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ থেকে কোরিয়ায় আসা শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে সুনামের সঙ্গে কাজও করছেন।

Faruk Choudhury to be Bristol’s first Muslim Lord Mayor


Faruk Choudhury to be Bristol’s first Muslim Lord Mayor

Cllr Choudhury will be one of the youngest Lord Mayors of modern times and said he wants to encourage more people to give blood
Cllr Faruk Choudhury Easton
Cllr Faruk Choudhury
Labour councillor Faruk Choudhury is set to become Bristol’s first Muslim Lord Mayor, after receiving backing from all parties at the city council.
Mr Choudhury, 38 and originally from Bangladesh, has been a councillor in Easton in 2007, and will take over from Cllr Peter Main in May.
He is married to Shilpi who will be the Lady Mayoress. They have three children – a boy, Ishaac 10, and two girls, Sanyia (five) and Nusaybah (three).
A “jubilant” Cllr Choudhury will be one of the youngest Lord Mayors of modern times and said he wants to encourage more people to give blood during his time in office.
“I am jubilant. This is a monumental honour for me and my family and even more so for Bristol’s Asian community and all BME communities in the city. I will do everything I can to promote this great city for all people in the coming year,” he said.
“My personal cause is Britain’s shortage of transplant organs and some blood groups especially within BME populations. Many people die unnecessarily each year as a result of donor deficiency. As Lord Mayor and with my wife, Shilpi, we will work across many organisations encouraging ‘give blood’ sessions especially within BME communities to encourage being an organ donor as well as a blood donor.”
Hours after Cllr Choudhury was nominated to be Bristol’s Lord Mayor, a Knowle woman with 20 years of experience as a magistrate will be Bristol’s next High Sheriff.
Dr Shaheen Chaudhry was nominated at a ceremony held at London’s ancient Royal Courts of Justice.
Believed to be the first High Sheriff from the south of the city in recent times, she will take office in March, following current incumbent Andrew Nisbet.
Born in Pakistan, Dr Chaudhry went to Knowle Junior School, The Red Maids and studied at Bristol University. A doctor of social policy and politics, the 55-year-old is also a lay member on mental health tribunals across the South West and used to be a non-executive member of the North Bristol NHS Trust board.
Dr Chaudhry founded the organisation now called Health Links to improve access to healthcare for people whose first language is not English, and was a director for 16 years.