সমগ্র বিশ্বে কাজের অভিজ্ঞতা এক ধরনের গৌরবের অনুভূতির সৃষ্টি করেছে এবং
তা দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে পেশাদারিত্ব সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে।
স্কোয়াড্রন লিডার সদরুল আহমেদ খান যুদ্ধ বিধ্বস্ত আইভরি কোস্টে
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী হিসাবে কাজ করতে পেরে ‘গর্বিত’, যেখানে সাধারন মানুষ
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের মুনামি বলে ডাকে , যার মানে হল
“আমার বন্ধু”।
তার বাংলাদেশী সহ-সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মতো, যারা শান্তি রক্ষী
হিসাবে কর্মরত আছেন, খান বলেন, তিনি তার সাধ্যমত চেষ্টা করেন ফ্রান্সের
সাবেক এই উপনিবেশ, যা জাতিগত সংঘাতের কারনে কয়েক দশক ধরে অস্থির হয়ে আছে,
সেখানকার বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করতে।
“মানুষ, লিঙ্গ বা বয়স ভেদে, আমাদের সেবাদানকারী গাড়ির পিছনে ছুটতে থাকে
যখন আমরা অসামরিক এলাকাগুলিতে ঘুরে বেড়াই। তারা আমাদের মুনামি বলে ডাকে এবং
খাবার, ঔষধ পত্র এবং অন্যান্য সহায়তা চায়”, ২০০৭ সালে সামরিক পুলিশ হিসাবে
তার কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে খান খবরকে বলছিলেন।
“এবং আমাদের সদস্যরা তাদের সাধ্যমত তাদেরকে সব ধরনের সহায়তা দেয়”।
শান্তিরক্ষীরা পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে এবং দেশের গণতন্ত্রায়নে সাহায্য করছে
১৯৯০ সালের প্রথম থেকে, যথাক্রমে পাকিস্তান এবং ভারতকে পিছনে ফেলে ইউএন
শান্তি রক্ষার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদানকারীর ভূমিকা পালন করে
আসছে। তাদের অর্থনৈতিক অবদানের সাথে সাথে শান্তিরক্ষার প্রচেষ্টা শক্তিশালী
সেনাবাহিনীকে দেশের স্থিতির ক্ষেত্রে আরো আন্তরিক করছে, এমনটাই বলেন
নীতিনির্ধারক ও সাবেক সেনাবাহিনীর অফিসাররা।
“শান্তিরক্ষার কার্যক্রমগুলি অবশ্যই সেনাবাহিনীকে আরো পেশাদারী করেছে।
এর জন্মলগ্ন থেকেই, সামরিক অভ্যূত্থান এবং অরাজকতা তৈরিতে সেনাবাহিনীকে
জড়িত করার প্রয়াস ছিল”, খবরকে সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান লেফট্যানেন্ট
জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন।
“বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনীর সাথে মেশা এবং জাতিসংঘের আইনকানুনের মধ্যে
থেকে কাজ করার ফলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এখন আর অভ্যূত্থান আর পাল্টা
অভ্যূত্থান করতে আগ্রহী নয়”, তিনি বলেন। “শান্তিরক্ষার কার্যক্রম বাংলাদেশ
এবং সেনাবাহিনী উভয়কেই সাহায্য করেছে”।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ একমত পোষন করেন।
“ইউএন-এর আমলাতন্ত্রের সাথে কাজ করার মাধ্যমে সেনাবাহিনী হয়তোবা
গণতন্ত্র রক্ষার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি সৃষ্টির বিষয়টির সাথে পরিচিত
হয়েছে। এই পরিচিতি দেশের জন্য বিশাল একটি গুরুত্ব বহন করবে”, তিনি উল্লেখ
করেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আবদুল মোমেন গতমাসে বলেছেন যে
শান্তিরক্ষীরা গত তিন বছরে দেশের জন্য ৭৫বিলিয়ন টাকা (৯১৭ মিলিয়ন ডলার)
এনেছে।
খান শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ করেন আইভরিকোস্টে সাধারন মানুষ এবং
নিরস্ত্র মানুষদের রক্ষা করার জন্য, যে দেশটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে
এখন দুইভাগে বিভক্ত, বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তরাঞ্চল এবং সরকার চালিত
দক্ষিন।
তিনি বলেন, শান্তিরক্ষীদের উত্তর ও দক্ষিনের মধ্যস্থিত নিরাপদ অঞ্চলে
জাতিসংঘ প্রনীত বিদ্রোহী ও সরকারী বাহিনীর মধ্যে শান্তিচুক্তি কার্যকর করার
বিষয়ের উপর নিয়োজিত করা হয় নজর রাখার জন্য।
“বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সবসময়, যে সব মানুষ আমাদের কাছে তাদের
প্রয়োজনে আসত , তাদের প্রতি বন্ধুসুলভ। আমি সত্যিই খুবই গর্বিত। অনেক দেশ
বাংলাদেশ সম্বন্ধে জানতে পারছে শান্তিরক্ষার কার্যক্রমে আমাদের আন্তরিক
অবদানের কারনে”, বলেন আবিদজানে কর্মরত ব্লু-হেলমেট সেনার মর্যাদা পাওয়া
সেনাবাহিনীর অফিসার।
“আমরা, শান্তিরক্ষীরা, বিদ্রোহী বাহিনীর দক্ষিনে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কাজ
করতাম এবং সরকারী বাহিনীর ক্ষেত্রেও একই কাজ করতাম। প্রায়ই তারা একে অন্যের
এলাকায় ঢুকে মানুষজনদের হত্যা করতো”, স্কোয়াড্রন লিডার আশেক আহমেদ
শাহরিয়ার, যিনি ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে শান্তিরক্ষী হিসাবে কাজ করেন,
তিনি বলছিলেন।
“শান্তিরক্ষার কার্যক্রমগুলি সশস্ত্র লড়াই থেকে অনেক নিরীহ সাধারন
মানুষের জীবন রক্ষা করতে সহায়তা করেছে”, নিরস্ত্র করার কার্যক্রমে তারাও
স্থানীয় মানুষের সাথে কাজ করেছে, একথা যোগ করে বলেন তিনি।
বিশ্বব্যাপী সব মিলিয়ে ১০,০০০ এরও বেশী বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী ৪৫টি
কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ
হিসেবে পরিচিত।
শাহরিয়ার বলেন, শান্তিরক্ষীরা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে বেতন ও খাদ্য
ভাতা ছাড়াও মাসিক ১৩০০ ডলার পেয়ে থাকে। শান্তিরক্ষামূলক কর্মকাণ্ড দ্বারা
অর্জিত অর্থ দেশের জন্য যেন এক ধরনের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে, যেখানে ১৬ কোটি
মানুষের বাস্তব সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচির কোন স্থান নেই।
জামিল ডি আহসান, যিনি একজন সাবেক মেজর জেনারেল এবং লিবিয়ার সাবেক
রাষ্ট্রদূত স্বীকার করে বলেন, শান্তিরক্ষার কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী
বাংলাদেশকে একটি শান্তিপ্রিয় দেশ হিসাবে পরিচিত করেছে।
আহসান বলেন, “ শুরুতে, আমরা শান্তিরক্ষা অভিযানের জন্য আমাদের সৈন্য
পাঠানোর বিষয়ে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম, এই ভয়ও কাজ করছিলো যে তারা যখন
ফিরে আসবে তখন বাহিনীতে যোগ দেয়ার পরিবর্তে ব্যবসায় জড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু
তারা সত্যিই পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে। ”
তিনি আরও বলেন, “ এই পারিশ্রমিক তাদের সামাজিক নিরাপত্তা তৈরি করে দিয়েছে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইউএন ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক সাইদা মুনা
তাসনিম, খবর কে বলেন যে, ঢাকা শুধুমাত্র টাকার জন্য সৈন্য পাঠিয়ে অবদান
রাখছে না।
তাসনিম বলেন, “আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং শান্তি-কেন্দ্রিক
পররাষ্ট্র নীতির দরুন, আমরা শান্তিরক্ষা এবং শান্তি গঠনে আমাদের সৈন্যদের
মাধ্যমে সহযোগিতা করছি।”