নারীসত্তা
:
বহুবৈচিত্রের
আধার
নারী
আল্লাহর এক অপার মহিমাময়
সৃষ্টি। বিস্ময়কর বৈপরীত্যের
আধার। সৃষ্টিকর্তার অদ্ভুত
মিশেল তার উপাদান। আগুন-পানির
সফল সমন্বয়। ভাঙা-গড়ার
মিশ্র অনুভূতির সরল উপমা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের
পবিত্র যবানে উচ্চারিত হয়েছে
তাদের সম্পর্কে এই মিশ্র
মন্তব্য। কখনও তাদেরকে আখ্যায়িত
করেছেন-
‘পৃথিবীর
সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ’ বলে।
কখনও বা আখ্যায়িত করেছেন-
‘শয়তানের
জাল’ হিসেবে।
কখনও
তাদের জ্ঞানের কারিশমা দেখে
মুগ্ধ হয়েছেন,
আবার
কখনও নির্বুদ্ধিতার কারণে
তাদের সৃষ্টিনির্যাসের কথা
তুলে ধরেছেন।
আমরা
যদি অতীত ইতিহাসকে যোগ করি,
তাহলে
অবিশ্বাস্য রকমের বৈপরীত্য
দেখতে পাই নারীসত্তায়। দেখতে
পাই,
নারী
কখনও ইবরাহীমের ঘরের মক্কার
চাটিয়াল ভূমির ‘মুতিআ’
হাজেরা।
কখনও আবার লূতের (আ.)
ঘরের
‘নাশেযা’
ওয়াইলা
(লূত
আ.
এর
অবাধ্য স্ত্রীর নাম,
[জালালাইন])।
নারী
কখনও অবিশ্বাসী ফেরআউনের
ঘরের বিশ্বাসী আছিয়া,
আবার
কখনও বিশ্বাসী নূহের (আ.)
ঘরের
অবিশ্বাসী স্ত্রী ওয়াহিলা।
নারী
কখনও আইয়ূব (আ.)-এর
ঘরের পরম ধৈর্য্যশীলা রহিমা,
যিনি
সীমাহীন কষ্ট ভোগ করে স্বামীর
জন্য খাবার জোগাড় করতেন। আবার
কখনও লূতপত্মী ওয়াইলা,
যে
স্বামীর বিরুদ্ধে মানুষকে
উস্কে দেয়ার জন্য ঘুরে বেড়াত।
নারী
কখনও উম্মে সুলাইত (রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু),
ওহুদের
ময়দানে যিনি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ও সাহাবায়ে কেরামের জন্য
জীবনবাজি রেখে পানি পৌঁছিয়েছেন।
আবার কখনও যয়নব বিনতে হারেছ
ইহুদীয়া,
যে
খায়বরে বকরীর সঙ্গে বিষ মিশ্রণ
করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের
সামনে পরিবেশন করেছে।
নারী
কখনও খাওলা বিনতে হাকীম
(রাদিয়াল্লাহু
‘আনহা),
যিনি
পার্থিব সব কিছু বিসর্জন দিয়ে
শুধু রাসূলের বিবি হওয়ার গৌরব
অর্জন করতে নিজেকে ভরমজলিসে
তাঁর সমীপে পেশ করেছিলেন।
বলেছিলেন-
يَا
رَسُوْلَ اللهِ اِنِّيْ وَهَبْتَ لَكَ
نَفْسِىْ -
এই
নারীর প্রশংসনীয় দুঃসাহসকে
খাটো করেছিলেন আনাস রাদিয়াল্লাহু
‘আনহুর কন্যা। একবার তিনি
বললেন,
একজন
নারী কী করে পারে নিজেকে কারো
সামনে বিয়ের পাত্রী করে উপস্থিত
করতে!
জবাবে
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু
বলেছিলেন-
هِيَ
خَيْرٌ مِنْكِ رَغِبَتْ فِى النَّبِىِّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
فَعَرَضَتْ عَلَيْهِ نَفْسَهَا-
তিনি
তোমার চেয়ে অনেক শ্রেষ্ঠ।
কেননা,
তিনি
রাসূলের মহব্বতে নিজেকে তাঁর
সমীপে পেশ করেছিলেন। [বুখারী:
৫১২০]
আবার
এই নারীই কখনও আমরা বিনতে
জাওন,
যে
নবীর স্ত্রী হওয়ার গৌরব
প্রত্যাখ্যান করেছিল। বুখারী
শরীফে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু
‘আনহা
থেকে বর্ণিত হয়েছে,
أَنَّ
ابْنَةَ الْجَوْنِ لَمَّا أُدْخِلَتْ
عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَدَنَا مِنْهَا
قَالَتْ أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ -
فَقَالَ
لَهَا لَقَدْ عُذْتِ بِعَظِيمٍ، الْحَقِى
بِأَهْلِكِ –
জাওনের
কন্যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের
কাছে স্ত্রী হিসেবে পেশ করা
হলো এবং তিনি তার নিকটবর্তী
হতে গেলেন। তখন সে বলল,
আমি
আপনার হাত থেকে পানাহ্ চাই।
তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তুমি
মহান সত্তার কাছে আশ্রয়
প্রার্থনা করেছ। অতএব,
তুমি
মুক্ত। তুমি তোমার পরিবারের
কাছে চলে যাও। [বুখারী
:
৫২৫৪]
আবূ
উসায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর
বর্ণনায় আছে,
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন-
هَبِّيْ
نَفْسَكِ لِيْ قَالَتْ :
وَهَلْ تُهِبُّ
الْمَلِكَةُ نَفْسَهَا لِلسَّوْقَةِ ؟
‘তুমি
আমার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ
হও। সে বলল,
কোনো
রাণী কি নিজেকে সাধারণ প্রজার
হাতে অর্পণ করতে পারে?’
তার
কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু
কাপড়চোপড় দিয়ে ভালো ব্যবহার
করে বিদায় করে দিলেন। [প্রাগুক্ত
:
৫২৫৫]
এই
মহিলার নাম নিয়ে বেশ মতভেদ
আছে। উমাইয়া বিনতে নোমান,
ফাতেমা
বিনতে দাহহাক,
আছমা
বিনতে নোমান,
সানা
বিনতে সুফয়ান প্রভৃতি নাম
পাওয়া যায়। [ফাতহুল
বারী :
৯/৩২৫-৩৩২]
কী
অদ্ভুত বৈচিত্র!
এক
নারী যে সৌভাগ্য লাভ করার আশায়
ভরমজলিসে নিজেকে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু
আলাইহিস সালামের সামনে উপস্থাপন
করে ব্যর্থ হয়েছেন,
সেই
সৌভাগ্য নিজের ভাগ্যাকাশে
উদিত হওয়া সত্ত্বেও তা থেকে
আলো সংগ্রহ করল না আরেক নারী!
নারীবৈচিত্রের
এ কী বিরল দৃষ্টান্ত!
নারী
কখনও বিলকিস,
যিনি
‘সিংহাসনের’
মালিকা
হওয়া সত্ত্বেও নবী সমীপে
আত্মসমর্পণকারিনী। আবার কখনও
তুলাইহা,
যে
নবুওয়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহিনী।
নারী
কখনও সম্ভ্রমে-চারিত্রিক
পবিত্রতা রক্ষায় পাহাড়প্রমাণ
দৃঢ়,
প্রতাপশালিনী।
আবার
কখনও যুলায়খা,
যে
নবীর মতো নিষ্পাপ ব্যক্তিকেও
বিভ্রাটে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা
করে।
ইতিহাসের
সাগর থেকে সেঁচা কয়েকটি উপমা
উল্লেখ করলাম। নারী এমনিই,
এমনিই
তার মিশ্র উপাদান। রহস্যময়তায়
ঘেরা তার সৃষ্টি। যার রহস্যময়তার
সামনে চিন্তার বৈকল্য দেখা
যায়। জায়া-জননী-দুহিতা
সবাই এক ইমামের মুক্তাদী!!
আমাদের
মায়ের কথাই বলি। পিতার প্রাচুর্যের
কোনো কমতি ছিল না। তার মতো
জমিদারী কেউ পেয়েছিলেন কিনা
তা আমার জানা নেই। তবু তার মনে
সুখ নেই,
শান্তি
নেই। যেখানে প্রাচুর্য দু’পায়ে
লুটোপুটি খায়,
যে
বাগান থেকে ইচ্ছা ফল ছিঁড়ে
খেতে পারেন যা ইচ্ছা তা-ই
করতে পারেন,
তবু
সুখ নেই কেন?
অসুখ
ছিল মূলত শূন্যতার। আল্লাহ
তা‘আলা
সেই শূন্যতা দূর করলেন। একজন
বিপরীত লিঙ্গের মানুষ পেয়ে
পিতার সুখপাখিটা মুক্ত আকাশে
ডানা মেলল। তিনি আবেগাপ্লুত
হলেন। সেই সুযোগে ফেরেস্তাগণ
তাকে জিজ্ঞেস করলেন-
আপনি
কি তাকে ভালোবাসেন?
কিছুমাত্র
বিলম্ব না করে পিতা জবাব দিলেন,
অবশ্যই!
এবার
মায়ের পালা। ফেরেস্তাগণ তাকেও
জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু তাদেরকে
হতবাক করে দিয়ে তিনি জবাব
দিলেন,
‘না’।
বিস্মিত
ফেরেস্তাকুল। এ কোন্ রহস্যময়তা,
যার
গাঁথুনীতে গড়ে তোলা হয়েছে
নারী জাতিকে?
সেই
রহস্যময়তার ব্যাখ্যা করেছেন
ইমাম কুরতুবী রহ.।
তিনি বলেন-
وَ
فِيْ قَلْبِهَا اَضْعَافٌ مُضَاعَفَةٌ
مِنَ الْحُبِّ وَلَوْ صَدَقَتِ الْمَرْأَةُ
فِيْ حُبِّ زَوْجِهَا لَصَدَقَتِ
الْحَوَاءُ -
‘অথচ
তার অন্তরে তারও চেয়ে বেশিগুণ
ভালোবাসা লুকায়িত ছিল। তো
কোনো নারী যদি তার স্বামীর
ভালোবাসার প্রকৃত অবস্থা
প্রকাশে সত্যবাদী হতো,
তাহলে
হাওয়া আলাইহাস সালাম সত্য
কথা বলতেন। [কুরতুবী]
এই
হলো নারী,
যার
রহস্যময়তা নিরবধি এগিয়ে চলে
কালের স্রোতে কলকল ধ্বনিতে।
এ যুগ হতে সে যুগ পর্যন্ত। এ
কারণে তার মধ্যে তুমি দেখতে
পাবে হাজারও বৈপরীত্য। তুমি
তাকে ভালোবাসবে,
সে
তোমার ভালোবাসাকে নিকুচি
করবে। কখনও অন্যের উস্কানীতে
মিথ্যার মশলা দিয়ে নির্মাণ
করবে বিরাট বাঁধ,
যা
দেখে মুগ্ধ হওয়া যায়;
কিন্তু
তাতে আরোহণ করা যায় না। কখনও
তুমি তাকে আবিষ্কার করবে
বাদকের অনুগত বাদ্যযন্ত্র
হিসেবে,
যা
অর্থহীন প্রলাপে,
কর্কশ
শব্দে বিঘ্ন করে শান্তির
পরিবেশ। সে হ্যামিলনের
বাঁশীওয়ালা,
যার
বাঁশীর আহবানে সাড়া দিয়ে
মিথ্যার নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে
সমগোত্রীয় একদল ‘শিশু’!
তারা
কাল্পনিক গল্পকার। মিথ্যার
এক ফোঁটা অনুজ্জ্বল কালি
দিয়ে রচনা করে বিরাট গল্প।
সচেতন পাঠক যার উপসংহার পাঠ
করে অনুতপ্ত হয় নিরর্থক কথিকা
পাঠ করার অনুশোচনায়। সরলতা
তাদের বইয়ের প্রচ্ছদ। চোগলখোরী
তাদের মূলপাঠ্য।
তারা
পুঁথিপাঠক,
শ্রোতা
যাদের তন্ময় ও ভাবলেশহীন।
তন্ময়তা যাদের দৃষ্টি থেকে
‘ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া
চলিল’-
বাক্যের
অর্থটাকে আড়াল করে রাখে।
তাদের
বিশ্বাসের আঙিনাটা ফাঁপা
বেলুন,
যা
অবিশ্বাসের ঊর্ধ্বগামী বায়ুর
চাপে সদা ফেটে পড়তে উদগ্রীব
থাকে এবং গল্পের সঙ্গিনীর
মৃদুচাপে তা মুহূর্তে চুপসে
যায়। মনে রেখ,
নারীর
গল্পের সঙ্গিনীর কেউ কেউ আমরা
বিনতে আমর,
হায়দারা,
হিন্দ
বিনতে আওস,
কাবশা
বিনতে আরকাম। সবাই কিন্তু
উম্মে যার‘ নয়!
সৃষ্টিকর্তার
অপার সৃষ্টিরহস্যে সৃষ্ট এই
জাতি। সৃষ্টিকর্তাকে যেমন
জ্ঞান দিয়ে বেষ্টন করা সম্ভব
নয়,
তেমনি
অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব নয় তার
এই সৃষ্টির রহস্য উদঘাটন করাও।
পাশ্চাত্যে ‘three
w’
কথাটি
বেশ শোনা যায়। অর্থাৎ Work,
Woman, Wather তথা
নারী,
কর্ম
ও আবহাওয়া-
এই
তিনটি বস্তুর নাকি আগা-মাথা
পাওয়া দায়!
তাই
কখনও তুমি তাকে বিভ্রান্ত
হতে দেখবে,
কখনওবা
দেখবে বিভ্রান্ত করতে।
নারীসত্তায় বাতিকের গুণ
মাখামাখি। ছিদ্রান্বেষণে
সূঁচের জায়গায় তারা কুড়াল
চালাতে জানে!
ঘাসের
ওপর জমা শিশিরের পানিকে জলাশয়
মনে করে কাপড় গোটাতে জানে!
তারা
পুরুষের লেবাস। কখনও তারা
পুরুষকে প্রকাশ করে তার আসল
লেবাসে। কখনওবা প্রকাশ করে
ভাবতাড়িত হয়ে কল্পনার
শীর্ণবস্ত্রে।
নারী
এক বিস্ময়কর আলো,
যা
সূর্যের প্রখরতায় প্রকাশ
পায়। আবার কখনও অদ্ভুত অন্ধকার,
যা
বাতির নিচে বাস করে। মৃত্যু
যদি জীবনের সহোদরা হয়,
তবে
ফেতনা নারীর সহযাত্রী। সে
তার সফরসঙ্গী থেকে কখনও
বিচ্ছিন্ন হয় না।
সে
তোমাদের দর্পণ। ‘মুমিন আরেক
মুমিনের আয়না’।
আয়নার
দর্শক কখনও তাতে ব্যক্তির
আসল চেহারা দেখতে পায়,
কখনওবা
তাতে অবিশ্বাস আর কল্পনার
আস্তর পড়ায় দেখতে পায় বিকৃত
ভিন্ন চেহারা। এতো দৃশ্যিতের
দোষ নয়,
দর্শকের
দেখার ভুল!
কেউ
স্বপ্নে মহানবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভিন্ন
অবস্থায় দেখলে সেটা হবে দর্শকের
নিজের রুগ্নতার লক্ষণ। আহলে
হক তা-ই
বলেন।
কেউ
যদি তার পরিচিতজনকে জিজ্ঞেস
করে-
তোমার
নাকি মাথা নেই?
তাহলে
ওই লোকটি কী করবে?
হয়ত
প্রশ্ন শুনে সে আকাশ থেকে পড়বে
কিংবা আকাশ তার ওপর ভেঙে পড়বে।
বিস্মিতস্বরে বলবে,
বলেন
কী আপনি!
-হুঁ,
তাইতো
শুনলাম। এক নারী নাকি তোমাকে
মস্তকবিহীন অবস্থায় দেখেছে!
হায়
নিরস কৌতুক!
পৃথিবীর
সবকিছুই কি তালাক,
ইতাক
আর নিকাহর মতো ‘জাদ্দুহুন্না
জাদ্দুন ওয়া হাযলুহুন্না
জাদ্দুন-
বাস্তবও
বাস্তব,
কৌতুকও
বাস্তব?
হে
মানুষ!
আয়নাটা
তো কাচের একটা যন্ত্রমাত্র।
কখনও তাতে যুক্ত হয় ধূলির
আস্তর,
কখনও
বা হয় বিচূর্ণ। তবে তুমি কী
করে একটি দৃশ্যের আসল অবস্থা
দেখার জন্য এই আস্তরপড়া বিচূর্ণ
দর্পণের আশ্রয় নিয়ে নিজের
বিবেকটাকে শিকেয় তুলে রাখো?
কোথায়
নেই নারী?
কবির
কাব্যে,
লেখকের
লিখনীতে,
সাধকের
সাধনায়,
বিরাগীর
বৈরাগ্যে-
সর্বত্র
তার অবাধ বিচরণ। নারীসত্তার
একটি মিশ্র অনুভূতি কখনও জন্ম
দেয় একটি লেখার,
কখনওবা
কাব্যের কখনওবা বিরাট ইতিহাসের।
কখনও কবি নজরুলের সঙ্গে সুর
মিলিয়ে গাইতে ইচ্ছা করে-
পৃথিবীতে
যা কিছু মহান চিরকল্যাণকর
অর্ধেক
তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার
নর।
আবার
কখনও বিকৃতি ঘটিয়ে বলতে ইচ্ছা
হয়-
পৃথিবীতে
যা কিছু ফেতনা,
অসত্য
অকল্যাণকর
নব্বইভাগ
তার সৃজিয়াছে নারী বাকি দশে
হয়ত নর!
তবে
সব কথার ঊর্ধ্বের কথা হলো নারী
সমাজের অর্ধেকাংশ। নারী ছাড়া
সমাজ অচল। যে ভাঙবে,
সেই
আবার গড়বে। একবার ভাঙতে দেখে
ভেঙে পড় না। রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা
ইরশাদ করেন-
নারীর
একটা অন্যায় দেখে চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নিয়ো না। একবার
অন্যায় করলে দেখবে,
সে-ই
আবার আরেকটি পুণ্য নিয়ে আসবে1।
তাই
তাদের মিশ্রশক্তিকে সঙ্গে
নিয়েই সমাজ-সংসারটাকে
এগিয়ে নিতে হবে। রাসূলুল্লাহ
আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেন-
اَلْمَرْأَةُ
كَالضِّلْعِ
اِنْ اَقَمْتَهَا كَسَرْتَهَا وَاِنِ
اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اِسْتَمْتَعْتَ
بِهَا وَمَعَهَا ضِلْعٌ -
‘নারী
বাঁকা পাঁজরের মতো। তুমি তাকে
সোজা করতে গেলে ভেঙেই ফেলবে।
তাই এই বক্রতা নিয়েই তার দ্বারা
উপকৃত হও।’ [বুখারী
:
২/৭৭৯]
নারীসত্তার
এই বৈপরীত্য দ্বারা অনুমান
করতে পারি তার মধ্যে দুই গুণই
আছে। আছে দ্রোহ। আছে আনুগত্য।
সে ইচ্ছা করলে পর্দার বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করে মুক্তবাসিনী হতে
পারে। আবার আনুগত্য প্রদর্শন
করে হতে পারে পর্দাবাসিনীও।
তার পারাটা বড় বিষয় নয়,
পারার
ধরণটা বড় বিষয়। নারীকে সিদ্ধান্ত
নিতে হবে,
সে
নিজের সম্ভ্রমবোধকে পর্দার
রেশমী রুমালে আড়াল করে রাখবে,
নাকি
খোসা ছাড়া কলার মতো মশা-মাছির
খাবারে পরিণত করবে?
একটুখানি
সুশৃঙ্খল,
পর্দাবেষ্টিত
জীবন যদি নারীকে সম্ভ্রম
রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়,
তবে
তা হবে খুবই সস্তামূল্যে দামি
বস্তু ক্রয়। কে আছে এমন বণিক,
যে
সূঁচের বদলায় স্বর্ণবার গ্রহণ
করতে চায় না!
নারী
সম্পর্কে দীর্ঘসূত্রে আমাকে
এই অনুভূতি প্রকাশ করতে হলো।
কেউ যদি আমার কাছে এ সম্পর্কে
কৈফিয়ত তলব করেন,
তাহলে
আমি বলব-
اَلتَّقِيُّ
مُلْجَمٌ لاَ يَقْدِرُ اَنْ يَّتَكَلَّمَ
بِكُلِّ مَا يُرِيْدُ
-
‘মুমিনের
মুখে লাগাম লাগানো থাকে,
সে
ইচ্ছা করলেই সবকিছু বলতে পারে
না।’ আর আসল কৈফিয়ত দেবো-
‘যেদিন
সব রহস্য উন্মোচন করা হবে’
সেদিন। দুনিয়াতে যে সহজ কথা
যায় না বলা সহজে!
No comments:
Post a Comment