Friday, November 30, 2012

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে সরকারি বাহিনী কর্তৃক আসামিপক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী অপহরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে থেকে সরকারি বাহিনী কর্তৃক আসামিপক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী অপহরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রকৃত তথ্য জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা। গতকাল সচিবালয়ে তিনি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে সাক্ষী অপহরণের ওই ঘটনায় আমেরিকা সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান। এ ঘটনা নিয়ে প্রভাবশালী সাময়িকী দি ইকোনমিস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের প্রতিও আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। অন্যদিকে আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিচার বিভাগ হচ্ছে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ আশ্রয়স্থল। বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রতা ও দুর্নীতি কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়।
প্রসঙ্গত, ঢাকার পুরনো হাইকোর্ট ভবনে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গত ৫ নভেম্বর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে আসলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ট্রাইব্যুনালের প্রধান ফটক থেকে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী ও সাংবাদিকের উপস্থিতিতে ডিবি পুলিশ টেনে-হিঁচড়ে তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। আইনজীবীরা তাত্ক্ষণিকভাবে এ ঘটনা ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করেও কোনো প্রতিকার পাননি। তাকে এখনও আদালত কিংবা তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ট্রাইব্যুনালের একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণকৃত সাক্ষী অপহরণের এ ঘটনা নিয়ে দেশ-বিদেশে তোলপাড় চলছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ আদালত থেকে সরকারি বাহিনী কর্তৃক সাক্ষী অপহরণের এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। দেশি-বিদেশি কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনার তদন্ত ও অনুসন্ধান কার্যক্রমও শুরু করেছে।
গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর দফতরে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে ড্যান মজীনা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সংস্কার এবং পুলিশ প্রশাসনের আচরণ ও সংস্কার নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার আধুনিকায়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা দিতে আগ্রহী বলেও জানান। আইনের আধুনিক সংস্কারে সহায়তা এবং বিচারক, আইনজীবীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার আধুনিকায়নে সহযোগিতা দিতে চায়। বৈঠকে মার্কিন দূতাবাস ও আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের একপর্যায়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা দি ইকোনমিস্টসহ বিভিন্ন পত্রিকায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে সাক্ষী অপহরণ নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের প্রতি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সাক্ষী অপহরণের বিষয়ে ড্যান মজীনা আইনমন্ত্রীর কাছে বিস্তারিত তথ্যও জানতে চেয়েছেন। আসামিপক্ষে সাক্ষ্য দিতে এসে সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী সরকারি বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হন। এ ঘটনা নিয়ে প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টে ‘বাংলাদেশ : এভার মার্কইয়ার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ভাই হত্যার সঙ্গে সাঈদী জড়িত ছিলেন না—এ কথাই বলতে আদালতে এসেছিলেন সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী অপহরণের ঘটনা নিয়ে আইনমন্ত্রী ও ড্যান মজীনার মধ্যকার আলোচনা প্রসঙ্গে তারা সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য করেননি। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইকোনমিস্টসহ বিভিন্ন পত্রিকার সূত্র ধরে সাক্ষী সুখরঞ্জন বালী অপহরণ সম্পর্কে মন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছেন। বিষয়টি প্রসঙ্গক্রমে এসেছে। তবে আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, এটি আসামি পক্ষের আইনজীবীদের প্রচারণা। এর কোনো ভিত্তি নেই।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক অনুসরণ এবং মামলা দায়েরের পর নিষ্পত্তির প্রতিটি পর্যায়ে সময় নির্ধারণ করে দিয়ে দেওয়ানি কার্যবিধি আইন সংশোধন করা হয়েছে। এডিআর ব্যবস্থার বিধান রেখে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। গত বুধবার ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্টের প্রকাশিত ‘আইনের শাসন সূচক ২০১২’ শিরোনামের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৯৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের দেওয়ানি বিচারব্যবস্থা সবচেয়ে খারাপ। মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগা ও বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতিই এর জন্য দায়ী। সাংবাদিকরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী দেওয়ানি বিচারব্যবস্থায় পিছিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিচার বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিচার বিভাগে কোনো দুর্নীতি থাকা উচিত নয়। বিচার বিভাগ হচ্ছে মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। তিনি বলেন, দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত জানতে বা জানাতে এখন কোনো বাধা নেই।
হাইকোর্টের একজন বিতর্কিত বিচারপতির দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুটি তথ্যপ্রমাণসহ দুটি অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কার্যালয় হয়ে আপনার দফতরে এসেছে। ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বিচার বিভাগের দুর্নীতি দূর করা সম্ভব কি না? এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্টের কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমরা হাতে পাইনি। তাছাড়া বিষয়টি আমাদের এখতিয়ারভুক্তও নয়।

No comments:

Post a Comment