Thursday, December 27, 2012

তারকাগায়ে দুষ্টক্ষত

তারকাগায়ে দুষ্টক্ষত

- আবু বকর সিরাজী

ঘটনা-: মানুষের জীবনে বহু রকমের পতনের ঘটনা ঘটে। কারো পতন ঘটে নিঃশব্দে, মনুষ্যচক্ষুর অন্তরালে। আবার কারও পতন ঘটে বিকট গর্জনে, সমাজ-সভ্যতার একেবারে নাকের ডগায়। এই পতনটা যদি হয় নৈতিকতা স্খলনের, তাহলে ইতিহাসে তা ঘৃণার একটা জমাটবাঁধা অধ্যায় হয়ে থাকে।
তারকা, মডেল কিংবা নায়ক-নায়িকাদের প্রতি মানুষের নজরটা থাকে একটু বেশি। সেই সঙ্গে তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও থাকে একটু বাড়তি। ভক্তরা চান, ভেতরের পাতায় তারা যেমনই থাকুন না কেন অন্তত প্রচ্ছদে যেন থাকেন ঝকঝকে, দাগমুক্ত। কেউ-কেউ হয়ত ভক্তদের এই প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হন আর কেউ হন ব্যর্থ। ভক্তরা তখন তাদের ব্যক্তিজীবনের কুৎসিত চেহারা দেখে আঁতকে ওঠেন। নাক চাপেন পঁচা চরিত্রের দুর্গন্ধে।
২০১০ইং সালটায় সবচেয়ে বড় স্ক্যান্ডালের জন্ম দিয়েছেন অভিনেত্রী ও মডেল সাদিয়া জাহান প্রভা। সঙ্গে আছেন অন্য অভিনেতা ও চিত্রজগতের পরিচিত মুখ অপূর্ব ও রাজিব। তারা বিশেষ মহলে পরিচিত থাকলেও সব মহলে কিংবা বিশ্বাঙ্গনে তেমনটা পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু ব্যক্তিজীবনের কিছু অপ্রীতিকর চিত্র তাদেরকে সকলের সামনে পরিচয় করে দিয়েছে। সর্বমহলে পরিচিতি লাভের সুবাধে তারা এই ঘটনাকে সাধুবাদও জানাতে পারেন!
প্রভাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল অপূর্বের। কিন্তু সেই স্বপ্ন খুব দীর্ঘ হয় নি। রাতের স্বপ্নদ্রষ্টা যেমন প্রত্যুষে জাগ্রত হবে স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট নিয়ে, তেমনিভাবে মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে স্বপ্নভাঙ্গার দুঃসহ বেদনা নিয়ে স্বপ্নরাজ্যের ঘুম থেকে জেগে ওঠেন অপূর্ব। ইন্টারনেটের কয়েকটি ভিডিও দৃশ্য তার দাম্পত্যজীবনে দুঃস্বপ্নের বান ডেকে আনে। স্ত্রী প্রভাকে তিনি আবিস্কার করেন অন্যের বাহুলগ্ন অবস্থায়, সম্পূর্ণ নগ্ন শরীরে! বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু হয়। ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষের মৃত্যু হয়। বিষপানে মৃত্যু হয়। গলায় দড়ি পেঁচিয়ে ঝুললে মৃত্যু হয়। কিন্তু অপূর্বর মৃত্যু হয়েছিল কীভাবে? অপূর্ব অবশ্য দেহবিয়োগান্তের মরা মরেন নি। তবে আমার মনে হয়, তিনি ওই মৃত্যুর চেয়ে এই মৃত্যুকেই আগে রাখতে চাইবেন।
কারণ, ইন্টারনেটের মহাকল্যাণে (?) সারা বিশ্বের বহু মানুষ দেখেছে তার স্ত্রীর এমন কদাকার দৃশ্য। দেখেছে একজন নারীর ইজ্জত-আব্রু, পবিত্রতা-সতীত্ব খুবলে খাওয়ার শকুনীয় দৃশ্য। কোন্ সে শকুন, যার হিংস্রনখরের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হলো স্ত্রী প্রভার সতীত্ব? কেন অপূর্ব ব্যর্থ হলেন রক্ষিতসম্ভ্রম ঘরে তুলতে? কেন ঘটলো এই ঘটনা? পাঠক! আসুন, আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে নিই।
যৌন উন্মাদনায় অপূর্ব নিজ স্ত্রীর ইজ্জত লুণ্ঠন হতে দেখেছেন, সেই লোকটা ডাকাত, সন্ত্রাসী বা পারিভাষিক অর্থের কোনও ধর্ষক নয়। প্রভার সাবেক প্রেমিক। প্রভা দীর্ঘ আট বছর যার সঙ্গে চুটিয়ে ও প্রকাশ্যে প্রেম করে এসেছেন। উপভোগ করে এসেছেন মুক্তবাসের জীবন, বল্গাহীন ও দায়মুক্ত জীবন। সে সময় এই জীবনের অন্য পিঠ চোখে না পড়লেও এখন তা খুব পড়ছে।
ঘটনার সারসংক্ষেপ হচ্ছে : রাজিবের সঙ্গে দীর্ঘ আট বছর ধরে প্রেম করে আসছিলেন প্রভা। এই সূত্রে ঘর হওয়ার আগেই ঘরণীর মত জীবন-যাপন করা শুরু করেন তারা! প্রেমের গল্পগুলো রূপ-রসে রাঙিয়ে তুলতে এরই মধ্যে প্রভা বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের সবচে মূল্যবান বস্তু সম্ভ্রম। বিনিময়ে পেয়েছেন বস্তুজগতের কিছু দামি উপহার। আঠারো লাখ টাকার গাড়ি উপহার পেয়েছেন রাজিবের কাছ থেকে। হবু স্বামীর (তখনকার) কাছে বায়না ধরেছিলেন বিয়ের পর সুইজারল্যান্ড হানিমুনে যাবার। প্রেমিকার আত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে রাজীব পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকাও সঞ্চয় করেছিলেন। কিন্তু আট বছরের এই নাতিদীর্ঘ প্রেম পূর্ণতা পায় নিরাজিব পারেন নি প্রভাকে স্ত্রী করে ঘরে তুলতে। বরং আট বছরের এই প্রেমের স্মৃতিসৌধের ওপর দাঁড়িয়ে প্রভা মালা পরিয়েছেন অপূর্বর গলায়।
৯ই আগস্ট ২০১০ইং সালে তিনি বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে অপূর্বকে বিয়ে করেন। যে রাতে তিনি অপূর্বের হাত ধরে পলায়ন করেন, সে রাতেও তার গায়ে জড়ানো ছিল রাজিবের বোনের দেয়া দামি শাড়ি। সে রাতেও রাজিবের সঙ্গে মিষ্টি-মিষ্টি অনেক কথা বলেছিলেন প্রভা।
কী নির্মম কৌতুক! ডিসেম্বরের ৯ তারিখে রাজিবের সঙ্গে বিয়ে এবং ২৩ তারিখে বৌভাত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন সে অন্যের ঘরের বাসিন্দা! কী অদ্ভুত কৌতুকই না করলেন প্রভা রাজিবের সঙ্গে! সদ্য সাবেক হওয়া প্রেমিকের সঙ্গে রাতের প্রথম ভাগে স্বপ্নময় কথা বলেছেন আর শেষ ভাগে অন্যকে বিয়ে করে চেয়েছেন দু‘আ!
প্রভার এই দু‘আ চাওয়ায় নিশ্চয় খুশি হতে পারেন নি রাজিব। স্বপ্নকন্যার গিরগিটির মত হঠাৎ রূপ বদলাতে বিরাট ধাক্কা খেয়েছেন নিশ্চয়ই। কিন্তু যে জীবনে স্রষ্টার বিধানের তোয়াক্কা নেই, সেই জীবনের পরিণতি এর চেয়ে ভালো আর কতটুকুই বা হতে পারে?
জানার বিষয় হলো, রাজিবকে কেন ছাড়লেন প্রভা? পত্রিকার ভাষ্যানুযায়ী, এই ভাঙাগড়ার পিছনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। অনেক তারকার মধ্যেই প্রেমের সম্পর্ক তৈরি এবং তা ভাঙার পিছনেও তার ভূমিকা স্মরণযোগ্য! কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, প্রভার মাধ্যমেই রাজিবের সঙ্গে পরিচয় হয় চয়নিকার। পরিচয়ের কিছুদিন পর রাজিবকে তিনি তার নাটকে প্রযোজনা করতে বলেন। কিন্তু রাজিব তাতে রাজি হন নি। এক পর্যায়ে রাজিবকে নায়ক বানানোর কথা বলেন। উদ্দেশ্য ছিল রাজিবের কাছ থেকে টাকা নেয়া। কিন্তু চয়নিকার কোনও প্রস্তাবেই রাজি হন নি রাজিব। একারণে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন চয়নিকা। এর সূত্র ধরে অপূর্ব-প্রভাকে নিয়ে একের পর এক নাটক নির্মাণ করতে শুরু করেন তিনি।
অপূর্ব প্রভার প্রতি দুর্বল- একথা জানতেন চয়নিকা। তাই শুটিংয়ের সময় মেকআপ রুম অপূর্ব-প্রভার জন্য ফাঁকা করে দিতেন তিনি। চয়নিকার বের হয়ে যাওয়ার অনুগামী হতো শয়তান। কারণ, হাদীসে আছে, “যেখানে দু’জন পরনারী ও পরপুরুষ একত্রিত হয়, সেখানে তৃতীয়জন থাকে শয়তান।”3 শয়তানের প্ররোচনার সঙ্গে যোগ হতো চয়নিকার ভূমিকা। তিনি প্রভার সামনে অপূর্বর প্রশংসা করতেন এবং রাজিবের নামে মিথ্যা বলতেন।
এভাবে রাজিবের কাছ থেকে তিনি প্রভাকে ছিনিয়ে নেন এবং রাজিবের স্বপ্নের সমাধি রচনা করেন অত্যন্ত নিষ্ঠুর নিপুণতায়কিন্তু অপূর্ব যার স্বপ্ন ভেঙেছেন, সেই রাজিব কম যাবেন কেন? এঁরা তো মধুমক্ষিকা। সুযোগ পেলে যারা সবটুকু মধু চুষে নেন। সেই কাহিনীই পরে প্রকাশ করেন রাজিব।
বিয়ের পর কিছুদিন অপূর্ব-প্রভার সম্পর্ক ভালোই ছিল। কিন্তু যখন একের পর এক প্রভার নগ্ন ভিডিও প্রকাশ পায় এবং তাকে রাজিবের সঙ্গে কুৎসিত যৌন মিলনের দৃশ্যে দেখা যায়, তখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন অপূর্ব। তারপরেও চেয়েছিলেন নিজেকে সামলে নিতে। চেয়েছিলেন বালুর বাঁধকে দু হাতে ঠেলে জোড়া লাগাতে। মিডিয়ার সামনে বারবার বলেছিলেনও- যত ঝড়-ঝাঁপটাই আসুক না কেন, আমাদের কোনোদিনও আলাদা করতে পারবে নাআমৃত্যু আমরা এক সঙ্গে থাকব।
কিন্তু তাদের এই বক্তব্য এখন সিনেমার সংলাপের মতোই অবাস্তব প্রমাণিত হয়েছে। অপূর্ব প্রভাকে অনেক বিশ্বাস করেছিলেন; কিন্তু প্রভা সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখেন নি বলে তিনি তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কারণ, প্রভা অপূর্বকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, রাজিবের সঙ্গে তার প্রেম ছিল ঠিকই; কিন্তু অন্তরঙ্গ কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু যৌনমিলনের দৃশ্য সম্বলিত অনেকগুলো ভিডিও স্কিপ তার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণিত করে। অপূর্ব আরও ব্যথিত হন একারণে যে, এধরনের জঘন্য ঘটনা প্রকাশ পাওয়া সত্ত্বেও প্রভা লজ্জিত হন নি এবং তার মধ্যে কোনও অনুশোচনাবোধ লক্ষ্য করা যায় নি। উল্টো অপূর্বকে প্রভাবিত করে এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চাইতেন তিনি।
এসব ঘটনার পরিণাম যা হবার তা-ই হয়েছে। ভেঙে গেছে সংসার। লজ্জায়, বেদনায় গুমরে কাঁদছে কয়েকটি পরিবার। গত ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০১১ইং দীর্ঘ পাঁচ মাস বিচ্ছিন্ন থাকার পর তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে। প্রভাদের বাসায় উভয় পরিবারের লোকেরা বসে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেন। পত্রিকায় লিখেছে, এই বিচ্ছেদের কারণে অপূর্ব খুব ভেঙে পড়েছেন। কিন্তু প্রভার মধ্যে কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় নি। তিনি আগের মতোই উচ্ছ্বল ও আনন্দে মশগুল রয়েছেন। বাইরে ঘুরছেন, আড্ডা দিচ্ছেন, গল্প করছেন। এমনকি আগের মতো আবার অভিনয় করতে চাচ্ছেন। কিন্তু বাঁধ সেধেছেন বাবা। সাধবেনই তো। একবার যে গর্তে পা দিয়েছেন এই বাবা, দ্বিতীয়বার সেই গর্তে পা দেয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদই জানাতে হয় বটে
আজ অপূর্ব নির্বাক, স্তব্ধ, ভয়ংকর দুঃস্বপ্নে অসহায়। রাজিব তার হানিমুনের জন্য জমানো টাকা দিয়ে প্রথমে প্রাথমিক ধাক্কা সামলাতে ভারতের মুম্বাই গিয়েছেন। সেখান থেকে আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যে পড়াশোনা করে আজীবনের জন্য থেকে যাবেন। আর প্রভা? তিনিও আর নিজ দেশের মানুষকে ভেতরের চেহারাটা প্রকাশ হওয়ার পর বাইরের চেহারাটা দেখানোর সাহস পাচ্ছেন না। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লন্ডনে চলে যাবেন বড় ফুফুর কাছে। ওখানেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করেছেন।
তাদের ব্যক্তিজীবন যেভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে, তেমনিভাবে আমাদের মুসলিম দেশটার জাতিসত্তাটাও অনেকখানি এলোমেলো হয়ে গেছে, মর্যাদায় লেগেছে মোটা দাগের অনেকখানি আঁচড়। আমরা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ধর্মীয় ও নৈতিকতার কারণে গর্ববোধ করে থাকি, বিশ্বব্যাপী আমাদের অপার সুনাম। বিদেশীদের মনেও আমাদের প্রতি অন্য রকম শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু প্রভা-রাজিবরা যা করলেন, তাতে আমাদের এই মর্যাদা ও পরিচয়ে আঘাত করবে তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, ইন্টারনেট এমন এক ঝড়, যা বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষের দুয়ারে আছড়ে পড়ে। একারণে তারা যখনই এই চিত্রটা দেখবে, তখনই আমাদের প্রতি নাক সিটকাবে। আমাদের মর্যাদার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলবে।
তাই বলব পর্দা আর আল্লাহর বিধান সম্পর্কে। নিজের সতীত্ব আর আত্মমর্যাবোধ সম্পর্কে অন্তত এতটুকু শ্রদ্ধা রাখুন, যাতে আর যাই হোক-না কেন, অন্তত দেশের মর্যাদাটা ক্ষুণ্ণ না হয়, আমরা বহিঃবিশ্বে নিজেদের মুখ দেখাতে পারি সগর্বে। [সূত্র : দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৯ই অক্টোবর ২০১০ ইং শনিবার এবং ২০ই ফেব্রুয়ারি ২০১১ ইং রবিবার]
ঘটনা-: আমাদেরকে বলা হয় গোঁড়া, জনবিচ্ছিন্ন। কারণ, আমরা সমাজের প্রচলিত পাপাচারের সঙ্গে মিশতে পারি না। পাপের ঢেউয়ে ডুবতে-ভাসতে জানি না। তাই বলে সমাজের অনাচার দেখে আমরা যে একদম চুপ থাকি কিংবা কিছুই জানি না, তাও নয়। সমাজের ব্যধিগুলোর খবর আমরাও নিই, দেখে ব্যথিত হই। চেষ্টা করি মানুষকে সতর্ক করতে। নিবৃত রাখতেএগুলো করতে গিয়েই দুয়েকটি ঘটনা এমন এসে যায়, যে জগতের সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্কই নেই, সেই জগত নিয়ে কথা বলতে হয়। তবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটাই, আমাদের যেসব মুসলিম বন্ধুগণ অনৈতিকতার পাপসাগরে ডুবে আছেন, তাদেরকে সলিল সমাধি থেকে উদ্ধার করা। এটা আমাদের কলমের নৈতিক দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা সঞ্চালিত হই, বাধ্য হই এসব বিষয় নিয়ে দু’-চার কথা লিখতে।
পত্রিকাওয়ালারা লেখে, এসময়টাতে নাকি শাকিব খান-অপু খুবই জনপ্রিয় জুটি চলচিত্রাঙ্গনে। সারাদেশের ভক্তকূলেরা তাদের অভিনীত ছবি দেখে মুগ্ধ হয়। বাহবা দেয়। প্রশংসা করে। এসব ভক্তকূলের উদ্দেশে একটি প্রশ্ন, তারা কি কখনও একথা ভেবেছেন যে, সিনেমার পর্দায় অন্তত এমন কোনও মানুষের মুখ দেখতে চাই না, যাদের ভেতরটাতে যাই থাকুক, অন্তত বাহ্যিক রূপটা তেমন কুৎসিত না হয়? সিনেমা জগতের অশ্লীলতার পঙ্কিলতা যতই গভীর হোক, একটি মুসলিম দেশের যুবকেরা কি এতটুকু দ্বীনি বোধ-বিশ্বাসও পোষণ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন? যদি তা-ই হয়, তাহলে বলব, আমাদের কপালে দুর্ভোগের ঘনঘটা নেমেই এসেছে। দুর্যোগের এই ঘনঘটার আশঙ্কা যে কেবলই অনুমাননির্ভর নয় বরং বাস্তবতার অনেক কাছাকাছি তার প্রমাণ দেখুন নিম্নের ঘটনায়।
প্রভা-রাজিবের ঘটনার পর এবার ‘জনপ্রিয় জুটি’ শাকিব-অপুর পালা! সিনেমাঙ্গনে বছর জুড়ে দাপিয়ে বেড়ালেও আগস্ট মাসে এসে তারা জুটি ভাঙার ঘোষণা দেন। হয়ত ভক্তরা তাতে হতাশ হন, কিন্তু বড় হতাশার কথা হলো, তারা এমন এক ঘটনার জন্ম দেন, একজন ভক্তের মধ্যে যদি সামান্যতম দ্বীনি আত্মমর্যাদাবোধও থাকে, তাহলে তিনি সিনেমা হলগুলোর দিকে দ্বিতীয়বার তাকাতে হলে ঘৃণায় থুতু নিক্ষেপের জন্য তাকাবেন।
জানা যায়, অপুর সঙ্গে শাকিবের গভীর প্রেম রয়েছে। কারও-কারও মতে তারা বিয়েথাও করেছেন। অর্থাৎ- তারা স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু স্ত্রী অপুর চালচলনে মোটেও খুশি হতে পারছিলেন না শাকিব। তার দাবি, অপু একাধিক ছেলের সঙ্গে প্রেম চালিয়ে যাচ্ছে। একদিন শাকিব খান সংবাদ পান, অপু বাসায় রাত গভীরে এক তরুণ অভিনেতার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটাচ্ছেন। খবর পেয়ে তিনি সেখানে ছুটে যান। পরে ঔ অভিনেতাকে বাসা থেকে বের করে দিয়ে অপুকে প্রচণ্ড মারধর করেন। অপুর মায়ের সামনেই অপুকে বেদম প্রহার করেন তিনি। এ নিয়ে অপুর মা কোনও উচ্চবাচ্চ করেন নি। খবরটি জানাজানি হলে অনেকের কাছেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বিয়ে না করলে শাকিব অপুকে মারতে যাবেন কেন? [সূত্র : দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ৩ জানুয়ারি ২০১১ ইং]
তাদের এই জীবনের কুৎসিত দিকগুলো কেন বারবার মঞ্চায়িত হয়, তার কারণ জানুন মহানবীর পবিত্র যবান মোবারক থেকে।
عَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ وَاِذَا غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ-
ইবন আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আমি কি তোমাদেরকে নারীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কী তা জানাবো? তা হচ্ছে, ওই নেক নারী, যার দিকে তাকালে সে খুশি করে, দূরে থাকলে সে স্বামীর মর্যাদা রক্ষা করে এবং স্বামী কোনও কাজের আদেশ করলে তাতে আনুগত্য করে। [আবূ দাউদ : ১৬৬৪]4
আলোচ্য হাদীসের মূল ভাষ্য হচ্ছে, সতী নারী সে, যে স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্বামীর মর্যাদা রক্ষা করে অর্থাৎ নিজের সতীত্ব রক্ষা করে।
আমরা কি তাহলে একথা বলতে পারি না যে, তারকারা অভিনয়ে যে চিত্র প্রদর্শন করেন, তা কল্পিত কিংবা অন্যদের জীবনের কোনও ঘটনা প্রদর্শন নয়, তাদের নিজেদের জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি? কিংবা তারা যা প্রদর্শনী করেন, বাস্তবজীবনেও তারা তারই প্রতিফলন ঘটান? একজন অভিনেতা কিংবা অভিনেত্রী কারও জন্য আদর্শ না হলেও সাধারণ মানুষ যেহেতু তাদেরকে সিনেমার পর্দায় দেখে থাকে, তাই তাদের চারিত্রিক অধঃপতন দ্বারা তারাও প্রভাবিত হতে পারে। আর এটাই আমাদের সবচে’ বড় শঙ্কার কারণ। একজন অভিনেতা-অভিনেত্রী5র এধরনের চারিত্রিক অধঃপতনের ঘটনা হাজারও মানুষকে বিপথে চলতে উৎসাহিত করতে পারে। পাপের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকা আমাদের দেশের লোকেরা যখন বাঁচাও বাঁচাও বলে হাপিত্যেশ করছে, তখন তাদের এই স্খলন নিশ্চয়ই খারাপ প্রভাব ফেলবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
এই হলো তারকাদের জীবন! দর্শকরা পর্দায় তাদের দেখেন যে চেহারায়, তাদের আসল চেহারা তা নয়! পাঠক! পৃথিবীর অনেক ইতিহাস সাক্ষীআল্লাহর বিধান ছাড়া শুধু ভালোবাসা কিংবা অন্য কোনও সম্পর্ক মানুষের পারিবারিক কিংবা দাম্পত্য সম্পর্ক অটুট রাখতে পারে নি। পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক- তা যারই হোক না কেন- ধ্বংসের জন্য দায়ী অনেক কিছু। যেমন-
. অনিয়ন্ত্রিত ও উচ্ছৃঙ্খল জীবন।
. পরপুরুষের সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা।
. ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া।
. প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি।
আর সবগুলোর জন্য দায়ী মুক্তবাস। পাঠক! শরীয়তে এর প্রত্যেকটি কাজ জঘন্যতম হারাম বলে বিবেচিত। তাই ইসলামের বিধান পালনকারী একজন ব্যক্তি এথেকে নিরাপদ। অতএব, আপনি চলে আসুন। ইসলামের নিরাপদ তাঁবুতে আপনাকে স্বাগতম!

No comments:

Post a Comment