ছাত্রলীগের হাতে এসিড
ফারুক
হোসাইন/হালিম আনছারী : লাঠি, হকিস্টিক, রড, চাপাতি, রামদা ও
আগ্নেয়াস্ত্রের পর এবার ছাত্রলীগের হাতে উঠেছে এসিড। সাধারণ শিক্ষার্থী,
প্রতিপক্ষ ও ছাত্রীর পর ছাত্রলীগের তা-ব থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবারই
ছাত্রলীগের হামলার টার্গেটে পরিণত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শিক্ষক। এবার
ছাত্রলীগের এসিড হামলার শিকার হলেন রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২
শিক্ষক। তাদের ছোঁড়া এসিডে ঝলসে গেছে দুই শিক্ষকের মুখ। ছাত্রলীগের হামলায়
যুক্ত হলো নতুন অস্ত্র এসিড। এর আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর,
বুয়েট, জগন্নাথ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয় ও কুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের
আন্দোলনে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। হামলার পর দলীয় দাপটের
কারণে কখনই কোন রকম শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় না সরকারদলীয় ক্যাডার ছাত্রলীগ
নেতাকর্মীদের।
সর্বশেষ গতকাল (বৃহস্পতিবার) রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি’র অপসারণের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালনরত শিক্ষকদের উপর এসিড নিক্ষেপ করেছে ছাত্রলীগ। এতে আহত হয়েছেন ১২ শিক্ষকসহ ২৫ জন। ঝলসে গেছে দুই শিক্ষকের মুখ। গুরুতর আহত এই দুই শিক্ষক হলেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. মতিউর রহমান ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অপসারণের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গতকাল ৬ষ্ঠ দিনের মত দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছিল। গতকাল সকাল থেকেই বহিরাগত ও চিহ্নিত ছাত্রলীগের ক্যাডারসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসের বাইরে পার্ক মোড়, লালবাগ, সর্দারপাড়ায় অবস্থান নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে আসতে বাধা দেয়। পুলিশের সহায়তায় আইডি কার্ড দেখিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসে এসে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার লক্ষ্যে সমবেত হতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা দেখতে পায় যে, তাদের পূর্ব নির্ধারিত দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চের স্থলে ছাত্রলীগের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অন্য এক স্থানে সমবেত হয়ে কর্মসূচি শুরু করলে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বহিরাগত ছাত্রলীগসহ সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঠা হাতে নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর আকস্মিক হামলা চালিয়ে বেধড়ক লাটিপেটা করতে থাকে। এ সময় তারা আশপাশে ১৫-২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। মাইক ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলে। মাইকের ব্যাটারি ভেঙ্গে তা আন্দোলনরতদের উপর ছুঁড়ে দেয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. মতিউর রহমানের মুখ ঝলসে যায়। গুরুতর আহত হয় আরও ১০ শিক্ষকসহ কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের হামলার পর ক্যাম্পাসজুড়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা দ্বিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকে। পলায়নরত শিক্ষার্থীদের উপরও ছাত্রলীগ আক্রমণ চালিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এ সময় গোটা ক্যাম্পাসে এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কোমলমতি শিক্ষার্থী বিশেষ করে ছাত্রীদের কান্নার রোল পড়ে যায় ক্যাম্পাসজুড়ে। পরে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চের স্থলে মঞ্চ তৈরি করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠান শুরু করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা লাঠি, ছোরা, কিরিচ ও চাপাতি, হকিস্টিক নিয়ে ভিসি’র কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে মহড়া দিতে থাকে। আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও পুনরায় সংঘটিত হয়ে মিছিল নিয়ে সেখানে যেতে থাকলে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে। উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে উত্তেজনা ব্যাপক আকার ধারণ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ঘটনা শুনে জেলা আ’লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলনরতদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আরো বেশকিছু দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় পুলিশ সুপার দু’পক্ষের মাঝামাঝিতে পুলিশ মোতায়েন করে ক্যাম্পাসের সব গেট বন্ধ করে দেন। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি ভিসি’র কার্যালয়ে যান এবং সেখানে তৈরি করা ছাত্রলীগের মঞ্চের মাইকসহ অন্য মঞ্চের মাইক বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি ভিসি’র কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কিংবা প্রক্টর কাউকে খুঁজে না পেয়ে সবাই পালিয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান। তিনি প্রশাসনিক ভবন থেকে ছাত্রলীগের বহিরাগতদের বের করে গেটে তালা লাগিয়ে দেন। তার নির্দেশে পুলিশ ছাত্রলীগের তৈরিকৃত মঞ্চ এবং ভিসি’র কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনের আশপাশ থেকে লাঠি, ছোরা, কিরিচ, চাপাতি, লোহার রডসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেলা আড়াইটা থেকে ক্যাম্পাসে একদফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। পরে ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এডঃ রেজাউল করিম রাজু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার মোজাম্মেল হক।
আন্দোলনকারীরা জানান, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তারা গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় ক্যাম্পাসে এসে দেখতে পান ভিসি কার্যালয়ের সামনে দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চ বহিরাগত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা দখল করে অস্ত্রশস্ত্র হাতে নিয়ে সেখানে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় তারা একাডেমিক ভবন-৩-এর সামনে অবস্থান নেয়। সকাল দশটার দিকে ৩০/৩৫ জনের বহিরাগত একটি দল সেখানে গিয়ে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে তাদের মাইক কেড়ে নেয় এবং তা ভাংচুর করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর পরিমল মজুমদার এবং শিক্ষক আজিজুর রহমানের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করো এসিড নিক্ষেপ করে। এতে সাথে সাথে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. মতিউর রহমান এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান। দ্রুত তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এছাড়া, শিক্ষক ড. আরএম হাফিজুর রহমান সেলিম, গোলাম রব্বানী, আপেল মাহমুদ, আশরাফুল আলম, সানোয়ার সিরাজসহ আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। তাদের কারো কারো হাত ঝলসে গেছে এবং গায়ের জামা পুড়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই আহত হয়েছে। এসময় শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা ছাড়া আমাদের পাশে কেউ নেই।
এদিকে, হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ড. মতিউর রহমানের চোখ এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এসিড লেগেছে এবং ড. ওয়াদুদের শুধু মুখ এবং চোখে এসিড লেগেছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, এসিড নিক্ষেপের সময় বহিরাগতদের মুখ মাফলার দিয়ে বাঁধা ছিল। তারা আরও জানান, ভিসি’র ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসের বাইরে দেশীয় অস্ত্র আর লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। তারা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসতে বাধা দেয়। ক্যাম্পাসের পার্শ¦বর্তী সর্দারপাড়া এলাকাতেও শিক্ষার্থীদের মারধর করে। এসময় আহত হয় ইতিহাস বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র নামজুল আলমসহ তার ৫ বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক মোড়ের ২য় গেট দিয়ে শিক্ষার্থীরা আসতে চাইলে ছাত্রলীগের কর্মীরা বেশ ক’জন ছাত্রকে মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেয়। ছাত্রলীগ জয়বাংলা-জয়ঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে ভিসি সমর্থিত কর্মচারীদের সাথে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।
আন্দোলনকারী শিক্ষক ওমর ফারুক জানান, আমাদের গত কয়েকদিন থেকেই বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছিল। বিষয়টি আমরা রাত থেকেই প্রক্টরকে জানাতে চেষ্টা করছি। কিন্তু তাদের নম্বর বন্ধ ছিল।
শিক্ষক আশরাফুল আলম গতকালের ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর বহিরাগতদের দিয়ে হামলার নজির বিশ্বের কোথাও আছে কিনা আমাদের জানা নেই। ভিসির অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন করবো। আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণাকারী ট্রেজারার ড. মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষকদের উপর হামলা করা অযৌক্তিক। তবে তারা যে দাবিতে আন্দোলন করছে তা সময় দেয়া দরকার। ইচ্ছে করলেই পদত্যাগ করা যায় না।
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসে সভা, সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, অনশন কর্মসূচিসহ সকল ধরনের শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকা- নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অতীতে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগে হামলা
কেবল গতকালই নয়, এর আগেই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা লাঠি, হকিস্টিক, রড, রামদা, চাপাতিসহ দেশীয় ও বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ খাবার প্রদান করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে শিক্ষকদের কাছে অতিরিক্ত খাবার দাবি করলে শিক্ষকরা তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি রেজা সেকেন্দার হল প্রভোস্ট প্রফেসর আজিজুর রহমানসহ আবাসিক শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে। গত বছর ২ জানুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীরা বার্ষিক ভোজে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করলে আয়োজক কমিটির সদস্য ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। একই সময় ভিসির বাসভবনে হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে ভিসির স্ত্রী ও সন্তান আহত হয়। এসময় ছাত্রলীগ কর্মীরা ভিসির বাসভবন, গার্ড রুম, ভিসির গাড়ি ভাংচুর করে। ১ সেপ্টেম্বর বুয়েটের ভিসি প্রফেসর এস এম নজরুল ইসলামের দুর্নীতির কারণে তার অপসারণের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ কর্মীরা ভাংচুর ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে পরবর্তীতে আবার শিক্ষকদের নামে মামলা করে। ১৯ নভেম্বর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনশন কর্মসূচিতে শিক্ষকদের উপর হামলা করে ইবি ছাত্রলীগ। এতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. ইয়াকুব আলীসহ প্রায় ৩৫ শিক্ষক আহত হয়। ২০১১ সালের ৯ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষকদের মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগ। গত বছর ২৯ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর শরীফ এনামুল কবিরের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষকদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। গত বছর ১ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক মিন্টু আলী বিশ্বাসসহ ৪ জন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্লাসে উপস্থিতি না থেকেও উপস্থিতি দিতে বলে, না দিলে ক্লাস শিক্ষকের উপর হুমকি ও চড়াও হন। এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন এক আলোচনা সভায় শিক্ষক ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের কথা বলায় ঐ শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে যান। বাংলা বিভাগের এক শিক্ষিকাসহ দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিত যেন কোন বিষয় নয়।
সর্বশেষ গতকাল (বৃহস্পতিবার) রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি’র অপসারণের দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালনরত শিক্ষকদের উপর এসিড নিক্ষেপ করেছে ছাত্রলীগ। এতে আহত হয়েছেন ১২ শিক্ষকসহ ২৫ জন। ঝলসে গেছে দুই শিক্ষকের মুখ। গুরুতর আহত এই দুই শিক্ষক হলেন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. মতিউর রহমান ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অপসারণের এক দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গতকাল ৬ষ্ঠ দিনের মত দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছিল। গতকাল সকাল থেকেই বহিরাগত ও চিহ্নিত ছাত্রলীগের ক্যাডারসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসের বাইরে পার্ক মোড়, লালবাগ, সর্দারপাড়ায় অবস্থান নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ক্যাম্পাসে আসতে বাধা দেয়। পুলিশের সহায়তায় আইডি কার্ড দেখিয়ে ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসে এসে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার লক্ষ্যে সমবেত হতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা দেখতে পায় যে, তাদের পূর্ব নির্ধারিত দুর্নীতি প্রতিরোধ মঞ্চের স্থলে ছাত্রলীগের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অন্য এক স্থানে সমবেত হয়ে কর্মসূচি শুরু করলে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বহিরাগত ছাত্রলীগসহ সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঠা হাতে নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর আকস্মিক হামলা চালিয়ে বেধড়ক লাটিপেটা করতে থাকে। এ সময় তারা আশপাশে ১৫-২০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। মাইক ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলে। মাইকের ব্যাটারি ভেঙ্গে তা আন্দোলনরতদের উপর ছুঁড়ে দেয়া হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. মতিউর রহমানের মুখ ঝলসে যায়। গুরুতর আহত হয় আরও ১০ শিক্ষকসহ কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগের হামলার পর ক্যাম্পাসজুড়ে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা দ্বিগি¦দিক ছোটাছুটি করতে থাকে। পলায়নরত শিক্ষার্থীদের উপরও ছাত্রলীগ আক্রমণ চালিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এ সময় গোটা ক্যাম্পাসে এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কোমলমতি শিক্ষার্থী বিশেষ করে ছাত্রীদের কান্নার রোল পড়ে যায় ক্যাম্পাসজুড়ে। পরে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চের স্থলে মঞ্চ তৈরি করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠান শুরু করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা লাঠি, ছোরা, কিরিচ ও চাপাতি, হকিস্টিক নিয়ে ভিসি’র কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে মহড়া দিতে থাকে। আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও পুনরায় সংঘটিত হয়ে মিছিল নিয়ে সেখানে যেতে থাকলে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে। উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে উত্তেজনা ব্যাপক আকার ধারণ করে। অবস্থা বেগতিক দেখে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
ঘটনা শুনে জেলা আ’লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলনরতদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আরো বেশকিছু দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় পুলিশ সুপার দু’পক্ষের মাঝামাঝিতে পুলিশ মোতায়েন করে ক্যাম্পাসের সব গেট বন্ধ করে দেন। তিনি আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে আলাপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি ভিসি’র কার্যালয়ে যান এবং সেখানে তৈরি করা ছাত্রলীগের মঞ্চের মাইকসহ অন্য মঞ্চের মাইক বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এ সময় তিনি ভিসি’র কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কিংবা প্রক্টর কাউকে খুঁজে না পেয়ে সবাই পালিয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান। তিনি প্রশাসনিক ভবন থেকে ছাত্রলীগের বহিরাগতদের বের করে গেটে তালা লাগিয়ে দেন। তার নির্দেশে পুলিশ ছাত্রলীগের তৈরিকৃত মঞ্চ এবং ভিসি’র কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনের আশপাশ থেকে লাঠি, ছোরা, কিরিচ, চাপাতি, লোহার রডসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেলা আড়াইটা থেকে ক্যাম্পাসে একদফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। পরে ক্যাম্পাসে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এডঃ রেজাউল করিম রাজু এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার মোজাম্মেল হক।
আন্দোলনকারীরা জানান, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী তারা গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় ক্যাম্পাসে এসে দেখতে পান ভিসি কার্যালয়ের সামনে দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চ বহিরাগত ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা দখল করে অস্ত্রশস্ত্র হাতে নিয়ে সেখানে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় তারা একাডেমিক ভবন-৩-এর সামনে অবস্থান নেয়। সকাল দশটার দিকে ৩০/৩৫ জনের বহিরাগত একটি দল সেখানে গিয়ে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে তাদের মাইক কেড়ে নেয় এবং তা ভাংচুর করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর পরিমল মজুমদার এবং শিক্ষক আজিজুর রহমানের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারপিট করতে থাকে। মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করো এসিড নিক্ষেপ করে। এতে সাথে সাথে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. মতিউর রহমান এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যান। দ্রুত তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এছাড়া, শিক্ষক ড. আরএম হাফিজুর রহমান সেলিম, গোলাম রব্বানী, আপেল মাহমুদ, আশরাফুল আলম, সানোয়ার সিরাজসহ আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। তাদের কারো কারো হাত ঝলসে গেছে এবং গায়ের জামা পুড়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই আহত হয়েছে। এসময় শিক্ষার্থীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা ছাড়া আমাদের পাশে কেউ নেই।
এদিকে, হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ড. মতিউর রহমানের চোখ এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এসিড লেগেছে এবং ড. ওয়াদুদের শুধু মুখ এবং চোখে এসিড লেগেছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, এসিড নিক্ষেপের সময় বহিরাগতদের মুখ মাফলার দিয়ে বাঁধা ছিল। তারা আরও জানান, ভিসি’র ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসের বাইরে দেশীয় অস্ত্র আর লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। তারা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসতে বাধা দেয়। ক্যাম্পাসের পার্শ¦বর্তী সর্দারপাড়া এলাকাতেও শিক্ষার্থীদের মারধর করে। এসময় আহত হয় ইতিহাস বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র নামজুল আলমসহ তার ৫ বন্ধু। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ক মোড়ের ২য় গেট দিয়ে শিক্ষার্থীরা আসতে চাইলে ছাত্রলীগের কর্মীরা বেশ ক’জন ছাত্রকে মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেয়। ছাত্রলীগ জয়বাংলা-জয়ঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে ভিসি সমর্থিত কর্মচারীদের সাথে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।
আন্দোলনকারী শিক্ষক ওমর ফারুক জানান, আমাদের গত কয়েকদিন থেকেই বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছিল। বিষয়টি আমরা রাত থেকেই প্রক্টরকে জানাতে চেষ্টা করছি। কিন্তু তাদের নম্বর বন্ধ ছিল।
শিক্ষক আশরাফুল আলম গতকালের ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর বহিরাগতদের দিয়ে হামলার নজির বিশ্বের কোথাও আছে কিনা আমাদের জানা নেই। ভিসির অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন করবো। আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণাকারী ট্রেজারার ড. মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষকদের উপর হামলা করা অযৌক্তিক। তবে তারা যে দাবিতে আন্দোলন করছে তা সময় দেয়া দরকার। ইচ্ছে করলেই পদত্যাগ করা যায় না।
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসে সভা, সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, অনশন কর্মসূচিসহ সকল ধরনের শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকা- নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অতীতে শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগে হামলা
কেবল গতকালই নয়, এর আগেই ছাত্রলীগ ক্যাডাররা লাঠি, হকিস্টিক, রড, রামদা, চাপাতিসহ দেশীয় ও বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ খাবার প্রদান করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে শিক্ষকদের কাছে অতিরিক্ত খাবার দাবি করলে শিক্ষকরা তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি রেজা সেকেন্দার হল প্রভোস্ট প্রফেসর আজিজুর রহমানসহ আবাসিক শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে। গত বছর ২ জানুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীরা বার্ষিক ভোজে নিম্নমানের খাবারের প্রতিবাদ করলে আয়োজক কমিটির সদস্য ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষিপ্ত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। একই সময় ভিসির বাসভবনে হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে ভিসির স্ত্রী ও সন্তান আহত হয়। এসময় ছাত্রলীগ কর্মীরা ভিসির বাসভবন, গার্ড রুম, ভিসির গাড়ি ভাংচুর করে। ১ সেপ্টেম্বর বুয়েটের ভিসি প্রফেসর এস এম নজরুল ইসলামের দুর্নীতির কারণে তার অপসারণের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ কর্মীরা ভাংচুর ও শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে পরবর্তীতে আবার শিক্ষকদের নামে মামলা করে। ১৯ নভেম্বর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনশন কর্মসূচিতে শিক্ষকদের উপর হামলা করে ইবি ছাত্রলীগ। এতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. ইয়াকুব আলীসহ প্রায় ৩৫ শিক্ষক আহত হয়। ২০১১ সালের ৯ আগস্ট বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শিক্ষকদের মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগ। গত বছর ২৯ এপ্রিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর শরীফ এনামুল কবিরের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষকদের উপর হামলা করে ছাত্রলীগ। গত বছর ১ মে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক মিন্টু আলী বিশ্বাসসহ ৪ জন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্লাসে উপস্থিতি না থেকেও উপস্থিতি দিতে বলে, না দিলে ক্লাস শিক্ষকের উপর হুমকি ও চড়াও হন। এছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন এক আলোচনা সভায় শিক্ষক ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের কথা বলায় ঐ শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে যান। বাংলা বিভাগের এক শিক্ষিকাসহ দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছিত যেন কোন বিষয় নয়।
No comments:
Post a Comment