নিরত্যয়
শিক্ষক :
নিরিন্দ্রিয়
অভিভাবক
- আবু
বকর সিরাজী
﴿
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا
تَخُونُواْ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ
وَتَخُونُوٓاْ أَمَٰنَٰتِكُمۡ وَأَنتُمۡ
تَعۡلَمُونَ ٢٧ ﴾
[الانفال:
٢٧]
‘তোমরা
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে
বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং
নিজেদের মধ্যকর আমানতও জেনেশুনে
ভঙ্গ করো না।’ {সূরা
আল-আনফাল,
আয়াত
:
২৭}
রাসূলুল্লাহ
আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেন :
«لَا
إِيمَانَ لِمَنْ لَا أَمَانَةَ لَهُ،
وَلَا دِينَ لِمَنْ لَا عَهْدَ لَهُ»
‘যার
মধ্যে আমানতদারী নেই,
তার
ঈমান নেই এবং যে অঙ্গীকার
রক্ষা করে না,
তার
দ্বীনদারী নেই।’ [মুসনাদ
আহমাদ :
১২৫৬৭]
আলোচ্য
আয়াত ও হাদীসে আমানত রক্ষার
জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে এবং যার
আমানতদারী নেই তার মধ্যে দ্বীন
নেই বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
স্মর্তব্য যে,
আমানতের
অনেক প্রকার রয়েছে। আর এগুলোর
মধ্যে সবচে’ বড় হলো সম্ভ্রমের
আমানত। আর তা যদি হয়,
বিশ্বাসনির্ভর
কোনও ব্যাপার,
তাহলে
তার গুরুত্বের তো শেষই নেই।
একজন অভিভাবক যখন তার কন্যাকে
কোনও শিক্ষকের হাওয়ালা করেন,
তখন
বিশ্বাস করেই তা করেন। তিনি
নিশ্চিত থাকেন যে,
এ্যাকুরিয়ামের
মাছ যেমন কাঁচের চার দেয়ালে
নিরাপত্তায় থাকে,
তেমনি
তার কন্যাটাও শিক্ষকের
আমানতদারীর চার দেয়ালে রক্ষিত
থাকবে। কিন্তু সেই শিক্ষকের
মধ্যে যদি ইসলামের আমানতদারী
না থাকে,
তাহলে
সম্ভ্রমের আমানতদারীও থাকার
কথা নয়। যার মধ্যে আল্লাহকে
ভয় করার গুণ নেই,
তার
মধ্যে মানুষের সমালোচনার
আশঙ্কাও কোনও কাজ করে না। এর
প্রমাণ রাখলেন আব্দুল লতিফের
পর মতিয়ার রহমান।
রাজধানীর
বনশ্রীর আইডিয়াল স্কুল এন্ড
কলেজের ছাত্রী কারিমা (ছদ্মনাম)।
নবম শ্রেণীর ছাত্রী সে। সে
একই স্কুলের শিক্ষক মতিয়ার
রহমানের বাসায় প্রাইভেট পড়ত।
দীর্ঘদিন থেকে ওঁৎ পেতে ছিলেন
শিক্ষক মতিয়ার রহমান। ছাত্রীর
সম্ভ্রমের দুর্গে আঘাত হানার
প্রহর দীর্ঘ হচ্ছিল তার।
কিন্তু তিনি নৈরাশ্যবাদী লোক
নন। এসব ক্ষেত্রে নিরাশ হলে
চলে না-
এটাই
তার দর্শন। কারণ,
এই
রণাঙ্গনের একজন অভিজ্ঞ যোদ্ধা
তিনি। এর আগেও অভিজ্ঞতার
প্রমাণ দিয়েছেন। তাই বলা যায়,
অভিজ্ঞতার
ঝুলি তার সমৃদ্ধ!
সেটা
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের
ঘটনা। এলাকাবাসী তখনই চিনেছে
মতিয়ার রহমান আসলে কী চিজ!
সে
সময়ও তিনি ওই স্কুলের অন্য
এক ছাত্রীর সম্ভ্রমহানীর
ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। কিন্তু আজব
এই দেশ!
এদেশের
কর্তৃপক্ষের ক্ষমার বদান্যতা
সাগরের চেয়েও বিশাল। তাই এমন
একটা অপরাধ করার পরও পার পেয়ে
যান ওই শিক্ষক। স্কুল থেকে
তাকে বহিষ্কার করা হলেও তদবির
করে তিনি চাকুরী ফিরে পান।
অকৃতজ্ঞের যে স্বভাব ফিরে
এসে সেটাই করেন শিক্ষক মতিয়ার
রহমান। বেশ কিছুদিন চুপচাপ
থেকে তিনি আবার আবির্ভূত হন
তার আসল চেহারায়। এবার তার
লালসার শিকার মিউচুয়াল ট্রাস্ট
ব্যাংকের এক কর্মকর্তার মেয়ে
নবম শ্রেণীর এক কুমারী মেয়ে।
ঘটনার
বিবরণে জানা গেছে,
কারিমা
ওই স্কুলের গণিত ও বিজ্ঞান
বিভাগের শিক্ষক মতিয়ার রহমানের
কোচিং সেন্টারে পড়ত। গত
৭/১০/২০১০ইং
তার কাছে নিয়ম মোতাবেক পড়তে
যায়। সেদিনটি ছিল শিক্ষক
মতিয়ারের জীবনের হয়ত সেরা
দিনের একদিন। যে দিনের অপেক্ষায়
ছিলেন তিনি বকের মত এক পায়ে
দাঁড়িয়ে। সে দিন বাসায় স্ত্রী
ছিলেন না। তাই পুরোদমে সুযোগের
(অ)সৎ
ব্যবহার করেন তিনি। যুবক
শিক্ষককে সম্ভ্রমের যামিন
মনে করে সরল বিশ্বাসে তার কাছে
প্রাইভেট পড়তে আসা কিশোরীর
সঙ্গে প্রতারণা করেন তিনি।
তার অজান্তে কোমল পানীয়ের
সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে
তাকে পান করিয়ে অচেতন করা হয়।
এভাবে তার কামনার হীনস্বার্থ
উদ্ধারের পথ উন্মুক্ত হয়ে
যায়। একজন অচেতন যুবতী নারীর
ওপর পাশবিকতার সর্বশক্তি
নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মাস্টার
মশায়!
চেতনা
ফিরে পেয়ে কারিমা দেখে তার
সব শেষ হয়ে গেছে। মলমপার্টি,
অজ্ঞানপার্টির
খপ্পরে পড়ে মানুষ সম্পদ হারায়,
তা
জানা ছিল তার। কিন্তু সমাজের
এমন এক ধরনের মলম পার্টিও আছে,
যারা
মলম বা চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার
করে নারীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ
সতীত্ব লুটে নেয়,
তা
তার জানা ছিল না। এসব মলমপার্টি
তাদের আসল চেহারা লুকিয়ে রাখে
শিক্ষক,
মন্ত্রী,
পিএস
ইত্যকার পদবীর নামে,
তাও
তার জানা ছিল না।
আক্ষেপ
হয় কারিমার জন্য!
সভ্যতার
হাহাকারে এই সমাজে তাকে এই
জ্ঞানটুকু অর্জন করা দরকার
ছিল। তাহলে আজ তাকে সতীত্বের
ভিখারী হতে হতো না। সতীত্বের
বাজারে তাকে একজন রিক্তহস্ত
মহাজন বনতে হত না। তাই অচেতনার
জগত থেকে জেগে উঠে সে নিজেকে
আবিষ্কার করেছে এক দাঁতালো
বন্যজন্তুর সামনে। এই একটু
আগে যার কাছে সে পরম শ্রদ্ধায়
জ্ঞান শিখতে এসেছিল,
সেই
লোকটি এখন তার চোখে একটি নরখাদক,
সম্ভ্রমলুটেরা
ছাড়া আর কিছু নয়। যে তার
সম্ভ্রমহানীর বদলা দিচ্ছে
শয়তানী ক্রুর হাসি দিয়ে। শুধু
তা-ই
নয়। এই ঘটনা যেন ফাঁস না হয়,
তার
জন্য দস্তুরমত হুমকি দিয়ে
চলেছে মতিয়ার রহমান!
হায়
সমাজ!
ইজ্জত
যাওয়ার অধিকার আছে,
সম্ভ্রমহানীর
সুযোগ আছে,
কিন্তু
প্রতিকার চাওয়ার অধিকার নেই!
আসলে
এক গুহায় দুইবার পা দেয়া
বুদ্ধিমান মানুষের কাজ নয়।
হাদীসেও এসব লোককে অসম্পূর্ণ
মুমিন বলে অভিহিত করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে আমি দোষ দেব কারিমা,
তার
মা-বাবা
এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ সবাইকে।
কারণ,
শিক্ষক
নামের এই শিয়ালপণ্ডিতের কাছে
তারা নিজেদের সম্ভ্রমকে বর্গা
না দিলেও পারতেন। কেননা,
এই
লোকটির এধরনের স্বভাব তো এই
প্রথম নয়!
এর
আগেও তিনি এই স্কুলে থাকতেই
এধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।
সেবারও তিনি অন্য আরেকজন
ছাত্রীর সম্ভ্রম লুট করেছিলেন।
অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে
স্কুল থেকে চাকুরিচ্যুতও করা
হয়েছিল। এতশত জানার পরও শিক্ষক
মতিয়ার রহমানকে কেন প্রশ্রয়
দেয়া হলো এবং অভিভাবকরা তার
প্রতি আস্থা রাখলেন কেন?
সেই
প্রশ্নও কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার
মতো নয়। এই প্রশ্নের সমাধান
আনতে পারলে এ ধরনের পাপের
অনেকাংশই লাঘব হতে পারে। যে
মতিয়ার দমবার পাত্র নন,
সমাজের
অপ্রকৃতিস্থ লোকের সহায়তায়
পার পেয়ে ফিরে এসে নিজ পাপ
স্বভাবে জ্বলে ওঠেন এবং তার
এই জ্বলে ওঠার দাবানলে পুড়ে
খাক হয়ে যায় কারিমাদের সম্ভ্রমের
কচি তাজা পাতা। সেটার জন্য
এক মতিয়ারকে দোষ দেয়া উচিত
হবে না। অন্যথায় অপরাধ সংঘটিত
হওয়ার মূল কারণগুলো মানুষের
দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে যাবে
এবং পাপ তার আপন পথে বাধাহীন
গতিতে চলতে থাকবে। তাই লেজ
কাটা আর গায়ের রং বদলানো
মতিয়াররা যেন আবার সম্ভ্রমলুটেরা
হুক্কাহুয়ার ডাকে জেগে উঠতে
না পারে,
সে
জন্য সকল মুসলিমকে বুদ্ধিমত্তার
পরিচিয় দিতে হবে। সজাগ থাকতে
হবে এরা যেন আর কখনও রচনা করতে
না পারে কারিমাদের সম্ভ্রমহানীর
কাহিনী।
কী
বিচিত্র এই সমাজ!
যে
ছাত্রীরা ছিল শিক্ষকদের আমানত,
তাদের
কন্যার মতো,
সেই
শিক্ষকরাই আমানতগুলোকে এভাবে
নষ্ট করছে,
লুট
করছে কন্যাতুল্য ছাত্রীদের
সম্ভ্রম!
হে
মাবুদ!
শিক্ষার
আলো দ্বারা যারা আরো দশজনকে
আলোকিত করবে বলে মানবতার কাছে
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারাই
মানবতাকে এভাবে পদদলিত করছে!
হে
আল্লাহ!
আমাদেরকে
এই বিচিত্রতার কারণ বুঝার
তাওফীক দাও। সবশেষে বলব,
শিক্ষক
সুযোগ পেয়েই দুর্দমনীয় হয়ে
উঠছেন। তাই তিনি নিরত্যয়,
এদিকে
অভিভাবকগণ যেন ইন্দ্রিয়হীন
হয়ে পড়েছেন তাই তারা নিরিন্দ্রিয়।
দুর্বোধ্য শিরোনামের মতোই
আমাদের দুর্বোধ্য সমাজব্যবস্থায়।
[তথ্যসূত্র
:
দৈনিক
আমার দেশ,
শুক্রবার
২রা নভেম্বর ২০১০ ইং]
No comments:
Post a Comment