মনটেক সিং আহ্লুওয়ালিয়া
বাংলাদেশ
ভারতের ঘনিষ্ঠ ও সম্মানিত প্রতিবেশী। আমাদের রয়েছে শত শত বছরের অভিন্ন
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামে
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি আমরা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের
সময় বাংলাদেশের জনগণের আত্মত্যাগের সঙ্গী হয়েছি। তার পর থেকে সব ক্ষেত্রে
আমরা বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নতি ও প্রগতি লক্ষ করে এসেছি।
গত ৪০ বছরে বাংলাদেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ বহুদলীয় গণতন্ত্রকে আলিঙ্গন করেছে, একটি শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম গড়ে তুলেছে, প্রসারিত করেছে উৎপাদনের নানা ক্ষেত্র, দৃঢ় করেছে তাদের অর্থনীতির ভিত্তি। অনেক দেশের সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বরে।
গত দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বার্ষিক ৬ শতাংশের ওপরে বাড়তে থাকায় দেশটি এ অঞ্চলের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে দেশটি লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। বর্তমানে ৩৩ মিলিয়ন টনের বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন করে এ দেশ কৃষিক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে এগিয়ে চলেছে। বস্ত্র খাতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে অন্যতম প্রধান তৈরি পোশাক নির্মাতা দেশে পরিণত হয়েছে। দেশটি তার চামড়া, সিরামিকস, পাট, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সামুদ্রিক খাদ্যশিল্পকে আধুনিকায়ন করেছে। জাহাজ নির্মাণের মতো নিত্যনতুন শিল্প খাত গড়ে উঠতে শুরু করেছে। দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এ দেশের ব্যাংকিং ও সেবা খাত।
তবে সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ সামাজিক ক্ষেত্রে সারা দুনিয়ার সামনে তার সাফল্যও তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা একবাক্যে স্বীকার করেন যে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, অপুষ্টি দূরীকরণ, উর্বরতার হার, জন্মনিরোধক ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণের মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্যোগ ছিল ব্যাপকভাবে পরিবর্তনমুখী। এটা এখন স্পষ্ট যে, এসব বহু ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ভারতের বহু রাজ্যের তুলনায় ঢের বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০২১ সালের জন্য নির্ধারিত তার স্ব-আরোপিত লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে চলেছে।
ভারতের মতো বাংলাদেশেরও রয়েছে তরুণ জনগোষ্ঠীর সুবিধা। এরা একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্ম, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এরা রূপ দিতে তৈরি। এই গোষ্ঠী দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জোরালো প্রাণশক্তির প্রতিনিধিত্ব করছে। এরা অনেক বেশি বৈশ্বিক, উচ্চশিক্ষিত এবং দেশের অগ্রগতিতে এদের স্বার্থ রয়েছে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান একে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। উপমহাদেশে উৎপাদন ও যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখার এবং বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর নৈকট্য থেকে এর লাভবান হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশকে বাস্তব সম্ভাবনা অর্জনে সক্ষম করে তুলতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। গত বছর আমরা ২৫টি ট্যারিফ লাইন বাদে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণচুক্তি বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছি, সীমান্ত-সংক্রান্ত বাকি বিষয়গুলো সমাধানের লক্ষ্যে ল্যান্ড বাউন্ডারি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছি। আমরা বিভিন্ন বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ সম্প্রসারণ করেছি। আমরা স্বাস্থ্য, গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতের মতো ক্ষেত্রগুলোয়ও সহযোগিতা বাড়াচ্ছি।
বাংলাদেশ ভারতের মতোই দারিদ্র্য দূরীকরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর ভূমি ও জলসম্পদ সীমিত। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে রয়েছে দেশটি। একই অঞ্চলের পরস্পরের সাফল্যের ভেতরে দেশ হিসেবে আমাদের স্বার্থও জড়িত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে অংশ নিতে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ। ভারত বাংলাদেশের উন্নয়ন উদ্যোগেও সহযোগিতা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কাজটি আমরা দ্বিপক্ষীয়ভাবে এবং একই সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক ভিত্তিতেও করব। এই সমগ্র অঞ্চলের স্বার্থেই এখন একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রয়োজন।
ড. মনটেক সিং আহ্লুওয়ালিয়া: ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান।
গত ৪০ বছরে বাংলাদেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণ বহুদলীয় গণতন্ত্রকে আলিঙ্গন করেছে, একটি শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম গড়ে তুলেছে, প্রসারিত করেছে উৎপাদনের নানা ক্ষেত্র, দৃঢ় করেছে তাদের অর্থনীতির ভিত্তি। অনেক দেশের সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বরে।
গত দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বার্ষিক ৬ শতাংশের ওপরে বাড়তে থাকায় দেশটি এ অঞ্চলের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকে দেশটি লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। বর্তমানে ৩৩ মিলিয়ন টনের বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন করে এ দেশ কৃষিক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে এগিয়ে চলেছে। বস্ত্র খাতে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে অন্যতম প্রধান তৈরি পোশাক নির্মাতা দেশে পরিণত হয়েছে। দেশটি তার চামড়া, সিরামিকস, পাট, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সামুদ্রিক খাদ্যশিল্পকে আধুনিকায়ন করেছে। জাহাজ নির্মাণের মতো নিত্যনতুন শিল্প খাত গড়ে উঠতে শুরু করেছে। দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে এ দেশের ব্যাংকিং ও সেবা খাত।
তবে সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ সামাজিক ক্ষেত্রে সারা দুনিয়ার সামনে তার সাফল্যও তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা একবাক্যে স্বীকার করেন যে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, অপুষ্টি দূরীকরণ, উর্বরতার হার, জন্মনিরোধক ব্যবহারের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণের মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্যোগ ছিল ব্যাপকভাবে পরিবর্তনমুখী। এটা এখন স্পষ্ট যে, এসব বহু ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ভারতের বহু রাজ্যের তুলনায় ঢের বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০২১ সালের জন্য নির্ধারিত তার স্ব-আরোপিত লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে চলেছে।
ভারতের মতো বাংলাদেশেরও রয়েছে তরুণ জনগোষ্ঠীর সুবিধা। এরা একাত্তর-পরবর্তী প্রজন্ম, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এরা রূপ দিতে তৈরি। এই গোষ্ঠী দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জোরালো প্রাণশক্তির প্রতিনিধিত্ব করছে। এরা অনেক বেশি বৈশ্বিক, উচ্চশিক্ষিত এবং দেশের অগ্রগতিতে এদের স্বার্থ রয়েছে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান একে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। উপমহাদেশে উৎপাদন ও যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে ভূমিকা রাখার এবং বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর নৈকট্য থেকে এর লাভবান হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশকে বাস্তব সম্ভাবনা অর্জনে সক্ষম করে তুলতে ভারত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। গত বছর আমরা ২৫টি ট্যারিফ লাইন বাদে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত করার ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণচুক্তি বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছি, সীমান্ত-সংক্রান্ত বাকি বিষয়গুলো সমাধানের লক্ষ্যে ল্যান্ড বাউন্ডারি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছি। আমরা বিভিন্ন বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ সম্প্রসারণ করেছি। আমরা স্বাস্থ্য, গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতের মতো ক্ষেত্রগুলোয়ও সহযোগিতা বাড়াচ্ছি।
বাংলাদেশ ভারতের মতোই দারিদ্র্য দূরীকরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এর ভূমি ও জলসম্পদ সীমিত। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে রয়েছে দেশটি। একই অঞ্চলের পরস্পরের সাফল্যের ভেতরে দেশ হিসেবে আমাদের স্বার্থও জড়িত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সঙ্গে অংশ নিতে ভারত অঙ্গীকারবদ্ধ। ভারত বাংলাদেশের উন্নয়ন উদ্যোগেও সহযোগিতা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কাজটি আমরা দ্বিপক্ষীয়ভাবে এবং একই সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক ভিত্তিতেও করব। এই সমগ্র অঞ্চলের স্বার্থেই এখন একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রয়োজন।
ড. মনটেক সিং আহ্লুওয়ালিয়া: ভারতের পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান।
No comments:
Post a Comment