অরক্ষিত
সম্ভ্রম
-আবু
বকর সিরাজী
হাদীসে
ইরশাদ হয়েছে-
عَنْ
اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنًَّ النَّبِيِّ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ
:
لاَ
يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللّهِ
وَالْيَوْمِ الْآخِرِ تُسَافِرُ مَسِيْرَةَ
يَوْمٍ إِلاَّ مَعَ ذِىْ مَحْرَمٍ
-
আবূ
হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু)
থেকে
বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ
আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেন,
আল্লাহ
ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী
কোনও নারী যেন মাহরাম পুরুষ
অথবা স্বামী ছাড়া সফর না করে।’
[বুখারী
:
১০৮৮]
আলোচ্য
হাদীসে রয়েছে নারীর মর্যাদা,
সম্মান
এবং সর্বোপরি তার নিরাপত্তার
গ্যারান্টি। শরীয়তপ্রদত্ত
এই নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আশ্রয়
নেয়া সকল মুসলিমের একান্ত
কর্তব্য। হাজী-গাজী,
ইমাম-মুআযযিন,
আলেম-মুফতী
কেউই নিজেকে আলাদা ভাবতে পারেন
না শরীয়তের বিধান পালনের
ক্ষেত্রে। যদি কেউ তা ভাবেন
এবং শরীয়তপ্রদত্ত নিরাপত্তাবেষ্টনীর
বাইরে ব্যক্তিপ্রভাব বা উপাধির
বলে বেঁচে যাবেন বলে মনে করেন,
তাহলে
তিনি ভুল করবেন। বাঁচার একমাত্র
পথ শরীয়ত। ইজ্জত ও আব্রু
রক্ষার
একমাত্র রক্ষিত দুর্গ হলো
নববী আদর্শ। এই নববী আর্দশ
লঙ্ঘন করার পরিণতি কী হতে
পারে,
তা
দেখুন নিম্নের ঘটনায়।
ঘটনাটা
বহুদিন আগের। কোনোদিন এ নিয়ে
লিখতে হবে বা লিখব-
এধরনের
চিন্তা কাজ করে নি বলে ঘটনার
চুলচেরা বিশ্লেষণ স্মৃতির
মণিকোঠায় ধরে রাখার প্রয়োজনবোধও
করি নি। সে সময় শুধু ঘটনাটা
আক্ষেপের সঙ্গে পড়েছি আর হৃদয়ে
রক্তক্ষরণ অনুভব করেছি।
একারণেই কিনা জানি না,
মূল
ঘটনাটা আজও আমার হৃদয়পটে
জ্বলজ্বল করছে। গ্লানিময় এসব
ঘটনা আমি স্মরণ করতে চাই না।
এসব অপ্রীতিকর ঘটনার অনুপ্রবেশ
রোধে স্মরণিকার মূল ফটকে বেড়া
দিয়ে রাখতে চেষ্টা করি সব সময়।
তবু অন্দর দরজা দিয়ে প্রবেশ
করে আমার অন্তরে। ছিদ্রপথে
বৃষ্টির ঝাঁপটার মতো আমার
হৃদয়কন্দরে প্রবেশ করে ভিজিয়ে
দিয়ে যায় স্মৃতির পাতা। তরতাজা
করে দিয়ে যায় শরীয়ত লঙ্ঘনের
অশুভ পরিণতির দুঃখময় অনুভূতি।
ঘটনার
শিকার মেয়েটির নাম আমার মনে
নেই। থাকলেও তা প্রকাশ করতাম
না। ছদ্মনাম হিসেবে ধরুন
নাফিদা। নাফিদার স্বামী একটি
সম্মানিত পেশার সঙ্গে জড়িত।
রাসূলুল্লাহ আলাইহিস সালাম
যাদের শানে ইরশাদ করেছেন-
اَلْمُؤَذِّنُوْنَ
أَطْوَلَ النَّاسِ أَعْنَاقًا يَوْمَ
الْقِيَامَةِ -
‘কেয়ামত
দিবসে মুআয্যিনদের গর্দান
মর্যাদার কারণে সবচেয়ে উঁচুতে
থাকবে।’ [মুসলিম
:
৩৮৭]
যাদের
শানে এত বড় মর্যাদার কথা ঘোষিত
হয়েছে,
এত
মর্যাদার কথা বলা হয়েছে,
তারাও
যে ফেঁসে যেতে পারেন,
শরীয়তের
বিধান পালনে বিচ্যুতি ঘটলে
লাঞ্ছনার শিকার হতে পারেন এই
ঘটনা তারই একটা জ্বলন্ত প্রমাণ।
সুদূর
রংপুর বা কুড়িগ্রাম (জেলার
নাম ঠিক স্মরণে নেই)
থেকে
ঢাকায় স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাত
করতে এলেন নাফিদা। দেখা-সাক্ষাত
ও প্রয়োজন পূর্ণ করে ধরলেন
বাড়ির পথ। স্বামী ব্যস্ত
মানুষ। দিনে অন্তত পাঁচবার
ডিউটি পালন করতে হয় তাকে। তাই
স্ত্রীকে সঙ্গ দেয়া বা নিজে
গিয়ে স্ত্রীকে বাড়ি পৌঁছে
দেয়া তার পক্ষে সম্ভব হলো না।
তাই অপরাগতার কারণে হোক কিংবা
গাফলতির কারণে হোক রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু
আলাইহিস সালামের সেই বিধানটির
লঙ্ঘন হলো,
যা
ছিল নারীর সম্ভ্রমরক্ষার
অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর। দুর্বল
প্রাচীরের দখল নিল নারীর
জাতশত্রু।
মুআযযিন
সাহেব শেয়ালের কাছে মুরগী
বর্গা দেয়ার মতো বোকামী করলেন।
গাবতলীর এক বাস কাউন্টার থেকে
একটা টিকিট কিনে স্ত্রীর হাতে
ধরিয়ে দিলেন। কোমল,
অসহায়,
অবলা,
দুর্বল
নারীটিকে (স্ত্রী)
ছেড়ে
দিলেন নিঃসঙ্গ অবস্থায়। গাড়িতে
উঠিয়ে দেবার সময় বাসের হেলপার,
সুপারভাইজারকে
অনুরোধ করলেন তাকে যেন ঠিক-ঠিক
গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া হয়।
গাড়ির গন্তব্যের আগেই নারীর
গন্তব্য স্থান। অর্থাৎ-
মূল
ষ্টেশনের আগেই নাফিদার বাড়ি।
তাই তার স্বামী পুনঃপুনঃ
অনুরোধ করলেন হেলপার-সুপারভাইজারকে,
যাতে
তার স্ত্রীকে যথাস্থানে নামিয়ে
দেয়া হয়। এই অনুরোধকর্মের
মধ্য দিয়ে লঙ্ঘিত হলো রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু
আলাইহিস সালামের সেই সতর্কবাণী,
যাতে
নারীকে সফরে একা ছেড়ে দিতে
কিংবা গায়রে মাহরামের সঙ্গে
ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
ফলে
সম্ভ্রমের রক্ষাকবচ নস্যাৎ
হয়ে যাওয়ায় নাফিদার জীবনে
নেমে এলো দুর্যোগের ঘনঘটা।
যার মাশুল দেয়া তাদের পক্ষে
আর কোনও দিন সম্ভব হবে না।
কেননা,
সম্ভ্রমের
কোনও মূল্য দেয়া যায় না এবং
তা হাত ছাড়া হয়ে গেলে জগতের
কোনও বস্তু দ্বারাই তার
ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায় না।
অসহায়
নাফিদাকে তার গন্তব্যে নামিয়ে
দেয়ার পরিবর্তে নিয়ে যাওয়া
হলো সম্ভ্রমহানীর বধ্যভূমিতে,
যার
ক্ষুধার্ত নেকড়েরা হলো ড্রাইভার,
সুপারভাইজার
আর হেলপার। উন্মত্ত,
উন্মাদ
এই তিন নরখাদক ঝাঁপিয়ে পড়ল
নাফিদার ওপর। তিন শকুনের
কামনার নখরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত
হলো তার সম্ভ্রমের অস্তিত্ব।
রাতের আঁধারে মিলিয়ে গেল
সম্ভ্রম,
ইজ্জত
আর নিষ্কলুষ সতীত্বের গর্ব
করার অধিকার।
এ
ক্ষতি পুষবার নয়। এ ব্যর্থতার
পর আশার কোনও বাণী নেই। এ
পরাজয়ের পর কোনো বিজয় নেই।
তবে প্রতিষেধক আছে আল্লাহয়ী
বিধান। অন্য নারীরা যেন এথেকে
সবক নেন,
অভিভাবকরা
যেন নিজেদের নারীদের ব্যাপারে
এক্ষেত্রে সচেতন হন এটাই আমার
কামনা। এই ঘটনা থেকে তারা যদি
শিক্ষা নেন,
তাহলে
আমার শ্রম সার্থক হয়েছে বলে
মনে করব।
No comments:
Post a Comment