কানাডায় বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্টদের ১৭% বেকার, পছন্দনীয় পেশায় মাত্র ১১%
বাংলাদেশী নতুন ইমিগ্র্যান্টদের ১৭% বেকার। ৩০% শুধু টিকে থাকার জন্য ভিন্ন পেশার চাকুরীর সাথে সংশ্লিষ্ট। ৩২% পড়াশোনা করছেন। ব্যবসা, পারিবার প্রতিপালনসহ অন্যান্য কাজের সাথে আছেন ২১%। সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় এমপি ও এমপিপি। বেসরকারি সংস্থা বেঙ্গলি ইনফরমেশন এন্ড এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস (বায়েস) টরন্টো পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য প্রকাশ পায়। গত ১২ জানুয়ারি শনিবার বাঙালি অধ্যুষিত ড্যানফোর্থ এলাকার একসেস পয়েন্টে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
বায়েসের সভাপতি মো. ইমাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় বিচেস ইস্ট ইয়র্কের এমপি মেথিউ ক্যালওয়ে, এমপিপি মাইকেল প্রু, বিসিএস এর প্রতিষ্ঠাতা মুশতাক আহমেদ, সাপ্তাহিক বাংলা মেইলের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি আবদুল হালিম মিয়া, নির্বাহী পরিচালক নাসিমা আখতার, টিভি ব্যক্তিত্ব ফুয়াদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি কাজী জহির উদ্দিন, চাকসুর সাবেক জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদসহ কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বায়েসের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম মোস্তফা। বৃহত্তর টরন্টো ও এর পাশের শহরে বসবাসরত ইমিগ্র্যান্টদের ওপর পরিচালিত এ গবেষণার উদ্দেশ্যে ছিল তাদের কর্ম, অতীত ও বর্তমান পেশা, সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির মাত্রা, সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা এবং উত্তরণের উপায় সম্পর্কে জানা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপি মেথিউ ক্যালওয়ে বলেন, বাঙালীদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আমারই। আমি এ ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ। এমপিপি মাইকেল প্রু গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যগুলো প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টে উত্থাপন ও সমাধানে সচেষ্ট হবেন বলে জানান।
বায়েস পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা যায়, ৭৯% উত্তরদাতা দেশে তাদের পেশাগত কর্মের সাথে জড়িত ছিলেন। ১৬% ছিলেন গৃহিনী। আর মাত্র ৫% ছিলেন শিক্ষার্থী। কিন্তু কানাডায় এসে অনেককেই তাদের পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন। ৩২% ইমিগ্র্যান্টই এখন শিক্ষার্থী, যাদের অনেকেই পছন্দনীয় চাকুরী না পেয়ে ঋণ নিয়ে আবার পড়াশোনায় জড়িত হয়েছেন। শিক্ষার্থী, গৃহিনী এবং বেকারদের একসাথে বিবেচনা করা হলে প্রকৃত বেকারত্বের হার দাঁড়ায় ৫৩%। কানাডায় মাত্র ১১% তাদের পছন্দনীয় পেশায় (শিক্ষক, ব্যাংকার, আইটি, প্রকৌশলী, এনজিও) কাজ করছেন। যদিও নতুন ইমিগ্র্যান্টদের ৯৬% এরই শিক্ষাগত যোগ্যতা গ্রাজুয়েট বা তদুর্ধে।
বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্টদের ৪১% এর আয় চাকুরী, ২৭% এর শিক্ষা ঋণ, ৭% আছেন সোস্যাল এসিসট্যান্সে, ১১% এর আয় ব্যবসা অথবা সঞ্চয় এবং ৪% চাকুরী বীমার ওপর নির্ভরশীল। কানাডায় কেমন লাগছে এর উত্তরে ৩৩% বলেছেন তারা খুব একটা সন্তুষ্টও না আবার অসস্তুষ্টও না। ৩০ শতাংশ বলেছেন তারা অসন্তুষ্ট। ২৩% বলেছেন তারা সন্তুষ্ট, ৮% বলেছেন তারা খুবই সন্তুষ্ট, অন্যদিকে ৬% এর মতে তারা খুবই অসস্তুষ্ট।
এই জরিপের মূল গবেষক ছিলেন গোলাম মোস্তফা। গবেষণা সমম্বয়কারী ছিলেন মো. ইমাম উদ্দিন। কে এম মবিদুর রহমান, দিলরুবা খানম ও ইসমত আরা মোস্তফা গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। নমুনায়নের ভিত্তিতে যারা কানাডার স্থায়ী বাসিন্দা এরূপ ১০০ জন বাংলাদেশী নতুন ইমিগ্র্যান্টের ওপর ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে গবেষণা জরিপটি পরিচালিত হয়। এর মধ্যে পুরুষ ৫৫ ও নারী ৪৫ জন । উত্তরদাতাদের বয়স ২৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে। সরাসরি ও টেলিফোনে উত্তরগুলো জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া ৬ জন মূখ্য তথ্যদাতার কাছ থেকে নতুন ইমিগ্র্যান্টদের চ্যালেঞ্জ ও তা উত্তরণের উপায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
ইমিগ্র্যান্টরা এসে যে সব সমস্যার সম্মুক্ষীন হন এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সময়মত সঠিক তথ্য না পাওয়া, ইংরেজী ভাষাগত সমস্যা, কানাডিয়ান অভিজ্ঞতার অভাব, টিকে থাকার জন্য যে কোনো চাকুরীতে প্রবেশ, শিক্ষাগত যোগ্যতার যথাযথ মুল্যায়নের অভাব প্রভৃতি।
গবেষণার সুপারিশে বলা হয়, ইমিগ্র্যান্ট হয়ে আসার আগে যথাযথ গবেষণা করে আসা, ইংরেজী ভাষায় যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন, নেটওয়ার্ক বাড়ানো, স্ব স্ব পেশায় বিভিন্ন ব্রিজিং প্রোগাম গুলোর সুবিধা গ্রহণ এবং স্বেচ্ছাসেবার সাথে জড়িত হয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন, যে কোনো বিষয়ে পড়ার আগে চাকুরীর বাজার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া ও যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া, সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ ইমিগ্র্যান্টদের সহায়তায় এগিয়ে আসা। সর্বোপরি বালাদেশ হাইকমিশনের টরন্টোতে সেটেলাইট অফিসের মাধ্যমে ইমিগ্র্যান্টদের তথ্য ও চাকুরী পেতে সহায়তা করা প্রভৃতি। গবেষণার বিস্তারিত প্রতিবেদনটি বায়েসের নিজস্ব www.bies-canada.org এ পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, বায়েস অন্টারিও মিনিস্ট্রি অব গর্ভনমেন্ট সার্ভিসেস এর অধীনে নিবন্ধনকৃত একটি স্বেচ্ছাসেবী অলাভজনক সংগঠন। কানাডায় বসবাসরত বাঙালী কমিউনিটির উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান এর অন্যতম লক্ষ্য।
No comments:
Post a Comment