আঁধারের
পাপযাত্রা
আল্লাহ
তা‘আলা
কুরআনে ইরশাদ করেন-
﴿
قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ
مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ ﴾
[الاعراف:
٣٣]
‘বলুন,
আমার
প্রভু প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য
সব ধরনের অশ্লীলতা হারাম
করেছেন।’
{সূরা
আ‘রাফ,
আয়াত
:
৩৩}
আলোচ্য
আয়াতে সবধরনের অশ্লীলতাকে
হারাম ও তা থেকে সব লোককে বেঁচে
থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বস্তুত
অশ্লীলতা এমন এক পাপ,
যা
মানবজাতির ভিত্তিকে চরমভাবে
দুর্বল করে দেয়। মানবসভ্যতার
অনেক ধ্বংসলীলা সাধনের মূল
ইন্ধন হিসেবে কাজ করে এই
অশ্লীলতা।
কখনও
ক্ষুদ্রাকারে,
কখনওবা
বৃহদাকারে। ক্ষুদ্রাকারের
একটা ঘটনাই আপনাদের সামনে
তুলে ধরছি এখানে :
ঘটনাটা
সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি
উপজেলার কোনও এক গ্রামের।
তাহমিনা (ছদ্মনাম)
জনৈক
পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে। একজন
নারীর জন্য পর্দা,
শালীনতা
আর আত্মমর্যাদার গুরুত্ব যে
কত,
তা
হয়ত ভুলেই গিয়েছিলেন তাহমিনা।
একদিন শখ জাগল সিনেমার বড়
পর্দায় ছবি দেখবেন তিনি। শখের
দাম লাখ টাকা!
তা
পূরণ করতেই হবে। তাই একদিন
আপন ভাইকে নিয়ে রওয়ানা হলেন
সিনেমার উদ্দেশ্যে। হয়ত সবার
চোখকে ফাঁকি দিতে বেছে নিলেন
রাতের গভীরতাকে। ঠিক করলেন
রাত দশটার শো দেখবেন।
এই
পদক্ষেপে ভালো মানুষকে ফাঁকি
দিতে পারলেও,
যাদের
চোখ ফাঁকি দেয়ার দরকার ছিল,
তাদের
চোখ ফাঁকি দিতে ব্যর্থ হলেন
তাহমিনা। কারণ,
এসব
লোক তো রাতের পথিক,
নিশিচর,
আঁধারের
সজাগ বাসিন্দা!
যাদের
চোখ ফাঁকি দিতে পারলেন,
তাদের
চোখ ফাঁকি না দিলেও কোনও ক্ষতি
ছিল না। এদের চোখ ফাঁকি দেয়ার
প্রয়োজনীয়তা ছিল ভীষণ। কেননা,
এদের
হাতে মানুষের অনিষ্ট সাধিত
হয়,
মানুষের
জীবনকে এরা কালিমাযুক্ত করে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এদের
কাছে হেরে গেলেন তিনি।
ওই
আঞ্চলিক ভাষায় ‘জাইরা’
নামে
প্রসিদ্ধ ও পরিচিত ছিল খাইরুল
(ছদ্মনাম)।
তার কাজই ছিল মানুষকে কষ্ট
দেয়া,
এ
ধরনের নিশাচর যাত্রীর ইজ্জত
হনন করা। আর কোনও যাত্রী যদি
নিজেই তার পথ সহজ করে দেয়,
তাহলে
তো কথাই নেই। তাই সুযোগের
সন্ধানে ওঁৎ পেতে থাকা খাইরুলের
দৃষ্টি তিনি এড়াতে পারলেন
না।
সিনেমার
রুপালী পর্দায় যখন খলনায়ক
কর্তৃক নায়িকার শ্লীলতাহানী
বা ধর্ষণের কল্পিত দৃশ্য
প্রদর্শন করা হচ্ছিল,
তখন
খাইরুলের প্রযোজনায় পরিচালিত
হচ্ছিল এসব দৃশ্যের বাস্তব
অবতারণার। এর পরিচালক,
প্রযোজক
ও নায়ক ছিলো সেই খাইরুল। সঙ্গে
তার একদল দঙ্গল খলনায়ক।
কল্পিতমঞ্চে
যে শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটে,
তার
জন্য শোক-তাপ
করার প্রয়োজন নেই। কারণ,
তাতে
নায়িকার ইজ্জতের গায়ে সামান্য
আঁচড়ও কাটে না। কিন্তু জীবনের
বাস্তবমঞ্চে যে ঘটনা ঘটে,
সেসব
ঘটনার অশ্রুপাত করবে কে?
আর
তাতেই লাভইবা কতটুকু?
যা
হোক,
সিনেমার
দৃশ্য শেষ করে ভাইকে সঙ্গে
নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা
বাড়ালেন তাহমিনা। রাত তখন
দেড়টার কম যায় না। নিশিচরের
মত নিঃশব্দে এগিয়ে চলছিলেন
তারা। বাড়ির খুব কাছে এসে
পড়েছেন। দূরত্ব মাত্র মিনিট
কয়েকের। আবছা আঁধারের নির্জন
স্থানটাতে পা রাখতেই অপ্রস্তুত
যুবতীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে খাইরুল
ও তার সাঙ্গরা।
বখাটেরা
ভাইয়ের মুখ চেপে ধরে রেখেছিল
যাতে বোনের ইজ্জতহননের বিরুদ্ধে
তিনি প্রতিবাদ করতে না পারেন
পিতৃপ্রাপ্য চিৎকার ধ্বনি
দ্বারা। কিন্তু এই নির্জন
রজনীতে বোনের ইজ্জতহরণের
ঘটনাটা ভাইয়ে নিজের মুখে
প্রচার করতে চায়
নি
বলে লম্পটরা নির্বিঘ্নে
তাদের
কামনার আগুন নির্বাপিত করে।
নির্যাতিতার মুখে সম্ভ্রম
রক্ষার অদৃশ্য তালা,
আর
ভাই বাকরুদ্ধ এক অন্ধ দর্শক!
বিনামূল্যে
ইজ্জত বিক্রি হওয়ার এই ঘটনা
প্রকাশ হয়ে যেতে তেমন সময় নেয়
নি। গ্রাম্য মোড়লেরা তাদের
বিবেকের ঠুনকো আদালত কায়েম
করে অপরাধী বখাটেদের মাত্র
কয়েকটি জুতার বাড়ির শাস্তির
বিধান সাব্যস্ত করে। গুরুপাপের
লঘুদণ্ডে উল্লাসে মেতে ওঠে
খায়রুল। হাসে মুখ টিপে। আরও
দুর্বার হয়ে উঠেছিল তার ও তার
অনুসারীদের পাপযাত্রা। এই
যাত্রার শেষ কোথায় জানি না।
তবে এই যাত্রা রোখার উপায়
একটাই-
আল্লাহর
বিধানের সামনে নিঃশর্ত আনুগত্য
করা,
বেপর্দার
আঁধার থেকে পর্দার আলোয় ফিরে
আসা।
No comments:
Post a Comment