১০ই
ডিসেম্বর ২০১০
ইং
ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ২৫
হাজার
দর্শক মেতে উঠেছিল আনন্দমেলায়।
অশ্লীল নৃত্য আর উলঙ্গ বেহায়াপনায়।
সেদিন বলিউড কিং শাহরুখ খানের
লাইভ শো ‘কিং
খান লাইভ ইন ঢাকা’
অনুষ্ঠিত
হয়। অনুষ্ঠানের পঁচিশ হাজার
দর্শককে মাতাতে আপ্রাণ চেষ্টা
করেন শাহরুখ খান। তাকে সঙ্গ
দেয় ভারত থেকে আসা সহশিল্পীরা।
অনুষ্ঠানে পারফর্ম করে রানী
মুখার্জী,
অর্জুন
রামপালসহ দলের অনেকেই।
একটি
বিদেশী সংস্কৃতি নিয়ে ঢাকায়
বেশ কিছুদিন মাতামাতি চলে।
টিকিট বিক্রি,
প্রচার-প্রসার,
বিলবোর্ড
স্থাপন,
রেডিও
টিভিতে শোরগোর,
মোবাইল
কোম্পানিগুলোর উপরি আয়-
সব
মিলে এক পাগলামো বখাটেপনা!
টিকিটের
দাম ছিল সর্বনিম্ন ৩,০০০
এবং সর্বোচ্চ ৫০,০০০
টাকা। পঁচিশ হাজার দর্শক টিকিট
বাবদ মোট কত টাকা বহন করেছে
তা সহজেই অনুমানযোগ্য। গড়
হিসেবে তা অর্ধশত কোটি টাকার
কম নয়!
আয়োজকরা
প্রথমে বলেছিলেন শাহরুখকে
দেয়া হবে ৫৫ লাখ টাকা। হাস্যকর
বটে। শাহরুখ যেখানে নিজ দেশেই
পাঁচ-ছয়
কোটি রুপির কমে কনসার্ট করেন
না,
সেখানে
অন্য দেশে এসে সে দেশের টাকার
হিসেবে মাত্র ৫৫ লাখ টাকায়
কনসার্ট করবেন?
একটি
দুগ্ধপোষ্য শিশুও মনে হয় তা
বিশ্বাস করবে না। তাই স্বভাবতই
এনবিআরও তা বিশ্বাস করে নি।
ফলে আটকে দেয়া হয় শাহরুখের
আগমনযাত্রা। তার আসার কথা
ছিল বৃহস্পতিবার। করের বিষয়টি
সুরাহা না হওয়ায় কাস্টমসের
পক্ষ থেকে ছাড়পত্র আটকে দেয়া
হয়। কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে
দেনদরবার করতে-করতে
অফিস সময় শেষ হয়ে যায়। এবার
উপায়!
উপায়
সরকারী ঊর্দ্ধতন মহল। কিন্তু
তারাও তখন সংসদে ব্যস্ত। ফলে
আয়োজক কমিটি পড়ে মহা ফ্যাসাদে।
কিন্তু
যে সমাজ পাপের জন্য চাতক পাখির
মতো হা করে থাকে,
সেই
সমাজে এ ধরনের এক অনুষ্ঠান
আটকে যাবে শুধু দেশের স্বার্থে!
তা
কী করে হয়?
তাই
আঁধারের চুক্তিতে সব সমস্যার
সমাধান হয়ে যায়। পর্দার আড়ালে
কত হিসেবরই তো ল্যাঠা চুকে
যায়!
এটার
পরিণতিও যে সে রকম কিছু একটা
হয়েছিল,
তা
অনুমান করতে বেশি জ্ঞান থাকার
দরকার হয় না।
শাহরুখ
আসেন তার বিশাল বাহিনী নিয়ে।
পরের সংবাদে জানা যায়,
এক
শাহরুখ খানকেই দেয়া হয়েছিল
১৮ কোটি টাকা। তারপরেও এনবিআর
তাতে সন্দেহ পোষণ করেছে। তাদের
ধারণা,
প্রকাশ্যে
এই পরিমাণ টাকার কথা উল্লেখ
করা হলেও মূল পরিমাণ আরও অনেক
বেশি।
বাংলাদেশের
এই সময়টাতে এমনিতেই ইভটিজিং
মহামারীর আকার ধারণ করেছে।
আদালতে পর্দা-বোরকার
বিরুদ্ধে রায় দেয়ার পর থেকেই
ব্যাপারটি আল্লাহর গযব হিসেবে
আবির্ভূত হয়েছে। আর এর জ্বালানী
সরবরাহ করছে অশ্লীল নাচগান,
মোবাইল
ব্লু-ফিল্ম,
বিভিন্ন
রকমের অপসংস্কৃতি বিশেষ করে
ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো।
এমন এক নাযুক মুহূর্তে ভারতীয়
উদ্দাম সংস্কৃতি আমদানী করা
হলো!
শাহরুখ
খানের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্য
হয় আর্মি স্টেডিয়াম। কিং খানের
ভক্তদের পদভারে স্টেডিয়ামের
কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল
না। অনুষ্ঠানে প্রভাবশালী
এক প্রতিমন্ত্রীকে অনেকক্ষণ
দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে চেয়ার
খালি না থাকার কারণে!
যারা
সরাসরি অনুষ্ঠানে হাজির হতে
পারে নি,
তারা
ভিড় করে টিভির সামনে। বৈশাখী
টিভির কল্যাণে (?)
দেশের
প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও
এই অপসংস্কৃতির নোংরা দৃশ্য
দেখে চোখ কচলানোর সুযোগ পায়!
বিপুল
আয়োজন,
উৎসাহ-উদ্দীপনার
সঙ্গে যে অনুষ্ঠানে পঁচিশ
হাজার দর্শক মস্তি করতে
গিয়েছিলেন,
নিশ্চয়
তারা ইসলামী ভাবধারার কোনও
সংস্কৃতিক চিন্তা লালন করেন
না কিংবা তা নিয়ে ভাবারও সময়
হয়ে ওঠে না তাদের। সে হিসেবে
দর্শকরা অনুষ্ঠানের সব কিছুতে
অকুণ্ঠ সমর্থন জানাবেন এটাই
স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষের
সৃষ্টিগত রুচি-আভিজাত্য
বলে তো একটা ব্যাপার আছে!
তাই
অনুষ্ঠানের কিছুসংখ্যক রুচিশীল
দর্শক সবকিছু সমর্থন করতে
পারেন নি। বিশেষ করে সংক্ষিপ্ত
পোশাকে প্রায়নগ্ন ভারতীয়
ললনাদের উদ্বাহু নৃত্য আর
ভারতীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার
নির্লজ্জ প্রচেষ্টা তারা
কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেন
নি।
কিং
খানের গ্রান্ড শো নিয়ে দর্শকদের
যত আগ্রহ ছিল,
তা
মিইয়ে গেছে নিমিষেই। এসব
অনুষ্ঠানে অশ্লীলতা আর বেহায়াপনা
ছাড়া আর কিছু পাওয়ার আশা থাকে
না কারও,
কিন্তু
নতুনত্ব বা সৃজনশীল কিছু আশা
করেন দর্শকরা। কিন্তু তা থেকেও
বঞ্চিত হন তারা। স্যাটেলাইট
চ্যানেলে হরহামেশা যা দেখে
থাকেন তারা,
সরাসরী
অনুষ্ঠানে এসেও তারই খণ্ডচিত্র
দেখতে হয় তাদের। আর যারা
সপরিবারে অনুষ্ঠান দেখতে
এসেছিলেন,
তাদেরকে
লজ্জায় মাথা কুটতে হয়েছে।
বিব্রত অসহায় হয়ে তাদেরকে
এদিক-ওদিক
তাকিয়ে থাকতে হয়েছে। স্বল্পবসনা
সহশিল্পীদের উদ্দাম নৃত্য
টিভিদর্শকদেরকেও অস্বস্তিতে
ফেলেছে। এসব দর্শকরা বলেছেন,
এধরনের
উলঙ্গনৃত্য সাধারণত গুলশানের
বিশেষ কিছু ক্লাব বা পাঁচতারা
হোটেলগুলোতে হয়ে থাকে। কিন্তু
আয়োজকরা এই অনুষ্ঠানের মধ্য
দিয়ে উলঙ্গনৃত্যকে দর্শকের
একেবারে মুখের সামনে নিয়ে
আসার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন!
পথভ্রষ্টতার
যে পথ তারা আবিষ্কার করলেন,
এদেশের
সম্ভ্রমহারা মানুষ তাদের
দীর্ঘশ্বাসের সময় স্মরণ করবে
তাদের অবদানের (?)
কথা!
এবার
আসল কথায় আসা যাক। বেপর্দা ও
উচ্ছৃঙ্খল জীবন মানুষের
মর্যাদা,
নৈতিকতা
আর সম্ভ্রমবোধ অধঃপতনের কোন্
তলানীতে নিয়ে যেতে পারে,
তার
ক্ষুদ্র একটা ধারণা পাওয়া
গিয়েছে এই নৃত্যবখাটেপনার
মাধ্যমে।
অনুষ্ঠান
শুরু হয় ৮টা ৭ মিনিটে। শাহরুখ
মঞ্চে আসেন ৮টি ৪২ মিনিটে।
তার সঙ্গে আসা উলঙ্গ নৃত্য
শিল্পীদের সঙ্গে গান ও পারফর্ম
করার পর তিনি সবচেয়ে ন্যাক্করজনক
ঘটনাটার জন্ম দেন। মঞ্চের
সামনে বসা এক দম্পতিকে তিনি
মঞ্চে ডেকে নেন। লায়লা নামের
ওই মহিলাটিকে স্বামীর সামনেই
তিনি আলিঙ্গন করেন। অসহায়
স্বামী আধা হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে
দেখতে থাকেন নিজ স্ত্রীকে
অন্যের বাহুলগ্ন হওয়ার নির্মম
দৃশ্য!
কিন্তু
এখানেই শেষ নয়।
লম্পটরা
কখনও এতো অল্পতে শেষ করে না।
তাই শাহরুখ আলিঙ্গন থেকে
মুক্তি দিয়ে ওই
মহিলাকে চুম্বন করতে থাকেন
বারবার!
একজন
মহিলাকে স্বামীর সামনে
হাজার-হাজার
উপস্থিত দর্শক আর লক্ষ-লক্ষ
টিভি দর্শকের সামনে চুম্বন
করার দৃশ্য কতটুকু বেদনা ও
লজ্জার তা বলে শেষ করা যায়!
একজন
মানুষের মধ্যে যদি বিন্দু
পরিমাণ হায়া-লজ্জা
থাকে,
তাহলে
কী সে এই ঘটনা দেখার পর বেঁচে
থাকাকে প্রাধান্য দিতে পারবে?
অবশ্য
এটা আমাদের মূল্যায়ন। হয়ত
আমরা এটাকে বেদনা ও লজ্জার
মনে করছি। কিন্তু ওই স্বামী
এবং চুম্বনখাওয়া স্ত্রী যদি
নিজেদেরকে ভাগ্যবান বলে মনে
করেন?
স্বামী
যদি মনে করেন,
আমার
কত সৌভাগ্য,
আমার
চুম্বনের স্থলে কিং খান চুম্বন
এঁকেছেন,
আমার
আলিঙ্গনের স্থানে তিনি আলিঙ্গন
করেছেন!
স্ত্রী
যদি মনে করে,
জীবন
আজ ধন্য,
কিং
খান আমাকে চুম্বন দিয়ে ধন্য
করেছেন!
সারা
জীবন যদি তিনি পরিচিত আর
স্বজনদের কাছে এ নিয়ে গর্ব
করেন!
এই
ধারণা মোটেও অস্বাভাবিক
ব্যাপার নয়। সংবাদে প্রকাশ,
শাহরুখ
তাকে নিয়ে মস্তি করার সময় সে
খুব উৎফুল্ল ছিল এবং আনন্দের
আতিশয্যে সে বারবার নিজের
পরিচয় দিয়ে বলছিল,
বর্তমান
প্রধানমন্ত্রী আমার
দাদি। হয়ত সে মনে করেছিল,
আজ
যে সৌভাগ্যের মালা সে গলায়
জড়িয়েছে এই মাহেন্দ্রক্ষণে
দেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ
না করলে কিছুমাত্র কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ করা হয় না। সত্যি যদি
সে সে সময়কার প্রধানমন্ত্রীর
নাতনী হয়ে থাকে,
তাহলে
সে তার দাদির কতটুকু সম্মান
বাড়ালো,
এতে
তার সম্মান বাড়লো না কমলো,
তা
যেন দাদি যাচাই করে দেখেন।
কারণ হাদীসে আছে-
فَالْعَيْنَانِ
تَزْنِيَانِ وَزِنَاهُمَا النَّظَرُ،
وَالْيَدَانِ تَزْنِيَانِ وَزِنَاهُمَا
الْبَطْشُ،
‘চোখ
ব্যভিচার করে,
চোখের
ব্যভিচার হলো অবৈধ পাত্রে
দৃষ্টি দেয়া। হাত ব্যভিচার
করে,
হাতের
ব্যভিচার হলো অবৈধ নারীকে
ধরা,
(মুখ
ব্যভিচার করে। মুখের ব্যভিচার
হলো অন্য নারীকে চুম্বন করা)।’
[মুসনাদ
আহমদ :
৮৫২৬]
লায়লা
কি শাহরুখের জন্য বৈধ ছিলেন?
তাকে
ধরা,
স্পর্শ
করা এবং চুম্বন করা কি শাহরুখের
জন্য বৈধ ছিল?
হাদীসের
ভাষ্যমতে সেটা কি ব্যভিচার
নয়?
হয়ত
ছোট ব্যভিচার। পঞ্চাশ টাকার
নোটও টাকা,
একশ
টাকার নোটও টাকা এবং পাঁচশ
টাকার নোটও টাকা। কিন্তু এক
হাজার টাকার নোটের তুলনায়
ছোট। তাই বলে তো টাকার বাইরে
নয়। শুধু সরাসরি যৌনমিলনে
লিপ্ত হওয়াই ব্যভিচার নয়।
উল্লিখিত বর্ণনা অনুযায়ী
পরনারীকে ধরা,
আলিঙ্গন
করা এবং চুম্বন করাও ব্যভিচার।
আর প্রকাশ্য জনসমুদ্রে এরূপ
ব্যভিচার করে কেউ যদি গৌরববোধ
করে এবং আনন্দের আতিশয্য নিজের
পরিচয়টা লুকিয়ে রাখার লোভ
সংবরণ করতে না পেরে প্রধানমন্ত্রীকে
নিজের দাদি পরিচয় দেয়,
তাহলে
এখানে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।
শুধু
লায়লাই নয়,
শাহরুখের
আলিঙ্গন আর চুম্বন পাওয়ার
জন্য আরও অনেকেই মুখিয়ে ছিলো।
হুমায়রা হিমু নামের এক অভিনেত্রী
নাকি শুধু হাসফাস করেছে তাকে
কখন শাহরুখ মঞ্চে ডেকে নেবে
এই আশায়!
হায়
সমাজ!
ব্যভিচারটাকে
তুমি এত সহজে আপন করে নিতে
পারলে?
অবশ্য
কখনও কখনও মন আমার ধারণার
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এই
সমাজের পঁচনটা শুরু হয়েছে
ঠিক;
কিন্তু
এখনই তা এত গভীর পৌঁছেছে বলে
মনে হয় নি,
যার
কারণে একজন স্বামী নিজের সামনে
স্ত্রীকে পরপুরুষের বাহুলগ্না
হতে দেখে,
চুম্বিত
হতে দেখেও কিছু মনে করবে না,
তার
পৌরুষের আঁতে ঘা লাগবে না।
আমি যখন দুয়েকজনের সঙ্গে এ
ব্যাপারে কথা বলেছি,
তারা
আমার সঙ্গে একমত পোষণ করেন
নি। তারা বলেন,
দেখুন
গিয়ে,
ওই
দম্পতি নির্ঘাত গৌরববোধ করছে।
বন্ধু-বান্ধবদের
বলে বেড়াচ্ছে যে,
দেখ
দেখ...।
ওই
দম্পতির মানসিক অবস্থা যা-ই
হোক না কেন,
এই
ঘটনাটি কিন্তু আমাদেরকে দারুণ
শঙ্কিত করেছে। বেপর্দা,
মুক্তবাসের
ছোবল আমাদের দেশে এভাবে এত
জোরে এখনই হানা দেবে তা আশা
করিনি। মানুষের রুচিবোধ এত
গলিজ হবে,
তাও
মেনে নিতে কষ্ট হয়। তাই যারা
এখনও কিছুটা দূরে আছেন,
তারা
সতর্ক হন এবং পতনের এই তুফান
থেকে নিজের পরিবার,
দেশ
ও সমাজকে রক্ষা করুন। ইসলামী
সভ্যতা,
ইসলামী
রুচিবোধ ও পর্দার নিরাপদ জীবনে
অভ্যস্থ হোন। ইসলাম আপনাকে
ঠকাবে না,
যিল্লতীর
হাত থেকে বাঁচাবে কেবল।
No comments:
Post a Comment