মানুষের
নৈতিক অবস্থা ক্রমেই খারাপের
দিকে যাচ্ছে। গ্রাম-গঞ্জে,
শহরে-বন্দরে,
শিক্ষিত-অশিক্ষিত
সবার মধ্যে বেপর্দা আর মুক্তবাসের
করুণ পরিণতির আভাস দেখা যাচ্ছে
খুব সুষ্পষ্টভাবে। প্রেম-পরকীয়া
আজ গোপন বা মানুষের দৃষ্টিতে
নিন্দাযোগ্য কোনও অপরাধ নয়!
একারণে
সমাজ-জীবনে
ভয়ানক ব্যধি হিসেবে এই রোগটা
আত্মপ্রকাশ করলেও চিকিৎসার
কোনও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে
না। আর নেয়া হবেই বা কেন?
একটা
লোক যদি তার রোগকে রোগই মনে
না করে,
তাহলে
তার চিকিৎসা নিতে যাবে কেন
সে?
আমাদের
সমাজের চিত্র ঠিক এরূপই।
প্রেম-ভালোবাসা
নিয়ে নিয়মিত টকশো চলছে,
রেডিওগুলোতে
নিয়মিত উৎসাহ দেয়া হচ্ছে
প্রেম-ভালোবাসায়
জড়িয়ে পড়তে,
এমনকি
ভালোবাসার কাহিনীগুলো সরাসরি
প্রকাশ করার সুবিধার্থে লাইভ
সাক্ষাৎকারেরও আয়োজন করা
হচ্ছে!
তো
এই সমাজে প্রেম-পরকীয়াঘটিত
কারণে নারী-পুরুষের
প্রাণ যাবে না-
এই
আশা করা অসারতা ছাড়া আর কী হতে
পারে!
আপনি
যদি সমাজের অনাচারগুলো নিয়ে
ভাবতে যান,
তাহলে
আপনাকে এমনসব বিচিত্র ও নির্মম
ঘটনার সামনে পড়তে হবে,
যা
দেখে-শুনে
আপনার কলিজায় কাঁপন না ধরে
থাকবে না। নিচের ঘটনা দিয়ে
অবস্থা আঁচ করার চেষ্টা করুন
:
‘প্রেমিকা
জেসমিন,
সঙ্গে
এক লাখ টাকার ব্যাগ। দুটোই
পেতে চেয়েছিলাম। স্বপ্ন
দেখছিলাম ঘর বাঁধার। বিভোর
স্বপ্নে এমন সুযোগ হাত ছাড়া
করতে চাই নি আমি। সামলে রাখতে
পারি নি নিজেকে। তাই রাজী হয়ে
জেসমিনের কর্মক্ষেত্রে যাই
দক্ষিণ বনশ্রীতে। দুইজন মিলে
শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করি
সুমাকে।’
কথাগুলো
জেসমিনের প্রেমিকা রহমতুল্লাহর।
সে তার প্রেমিকার সঙ্গে মিলে
প্রেমিকার গৃহকর্ত্রীকে
হত্যা করেছে। মূল ঘটনায় আসুন।
রহমতুল্লাহ
ছয় মাস আগে মুহাম্মাদপুরের
ব্যবসায়ী মাহফুজ উল্লাহর
বাসায় বদলী কাজ করত। সেখানে
গৃহপরিচারিকার কাজ করত জেসমিন
নামের এক মহিলা। সেই সূত্রে
উভয়ের পরিচয়। পরিচয় থেকে ভালো
লাগা এবং ভালোলাগা থেকে প্রেম
তথা পরকীয়া। কেননা,
এর
ছয় বছর আগেই জেসমিনের বিয়ে
হয়েছিল আবদার আলী নামের জনৈক
রিক্সাচালকের সঙ্গে।
তার
ঔরসে একটি কন্যাসন্তানও আছে
জেসমিনের। কিন্তু এই দরিদ্রতা
আর বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে
অনুপ্রবেশ করে পরকীয়া।
এই পরকীয়াই শেষ পর্যন্ত একজন
মানুষের জীবন নাশের কারণ হয়ে
দাঁড়ায়।
পরকীয়ার
সম্পর্ক হওয়ার পর একযোগে ওই
বাসায় কাজ ছেড়ে দেয় জেসমিন ও
রহমতুল্লাহ। জেসমিনের স্বামী
গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের
হরিণাকুন্ডতে বসবাস করায়
তাতে কোনও সমস্যাই হয় না তাদের।
স্বামীর অনুপস্থিতিতে মাঝে
মধ্যেই তারা মিলিত হতো গোপন
অভিসারে,
নাপাক
সুখ কামনায়।
এখানে
কাজ ছেড়ে দিয়ে জেসমিন কাজ নেয়
দক্ষিণ বনশ্রীর এফ ব্লকের
সাত নম্বর সড়কের সোমা আক্তার
সুমীর ঘরে। এই বাড়ির মালিক
হলেন নাদিরা বেগম। তিনি থাকেন
চতুর্থ তলায়। নাদিরার ভাগিনা
দ্বীপর সঙ্গে আবার সম্পর্ক
সুমার। সোমা নিজ স্বামী ও
সংসারের কথা ভুলে পরকীয়ায়
জড়িয়ে পড়েন বাড়িওয়ালার ভাগিনা
দ্বীপর সঙ্গে।
চমৎকার!
বাসাওয়ালাও
পরকীয়ার অভিযাত্রী,
কাজের
বুয়াও পরকীয়ার অভিযাত্রী!
সোমার
সঙ্গে বেশ কিছুদিন চুটিয়ে
প্রেম করে দ্বীপ হাঁপিয়ে ওঠে।
সে পুরোনো ঠাণ্ডা চায়ের পরিবর্তে
নতুন তাজা চায়ের পেয়ালার দিকে
হাত বাড়ায়। প্রেম করে লন্ডনপ্রবাসী
এক নারীর সঙ্গে এবং শেষ পর্যন্ত
তার সঙ্গেই বৈবাহিক বন্ধনে
আবদ্ধ হয়। সোমাকে ছেড়ে দ্বীপ
বিয়ে করার পর সে নিজে পড়ে
অস্বস্তিতে আর সোমাকে ফেলে
মর্মপীড়াতে।
পরকীয়া
প্রেমিকের এই অকৃতজ্ঞতা দেখে
ভেঙে পড়ে সোমা। মানসিকভাবে
নিদারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় সে।
অবস্থা যে কোনও মুহূর্তে ভিন্ন
স্রোতে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা
করে দ্বীপ। তার আশংকা,
পরকীয়ায়
ব্যর্থ হওয়ায় মানসিক রোগে
আক্রান্ত সোমা যে কোনও মুহূর্তে
তার স্ত্রীর কাছে ঘটনা ফাঁস
করে দিতে পারে। তাই আপদ দূর
করার জন্য সোমাকে সে বাসা ছেড়ে
দিতে বলে। কিন্তু সোমা তাতে
কর্ণপাত করে নি। শোকের সঙ্গে
যোগ হয় জেদ। সে প্রতিজ্ঞা করে
বাসা না ছাড়ার। তাকে কোনওভাবে
বাসাছাড়া করতে না পেরে চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নেয় দ্বীপ। তাকে
যোগ্য সঙ্গ দেয় খালা নাদিরা।
আর তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
করার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়
জেসমিন ও তার পরকীয়া প্রেমিক
রহমতুল্লাহর ওপর। তাকে দুটো
বস্তুর লোভ দেখানো হয়। কাজটা
করে দিতে পারলে এক লাখ টাকা
এবং রহমতুল্লাহর সঙ্গে বিয়ের
ব্যবস্থা। এক পরকীয়াকে বাস্তবতার
রূপ দিতে আরেক পরকীয়ার অভিযাত্রীর
জীবনলীলা সাঙ্গ করার মহাপরিকল্পনাই
বলা যায় এটাকে। এই মহাপরিকল্পনা
বাস্তবায়নে রাজী হয়ে যায়
জেসমিন,
সঙ্গে
রহমতুল্লাহও।
হত্যা
পরিকল্পনায় শামিল থাকে দ্বীপর
খালা নাদিরা। পরিকল্পনা
মোতাবেক রহমতুল্লাহকে আহ্বান
করে জেসমিন। গৃহপরিচারিকা
হওয়ার সুবাদে সোমার ঘরে অন্য
কাউকে ঢুকানো কঠিন ছিল না তার
জন্য। তাই রহমতুল্লাহকে সে
ঘরে প্রবেশ করতে দেয়। সে সময়
সোমা খাটে শুয়ে ছিলেন। ঘরে
প্রবেশ করা মাত্র কোনও কিছু
বুঝে ওঠার আগেই রহমতুল্লাহ
সোমার গলায় কাপড় পেঁচিয়ে ধরে।
খাটের এক পাশে সোমার প্রতিবন্দ্বী
ছেলে নকীবও শোয়া ছিল। কিন্তু
মাকে বাঁচানোর মতো কোনও শক্তি
ছিল না তার। তাই অসহায় অবস্থায়
মায়ের মৃত্যুদৃশ্য হজম করতে
হয় তাকে। রহমতুল্লাহ সোমাকে
পেঁচিয়ে ধরার পর জেসমিন তাকে
লাথি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দেয়।
দুইজনের সম্মিলিত শক্তির
কাছে হেরে যান সোমা। এক সময়
ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে। এভাবেই
রচিত হয় দ্বৈত পরকীয়ার অশুভ
পরিণতির নির্মম আখ্যান। একটা
সমাজ অধঃপতনের কোন তলানীতে
ঠেকলে এ ধরনের পরিস্থিতি
সৃষ্টি হয় তা ভাবতে মনে হয় খুব
বেশি জ্ঞান খাটানোর প্রয়োজন
নেই। মানুষের নৈতিক অবস্থার
অবনতি,
ধ্বংসাত্মক
পরিণাম আমরা সচক্ষে প্রত্যক্ষ
করে চলেছি। সামাজিক অবক্ষয়ের
বিষয়টি মুষ্টিমেয় কয়েকজন
লোকমাত্র বুঝতে পারছি,
ব্যাপারটা
এমনও নয়। আমরা সবাই বুঝি সমস্যার
কথা,
পরিণতির
ভয়াবহতার কথা। কিন্তু সমাধানের
জন্য আমরা সরল পথে হাঁটছি না।
অবলম্বন করছি নানান বক্রপথ।
সত্যিকার অর্থেই যদি আমরা
সমাধান চাই,
এ
ধরনের করুণ ও নির্মম দৃশ্য
না দেখতে চাই,
তাহলে
অবশ্যই আমাদেরকে সরলপথে আসতে
হবে। সেই সরল পথ আল্লাহর পথ,
আল্লাহর
বিধান ছাড়া আর কীসেইবা মানুষের
মুক্তি নিহিত থাকতে পারে?
No comments:
Post a Comment