Wednesday, January 16, 2013

বামদের খপ্পরে আওয়ামী লীগ

 স্টালিন সরকার : নবম-দশম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ের নতুন সংস্করণে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা ‘ন্যাপের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত’ হিসেবে। ’৯০ এর দশকের প্রথমার্ধে গণতন্ত্রী পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও দীর্ঘ ২০ বছরেও প্রবীণ এই নেতা নিজের নাম আওয়ামী লীগে ‘বিলীন’ করতে পারেন নি। এখনো তিনি দলের ভিতরে ন্যাপের সুরঞ্জিত নামে পরিচিত। প্রবাদে আছে ‘তেল কখনো পানির সঙ্গে মেশে না’। আওয়ামী লীগে যোগদান করা প্রায় সব বাম নেতার একই অবস্থা। বামপন্থীদের ভাষায় ‘কক্ষচ্যূত’ সাবেক বামনেতারা দীর্ঘদিনেরও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও শরীর থেকে ‘বামপন্থী’ খোলস খসাতে পারেন নি। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকজন সাবেক বামপন্থীকে সরকারের মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। এ সব নেতা এখনো আওয়ামী লীগের মূলস্রোতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে একাকার হতে পারেননি। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্বের মধ্যে নিজেদের রাখলেও সরকার এবং দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় নীতি নির্ধারণীর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এই বাম নেতারা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের দলে গুরুত্বহীন করে রাখায় বামপন্থীদের খপ্পরে পড়ে গেছে আওয়ামী লীগ। এক সময় বঙ্গবন্ধুকে অবজ্ঞা-অশ্রদ্ধা করে তার নামে অশ্লীল শব্দের ব্যবহার করলেও তারই গড়া আওয়ামী লীগকে ক্রমান্বয়ে গ্রাস করছেন এই বামপন্থীরা। যার কারণে বিভিন্ন সময় বামপন্থী ধারার মন্ত্রীরা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেললেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। বরং বামপন্থীদের  প্রভাব ও প্রতিপত্তির ভয়ে গা বাঁচিয়ে চলছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা। 
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার মন্ত্রী সভায় বামপন্থী নেতার মধ্যে ব্যারিষ্টার শফিক আহমদ আইন মন্ত্রণালয়, আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রণালয়, হাসানুল হক ইন তথ্য মন্ত্রণালয়, দিলীপ বড়–য়া শিল্পমন্ত্রণালয়, দপ্তরবিহীনমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আ ফ ম রুহুল হক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, নূরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বেগম মতিয়া চৌধুরী খাদ্য মন্ত্রণালয়, শাহজাহান খান নৌ মন্ত্রণালয়, এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। বাম নেতা নূহ উল আলম লেলিনকে প্রেসিডিয়ামের সদস্য করা হয়। এ ছাড়াও আরো অনেক সাবেক বামনেতাদের প্রশাসন ও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়। বাম নেতারা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠায় সাবেক ছাত্রলীগ ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এসব মন্ত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিতর্কিত কথাবার্তা ও সিদ্ধান্তের কারণে সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। মুল শ্রোতের সঙ্গে মিশতে না পারায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের নেতারা এসব সাবেক বাম নেতাদের কঠোর সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ এ সব নেতার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর সৈনিকদের ‘উপেক্ষা’ করে বামদের গুরুত্ব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ যাই হোক  সরকার ও দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেখলে মনে হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে বামপন্থীদের  খপ্পরে পড়ে গেছে তা পরিষ্কার।
এক সময়ের বামপন্থী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মহাজোট সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী। বাম রাজনীতি এবং বিদেশে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করলেও জাতীয় পার্টির শামনামলে পুনরায় রাজনীতিতে ফিরে আসেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। এরশাদের মন্ত্রী সভা থেকে বিদায়ের পর আবার বিদেশ চলে যান। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর আওয়ামী লীগে যোগদান করে নবম জাতীয় সংসদে সিলেট-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। বয়সের ভারে ন্যূব্জ আবুল মাল আবদুল মুহিত মহাজোট সরকারের অর্থমন্ত্রী হন। ব্যক্তিগত ভাবে ‘সৎ ব্যক্তি’ হিসেবে পরিচিত হলেও অপ্রীতিকর কথাবার্তা বলে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা এবং বিতর্কের জন্ম দেন। তার অতি কথনের কারণে বেশ কয়েকবার সরকারকেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীর পর তিনি শেয়ার বাজাকে ফটকাবাজার এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ‘ফড়িয়া’ হিসেবে অভিহিত করে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে একজন এমপির বক্তব্যকে ‘রাবিশ’ মন্তব্য করে দলের ভিতরে সমালোচিত হন। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস সম্পর্কে অপ্রীতিকর মন্তব্য (বাংলাদেশের উন্নয়নের একমাত্র সমস্যা ইউনূস) করে সমালোচিত হন। জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপি হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করলে তিনি বিএনপিকে ‘উন্মাদ’ হিসেবে অভিহিত করে সমালোচিত হন। একই দাবিতে বামদলগুলোর হরতাল নিয়ে বামদলগুলোর সমালোচনা করে তাদের তত্ত্ববাগিশ হিসেবে অভিহিত করেন। সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারী নিয়ে সরকার যখন প্রচ- চাপের মুখে তখন অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি ‘চার হাজার কোটি টাকা’ কোনো টাকাই নয়।  পদ্মা সেতু নিয়ে এক এক সময় এক এক কথা বললেও ঢাকা অবস্থানরত বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধির একটি মন্তব্যকে ‘ফোকার দালালী’ হিসেবে অভিহিত করে সমালোচনার ঝড় তোলেন। অর্থমন্ত্রী হওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের থেকে অনেক দূরে অবস্থানরত অর্থমন্ত্রী মহাজোট সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকায় সরকারের ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছেন।
ন্যাপের সুরঞ্জিত হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী। ’৯০ দশকের প্রথমার্ধে গণতন্ত্রী পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ’৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনে বিজয়ী হন। অতঃপর তাকে প্রধানমন্ত্রীর সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা করা হয়। বর্তমানে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে সংসদীয় বিশেষ কমিটির প্রো-চেয়ারম্যান ছিলেন। তার আগে আইন মন্ত্রণালয় সম্পকির্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের শেষের দিকে মন্ত্রী হয়ে রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘোষণা দেন তিনি রেলের কালো বিড়াল ধরবেন। কালো বিড়াল রেলে বাসা বেঁধে থাকায় দুর্নীতি হচ্ছে এবং রেল ধীরে ধীরে সংকুচিত হচ্ছে। ঘোষণার ৫ মাস পর ৯ এপ্রিল পিলখানায় মধ্যরাতে ৭০ লাখ টাকাসহ সুরঞ্জিতের পিএস ফারুক ধরা পড়ে বিজিবির হাতে। ঘটনার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বলেন ওই টাকার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে ১৬ এপ্রিল তিনি ঘটনায় দায় স্বীকার করে রেলমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করে বলেন ঘটনার সুস্থ তদন্তের স্বার্থে পদত্যাগ করলাম্ এবং নির্দোষ প্রমাণের পর আবার ফিরে আসবো। কিন্তু দুদিন পর তিনি আবার ঘোষণা দেন তিনি দপ্তরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে থাকবেন। এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আগ বাড়িয়ে জানান, রেলের ৭০ লাখ টাকার কেলেঙ্কারীর সঙ্গে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জড়িত নন। দুদক অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কিন্তু গাড়ীর আজম খান ৬ অক্টোবর মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে জানান ওই ৭০ লাখ টাকা সুরঞ্জিতের বাসায যাচ্ছিল। ড্রাইভারের এ তথ্য ফাসের পর দেশবাসী জানতে পারে কালো বিড়াল তাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেলে গেলেও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজেই কালো বিড়ালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অথচ প্রভাবের কারণে তিনি এখনো মন্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। চীনপন্ত্রী হিসেবে পরিচিত মহাজোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে নির্বাচন করতেন। কোনো নির্বাচনে জামানত রক্ষা করতে পারেননি। সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ১৪ দলীয় জোটের শরীক হিসেবে অন্যেরা যখন মনোনয়ন নিয়ে ব্যস্ত তখন দিলীপ বড়–য়া নীরব ছিলেন। নির্বাচনে মহাজোটের বিজয়ের পর তাকে মন্ত্রী সভায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় বিএনপির  চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় তাকে চীন সফরে সঙ্গী করেছিলেন। সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাকে মন্ত্রী করেছেন। এরই মধ্যে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা ৩/৪টি প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন। সাম্যবাদী দলের নেতারা কয়েকদিন আগে দিলীপ বড়–য়াকে দল থেকে বহিষ্কার করলেও তিনি নির্বিকার। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাচ্ছেন। ’৯০ দশকের প্রথমার্ধে ইলিয়েৎ সিনের গ্লাসন্যাস্তÍ প্রেরেস্ত্রোইকা থিউরি কার্যকরের সময় বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট পতনের ঢেউ ওঠে। সে ঢেউ এ জনপদে এসে পৌঁছলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও বিভক্ত হয়ে পড়ে। সে সংকটের মুখে সিপিবি কয়েকভাবে বিভক্ত হয়ে যায়। এক এক জন এক এক দলে গেলেও সিপিবির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নাহিদ আওয়ামী লীগে ঠাঁই নেন। আওয়ামী লীগের শিক্ষা সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদ ’৯৬ সালের নির্বাচনে এমপি হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হলেও নবম জাতীয় সংসদে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মহাজোট সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে সরকারি পিএস-এপিএসও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী বলে জানা যায়। ছাত্রলীগ করা কেউ তার পছন্দ নয়, তাই সবকিছুতেই খোঁজেন ছাত্র ইউনিয়ন। মহাজোট সরকারের ‘সফল’ মন্ত্রীদের তালিকায় সবার আগে তার নাম রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিকন্যা খ্যাত মতিয়া চৌধুরী ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ন্যাপের অঙ্গ সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাশেদ খান মেনন ও বেগম মতিয়া চৌধুরী ছিলেন। ডাকসুর গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন তারা। ৬২ সালে মস্কো ও পিংকিপন্থার স্রোতে ন্যাপ দুই ভাগ হলে ছাত্র ইউনিয়নও বিভক্ত হয়। ওই সময় ছাত্র ইউনিয়ন রাশেদ খান মেনন ও বেগম মতিয়া চৌধুরীর নামে ব্রাকেটবন্দী হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বাম রাজনীতি করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে খিস্তিখেউর করেন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আবদুর রাজ্জাকের হাত ধরে আওয়ামী লীগে প্রবেশের পর রাতারাতি শেখ হাসিনা বন্দনায় নিজেকে উজাড় করে দেওয়া বেগম মতিয়া চৌধুরী। দীর্ঘকাল আওয়ামী লীগের কৃষি সম্পাদকের দায়িত্বে থাকলেও ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পান। বিভিন্ন সময় তিনি রাজপথে আলোচনায় চলে আসেন। কখনো রাস্তায় বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে, কখনো লাইনে দাঁড়িয়ে ন্যায্য মূলেল চাল ক্রয় এবং কাওরান বাজারে ‘ভাগা দেয়া পচাঁ বেগুন’ ক্রয় করে আলোচনায় চলে আসেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ দলের শীর্ষ নেতাদের (সাবেক ছাত্রলীগ) খেদিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের মূলধারার নেতা-কর্মীদের ওপরে ওঠার সিঁড়িটা সরিয়ে ফেলেন। পাশাপাশি বামধারা থেকে কক্ষচ্যুত নেতাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আনার চেষ্টা করেন। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা স্বাস্থ্য মন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক সরকারি চাকরি করতেন। চাকরি চলে যাওয়ার পর নিজেই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে থাকলেও ১/১১ পর তার ভাগ্য খুলে যায়। আওয়ামী লীগের নমিনেশন পেয়ে সাতক্ষিরা থেকে এমপি নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রী সভায় যোগ দেন। জাতীয় সংসদে তার বিরুদ্ধে তারকা চিহ্নিত প্রশ্ন করেন সরকার দলীয় এক এমপি। জবাবে এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানান, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তার পেনশনের অর্থ আটকে দেয়া হয়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার সফিক আহমেদ দীর্ঘদিন আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত। ১/১১ পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর মামলাগুলো আইনজীবী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর মামলার পরিচালনার পুরস্কার হিসেবে তাকে টেকনোক্রাট কোটায় মন্ত্রী করা হয় এবং আইন মন্ত্রণালযের দায়িত্ব দেয়া হয়। তারই কারণে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি’ ইস্যুর সৃষ্টি হয়। আদালতের রায়ের পর সরকার সংবিধান সংশোধনের জন্য যে কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, আইন বিশেষজ্ঞ এবং প্রবীণ আইনজীবীদের সঙ্গে সংলাপ করেন। সকলেই আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আরো দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার ব্যাপারে অভিমত দেন। সে ভাবেই ওই কমিটি একটি প্রস্তাবনা রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু হঠাৎ করে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করার জন্য সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। আওয়ামী লীগের অনেকেই অভিযোগ করেন সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ দিয়ে বর্তমান বিতর্কের পিছনে অ্াইনমন্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও বঙ্গবন্ধু সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে জাসদ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি জাসদে যোগদেন। দীর্ঘদিন জাসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পর বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় চড়ে এমপি হন। প্রায় সাড়ে দিন বছর সরকারের বাইরে থাকলেও তিনি মন্ত্রী সভায় স্থান পান। বর্তমানে তিনি মহাজোট সরকারের প্রভাবশালী সদস্য। এক সময়ের ছাত্র লীগ করলেও শ্রমিক নেতা হিসেবে বেশ পরিচিত শাহজাহান খান। বঙ্গবন্ধু সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার মাধ্যমে জাসদ প্রতিষ্ঠা হলে তিনি জাসদে যোদদেন। রাজনীতির কারণে নিজের পিতার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়া শাজাহান খান দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় দলীয় নমিনেশন পেতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপিতে যোগদানের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে পথ থেকেই আওয়ামী লীগের এক নেতা তাকে ফিরিয়ে এনে দলীয় নমিনেশন দেন। অতপর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে এমপি হওয়ার পর মহাজোট সরকারের শাসনামলের প্রথম দুই বছর সরকারের বাইরে ছিলেন। অতপর মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তোলেন। মন্ত্রী হয়েও শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতাদের মতো আচরণ করেন। তিনি দুর্ঘটনা ঠেকাতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বাসের ড্রাইভারদের পক্ষ্যে অবস্থান নিয়ে সমালোচিত হন। গত দুই বছরে তিনি অপ্রীতিকর কথাবার্তার কারণে সমালোচিত হন। সম্প্রতি টেলিভিশনের লাইভ শোতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলেন্ বর্তমানে মহাজোট সরকারের তিনি প্রভাবশালী মন্ত্রী। ছড়াকার ইয়াফেস ওসমান মরহুম সাহিত্যিক শওকত ওসমানের পুত্র। পেশায় স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাম রাজনীতি করতেন। ছড়াকার হিসেবে পরিচিত ইয়াফেস ওসমানকে মহাজোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। তিনি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে স্বলিখিত ছড়া পাঠ করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার উপর ক্ষুব্ধ। এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। বামনেতা হিসেবে পরিচিত আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগে যোগদান করে দীর্ঘদিন দলের দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ’৯০ এর পর প্রতিটি নির্বাচনে পরাজিত হলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেএমপি নির্বাচিত হন। শেখ হাসিনা সরকার গঠনের কয়েক মাস পর তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগদেন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী হন। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে যোগদানের পর ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করলেও বর্তমানে তিনি নীরব। কদিন আগেও রাজউকের চেয়ারম্যাপের পদত্যাগ নাটক নিয়ে তার কাহিনী পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। সিবিপির ভাগ হওয়ার পর বাম দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন নূহ উল আলম লেলিন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক ছিলেন। দলীয় নমিনেশন না পেলেও মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার জমিদার যদুনাথ রায়ের ভাগ্যকূল, রাঢ়িখাল ও শ্যামসিদ্ধ ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণ জমি দখল করেন বলে তার বিরুদ্ধে মিটিং মিছিল হয়। এ নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। ব্যাপক ভাবে আলোচিত-সমালোচিত হলেও আওয়ামী লীগের এবারের জাতীয় কাউন্সিলে তিনি প্রেসিডিয়ামের সদস্য নির্বাচিত হন। এ পদে তার নাম ঘোষণা পর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সরকারের কোনো পদে না থাকলেও এক সময়ের বামপন্থী নূহ উল আলম লেলিন এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা। এসব নেতা ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন সাবেক বাম নেতা সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে পরিচিতরা কোণঠাসাই রয়ে যাচ্ছেন।

No comments:

Post a Comment