ধর্ষণের পরিণাম
খান মহিউদ্দীন হারুণী
ধর্ষণ নি:সন্দেহে এক জঘন্যতম ভয়াবহ অপরাধমূলক
পাপকাজ। যে কাজ করে ধর্ষণকারী নিজেকে, সমাজকে, রাষ্ট্রকে এমনকি গোটা
বিশ্বকেও কলুষিত করে। এটা এমন এক পাপ কাজ যার কোনো ক্ষমা প্রায়শ্চিত্ত
করার সুযোগ নেই। কেউ যদি আল্লাহর সাথে শরিক করে কিংবা মারাত্মক কবিরা বা
ছগিরা গুনাহ করে এবং পরে তা বুঝতে পেরে খালেছ নিয়তে তওবা করে তবে আল্লাহ
চাহেত বান্দার আর্তনাদের কারণে সেই গুনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু
ধর্ষণ এতই মারাত্মক অপরাধ যে এর চিন্তা করাও মারাত্মক গুনাহের কাজ। রাসূলে
পাক সা: এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে কেউ কুদৃষ্টিতে তাকাল তা সে চোখের যেনা করল
আর যে কেউ অন্তরে কল্পনা করল তা সে অন্তরের যেনা করল’। কাজেই কাউকে ধর্ষণ
করা দূরে থাক শুধু চোখে বা অন্তরে এর কল্পনা করাও মহা পাপ। আল্লাহ তায়ালা
সূরা বনী ইসরাইলের মধ্যে ঘোষণা করেছেনÑ ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো
না। ওটা একটা অশ্লীল কাজ এবং খারাপ পন্থা। আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ঘোষণা
করেনÑ‘ব্যভিচারের সাজা আখিরাতে দ্বিগুণ হবে।’ (সূরা ফুরকান ৬৮)। আখিরাতে এর
শাস্তি দ্বিগুণ হলে ইহকালে যেনাকারীর শাস্তি কিরূপ হতে পারে? তাদের
শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ২ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেনÑ
‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী প্রত্যেককে ১০০ চাবুক মারবে। আল্লাহর বিধান পালনে
তাদের প্রতি যেন দয়াপরবশ না হও। এ হচ্ছে শুধু অবিবাহিতদের জন্য।
বিবাহিতদের জন্য অথবা জীবনে একবার হলেও বিয়েবন্ধনে আবন্ধ হয়েছিল তাদের
একমাত্র শাস্তি হচ্ছে স্কন্ধ পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে পাথর নিক্ষেপে হত্যা
করা। এটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে তাদের শাস্তি প্রদানে কোনোরূপ
কার্পণ্য, শিথিলতা বা দয়া দেখানো যাবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা তাদের
শাস্তি দিয়েই দুনিয়ায় শান্তি কায়েম করতে চান। আর এটা বাস্তব যে এরূপ
শাস্তি কল্যাণেরই পরিচায়ক। স্বয়ং রাসূলে পাক সা:-এর কাছে এসে এক নারী
জেনা করার কথা জানাল। রাসূলে পাক সা: তাকে বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত সময়
দিলেন। বাচ্চা প্রসব হলে দুধ পান করা পর্যন্ত তাকে আবার সময় দিলেন। এরপর
নারীটি এলে রাসূলে পাক সা: তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ দিলেন অথচ ওই
নারীটিকে আল্লাহ তায়ালা এমনভাবে ক্ষমা করেছিলেন যে স্বয়ং হুজুরে পাক সা:
বলেন, যদি তার তওবাকে আমার সব উম্মতের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয় তবে তা
তার ৭০ ভাগের এক ভাগেরও সমান হবে না। আল্লাহ তায়ালা তাকে এরূপ ক্ষমা করার
পরেও দুনিয়ার বিচার থেকে তাকে রেহাই দেয়া হয়নি। এই একটি ঘটনা থেকেই বুঝা
যায় তওবা করে কান্নাকাটি করলেও দুনিয়ায় এর শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে।
স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পাক কুরআনে এই ধর্ষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেন যে,
‘মুমিনদের জন্য এটা সম্পূর্ণ হারাম।’ (সূরা নূর-৩) একই সূরার ২৫-২৬ নম্বর
আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আবার বলেনÑ ‘নোংরা নারী নোংরা নরের জন্য এবং নোংরা
নর নোংরা নারীর জন্য’। উপরিউক্ত আয়াতগুলো দ্বারা এটা স্পষ্ট হয়েছে যে,
কোনো ঈমানদার মুমিন ও মুত্তাকি বান্দার জন্য তাদের সংস্পর্শ বা বিবাহ
সম্পূর্ণই হারাম। এটা এ কারণে যে স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামিন যেখানে
জেনাকারীদের নোংরা বলেছেন সেখানে এই নোংরা জিনিস থেকে দুর্গন্ধ ছাড়া আর
কিই বা ছাড়াবে। আর এটা স্পষ্ট যে নোংরা যেকোনো জিনিস হারাম। শুধু এ নয়
রাসূলে পাক সা: তাদের শাস্তির ব্যাপারে বিশদভাবে বলেছেন যে, ‘হে মুমিনগণ!
তোমরা ব্যভিচার বর্জন কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি
ইহকালে ও তিনটি পরকালে। যে তিনটি শাস্তি ইহকালে তা হলো, তার চেহারার
ঔজ্জল্য নষ্ট হয়ে যায়। তার আয়ুষ্কাল সঙ্কীর্ণ হয়ে যায় এবং তার
দারিদ্র্য চিরস্থায়ী হয়। আর যে তিনটি আখিরাতে তা হলো, সে আল্লাহর
অসন্তোষ, কঠিন হিসাব ও দোযখের আজাব ভোগ করবে। জেনাকারী ব্যক্তি ঈমানদার
হলেও আসলে তাকে ঈমানদার বলা চলে না। একারণে যে পাক-পবিত্রতা লজ্জাশীলতা
ইতাদি ঈমানের ৭০টি শাখার অন্যতম। আর জেনাকারী ব্যক্তি পাকপবিত্রতা দূরে থাক
নিজের লজ্জাশীলতা বা সম্ভ্রমকেও সে রক্ষা করতে পারে না। আর লজ্জা না থাকা
মানে হলো শয়তানের আলামত, কুরআন ও হাদিসে আরো অসংখ্য জায়গায় ধর্ষণকারীদের
ব্যাপারে প্রচণ্ড হুঁশিয়ারি ও শাস্তির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এটা হত্যা
অপেক্ষাও জঘন্য। কেউ কাউকে হত্যা করলে রক্তপণ দিয়ে হলেও মুক্তি পেতে পারে
কিন্তু ধর্ষণকারী নিজেকে কোনো প্রকারেই মুক্ত করতে পারে না। সে নিজের
বিবেকের কাছেও বারবার দংশিত হয়। সমাজ, রাষ্ট্র বা পরিবার কেউ তাকে ক্ষমা
করে না। অতএব প্রত্যেকের উচিত এ মারাত্মক কবিরা গুনাহ থেকে অবশ্যই বেঁচে
থাকা।
No comments:
Post a Comment