উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে বিদেশ যাওয়ার আগে করণীয়
উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে পড়তে যেতে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও পূর্বপ্রস্তুতি। দরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ভবিষ্যতে কোথায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত রূপে দেখতে চাই, কোন ক্ষেত্রে নিজের পেশাজীবন গড়তে চাই এবং কীভাবে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাই—সেগুলো স্থির করতে হবে।পাশাপাশি ঠিক করতে হবে কোন দেশে পড়লে লক্ষ্যপূরণ সহজ হবে। তারপর চলতে থাকবে পছন্দের বিষয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খোঁজ। কোথায়, কোন বিষয়ে এবং কেন পড়তে চাই, সেগুলোর উত্তর মিলে গেলে আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করলে খুলতে হবে অ্যাকাউন্ট। দেখতে হবে কী কী শিক্ষাবৃত্তি পাওয়ার সুযোগ আছে সেখানে। এই পুরো ব্যাপারটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও জটিল। এর জন্য প্রয়োজন বাড়তি মনোযোগ ও সতর্কতা। এই দীর্ঘ সময়ে আবেদনকারীদের শেষ করে ফেলা দরকার প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো: টোয়েফল, আইইএলটিএস, জিআরই, জিম্যাটসহ অন্যান্য।
আইইএলটিএস:
অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অধিকাংশ দেশে ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস (ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম) গ্রহণ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টোয়েফলের সঙ্গে সঙ্গে আইইএলটিএস স্কোর গ্রহণ করে। আইইএলটিএসে মোট স্কোর ৯। দুই দিনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। প্রথম দিন চারটি মডিউলের মধ্যে রিডিং, লিসেনিং ও রাইটিং পরীক্ষা নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দিন ইংরেজি ভাষায় বিশেষজ্ঞ পরীক্ষকেরা গ্রহণ করেন স্পোকেন টেস্ট। পুরো পরীক্ষাটি ‘পেপার-বেসড’।
‘ব্রিটিশ কাউন্সিল আইইএলটিএস পরীক্ষা’ কমিটির প্রধান হারুন উর রশীদ জানান, আইইএলটিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার সুবিধার্থে অনেক ব্যবস্থা রয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিলে। প্রস্তুতিমূলক বই পাওয়া যাবে লাইব্রেরিতে। রয়েছে এক দিনের ওয়ার্কশপ এবং আড়াই মাসের প্রস্তুতি কোর্স। এমনকি নির্দিষ্ট মূল্যে প্রতিটি মডিউলের মডেল টেস্টও দেওয়া যাবে। এতে আপনি আপনার অবস্থান এবং আপনার সম্ভাব্য স্কোর আন্দাজ করতে পারবেন। ‘রোড টু আইইএলটিএস’ সেকশনে যে কেউ বিনা মূল্যে ১০ ঘণ্টার অনলাইন কোর্স এবং নিবন্ধন করা পরীক্ষার্থীরা ১২০ ঘণ্টার অনলাইন কোর্স করতে পারবেন। নিবন্ধন ফি ১১ হাজার ৯০০ টাকা।
টোয়েফল:
ইংরেজি ভাষায় পেশাদারি দক্ষতা যাচাইয়ে প্রয়োজন হয় টোয়েফল (টেস্ট অব ইংলিশ অ্যাজ আ ফরেন ল্যাংগুয়েজ)। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ অন্য উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আবেদনে প্রথম শর্ত টোয়েফলে নির্দিষ্ট স্কোর পেতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পছন্দের বিষয়ভেদে স্কোর করতে হয় সর্বমোট ১২০ নম্বরের মধ্যে। টোয়েফলে চারটি ভাগ থাকে: রিডিং, লিসেনিং, স্পিকিং ও রাইটিং। টোয়েফলে ১২০ স্কোরের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড মান ১০০-এর মধ্যে। অর্থাৎ ১০০ পেলে ভালো। এই নম্বরটি পেতে প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের কঠোর প্রস্তুতি। বাজারে অনেক বই আছে টোয়েফল প্রস্তুতির জন্য। সময় একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, যার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। তৈরি করতে হবে নিজের নির্মিত কৌশল। মডেল টেস্টগুলো যত দেওয়া যায় ততই ভালো। টোয়েফল নিবন্ধন ফি ১৬০ মার্কিন ডলার। নিবন্ধনের সময়ই পরীক্ষা কোথায় হবে তা জেনে নেওয়া ভালো। প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট- www.ets.org/toefl
জিআরই:
বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করতে উত্তর আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবশ্যক শর্ত জিআরই (গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশন)। ২০১১ সালের আগস্ট মাস থেকে বদলে গেছে জিআরই। নতুন পদ্ধতিতে জিআরইর স্কোর ৩৪০। ভার্বাল ও কোয়ান্টিটেটিভ সেকশনের স্কোরের ব্যাপ্তি ১৩০-১৭০।
‘অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং সেকশনে’ দুটি রচনা ‘ইস্যু ট্রাস্ক’ এবং ‘আর্গুমেন্ট টাস্ক’-এর জন্য স্কোর ০-৬।
ভার্বাল সেকশন দুটি, কোয়ান্টিটেটিভ দুটি সেকশন এবং একটি পরীক্ষামূলক সেকশন উত্তর দিতে হয়। পরীক্ষামূলক সেকশনটি ভার্বালও হতে পারে অথবা কোয়ান্টিটেটিভও হতে পারে। সেকশনগুলোতে প্রতিটি প্রশ্নের স্কোর সমান। প্রথম সেকশনগুলোতে সর্বোচ্চ সঠিক উত্তর দিলে ‘ডিফিকাল্টি লেভেল’ ভিত্তিতে পরবর্তী সেকশনগুলোতে উচ্চমাননির্ভর প্রশ্ন দেওয়া হয়। জিআরইর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি। প্রচুর বিদেশি পত্রিকা ও প্রবন্ধ পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে। নতুন জিআরই ‘ভোকাবুলারি’ নির্ভর না হলেও যত শব্দ জানা থাকে তত ভালো। সময় সম্পর্কে রাখতে হবে অতিরিক্ত খেয়াল। প্রচুর মডেল টেস্ট দিতে হবে এবং জিআরইভিত্তিক ব্লগ ও ওয়েবসাইটগুলোতে নিয়মিত হতে হবে। আমেরিকান সেন্টারে জিআরই ও জিম্যাটের নিত্যনতুন প্রস্তুতির বই ও মডেল টেস্ট দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
জিম্যাট:
ব্যবসায় প্রশাসনভিত্তিক অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং বিষয়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে স্নাতকোত্তর অথবা এমবিএ করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালগুলোতে প্রয়োজন হয় জিম্যাট (গ্র্যাজুয়েট ম্যানেজমেন্ট অ্যাডমিশন টেস্ট)। জিম্যাট পরীক্ষায় চারটি সেকশনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাই করা হয়। এগুলো হলো: ‘ভার্বাল’, ‘কোয়ান্টিটেটিভ’, সম্প্রতি চালু হওয়া ‘ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং ও ‘অ্যানলিটিক্যাল রাইটিং অ্যাসেসমেন্ট’। জিম্যাট স্কোরের ব্যাপ্তি ২০০ থেকে ৮০০। এখানে শেষের দুটি সেকশনের স্কোর অন্তর্ভুক্ত নয়। ‘ভার্বাল’ ও ‘কোয়ান্টিটেটিভ’ সেকশনের স্কোর শূন্য থেকে ৬০ পর্যন্ত। ধাপে ধাপে একেকটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানের মাধ্যমে স্কোর বাড়তে থাকে। পরীক্ষার্থীর প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক সমাধানের মধ্য দিয়ে ‘ডিফিকাল্টি লেভেল’ বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে স্কোর। ‘ইন্টিগ্রেটেড রিজনিং’-এর স্কোর ১-৮ এবং ‘অ্যানালিটিক্যাল রাইটিং অ্যাসেসমেন্ট’ ০-৬। এ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রচুর মডেল টেস্ট দেওয়া। বাজারে জিম্যাট প্রস্তুতির জন্য অনেক বই পাওয়া যায়। তবে জিআরই আর জিম্যাট দুটিই কম্পিউটার-নির্ভর। তাই ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগ নিয়মিত দেখে প্রস্তুত করে তুলতে হবে নিজেকে। নিবন্ধন ফি ২৫০ মার্কিন ডলার।
উপরের যে কোনো বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়ার আগে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্রহের প্রোগ্রামে পড়তে আবশ্যক স্কোর দেখে নিতে হবে। তারপর সেই স্কোরের লক্ষ্য নিয়ে কৌশল তৈরি করতে হবে। পরীক্ষার ‘ফরম্যাট’, প্রতি সেকশনে প্রশ্নের সংখ্যা, গঠন এবং সময় বুঝে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতির জন্য নিজের দক্ষতা অনুযায়ী সময় বেঁধে নিন। অধিকাংশ আবেদনকারী মনে করেন, আগেই নিবন্ধন করা ভালো। তাতে পড়ার জোর বাড়ে। নিয়মিত বিভিন্ন ব্লগ পড়ুন। যাতায়াত করুন আমেরিকান ইনফরমেশন সেন্টারসহ সহায়ক কেন্দ্রগুলোতে। ব্যবহার করুন তাদের পাঠাগার। এতে যাঁরা পরীক্ষা এরই মধ্যে দিয়ে ফেলেছেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভাববিনিময়ের সুযোগ ঘটবে। নতুন কী কী বই আসছে, তার খবরও পাওয়া যাবে সেখানে। দলীয়ভাবে পড়লে ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সুতরাং আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই এই পরীক্ষাগুলো দিয়ে দিন। কারণ এগুলোর স্কোরের ওপর নির্ভর করে আপনার পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সফল হওয়ার সম্ভাবনা।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ:
আমেরিকান সেন্টার, টেলিফোন: ৮৮৩৭১৫০-৪, ওয়েবসাইট: www.educationusa.state.gov
ব্রিটিশ কাউন্সিল, টেলিফোন: ৮৬১৮৯০৫, ওয়েবসাইট: www.britishcouncil.org/ bangladesh
No comments:
Post a Comment