জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা না করা নিয়ে বিতর্ক
সর্বশেষ আপডেট রবিবার, 25 নভেম্বর, 2012 13:16 GMT 19:16 বাংলাদেশ সময়
বাংলাদেশের খাদ্যমন্ত্রী ড.
আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পুলিশের সাথে যদি জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের
সহিংসতা অব্যাহত থাকে তাহলে তাদেরকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে। ঢাকায়
বিবিসির ‘বাংলাদেশ সংলাপে’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা
উচিত কি না সেটি নিয়ে শনিবার বিবিসির বাংলাদেশ সংলাপের দ্বিতীয় অনুষ্ঠানে
তীব্র বিতর্ক হয়।আব্দুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী
"যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশে হবেই। তারা যদি এটাকে মেনে না নেয় এবং এই পথে যদি তারা চলতে থাকে তাহলে অবশ্যই জাতিকে সেটি বিবেচনা করতে হবে এবং এই ধরণের রাজনৈতিক দল আমাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।"
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সম্প্রতি পুলিশের সাথে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছে এমন প্রেক্ষাপটে দলটিকে নিষিদ্ধ করা উচিত কি না সে নিয়ে প্রশ্ন করেন বাংলাদেশ সংলাপে আসা একজন দর্শক। মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান বলেন, তিনি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নন। সেই সাথে তিনি বলেন, ''অপরাধী যারা তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যদি কেউ অপরাধ করে থাকেন, আইন শৃঙ্খলার বাইরে যেয়ে থাকেন, দেশের আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে থাকেন, তার বিচার অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী হতে হবে।''
একই ভাবে কোন দলকে নিষিদ্ধ না করার পক্ষে মত দিলেন কাবেরী গায়েন। তিনি মনে করেন, নিষিদ্ধ করা হলে গোপন সংগঠন হিসেবে তাদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
তিনি বলেন, ''এসব দল দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় পেয়েছে, তাদের শক্তি-সমর্থ অর্জিত হয়েছে, এখন যদি তাদের নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে গোপনে তারা কি কাজ করবে, সেটা পর্যন্ত জানা যাবে না।''
তবে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করা বা না করা প্রসঙ্গে দর্শকদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য রয়েছে। একজন দর্শক মন্তব্য করেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা উচিত।
ড. আব্দুল মঈন খান
"দল নিষিদ্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে- এটা কোন কথা নয়। এখানে বড় প্রশ্ন হচ্ছে গণতন্ত্রকে প্রবাহমান রাখতে হলে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে"
তবে আরেকজন দর্শক বলেন, বর্তমান সরকারের সময় জামায়াতে ইসলামী তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা পায়নি বলেই তারা সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ''বর্তমান সরকারের শুরু থেকে জামায়াতে ইসলামীকে কোন ধরনের মিছিল মিটিং করতে দেয়া হয়নি। আমার মনে হয় জামায়াতকে অন্য দশটি রাজনৈতিক দলের মতোই বিবেচনা করা উচিত।''
অনুষ্ঠানে আরেকজন প্যানেল সদস্য বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন খান বর্তমান সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর, তাঁর ভাষায়, অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথে জামায়াতে ইসলামীর একটি তুলনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে কোন একটি দলকে নিষিদ্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না।
জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করছে এমন অভিযোগ এনে বাংলাদেশ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দলটি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সীমা অতিক্রম করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দলটিকে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মি. রাজ্জাক বলেন, ''যারা পুলিশ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অর্থাৎ যে বাহিনী দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে তাদের ওপর আক্রমণ করছে। এই দলকে যারা প্রশ্রয় দেয়, অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে আমরা তাদের নিষিদ্ধ করব কি করবো না।''
আদিলুর রহমান খান
"অপরাধী যারা তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যদি কেউ অপরাধ করে থাকেন, আইন শৃঙ্খলার বাইরে যেয়ে থাকেন, দেশের আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে থাকেন, তার বিচার অবশ্যই দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী হতে হবে।"
বাংলাদেশ সংলাপে এ ছাড়াও আরও ক'টি সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা (টিআইবি) সংসদ সদস্যদের কর্মকান্ড নিয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছে সে প্রসঙ্গ।
টিআইবি’র প্রতিবেদনের গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কাবেরী গায়েন। তিনি মনে করেন, গবেষণা প্রতিবেদনটি যে ৬০০ মানুষের সাথে কথা বলে প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের বাছাই করার প্রক্রিয়া পরিস্কার নয়। তবে একই সাথে তিনি এ গবেষণার সুত্র ধরে টিআইবিকে বন্ধ করে দেয়ার যে দাবি উঠেছে সেটিকে সমর্থন করেন না বলে জানালেন।
আদিলুর রহমান খান যথেষ্ঠ তথ্য উপাত্ত না নিয়েই রাজনীতিবিদদের ঢালাওভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার পক্ষে নন। তবে তিনি মনে করেন, টিআইবির রিপোর্টটি আরো বেশি যুক্তিগ্রাহ্য করা যেত।
এসময় এক দর্শক মন্তব্য করেন, টিআইবি বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, বাংলাদেশের জাতীয় নেতৃত্বকে কলঙ্কিত করতে চেষ্টা করছে এবং এর প্রতিবাদ করা উচিত। তবে অন্য একজন দর্শক জানান, সংসদ সদস্যদের কাজ লুকিয়ে রাখার জিনিস নয় এবং টিআইবির রিপোর্টকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে নেয়ার আহ্বান জানান।
ড. কাবেরী গায়েন
"এসব দল দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় পেয়েছে, তাদের শক্তি-সমর্থ অর্জিত হয়েছে, এখন যদি তাদের নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে গোপনে তারা কি কাজ করবে, সেটা পর্যন্ত জানা যাবে না"
এসময় সংলাপে উপস্থিত টিআইবির গবেষণা বিভাগের পরিচালক তাদের গবেষণার নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরে বলেন, তাদের এ গবেষণার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় তিন বছরের প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়েও তারা কাজ করেছেন এবং সেগুলো মাঠ পর্যায়েও যাচাই বাছাই করা হয়েছে।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করার পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে মত দিয়েছে, সে প্রসঙ্গেও অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়। দর্শক জানতে চান, এসব মামলা প্রত্যাহারেও কি রাজনৈতিক বিবেচনাই অগ্রাধিকার পাবে কি না?
খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমনটি হবে না বলে জানান। কাবেরী গায়েন বলেন, এমন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা থাকা উচিত হবে না। বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন খান বলেন, বর্তমান সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত ৭৫০০ মামলা প্রত্যাহার করেছে যার মধ্যে বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলার সংখ্যা মাত্র তিনটি। মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছ থেকে এধরণের ক্ষমতা প্রত্যাহার করা হলে কমিশনটি ঢাল তলোয়ার বিহীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।
বার্মার রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে পরের প্রশ্ন করেন একজন নারী দর্শক। তিনি জানতে চান এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? এ বিষয়টির আন্তর্জাতিক সমাধান হওয়া উচিত বলে মনে করেন কাবেরী গায়েন। অন্যদিকে মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশের উচিত আগে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া তারপর বিষয়টির আন্তর্জাতিক সমাধান খোঁজা। তাঁর সাথে একমত পোষন করেন বিএনপি নেতা মইন খান।
তবে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে যারা এ বিষয়ে মত দেয়ার সুযোগ পান তাঁরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বিষয়টি নিয়ে বার্মা সরকারের ওপর চাপ দেয়া। খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, ইতোমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ''এখন আবার যদি তাদের আশ্রয় দেয়া হয় তাহলে যে সমস্যা সৃষ্টি হবে তা সামলানোর সংগতি বাংলাদেশের নেই।''
এ ছাড়া ক'দিন আগে স্শস্ত্র বাহিনী দিবসের এক অনুষ্ঠানে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার কথা বলা উচিত ছিল বলে অনুষ্ঠানের উপস্থিত বেশিভাগ দর্শক মনে করেন।
No comments:
Post a Comment