৪০ কোটি ৫০ লাখ অভিবাসী!
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ
১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বের সব অভিবাসী শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণে একটি সনদ অনুমোদন করা হয়। সেসঙ্গে দিনটিকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর থেকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে আসছে। প্রকৃত অর্থে দেশে বৈদেশিক মূদ্রার একটি সিংহ ভাগ আসে অভিবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিটেন্স থেকে। জানা গেছে, ২০০৮ সালে প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর সংখ্যা ২ হাজার ৭৭২ জন। লাশ বাংলাদেশে গিয়েছে ২ হাজার ২৩৭ জনের। বাকিদের বিদেশের মাটি ভাগ্যে জুটেছে। সরকার লাশের প্রতি ক্ষতিপূরনের প্রতি এবং প্রবাসীদের প্রতি আরও বেশী আন্তরিক হলে প্রবাসী নিজে ,তাঁর পরিবার, এবং দেশ তাতে উপকৃত হবে।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্বপ্ন ধরতে প্রবাসে গিয়ে গত আট বছরে লাশ হয়ে ফিরেছেন অন্তত ১৫ হাজার কর্মী। সরকারি হিসাবেই রয়েছে এ সংখ্যা। সরকারের লোকেরা অবশ্য বলছেন, বছরে ২ হাজার কর্মীর লাশ হয়ে ফেরা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু মানবাধিকার কর্মী এবং সংশ্লিষ্টরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন, এ সংখ্যাকে আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে। তাছাড়া প্রবাসে অধিকাংশ কর্মী মৃত্যুর কারণকে 'হার্ট অ্যাটাক' বলে চালিয়ে দেয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়েও আপত্তি রয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার। তাছাড়া বিদেশে কর্মরত এক বাংলাদেশির মৃত্যুর পর তার লাশ দেশে নিয়ে আসা নিয়ে রয়েছে জটিলতা। দায়িত্বটা মূলত সরকারের হলেও দূতাবাস ও সরকার সে দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। মারা যাওয়াদের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে বড় বাধা উত্তরাধিকার প্রমাণের দায়। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীদের এক-তৃতীয়াংশের পরিবার-পরিজনও শেষ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে নূন্যতম ক্ষতিপূরণও বুঝে পায়নি। উত্তরাধিকার প্রমাণের পথে নানা জটিলতা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের অর্থপ্রাপ্তি আটকে দিয়েছে। তাছাড়া আমলাতান্ত্রিক মানসিকতাও এক্ষেত্রে আরেক বাধা। অন্যদিকে প্রায় সব দেশেই কর্মস্থলে মৃত্যু হলে বড় ধরনের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু তা আদায়ে মোটেই কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না দূতাবাসগুলো।
সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ফেরত আসা কর্মীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি বিদেশ থেকে আসা লাশের সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মীর লাশ এসেছে। প্রবাসে মারা যাওয়াদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশের লাশ প্রবাসেই দাফন করা হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৭৬৬ জন বাংলাদেশির লাশ এসেছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিসহ সরকারের অন্যান্য উইং এ সংখ্যাকে স্বাভাবিক বলেই দাবি করেছে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, ২০০৮ সালে লাশ হয়ে ফেরেন ২ হাজার ২৩৭ জন কর্মী। তবে ওই বছর সব মিলে প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭৭২। বাকিদের লাশ স্থানীয়ভাবে দাফন করা হয়। এপ্রিলে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০০১ সাল থেকে পরবর্তী সাত বছরে লাশ আসে ১২ হাজার ৩০৭টি। চলতি বছরের প্রথম দশ মাসকে হিসেবে নিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ হাজার ৯৬৭। অথচ সাত বছরে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৫৯২ জনের পরিবারকে। আর হাজার হাজার পরিবার জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) দ্বারে দ্বারে ঘুরে শেষ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশ থেকেও যে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই বিএমইটির। ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় মারা যাওয়া টাঙ্গাইলের মহেশ সরকারকে নিয়ে তখন দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে। অসুস্থ হওয়ার পরও হাসপাতালে ভর্তি না করায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান তিনি। পরে এ নিয়ে সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা আন্দোলনে পর্যন্ত নামেন। পরে ওই কারখানায় কর্মরত সব কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। পাঁচ বছরের বেশি হয়ে গেলেও এখনও মহেশের দুই মেয়ে অনামিকা ও মিথিলা এবং তার বিধবা স্ত্রী ঝরনা সরকার ক্ষতিপূরণের কানাকড়িও পাননি। এপথে বাধার দেয়াল হয়ে আছে কঠিন আর প্যাঁচানো সব নিয়মকানুন। উত্তরাধিকার প্রমাণের জন্য আদালতে মামলা পর্যন্ত করেছেন তারা। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। মালয়েশিয়ায় মারা যাওয়া আরেক কর্মী হীরা আলী আকবরের পরিবারেরও একই অবস্থা। হীরার স্ত্রী মমতা জানান, আড়াই লাখ টাকা ধারদেনা করে তার স্বামী মালয়েশিয়া যান ২০০৭ সালের মাঝামাঝি। মারা যাওয়ার আগের সাত মাসে একটি টাকাও পাঠাতে পারেননি। ২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারি লাশ হয়ে ফেরেন তিনি। ১৪ বছরের মেয়ে মাসুমা জানায়, ক্ষতিপূরণের ১ লাখ টাকায় তার বাবার সব দেনা শোধ হয়তো হবে না, কিন্তু কিছু পাওনাদারের চাপ কিছুটা হলেও তো সামাল দেয়া যাবে। কিন্তু কিছুতেই মিলছে না সে টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে নিহতের উত্তরাধিকার আদালতের মাধ্যমে প্রমাণ দিতে হবে। সঙ্গে লাগবে জেলা জনশক্তি অফিসারের সম্মতিপত্রও। নামে জেলা জনশক্তি অফিসার হলেও সারাদেশে এ অফিস দেশে আছে মাত্র ১৭টি। অন্যদিকে আবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকা দেয়ার কথা সেটাও সরকারের নিজের টাকা নয়, বরং শ্রমিকদেরই টাকা। বিদেশে যাওয়ার আগেই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল নামে একটি তহবিলে তাদের জমা রাখতে হয়েছে এ টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ ফান্ডে বর্তমানে ৩শ' কোটি টাকার বেশি জমা আছে। এ টাকা দিয়ে সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করতে চাইছে। কিন্তু এ ফান্ড থেকে প্রবাসে মারা যাওয়াদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার সহজ ও ত্বরিত কোনো ব্যবস্থা সরকার নিচ্ছে না। বিএমইটি সূত্র দাবি করেছে, এ পর্যন্ত এ ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকার মতো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। তারা বলছে, 'নিয়মমতো এলে' যে কোনো কর্মীর উত্তরাধিকাররাই ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাচ্ছে। যদিও ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দুর্দশার চিত্র সে কথা বলছে না।
এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, 'কথায় কথায় আমরা রেকর্ড রেমিটেন্সের কথা বলি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমরা কখনোই কর্মীদের পাশে দাঁড়াই না। আর প্রবাসে মারা যাওয়া কর্মীর পাশে দাঁড়ানোর তো কোনো ব্যবস্থাই নেই। তাছাড়া একজন কর্মী কেন এবং কীভাবে মারা যাচ্ছে সে বিষয়েও সরকারের সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত।' তিনি আরো বলেন, 'সরকারের ক্ষতিপূরণের চেয়েও যে দেশে কর্মী মারা যাচ্ছে, সেখান থেকেই আরও বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়া সম্ভব যদি দূতাবাসগুলো আরেকটু ভূমিকা নেয়।'
জানা যায়, সৌদি আরবে কোনো দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু হলে তার পরিবার অনেক বেশি ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের সরকারের গাফিলতির কারণে ক্ষতিপূরণের টাকা দেশে আসছে না। দেশে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নিয়মকানুন সহজ করার দাবি সকল প্রবাসীদের। উল্লেখ্য, এখন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ভ্রমণ, চিকিৎসা বা অন্য প্রয়োজনে বিদেশে যাওয়া ব্যক্তিরা বছরে ৫ হাজার ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্গে রাখতে পারবেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান মতে, এতদিন বিদেশ ভ্রমণে বা স্থায়ীভাবে বসবাস অথবা চাকরির জন্য যাওয়া ব্যক্তিরা নিজের কাছে আড়াই হাজার ডলারের বেশি রাখার সুযোগ ছিল না। বিশেষ করে সার্কভুক্ত কোনো দেশে ভ্রমণ করতে গেলে সর্বোচ্চ দেড় হাজার ডলার বা এর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে পারত। এর অতিরিক্ত হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। কিন্তু নতুন এ নির্দেশনার ফলে স্থায়ী প্রবাসীরাও ট্র্যাভেল কোটার পুরোটাই বহন করতে পারবেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২ হাজার ডলার নগদ এবং বাকিটা ট্র্যাভেলার চেক (টিসি) বা ড্রাফট বা অন্য মুদ্রা হিসেবে নিতে পারবেন। জানা গেছে, যদি কেউ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো একটি দেশ ভ্রমণ করে ১ হাজার ডলার খরচ করে থাকেন তবে তিনি ওই বছরের বাকি সময়ের জন্য ট্র্যাভেল কোটার বাকি সর্বোচ্চ ৪ হাজার ডলার খরচ করতে পারবেন।
অপরদিকে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা গত ২৯ নভেম্বর ২০১০ সালে বিশ্বের অভিবাসী সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বিশ্বের অভিবাসীর চলমান ধারা অব্যাহত বৃদ্ধি মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। 'অভিবাসীর ভবিষ্যত: মোকাবিলার শক্তি জোরদার' শীর্ষক এ রিপোর্টে বলা হয়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অর্থনীতির অস্থিরতা ও পরিবেশ পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি নেতিবাচক প্রভাবে বিশ্বে অভিবাসীর বৃদ্ধি অনিবার্য হয়ে পড়বে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংশ্লিষ্ট নীতি পূর্ণাঙ্গ করা, পুঁজি বিনিয়োগ বাড়ানো এবং দূর দৃষ্টির মাধ্যমে ভবিষ্যতের অভিবাসীদের সমস্যা জন্য প্রস্তুতি নেয়া উচিত। অভিবাসীদের জন্য আলাদা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়েছে যাতে করে বিদেশে গমনেচ্ছুরা সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারে। সাথে সাথে পাসপোর্ট ও বিদেশ গমনের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ প্রত্যেক জেলা শহরে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অভিবাসীদের নিপীড়ন-নির্যাতন রোধে সরকারের প্রতি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
দিন বদলের অঙ্গীকার অভিবাসীর অধিকার নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচার এ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশে পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব অভিবাসী দিবস’। জনশক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেন, এক শ্রেণীর রিক্রুটিং এজেন্সী এবং দালাল চক্র সচিবের তথ্য গোপন করে শ্রমিকদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফি তিনগুণ নিয়ে অধিক বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশ পাঠাচ্ছে। পরিণামে হাজার হাজার শ্রমিককে সর্বস্বান্ত হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে অথবা বিদেশের জেলে থাকতে হচ্ছে। এর ফলে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রম বাজার সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। তারা এসব দালাল চক্রকে প্রতিরোধ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে,বর্ণগত অশান্তি রোধের যুক্তিতে দশ বছর পর্যন্ত অভিবাসন ব্যবস্থা স্থগিত করে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন 'কারী কিং'। হিসাবে খ্যাত ব্রিটেইনের অন্যতম শীর্ষ অভিবাসী-ব্যবসায়ী স্যার গোলাম নুন (৭২) ভারতীয় রন্ধন-শিল্পের ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়া স্যার নুন মনে করেন, এর ফলে ব্রিটিশ ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি)-সহ অন্যান্য বর্ণবাদী শক্তি অভিবাসন ইস্যুটিকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না। সম্প্রতি বিবিসি ওয়ানের সাংবাদিক এ্যান্ড্রু মারের একটি অনুষ্ঠানে আলাপ-কালে গোলাম নুন বলেন, 'আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি আরও অভিবাসী আমদানী করার আগে এখানে [ব্রিটেইনে] যারা অভিবাসী হিসাবে আছেন, তাদের জন্য কাজ-কর্ম এবং সম্মানের সাথে জীবন-যাপনের ব্যবস্থা করে দেয়াটা আমাদের দরকার।' ব্রিটেইনের বর্তমান অভিবাসীর পরিস্থিতিতে 'ভীষণ রকমের সতর্ক' থাকার প্রয়োজন আছে বলে মত ব্যক্ত করেন নুন তিনি বলেন, 'আমি চাই না এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী হয়ে যাক, যখন বিএনপি [লোকজনকে] বলবে দ্যাখো, তোমার সব কাজ-কর্ম অভিবাসীরা নিয়ে গেছে।' এ-আশঙ্কা বাস্তব পরিণতি হওয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়াতে স্থগিতাবস্থা জারীর প্রস্তাব করেন নুন। বিবিসির সাথে আলাপে স্থগিতাবস্থার মেয়াদ নিয়ে গোলাম নুন কোনো উক্তি না করলেও, এ-ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে ডেইলী মেইল প্রকাশিতব্য আত্মজীবনী উদ্ধৃত করে মেইল জানিয়েছে, গোলাম নুন মনে করেন ব্রিটিশ অভিবাসনের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দশ বছর মেয়াদের স্থগিতাদেশ আরোপ করা যেতে পারে এ-প্রসঙ্গে তিনি জানান, যারা নতুন অভিবাসী, তারা যথাযথভাবে মূলধারাতে অঙ্গীভূত না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে অভিবাসী আনয়নের ব্যাপারটি বিলম্বিত করা প্রয়োজন গোলাম নুন তাদের যুক্তির পক্ষে আরও বলেন, একটি কক্ষ দশজনের ধারণ ক্ষমতার উপযোগী হলে দশজনের জন্যই সভার আয়োজন করা উচিত, ২০ জনের জন্য নয় নুন মনে করেন, এটি একটি বোধগম্য একটি যুক্তি। উল্লেখ্য, গত বছর মুম্বাইয়ে জঙ্গী হামলার সময় তাজমহল হৌটেলে আটকা পড়েছিলেন গোলাম নুন। সানডে টাইমস পত্রিকার ২০০৬ সালের ব্রিটিশ ধনীদের তালিকায় ৮৮৮তম স্থানে ছিলেন নুন। ১৯৯৬ সালে এক-প্রকার সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় ব্রিটেইনে অভিবাসী হয়েছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৪০ বছরে বিশ্বে অভিবাসীর সংখ্যা ৬৮ শতাংশ বাড়বে। সে সময়ে অভিবাসীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৪০ কোটি ৫০ লাখ। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উঠতি অর্থনৈতিক দেশগুলো হবে নতুন অভিবাসীদের গন্তব্যস্থল। আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা (আইওএম) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বে ইতিমধ্যে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অভিবাসীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বর্তমানে তাদের সংখ্যা ২১ কোটি ৪০ লাখ। আগামী ২০ বছর একই হারে বাড়তে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ অভিবাসীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৪০ কোটি ৫০ লাখ। আইওএম-এর দাবি, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধি এবং উন্নত দেশগুলোতে জনশক্তি বুড়িয়ে যাওয়ায় অভিবাসীর সংখ্যা বাড়ছে। আইওএম জানায, ২০২৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দক্ষ জনশক্তি বেড়ে যাবে। এর সংখ্যা শিল্পোন্নত দেশগুলোর মোট জনশক্তি থেকে বেশি হবে। আর অভিবাসী শ্রমিকদের গন্তব্য হবে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশগুলো।
বর্তমানে অভিবাসীদের পছন্দের শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে অভিবাসীর সংখ্যা চার কোটি ২৮ লাখ। অর্থাৎ বিশ্বের মোট অভিবাসীর ২০ শতাংশের বাস যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়াও অভিবাসীদের পছন্দের তালিকায় রাশিয়া, জার্মানি, সৌদি আরব, কানাডা, ব্রিটেন, স্পেন, ভারত ও ইউক্রেনের নাম আছে।
প্রবাসীদের সীমাহীন দুঃখ কস্টের কথা একমাত্র সৃস্টিকর্তাই জানেন! শুধু কথায় নয় প্রবাসীদের জন্য সরকারকে প্রকৃত পক্ষে আন্তরিক হতে হবে। যেখানে প্রবাসীদের শ্রমের ফলন দেশের রিজার্ভ এক হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করেছে, সেখানে সরকারকে প্রবাসীদের জন্য আরও আন্তরিক হওয়া উচিৎ। একজন মানুষ যখন প্রবাসী হয়ে কঠিন শ্রম দিয়ে নিজ অর্থনৈতিক সাফল্য বয়ে আনে তাতে অনেকাংশে দেশের সাফল্য নিহিত থাকে...!
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
No comments:
Post a Comment