জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের স্বীকৃতি দেবে বাংলাদেশ
সর্বশেষ আপডেট বৃহষ্পতিবার, 22 নভেম্বর, 2012 16:19 GMT 22:19 বাংলাদেশ সময়
বাংলাদেশের বয়স্ক নাগরিকদের আলাদা
করে জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দেবার পরিকল্পনা করছে সরকার, আর এই
উদ্দেশ্যে একটি উপকমিটি এ সপ্তাহেই কাজ শুরু করেছে।
বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অনেক দেশে বয়স্ক নাগরিকদের
সংখ্যা বাড়ছে এবং বাংলাদেশে সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জ্যেষ্ঠ
নাগরিক হিসেবে বাড়তি কিছু সুবিধা পাবেন বয়স্করা।ঢাকার আগারগাঁওয়ের প্রবীণ নিবাস নামের একটি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে দেখা গেল কয়েকতলা ভবনে প্রায় শব্দহীন পরিবেশ। দুপুরের একটু আগের কথা, তবে তার মধ্যেই খাওয়াদাওয়া সেরে বিশ্রাম নিতে যার যার কক্ষে চলে গেছেন নিবাসের বেশিরভাগ বাসিন্দা।
দেখা মিলল ষাটোর্ধ্ব মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের সাথে। জানালেন ছয় বছর ধরেই তিনি এই প্রবীণ নিবাসে আছেন।
‘বাড়িঘর, জমিজমা সবই আমার আছে। পুত্র-কন্যাও আছে, তবু দু:খের বিষয় আমি নিজের বাড়িতে থাকতে পারলাম না। বাধ্য হয়ে আমাকে ঘর ছাড়তে হয়েছে। সেটা আমার জন্য খুবই কষ্টের’, বললেন তিনি। তবে এর থেকে খুব বেশি ভাঙতে রাজি হলেন না।
এখন বাংলাদেশে এই মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের মতো বয়স্ক নাগরিকদেরই আলাদা করে জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দেবার পরিকল্পনা করছে সরকার।
"বার্ধক্যে এসে সবাই ন্যূনতম সামাজিক মর্যাদা চায়। কিন্তু বিরাট জনঘনত্বের দেশ বাংলাদেশ তাদের এই সামাজিক মর্যাদা দিতে প্রস্তুত নয়!"
এএসএম আতিকুর রহমান, প্রবীণ হিতৈষী সংঘ
প্রবীণ নিবাসের আর এক বাসিন্দা মুজিবুল হক বললেন, ‘দেশে রাষ্ট্রপ্রধান, বিরোধী দলের নেত্রী বা সুশীল সমাজের সদস্য সবাই কিন্তু প্রবীণ। তারপরও দেশের প্রবীণরা খুবই অবহেলিত। ’
তবে জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দেবার পরিকল্পনার কথা শুনে আশার সুরেই তিনি বললেন, “আমরা যেখানেই যাব আলাদাভাবে একটি সম্মান পাব। যে সম্মান আমরা এখন মোটেও পাচ্ছি না, অথচ এই সম্মান আমাদের প্রাপ্য!”
বয়স্ক মানুষদের ঠিক এই সম্মানের জায়গাটিই নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার, জানালেন বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস।
“তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন, যেমন ধরুন যানবাহনে আলাদা আসন বা হাসপাতালে চিকিৎসায় অগ্রাধিকার। তবে মোটা দাগে বলতে গেলে, এই স্বীকৃতি তাদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে”, জানালেন মি বিশ্বাস।
বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের জ্যেষ্ঠ নাগরিক বলে উল্লেখ করা হয়। এধরনের নাগরিকের সংখ্যা বাংলাদেশে এক কোটির অল্প বেশি।
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম আতিকুর রহমান বলছেন, “বাংলাদেশের সমাজ এই বাড়তি সংখ্যার জন্য প্রস্তুত নয় বা সমাজ প্রবীণদের জন্য তেমন কোন চিন্তাও করে না।’’
তাঁর মতে, এই কারণেই বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক প্রবীণদের জন্য কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। একমাত্র রয়েছে বয়স্ক ভাতা।
অধ্যাপক রহমানের কথায়, ‘বার্ধক্যে এসে সবাই ন্যূনতম সামাজিক মর্যাদা চায়। কিন্তু বিরাট জনঘনত্বের দেশ তাদের এই সামাজিক মর্যাদা দিতে প্রস্তুত নয়!’
তিনি আরও বলছেন, জ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলে তাদের এই স্বীকৃতির জায়গাটি তৈরি হবে।
তবে সকল সেবা ক্ষেত্রে প্রবীণদের অগ্রাধিকার দেবার বিষয়টি সফলভাবে প্রয়োগ করা সময়সাপেক্ষ হবে বলেই তাঁরা ধারণা করছেন।
No comments:
Post a Comment