Tuesday, November 27, 2012

পরিবেশদূষক কাতারে শুরু হলো বিশ্ব সম্মেলন


সমাজ জীবন

পরিবেশদূষক কাতারে শুরু হলো বিশ্ব সম্মেলন

পরিবেশ দূষণের জন্য বরাবরই সমালোচিত হতে হয় দেশটিকে৷ সেই কাতারে শুরু হয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে বিশ্ব সম্মেলন৷ এ উপলক্ষে দোহায় জড়ো হয়েছেন প্রায় দু‘শ দেশের প্রতিনিধি৷
যেসব দেশের বাতাসে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড ছড়ায় কাতার তাদের অন্যতম৷ দেশটির আয়ের প্রধান উৎস অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস৷ গ্রীষ্মে সেখানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছাড়িয়ে যায়৷ ফলে প্রতিটি ঘর, অফিস, কল-কারখানায় এয়ার কন্ডিশনার এবং রেফ্রিজারেটর রাখতেই হয়৷ এসব তথ্যই বলে দিচ্ছে, কাতার প্রাকৃতিক কারণে প্রতি মুহূর্তে পরিবেশ দূষণে ভূমিকা রাখছে, যতটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠার কোনো উদ্যোগ এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি দেশটিতে৷
এ সব কারণে দোহার পরিবেশ বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজক হওয়াকে বাঁকা চোখে দেখেছেন অনেকেই, এখনো দেখছেন৷ কিন্তু বাস্তবতা হলো, গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানেই ঠিক হয়ে যায় পরের পর্বের, অর্থাৎ এবারের আয়োজক হবে দোহা৷ দক্ষিণ কোরিয়াও চেয়েছিল আয়োজক হতে৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সৌলকে হারিয়ে কাতারের রাজধানীই পেয়ে যায় এ সুযোগ৷ সোমবার শুরু হয়েছে এ সম্মেলন, চলবে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত৷
দোহা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি ছবি
সম্মেলন আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার পর একটা জায়গায় পরিবর্তন এসেছে ঠিকই কাতারে৷ পরিবেশ বিষয়ক খবর গুরুত্ব পাচ্ছে সে দেশে৷ ‘‘বাইসাইকেল চালকদের দেশ হতে চায় কাতার '', ‘‘কংগ্রেস সেন্টার চলছে সৌর শক্তিতে '' – এমন শিরোনাম পড়ে খুশি হতে পারছেন পরিবেশবাদীরা৷ দেশটিতে এখনো সেই অর্থে কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই৷ শহরে বাসে যাতায়াতের কথা শুধু স্বপ্নেই ভাবা যায়৷ সে দেশের অলি-গলিতে সাইকেল দেখা যাবে শত শত – উষ্ণায়নের আতঙ্ক ক্রমশ বড় হয়ে ওঠার এ সময়ে এমন সুস্বপ্নে কে না খুশি হবেন, বলুন!
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যে এতটা আশাপ্রদ নয় সেটা মনে করিয়ে দিলেন জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্স-এর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গিডো স্টাইনব্যার্গ৷ তিনি জানালেন, পরিবেশ বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজক হলেও কাতারের প্রচার মাধ্যম এখনো এ বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি৷ বড় বড় শিরোনামের যত খবর তার সবই শোভা পাচ্ছে শুধু সম্মেলন আয়োজকদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে!
গিডো স্টাইনব্যার্গ খুব হতাশা নিয়েই লক্ষ্য করছেন, ‘‘কাতারের রাজনীতিতে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়টির কোনো ভূমিকাই নেই৷'' ওয়ায়েল হমাইদানও তাঁর সঙ্গে একমত৷ লেবাননের ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সিএএন-এর পরিচালক হমাইদান জানালেন, এখন তো তবু কেউ কেউ একটু ভাবছেন, কিন্তু ২০১২-র এই বিশ্ব সম্মেলনের আয়োজক হওয়ার কথা ভাবার আগে পরিবেশ নিয়ে কাতারের রাজনীতিবিদ বা সাধারণ মানুষ বিন্দুমাত্রও মাথা ঘামাননি৷
তাই বলে সম্মেলন শুরু হয়ে যাবার পরও কি সারা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা একটি বিষয়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা সম্ভব বা উচিত? উষ্ণায়ন কীভাবে কমানো যায়, দরিদ্র দেশগুলোকে কীভাবে এর সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী করে তোলা যায়, কার্বন নিঃসরণের ক্ষতি ধনী ও দরিদ্র দেশগুলো কীভাবে ভাগাভাগি করে নিতে পারে, ২০১৫ সাল থেকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে নতুন চুক্তি কার্যকর করা যায় কিনা – এ সবের তো মীমাংসা হওয়া জরুরি৷
ইতিবাচক পরিবর্তন কাতারের জন্যও কিন্তু সুফল বয়ে আনবে৷ দেশটি যে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করে- এই তথ্য মনে করিয়ে দিয়ে হমাইদান বললেন, ‘‘পরিবেশ সংরক্ষণে কঠিন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলে কয়লার ব্যবহার কমবে আর গ্যাসের ব্যবহার বাড়বে বলে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে৷ কয়লার চেয়ে প্রাকৃতিক গ্যাসে তো ৪০ ভাগ কার্বন কম থাকে, সুতরাং এটা হবেই৷''

No comments:

Post a Comment