আলোচিত শাহবাগ ও বর্তমান তরুণ প্রযন্ম
লিখেছেনঃ আবদুল্লাহ্ আল মেহেদী, প্রকাশিত February 18, 2013
আমাদের
মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে সত্য কথা, ইতিহাসের কথা জনসাধারণের কাছে তুলে ধরার
ব্যাপারে বিএনপির ব্যর্থতা শত ভাগ। এতে কোন সন্দেহ নেই।বিএনপিতে রয়েছেন
সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা ও খেতাবপ্রাপ্ত কমান্ডাররা। বিএনপি এ কথাটা
ক্ষমতায় থাকাকালীন জোরগলায় বলতে পারেনি। কেন যেন মনে হয়, হয়তো বিএনপি
এ সত্য কথাটা বলতে লজ্জা পায়। মুক্তিযুদ্ধকে দলের একমাত্র আদর্শ হিসেবে
প্রচার করতে চরম ব্যর্থ হয়েছে। মেজর জিয়া সাহেব মুক্তিযুদ্ধের ডাক
দিয়েছেন এবং এই মর্মে ঘোষণা দিয়েছেন। এ কথাটা আজ দেশের মানুষ ভুলতে
বসেছে। দিন দিন ইতিহাস পাল্টাচ্ছে। এছাড়াও বিএনপি মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের
এবং দলের প্রতিষ্ঠাতার গৌরব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে।
বিএনপির মহান সম্পদ হলো মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। তিনি জিয়াউর রহমানকে
বিপদের দিনে সমর্থন করেছেন এবং দোয়া করেছেন। নতুন প্রজন্মকে জিয়ার নাম
ভুলিয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস রচনার জন্যই আজ কথিত শাহবাগ রচিত
হয়েছে। শুধুমাত্র বিএনপি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিবৃতি দিয়েছে। মেজর
জিয়া সাহেব আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য জাতীয় ঐক্য ও সমন্বয়ের রাজনীতি
শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের মাফ করেছিলেন আর জিয়া সাহেব সব
মত ও পথের লোকজন নিয়ে দল গঠন করেছিলেন বিভেদ দূর করে দেশকে উন্নয়নের পথে
এগিয়ে নেয়ার জন্য। কিন্তু আদর্শ ছিল মুক্তিযুদ্ধ। জননেতা মওলানা ভাসানী
তার দলের প্রতীক ধানের শীষ জিয়াউর রহমানকে দিয়ে গেছেন। বিএনপির দলটিকে
মনে হচ্ছে এই দলের অতীতও নেই,ভবিষ্যৎও নেই। আরো মনে হয় সামনে তিমির
অন্ধকার।
বর্তমানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক শত শত বই রচিত হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ওই সব রচিত হয়েছে ভাড়াটিয়া লেখক বা বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে। যারা যুদ্ধ করেনি,যদিও তারা এখন বিশাল তবিয়তে বহাল আছেন। তরুণদের বুঝাতে হবে আমরা আধুনিক বাংলাদেশের প্রতিনিধি। এখন তথাকথিত আবেগের সময় নয়, এখন দেশগড়ার সময়। দেশকে নিয়ে যেতে হবে হতে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো দেশ। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গরিব দেশ ছিল।
ব্লগিং করে দেশ গড়া যাবে না। কথা বলা যাবে, স্লোগান দেয়া যাবে। ব্লগে হযরত রাসূল সা. ও তার স্ত্রী তথা আমাদের মা এবং মহান আল্লাহপাকের বিরুদ্ধে যেসব অশ্লীল প্রচারণা করেছে তা বাংলাদেশের সব মানুষের মনে আঘাত হেনেছে। মানুষ কত জঘণ্য হতে পারে! হয়তো ব্লগারদের বাবা-মা,ও মুরব্বিরা নিশ্চয়ই ব্লগের এসব বিষয় জানেন না বা বুঝেন ও না। কে বা কারা তাদের সন্তানদের নবী, রাসূল ও আল্লাহর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে তা পিতা-মাতাকে অবশ্যই জানতে হবে। কারা শিক্ষা দিল ধর্মহীনতা ? কোথায় পেল এ আচরণ ? না বুঝেই যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবি তুলেছে তরুণেরা অত্যন্ত সরলভাবে। সারা দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। কিন্তু বিচার আন্দোলনের গভীরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করছে তা জাতিকে এবং জাতির তরুণসমাজকে অবশ্যই বুঝতে হবে। তারা বাংলাদেশেরই সন্তান। তারা আগামীর কর্নধার। তাদেরকেই নতুন করে গড়তে হবে সোনার বাংলাদেশকে।
১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনী কারা করেছিলেন, সে সম্বন্ধে আমাদের ধারণা স্বচ্ছ নয়।আমরা তরুন আমরা তখন ছিলাম না,আমাদের বাবা-মা র ও বিয়ে হয়নি। তবে রাজাকারের সঠিক নির্ভুল বাংলা অর্থ কি ? তা আমি জানিনা।তবে জানি, রাজাকাররা চেয়েছিলেন পাক বাহিনীর সহযোগিতা করে ভারতীয় বাহিনী প্রতিরোধ করতে। রক্ষা করতে চেয়েছিলেন সাবেক পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখন্ডতাকে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনী ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এদের সংখ্যা নাকি ছিল ৯৩ হাজার। এদের নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। পরে ১৯৭২ সালের ৩ জুলাই হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিমলা চুক্তি। এই চুক্তি অনুসারে পাক বাহিনীর সবাইকে মুক্তি দেয়া হয়। কাউকেই বিচার করা হয় না যুদ্ধাপরাধী হিসেবে। বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধিকে সিমলা সম্মেলনে ডাকা হয়নি। কারণ, পাক বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল কেবল ভারতীয় বাহিনীর কাছে। পৃথকভাবে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর কাছে নয়। এতে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অবদান স্বীকৃতি পেতে পারেনি। সত্যি কি যুদ্ধ আমাদের সাথে হয়নি ?
মূলত ‘প্রজন্ম’ শব্দটা হয়ে উঠছে যথেষ্ট গোলমেলে। কারণ, গড়পড়তা ৩০ বছর সময়কে ধরা হয় একটি প্রজন্ম। আজকে যারা তরুণ, অতীতে তারা ছিল শিশু। আর ভবিষ্যতে হয়ে পড়বে অতরুণ। একটা দেশের জনসংখ্যায় তরুণরাই সব নয়। এর মধ্যে থাকে নানা বয়সের মানুষ। কোনো দেশেই কেবল তরুণ প্রজন্মকে নির্ভর করে দেশ চলে না। নানা প্রজন্মের ওপর নির্ভর করেই চলতে হয় একটি দেশকে। কিন্তু শাহবাগ চত্বরে জমেছে নাবালকদের ভিড়। যাদের নেই কোনো ভোটাধিকার। তাদেরকে চিৎকার করতে শোনা যাচ্ছে রাজাকারদের ফাঁসি চাই বলে। আরো আছে “তুই রাজাকার” । এখানে আর যা-ই বলা যাক, জনমতের অভিব্যাপ্তি বলে ধরা যেতে পারে না। তরুণ দেশের প্রতিটি দলেই আছে। আর তরুনরাই দলের মহামন্ত্র। যারা শিবির করছে, রাস্তায় ঢলে পড়ছে পুলিশের গুলি খেয়ে, তারাও কম তরুণ নয়। সব তরুণ একভাবে চিন্তা করছে না। কোন তরুণ বুঝের আবার কোনটা নাবুঝের। ইসলামী ছাত্র শিবিরের ছেলেরাও তরুণ প্রজন্মেরই অংশ। তাদেরও আছে বিশেষ স্বপ্ন; বিশেষ আদর্শবাদ। ইসলামী ভাবার্থে তারা পরিচালিত। এটা অস্বীকার করা যাবেনা। আদর্শ মজবুত তাদের। যার জন্য তারাও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে করছে আন্দোলন। তাদের চেতনা শাহাদাত,যা অন্য কোন দলের মোটেও নেই। আমরা সবাই তাদের সাথে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তাদের আদর্শনিষ্ঠাকে অশ্রদ্ধা করতে পারি না। যারা শিবির করে প্রাণ হারাচ্ছে, তাদের মায়েরাও যে অশ্রুপাত করছেন না তা নয়।অতীতের প্রজন্মের সাথে বর্তমান প্রজন্মের ফারাক অনেক। অতীতেও ছাত্ররাজনীতি ছিল। কিন্তু তখন ছাত্ররা ছিল অনেক গণতন্ত্রমনা।
শাহবাগের ব্লগার রাজীব হায়দারের ইসলামবিরোধী ধৃষ্টতাপূর্ণ লেখা পড়ে দেশের ধর্মপ্রাণ ও বিবেকবান মানুষ বিক্ষুব্ধ হলেও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে শীর্ষস্থানীয় নেতা-মন্ত্রীরা তার জন্য আহাজারি করছেন। চরম ধর্মদ্রোহী রাজীব আল্লাহ, রাসুল সা. ও তার সম্মানীত স্ত্রী তথা আমাদের মা , সাহাবায়ে কেরাম, কোরআন, নামাজ, রোজা ও হজসহ ইসলামী বিধি-বিধান ও অনুশাসনের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও বিষোদগারপূর্ণ কল্পকাহিনী লিখে দেশের সর্বস্তরের মুসলমানদের ঘৃণা কুড়ালেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের কাছে ‘শহীদী’ মর্যাদা পাচ্ছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে রাজীব হত্যাকে। তাহলে নাস্তিকরা বুদ্ধিজীবী ?
ঢাকাসহ সারা দেশে তরুণদের সমাবেশ এখন ক্ষমতাসীনরা কূটকৌশলের মাধ্যমে কঠোরভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত করছে। জনবহুল রাস্তাগুলো বন্ধ করে নিরপত্তা প্রদানসহ প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। গত ১৪-০২-১৩-এর জন্য মোমবাতি কেনা হয় ১৫ লাখ টাকার। সাধারণ ব্লগারদের উচ্ছ্বাসকে তারা ছিনতাই করে নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে জনসাধারণকে আবারও বিভ্রান্ত করছে বলেই সচেতন মহল মনে করছেন। প্রাথমিক পর্যায়ের কয়েকজন ব্লগারকে এরই মধ্যে এখানে আর দেখা যাচ্ছে না। জনৈক ব্লগার একজন প্রকৌশলী পল্লবীতে খুন হয়েছেন। এখন এই তরুণদেরই ঠিক করতে হবে যেন কোনো ধরনের অস্তিত্ব সঙ্কটে না পড়ে তাদের ভাবমর্যাদা। তরুণদের ইতিহাস-সচেতন হতে এবং বিবেকের দাসত্ব করতে হবে দেশপ্রেমের তাগিদেই। ইতিহাসে বিজয়ী বীর হতে হলে কোনো সংকীর্ণ দলীয় ইচ্ছার দাসত্ব না করে নৈতিকতার বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই বিপ্লব এবং বিপ্লবীরা চিরঞ্জীব হয়ে থাকবে।
No comments:
Post a Comment