জুলাই
২০১২ সালে ভারতে বিদ্যুতের বিপর্যয় ঘটল। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ছাপা হলো
একজন বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞের মত। হারিকেন স্যান্ডির কারণে আমেরিকার কোনো কোনো
শহর যখন বিদ্যুৎবিহীন, এবিসি নিউজ তখন প্রকাশ করল একই বিশেষজ্ঞের বক্তব্য।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নামকরা বিদ্যুৎ প্রকৌশলীর অন্তত ১০০ সাক্ষাৎকার প্রকাশিত
বা প্রচারিত হয়েছে সিএনএন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ মূলধারার গণমাধ্যমে।
নিউইয়র্ক টাইমস তাঁর বক্তব্য ছাপতে গিয়ে এ কথা জানাতে ভুলল না, তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্নাতক। নাম তাঁর আরশাদ মনসুর।
আরশাদ মনসুর যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎশক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইপিআরআই) জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট। গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান। তাঁর সঙ্গে কাজ করেন ৫০০ জন প্রযুক্তিবিদ। প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক। প্রতিবছর তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা তাঁর নেতৃত্বে ব্যয় করা হয় বিদ্যুতের গবেষণায়, যা ব্রাজিল থেকে জাপান—বিভিন্ন দেশের বিদ্যুৎক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে। বিদ্যুৎ নিয়ে মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে আরশাদের নিজের রয়েছে দুটি প্যাটেন্ট। শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কারিগরি জার্নালে, নানা দেশে বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত সম্মেলনে তিনি কতবার যে মূল বক্তা হয়েছেন, ইয়ত্তা নেই।
গত মে মাসে বাল্টিমোরে বিদ্যুৎশক্তি সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে আরশাদ মনসুর যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আপনাকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করবে। তিনি বলছেন, ‘গত ১০০ বছরে বিদ্যুৎশিল্পে যা ঘটেছে, আগামী ১০ বছরে তার চেয়ে বেশি পরিবর্তন ঘটবে। যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎ খাতে এখন পর্যন্ত যত অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে, আগামী ২০ বছরে বিনিয়োগ করতে হবে তার চেয়েও বেশি।’
আরশাদ মনসুরের বাবা এস এ মনসুরও প্রকৌশলী, তাঁর ছিল বদলির চাকরি। চট্টগ্রাম স্টিল মিলের মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। সেই সূত্রে আরশাদ মনসুর পড়েছেন চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড স্কুলে। বাবা গাজীপুরের বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দিলে আরশাদ ভর্তি হলেন ঢাকার সেন্ট জোসেফ স্কুলে। তারপর নটর ডেম কলেজে। এস এ মনসুর এখনো ইংরেজি কাগজে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদি নিয়ে লেখেন। বাবার ডিএনএ ১৯৮৪ সালে ছেলেকে নিয়ে এল বুয়েটে। বুয়েটকে আরশাদ খুব গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘আমি যে পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এলাম, এর ভিত গড়ে দিয়েছে বুয়েট।’ তিনি খুব প্রশংসা করেন তাঁর বুয়েটের শিক্ষকদের। আর বলেন, আমেরিকার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় তাঁর সময়ে বুয়েটের পাঠক্রম উন্নততর ছিল। বুয়েট থেকে পাস করেন ১৯৮৯ সালে, তড়িৎ কৌশল বিভাগ থেকে। নয় মাস বুয়েটে শিক্ষকতা করেন। এরপর আমেরিকায় চলে যান। অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস আর পিএইচডি করেন। ১৯৯৪ সালে টেনিসির নক্সভিলে ইপিআরআইয়ে যোগ দেন। ২০১১ সালে তাঁর পদোন্নতি হলো সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আর গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে। সেটিকেই তাঁর পেশাগত জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা বলে মনে করেন তিনি।
মায়ের কথা তিনি খুব স্মরণ করেন। মা চট্টগ্রামে এতিমখানা হাসপাতালে তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন সেবামূলক কাজের জন্য, সেসব তিনি ভুলতে পারেন না। আর খুব কৃতজ্ঞ তিনি তাঁর স্ত্রী জাবিন মনসুরের প্রতি, যিনি নিজেও একজন পরিবেশ প্রকৌশলী। জাবিন একটা ব্লগ চালান, www.genocidebangladesh.org। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশকে এই পরিবার এক দণ্ডের জন্যও ভুলতে পারেনি। দুই মেয়ে নিয়ে তাঁরা বাস করেন শারলটে, যদিও আরশাদকে সারাক্ষণই উড়ে বেড়াতে হয় দেশ-বিদেশে।
আরশাদ মনসুর মনে করেন, বাংলাদেশের উন্নত টেলিযোগাযোগব্যবস্থাকে বিদ্যুতের অপচয় রোধে এবং পিক আওয়ারে ব্যবহার হ্রাসে কাজে লাগানো যায়। প্রবাসীদেরই এগিয়ে আসা উচিত দেশের উন্নতির জন্য। বললেন আরশাদ, ‘আমাদের জ্ঞান আমরা কীভাবে জন্মভূমির উন্নতির জন্য কাজে লাগাতে পারব, এ ব্যাপারে আমাদেরই উদ্যোগী হতে হবে।’ দেশে অনেক দক্ষ ও যোগ্য লোক বিদ্যুৎক্ষেত্রে কাজ করছেন বলে তিনি মনে করেন। জ্ঞান ও প্রযুক্তির আদান-প্রদানের জন্য স্কাইপ, টেলিকনফারেন্সিং ইত্যাদি সহায়ক হতে পারে বলে তাঁর ধারণা।
আরশাদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছে আমার জন্মঋণ, দেশে বহু কিছু শিখেছি, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে আছে অনেক মহান উপাদান, তেমনি আমেরিকায়ও অনেক কিছু শিখেছি। আমেরিকা হচ্ছে সেই দেশ, যা একজন নাগরিকের বর্ণ, জাত, ধর্ম ইত্যাদি বিবেচনা করে না; বিবেচনা করে তার যোগ্যতা—এর প্রমাণ হলো একজন তরুণ প্রকৌশলী থেকে আমার ইপিআরআইয়ের কারিগরি দলের প্রধান হওয়া।’
আরশাদ কিন্তু হতে চেয়েছিলেন ডাক্তার। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তিও হয়েছিলেন। একদিন তাঁর চার বছরের ভাতিজা স্নানঘরে পড়ে গিয়ে আহত হলে আরশাদ তাকে নিয়ে ছুটলেন পিজি হাসপাতালে। শিশুটিকে সেলাই দেওয়ার দৃশ্য দেখে আরশাদ নিজেই অজ্ঞান হয়ে গেলেন। ভাগ্যিস, বুয়েটের দরজা তখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। আরশাদ মনসুর বুয়েটে ভর্তি হলেন। আজ ২৯ বছর পর আমরা বলতে পারি, ওই দুর্ঘটনা জগৎসভায় একজন নামকরা বাংলাদেশি আমেরিকান প্রকৌশলীর আবির্ভাবের দরজা খুলে দিয়েছিল।
নিউইয়র্ক টাইমস তাঁর বক্তব্য ছাপতে গিয়ে এ কথা জানাতে ভুলল না, তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্নাতক। নাম তাঁর আরশাদ মনসুর।
আরশাদ মনসুর যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুৎশক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইপিআরআই) জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট। গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান। তাঁর সঙ্গে কাজ করেন ৫০০ জন প্রযুক্তিবিদ। প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক। প্রতিবছর তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা তাঁর নেতৃত্বে ব্যয় করা হয় বিদ্যুতের গবেষণায়, যা ব্রাজিল থেকে জাপান—বিভিন্ন দেশের বিদ্যুৎক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে। বিদ্যুৎ নিয়ে মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে আরশাদের নিজের রয়েছে দুটি প্যাটেন্ট। শতাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কারিগরি জার্নালে, নানা দেশে বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত সম্মেলনে তিনি কতবার যে মূল বক্তা হয়েছেন, ইয়ত্তা নেই।
গত মে মাসে বাল্টিমোরে বিদ্যুৎশক্তি সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে আরশাদ মনসুর যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা আপনাকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করবে। তিনি বলছেন, ‘গত ১০০ বছরে বিদ্যুৎশিল্পে যা ঘটেছে, আগামী ১০ বছরে তার চেয়ে বেশি পরিবর্তন ঘটবে। যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুৎ খাতে এখন পর্যন্ত যত অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে, আগামী ২০ বছরে বিনিয়োগ করতে হবে তার চেয়েও বেশি।’
আরশাদ মনসুরের বাবা এস এ মনসুরও প্রকৌশলী, তাঁর ছিল বদলির চাকরি। চট্টগ্রাম স্টিল মিলের মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। সেই সূত্রে আরশাদ মনসুর পড়েছেন চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড স্কুলে। বাবা গাজীপুরের বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দিলে আরশাদ ভর্তি হলেন ঢাকার সেন্ট জোসেফ স্কুলে। তারপর নটর ডেম কলেজে। এস এ মনসুর এখনো ইংরেজি কাগজে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ইত্যাদি নিয়ে লেখেন। বাবার ডিএনএ ১৯৮৪ সালে ছেলেকে নিয়ে এল বুয়েটে। বুয়েটকে আরশাদ খুব গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘আমি যে পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এলাম, এর ভিত গড়ে দিয়েছে বুয়েট।’ তিনি খুব প্রশংসা করেন তাঁর বুয়েটের শিক্ষকদের। আর বলেন, আমেরিকার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় তাঁর সময়ে বুয়েটের পাঠক্রম উন্নততর ছিল। বুয়েট থেকে পাস করেন ১৯৮৯ সালে, তড়িৎ কৌশল বিভাগ থেকে। নয় মাস বুয়েটে শিক্ষকতা করেন। এরপর আমেরিকায় চলে যান। অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস আর পিএইচডি করেন। ১৯৯৪ সালে টেনিসির নক্সভিলে ইপিআরআইয়ে যোগ দেন। ২০১১ সালে তাঁর পদোন্নতি হলো সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আর গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান হিসেবে। সেটিকেই তাঁর পেশাগত জীবনের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা বলে মনে করেন তিনি।
মায়ের কথা তিনি খুব স্মরণ করেন। মা চট্টগ্রামে এতিমখানা হাসপাতালে তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন সেবামূলক কাজের জন্য, সেসব তিনি ভুলতে পারেন না। আর খুব কৃতজ্ঞ তিনি তাঁর স্ত্রী জাবিন মনসুরের প্রতি, যিনি নিজেও একজন পরিবেশ প্রকৌশলী। জাবিন একটা ব্লগ চালান, www.genocidebangladesh.org। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশকে এই পরিবার এক দণ্ডের জন্যও ভুলতে পারেনি। দুই মেয়ে নিয়ে তাঁরা বাস করেন শারলটে, যদিও আরশাদকে সারাক্ষণই উড়ে বেড়াতে হয় দেশ-বিদেশে।
আরশাদ মনসুর মনে করেন, বাংলাদেশের উন্নত টেলিযোগাযোগব্যবস্থাকে বিদ্যুতের অপচয় রোধে এবং পিক আওয়ারে ব্যবহার হ্রাসে কাজে লাগানো যায়। প্রবাসীদেরই এগিয়ে আসা উচিত দেশের উন্নতির জন্য। বললেন আরশাদ, ‘আমাদের জ্ঞান আমরা কীভাবে জন্মভূমির উন্নতির জন্য কাজে লাগাতে পারব, এ ব্যাপারে আমাদেরই উদ্যোগী হতে হবে।’ দেশে অনেক দক্ষ ও যোগ্য লোক বিদ্যুৎক্ষেত্রে কাজ করছেন বলে তিনি মনে করেন। জ্ঞান ও প্রযুক্তির আদান-প্রদানের জন্য স্কাইপ, টেলিকনফারেন্সিং ইত্যাদি সহায়ক হতে পারে বলে তাঁর ধারণা।
আরশাদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছে আমার জন্মঋণ, দেশে বহু কিছু শিখেছি, বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে আছে অনেক মহান উপাদান, তেমনি আমেরিকায়ও অনেক কিছু শিখেছি। আমেরিকা হচ্ছে সেই দেশ, যা একজন নাগরিকের বর্ণ, জাত, ধর্ম ইত্যাদি বিবেচনা করে না; বিবেচনা করে তার যোগ্যতা—এর প্রমাণ হলো একজন তরুণ প্রকৌশলী থেকে আমার ইপিআরআইয়ের কারিগরি দলের প্রধান হওয়া।’
আরশাদ কিন্তু হতে চেয়েছিলেন ডাক্তার। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তিও হয়েছিলেন। একদিন তাঁর চার বছরের ভাতিজা স্নানঘরে পড়ে গিয়ে আহত হলে আরশাদ তাকে নিয়ে ছুটলেন পিজি হাসপাতালে। শিশুটিকে সেলাই দেওয়ার দৃশ্য দেখে আরশাদ নিজেই অজ্ঞান হয়ে গেলেন। ভাগ্যিস, বুয়েটের দরজা তখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। আরশাদ মনসুর বুয়েটে ভর্তি হলেন। আজ ২৯ বছর পর আমরা বলতে পারি, ওই দুর্ঘটনা জগৎসভায় একজন নামকরা বাংলাদেশি আমেরিকান প্রকৌশলীর আবির্ভাবের দরজা খুলে দিয়েছিল।